Hot Posts

6/recent/ticker-posts

খরস্রোত গল্প, ভাষা আন্দোলন এর গল্প সরদার জয়েনউদ্দীন এর গল্প, খরস্রোত গল্প


**খরস্রোত

সরদার জয়েনউদ্দীন


কালো মোটা ধোরা সাপের মতো চিৎপাত হয়ে পড়ে আছে লম্বা একটা রাস্তা। তেমনি বোৱা সাপের মতোই রোদ আলোতে চিক চিক করে। ঠিক গোধূলির পরে সন্ধ্যার গাঢ় ছায়া যখন ধীরে ধীরে নেমে আসে, তখন রাস্তাটার পুবের মাথায় দাঁড়িয়ে দেখলে পথের বৈদ্যুতিক আলোতে অমনি মনে হয়। রাস্তাটা 'রমনা খেলার মাঠের নিকট থেকে কার্জন সাহেবের ঐতিহ্যবাহী বাড়িটার পেটে গিয়ে মাথাটা ঠুকেছে। রাতটার একপাশে খেলার মাঠটা সামান করে দুর্বল দেহে হামাগুড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে। আছে কয়েকটি রেস্তোরাঁ তার পরই শুরু হয়েছে রেলের বস্তি। বস্তিটা লম্বা হয়ে এগিয়ে গিয়ে পশ্চিমে একেবারে রেল কারখানাটার সাথে যেন গা হেলান দিয়ে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে। এরই এক ঘরে বরকতের মা কাঁদে। রোজ কাঁদে। রাজাটার ওপারের নিয়োধাবিতে ভবনে আবাদীর পতাকা আনন্দের আমেজে পত পত করে ওড়ে, আর এপার থেকে বরকতের মায়ের কান্নার করুণ সুর ডানা ভাঙা পাখির মতো আকাশে বাতাসে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে দিগন্তে ফেটে চৌচির হয়ে পড়তে থাকে। সারা দুনিয়ার মায়েদের হৃদয়ে বিষমাখা তীরের ফলার মতো বিধতে থাকে। অসাড় নিষ্পন্দ স্থবির হয়ে আসে মায়েদের হৃদয়। সে কার সাথে কতো কথা বরকতের মা বলে : ১৯৫২ সনের এক সকালে বরকত বলেছিলো যে, তোমাকে মা বলে ডাকবো তা নাকি তার পারবো না। ওরা আনাদের কতো বড় শত্রু মা যে, মাকে মা বলে, বাবাকে বাবা বলে ওরা আর আমাদের ডাকতে দিতে চায় না। বলো তো মা, আমরা কি তা মেনে নিতে পারি? আজ তারই জন্য শাস্তিযুদ্ধ হবে মা, আমরা ধর্মঘট করবো। তুমি আশীর্বাদ করো মা, তোমার শেখানো বুলি যেন আমাদের মুখে অক্ষয় হয়ে থাকে।

"তাই হবে বাবা, মা তোরা জয়ী হবি।" মায়ের আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে আনন্দে বেরিয়ে গিয়েছিলো বরকত কিন্তু আর ফিরে আসে নাই। সে আজ থেকে ঠিক এক বছর আগের পদ্মা। সেই থেকে বরকতের মা কাদে রোজ অমনি করে কাঁদে। রাস্তাটার গা থেকে একটু লেজুড় বেরিয়ে বরকতদের বস্তির পাশ দিয়ে যেন কলোনিসকে দু'ফাক করে চিরে দিয়েছে। দূর থেকে দেখলে এ লেজুকের অস্তিত্ব বোঝা যায় না। মনে হয় ঘরগুলো হাত বাড়িয়ে পরস্পরের গুলো জড়িয়ে পড়ে আছে। এ সাপলেজুড় মাত্তা পাে বাড়ি। পামরোজ হাউস তারই দোতলার দীর্ঘ বারুদায় এক কোণ থেকে আর এক কোণ পর্যন্ত পায়চারি করে ফিরছিলেন মাহাদুর মীর্জা গোলাম হাফিজ অবসরপ্রাপ্ত এককালের

বাঘা ডিস্ট্রিট ম্যাজিস্ট্রেট। চুল পেকেছে, শুভ্র শ্বশ্রুতে মুখমণ্ডল আবৃত। পায়ে দামি নাগরা,পরনে চুড়িদার পায়জামা গায়ে আদ্দীর পাঞ্জাবি , আর পারি হাতে একখানা লাঠি, চোখে আভিজাত্যের গরিমা। পায়চারি করছিলেন আর ভাবছিলেন, এ সংসারে আর অধিক দিন বেঁচে থাকার কোনো অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না। সত্যই সংসারটা নেন দিনের দিন কেমন পিজরাপোল হয়ে উঠেছে, লঘুগুরু স্নান, পাপপুণ্যের বিবেচন, মান সম্মানের খাতির এ সব যেন সংসার থেকে উধাও হয়ে গেছে। গতকাল থাকে দেখেছি দারিদ্র্যের একটা চরম দৃষ্টান্ত হয়ে পথে পথে কুকুর বিড়ালের সঙ্গে আহার খুঁজতে আগামী পরশু হয়তো সেই তোমাকে মুখের উপর দু'কথা শুনিয়ে যাবে তার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে। সুতরাং আর কেন? এ বেঁচে থাকার কোনো বা থ্যাঅর্থ হয় না। সংসারটা ছোটলোকের ঔদ্ধতে, উৎপীড়িত হয়ে উঠেছে।

তাই স্থান বাহাদুরের বেঁচে থাকবার নেশায় ফাটল ধরেছে । জীবনের প্রতি জন্মেছে যদিও মুখে বেঁচে না থাকার কথাই বলছিলেন, কিন্তু মনে ভেবে অস্থির হয়ে উঠছিলেন, কি করে দুদিন আরও সুখ সমৃদ্ধিতে পুত্র পরিজন নিয়ে বেশি বেঁচে থাকা যায়, কি করে এম. এ. পাশ ছেলেটার সবাইকে টেককা দিয়ে একটা মস্ত চাকরি জুটিয়ে নিজে নিশ্চিত আরামে গা ভাসিয়ে আভিজাত্যের গৌরবটাকে নিষ্ফলুনভাবে রক্ষা করা যায়। ভাবছিলেন আর আতঙ্কে শিউরে উঠছিলেন, হয়তো তীরে এসে তরী ডুবে যায়, শেষ রক্ষা বুঝি আর হয় না ? জীবনের পঞ্চাশটি বছর লোহার খাঁচার মতো করে পাজরার হাড় দিয়ে আগলে রেখেছেন যে আভিজাত্য, আর শেষ রক্ষা নিয়ে খান বাহাদুর বড় উতলা হয়ে উঠেছেন। ছেলেটার হলো কি? আরে এম. এ. পাশ করেছিস, সিভিলিয়ানের ঘরে জন্ম, কোথায় বাঘের বাচ্চা বাঘ হবে, না রাত দিন চাষাভুষো, মুর্চি মেথর যতোসব ছোট লোকের জাত নিয়ে ঘাঁটাঘাটি। ছো ছো ! ইজ্জতটা একেবারে নোংরা করে ছাড়লো, বংশ মর্যাদার মুখে কালি লেপে দিলো দেখছি। খান বাহাদুর হন হন করে ভিতর বাড়ি গিয়ে ফেটে পড়েন, “বলি মেম সাহেব। আপনার গুণধর পুত্র আজ কোন চুলোয় গিয়েছেন? কোন মেথর পল্লীর লোক আজ হুজুরের নিকট ফরিয়াদ নিয়ে এসেছিলেন যে রোগ-শোকে আমাদের ঔষধ পথ্য নাই। যদি জানা থাকে আমার একবার দয়া করে বলুন, না হয় সেখান থেকেই তাকে আমি তুলে নিয়ে আসবো।"

**ভাষা-আন্দোলনের ও মুক্তিযুদ্ধের আরো গল্প পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন   https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1


খান বাহাদুরের ক্রোধের কোনো কারণ ঘটলেই তিনি স্ত্রীর সাথে অমনি কেমন যেন ব্যঙ্গের স্বরে কথা বলতে থাকেন। এটাও না কি তার আভিজাত্যের একটা অঙ্গ। মধ্যবিত্ত ঘরে স্বপ্ন মরিয়ম বেগম জীবনে সুখ মতো ভোগ করেছেন, লাঞ্ছনা গঞ্জনা ভোগ করেছেন তার চাইতে বেশি। আভিজাত্যের সুচার সূক্ষ্ম কাটায় চিরেচিরে মনটা তার ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছে, তবুও মুখ বন্ধ করে জীবনটাকে হেচড়ে টেনে শেষের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলছেন। খান বাহাদুরের কোনো কথায় কোনো প্রতিবাদ তিনি কখনও করেন নাই, আজও করলেন না, চুপ করেই রইলেন। এ যেন সর্বংসহা ধরিত্রী। রোদ বৃষ্টি, তাপ তিডায় কোন ভ্রুক্ষেপ নাই। খান রাগুলুর চিরদিনের অভ্যাস হতো আজ পড়িয়ে দাড়িয়ে স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন : আত্মমর্থন, মন নম্পান, প্রতি।ত্তি এ সব প্রতিষ্ঠা করা মুখের কথাটি নয়। তুমি সে সব নষ্ট করে দিলে। ছেলেটা একেবারে ভবঘুরে লক্ষ্মীছাড়া হয়ে গেলো। এই তো আজক ইত্যাদি মিনিস্টারের সঙ্গে একটা এনগেজা মট করেছিলাম বেলা সাড়ে এগারটার মুনিরকে নিয়ে গেলে টি বোর্ডের একটা জাদরেল অ িসারের চাল দেবেন বলেছিলেন। সাড়ে এগারটাবাজতে আর হার ১০ মিনিট বাকি, অথচ আপনার বাহাদুর পুত্রের কোনো খোঁজ নাই। জীবনের চান্স এ রকম অবহেলায় হারালে তা আর ফিরে আসে না। আমি সিভিলিয়ান হয়েছিলাম কম সাধ্য সাধনায় নয়, জীবনের কোনো চান্সকে একটু পাশিয়ে খেতে দেই নাই।" তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি, একটু বাঘ সামলে চলো, ছেলেটা যে দিনে দিনে একেবারে বখে যেতে বসেছে।

উদ্‌ভ্রান্ত দৃষ্টি নিয়ে বাকশূন্য চোখে চেয়ে থাকেন মরিয়ম বেগম। তখনও ভেনে আসছিলো বরকতের মায়ের কান্নার সুর, সে বেদনায় মরিয়ম বেগমের হৃদয় সাগর উদ্বেলিত হয়ে উঠছিলো। তিনি ভাবছিলেন এ পোড়া দেশের মায়েদের হৃদয় সাগর ভরে এ আগ্নেয়গিরির জ্বলুন আর কতোকাল শুনবে।

খান বাহাদুর যেমনভাবে এসেছিলেন তেমনভাবেই আবার ফিরে গেলেন! মরিয়ম বেগম বসে বসে কতো কথাই ভাব ছিলেন, আল্লা তুমি ছেলেদের জয়ী করে দাও, সত্যের জয় হোক। আর সে সত্যের মধ্য দিয়ে চির অক্ষয় হয়ে বেঁচে থাক বরকতের মায়ের স্নেহের (বরকত)এমন সময় (ফরিদা এসে পিছন থেকে ডাক দিলো, “জান মা, আজ আমাদের প্রভাত ফেরী ছেলেদের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। তবে দাদুভাইদের দলে ছেলে ছিলো অনেক বেশি। আমরাও কিন্তু কম যাইনি মা, কয়েকটা স্কোয়াড মিলে প্রায় হাজার মেয়ে হবে।" মায়ের মুখে সদ্য ফোটা ফুলের মতো হাসি ফুটে ওঠে। ফরিদার গায়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মা বলতে থাকেন, সেই কোন ভোরে গেছিস, চা পানি কিছু খেয়েছিস, না উপোষ দিয়ে রয়েছিস। ফরিদা হাসতে হাসতে জবাব দেয় : “জানো মা, আমার চাইতে অনেক ছোট ছোট মেয়ে কিছু না খেয়ে ছিলো।”

মা ধীরে ধীরে জিজ্ঞেস করেন, “আচ্ছা হ্যারে, তোর দাদুভাই কোথায়, সে কখন আসবে ?" ফরিদা বলে : "বাপরে, দাদুভাইয়ের কথা ছেড়ে দাও মা, তার কি অবসর আছে ? অনেক কাজ করতে হবে আজকে, আগামীকাল একুশে ফেব্রুয়ারি, কতো প্রোগ্রাম করা হয়েছে।" মায়ের হৃদর সাগর স্বর্গীয় আনন্দে আপ্লুত হয়ে আসতে থাকে। তিনি নির্বাক বিস্ময়ে চেয়ে থাকেন ফরিদার দিকে। তার সারা হৃদয়ের স্নেহ যেন চোখ দিয়ে উপচে উঠে স্নান করিয়ে দেয় ফরিদাকে। তিনি আরও কতো কথা শুনতে চান ফরিদার নিকটে। কোন পথ দিয়ে মিছিল যাবে, সব ছেলে মেয়ে মিলে মিছিলে কতো লোক হবে, কি তাদের দাবি হবে, আমাদের এ পথ দিয়ে মিছিলে যাবে তো? কিবা একটি কথাও মুখ ফুটে জিজ্ঞাসা করতে পারেন না, কণ্ঠটা কেমন যেন আবেগে শিথিল হয়ে যায়। এমন সময়ে বাইরের ঘরে মান বাহাদুরের গভীর কণ্ঠের আওয়াজ শোনা যায়। মুনীর, তোমায় আমি আজ কোথাও যেতে নিষেধ করেছিলাম। কোথায় গিয়েছিলে তুমি?" স্বভাবসিদ্ধ গম্ভীর অথচ বিনীত কন্ঠে জবা দেয় মুনীর "উপায় ছিলো না বাবা। দেশের হাজার হাজার ছেলেমেয়ে যখন দেশেরই দাবি নিয়ে এগিয়ে চলেছে, তখন আমি নির্বাক হয়ে বাড়িতে বসে থাকতে পারিনে বাবা, দেশের প্রতি আনারও কর্তব্য আছে। তাই সবার সঙ্গে প্রভাত ফেরিতে বেরিয়েছিলাম।" বলেই মিনতি ভরকরুণ চোখে অনালো মুনীর। 'প্রভাত ফেরী' গভীর গর্জনে সিংহের মতো হুক্কার দিয়ে উঠলেন খান বাহাদুর। তারপরেই হঠাৎ কেন যেন তার বাকরোধ হয়ে গেলো, কোনো কথা আর তিনি উচ্চারণ করলেন না। মুখ চোখ তাঁর গভীর বিষাদে ছেয়ে গেলো, মৌন পাহাড়ের মতো গভীর হয়ে গেলেন তিনি। তারপর ধীরে ধীরে নিজের কক্ষে ফিরে গেলেন। মা এসে তার হৃদয়ের সমস্ত স্নেহ ঢেলে দিয়ে ডাকলেন, 'মুনীর আয় বাবা, ভিতরে আয়।' এর কিছুক্ষণ পরেই এক দল পুলিশ এসে মুনীরকে বন্দি করে নিয়ে চলে গেলো। খান বাহাদুরকে অনেক কথা জি করেছিলো পুলিশের লোক, ধ, না, একটি কথাও বলেন নাই খান বাহাদুর সাহেব।

তারপর থেকে সারাটা দিন তাঁর কামরার গভীর হয়ে বসে রইলেন খান বাহাদুর, মা করেকবার দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে এসেছেন, সাহস করে কোনো কথা পর্যন্ত বলেন নাই। পরিচারিকা গিয়ে খাবার দিয়ে এসেছে, না খাবার মতো কিছু খেয়েছেন, আর সবই অমনি পড়ে আছে। সেই একইভাবে বসে বসে রাজ্যের কি যে সব ভেবে চলেছেন তিনি, তার যেন কোনো কূল কিনারা নেই। সারাটা রাত্রি তার অমনি বসে বসে ভাবতে ভারতে কেটে গেছে। তারপর চির অভ্যাস মতো ভোরে উঠে দোতলার বারান্দায় পায়চারি করে ফিরছেন, আসমান জমিন কতো কি যে সব ভেবেই চলছেন, বাড়ির সামনে দিয়ে মেয়েদের প্রভাত ফেরী করুণ গান গাইতে গাইতে চলে গেলো, দূর মসজিদের মিনার থেকে আজান ধ্বনি ভেসে এলো, ভেসে এলো বরকতের মায়ের কান্নার করুণ সুর। তবুও একভাবে পায়চারি করে ফিরছেন খান বাহাদুর, কোনো দিকে ভ্রক্ষেপ নাই। ক্রমে পূর্ব আকাশ অরুণোদয়ের আলোতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, ইউনিভার্সিটির দিক থেকে হাজার কন্ঠের বজ্রগম্ভীর আওয়াজ ভেসে আসছে, “শহীদ সেনারা অমর হোক”। মিছিল ক্রমেই এগিয়ে আসছে, আওয়াজ ক্রমেই জোরদার হয়ে উঠছে। লাখো জনতার মিছিল ক্রমে ক্রমে পামরোজ হাউসের গেটে এসে থেমে গেলো। তারপর চিৎকার করে অনেক ডাকলো : মুনীর, তোমার যে শহীদ বেদীতে পুষ্পমূল্য দিতে হবে, শীঘ্র এসো ভাই।

থমকে দাঁড়িয়ে গেলেন খান বাহাদুর, তারপর ধীরে ধীরে নেমে এলেন মিছিলের সামনে। অন্যভরা চোখে বেদনার্ত কন্ঠে জানালেন তিনি, “মুনীরকে যে কাল পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে, আমি গেলে চলবে বাবা সকল !"

মিছিল আবার এগিয়ে চললো।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ