সম্পাদকঃ-
সম্পাদক অর্থ হলো সম্পাদনা কারী।যিনি বা যার মাধ্যমে কোন বিষয়, কোনো লেখা কিংবা শিল্পকর্ম,ব্যাক্তি থেকে, ব্যাক্তিসমুদ্রের নিকটে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেন।তিনি কখনোই সেই পান্ডুলিপির কোন পরিবর্তন কিংবা পরিমার্জন করতে পারবেন না,,তবে তার ব্যাক্তিগত রিসার্চ বা মতামতকে ভুমিকা আকারে সংযুক্ত করতে পারেন।আর তিনি যদি পত্রিকার সম্পাদক হোন দতাহলে,উক্ত বিষয়ের সত্যতা যাচাই, ভুল সংশোধন ইত্যাদি কাজ করতে পারেন।তার অর্থ মুল পান্ডুলিপি কে বেসিক ধরে তিনি, সেটির প্রকাশ করতে পারেন।তাছাড়া নিচের কাজ গুলো তিনি পালন করবেন।
লাহোর প্রস্তাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন
ভাষাশিক্ষা দান সু্ত্রাবলী সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন
সম্পাদকের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ-
সম্পাদককে অবশ্যই নিচের বিষয়গুলোর প্রতি আলোকপাত করতে হবেঃ-
১। পুঁথি সংকেত ও প্রাপ্তিস্থান ।
প্রাপ্ত পাণ্ডুলিপিটি কোন্ গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত এবং উক্ত গ্রন্থাগারের পুঁথি তালিকায় তার ক্রমিক সংখ্যা কি তার উল্লেখ একান্ত দরকার ।
২। পত্র-সংখ্যা।
পাণ্ডুলিপিটি খণ্ডিত না সম্পূর্ণ, পত্রসংখ্যা কত, প্রতি পৃষ্ঠায় চরণেরসংখ্যা কত এবং প্রতি চরণে ক'টি অক্ষর লিখিত, পত্রাঙ্ক আছে অথবা নেই, পত্রাঙ্ক নির্দেশের প্রকৃতি বা বিশিষ্টতা ইত্যাদি বিষয় এ পরিচিতির অন্তর্ভুক্ত হবে। ৩। কাগজ ও কালি। পাণ্ডুলিপির কাগজ হাতে তৈরী না মিলের কাগজ, কাগজ ভাঁজ করা কি নির্ভাজ, কাগজের আকার, কালির বিশিষ্টতা ইত্যাদি বিষয়ও পাণ্ডুলিপির বিবরণীতে থাকবে।
৪। পাণ্ডুলিপির অবস্থা ও প্রকৃতি। পাণ্ডুলিপি সেলাইবিহীন না সেলাইকৃত পুস্তকাকার পাণ্ডুলিপি, বটতলার মুসলমানী পুঁথির ন্যায় ডানদিক থেকে লিখিত কি না, পাণ্ডুলিপির অবস্থা ভাল না জীর্ণপ্রায়, পাঠ-মধ্যবর্তী শূন্যস্থানের (Lacuna) কোনও নিদর্শন আছে কি নেই, পাণ্ডুলিপির পৃষ্ঠায় সংশোধনী ইত্যাদির সংক্ষিপ্ত পরিচিতিও লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন।
৫। পাণ্ডুলিপির অনুলিখন সংক্রান্ত তথ্য। অনুলিখন সংক্রান্ত তথ্যের মধ্যে থাকবে পুঁথির মালিকের নাম, লিপিকরের নাম ও পরিচিতি, লিপিস্থান এবং লিপিকাল একাধিক লিপিকরের হাতে অনুলিখিত হলে বিভিন্ন লিপিকরের পরিচিতি অনুসন্ধান করা দরকার। পাণ্ডুলিপিতে সংশোধনের চিহ্ন থাকলে তা লিপিকরকৃত না অন্য কোন ব্যক্তির হাতের, সে তথ্যও বিশেষ
মূল্যবান।
৬। হস্তাক্ষর বা লিপি পরিচিতি।
লিপিকরের হস্তাক্ষরের প্রকৃতি এবং লিপির বিশিষ্টতা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ থাকা বাঞ্ছনীয়।
৭। গ্রন্থের বা পাণ্ডুলিপির নাম । রচয়িতা বা লিপিকর কর্তৃক গ্রন্থের কোন নাম লিখিত হ'লে পাণ্ডুলিপি- বিবরণীতে তারও উল্লেখ থাকবে।
৮। পাঠের আরম্ভ ও শেষ।
পাণ্ডুলিপির পাঠের আরম্ভ ও শেষের কয়েকটি চরণ পাণ্ডুলিপি-পরিচিতির একটি অপরিহার্য অংশ।
পরিশিষ্টে সম্পাদক নিম্নলিখিত কয়েকটি প্রয়োজনীয় বিষয় সন্নিবিষ্ট করতে পারেন। যেমন-
১।পদসুচীঃ-
সম্পাদিত গ্রন্থটি পদসংকলন হলে বিভিন্ন পানের বর্ণানুক্রমিক সূচী পরিশিষ্টে থাকা বাঞ্ছনীয়। বিভিন্ন রচয়িতার পদ যদি সে গ্রন্থে থাকে, তবে রচয়িতার নামানুসারেও সূচী প্রণয়ন করা দরকার। সতীশচন্দ্র রায় সম্পাদিত 'পদকল্পত গ্রন্থের পরিশিষ্টে 'পদসূচী' ও 'পদকর্তৃসূচী" রয়েছে।
২। অপ্রচলিত শব্দের তালিকা ।
সম্পাদক কাব্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন অপ্রচলিত ও দুরূহ শব্দের একটি বর্ণানুক্রমিক তালিকা প্রস্তুত করবেন। তালিকার শব্দার্থ, ব্যুৎপত্তি, প্রয়োজনীয় টীকা এবং সম্পাদিত গ্রন্থের পৃষ্ঠাসংখ্যার উল্লেখ থাকবে। উদাহরণস্বরূপ ব্রজেন্দ্রনাথ ও সজনীকান্ত সম্পাদিত ভারতচন্দ্র গ্রন্থাবলীর 'অপ্রচলিত শব্দের তালিকা'র কথা বলা যায়।
৩। শব্দাবলী ।
সম্পাদিত গ্রন্থে ব্যবহৃত শব্দসমূহের একটি বর্ণানুক্রমিক তালিকা (পৃষ্ঠা-সংখ্যা সহ) পরিশিষ্টের অন্তর্ভুক্ত হবে। বসন্তরঞ্জন রায়ের 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের শব্দসূচীর কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়
৪। নামবাচক শব্দের টীকা।
গ্রন্থে ব্যবহৃত বিভিন্ন নামবাচক শব্দের টীকায় সম্পাদক ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক তথ্যাদি যথাসম্ভব বিবৃত করবেন। এজাতীয় টীকাটিপ্পনীর একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন আশুতোষ ভট্টাচার্য সম্পাদিত 'গোপীচন্দ্রের গান' গ্রন্থে দেখা যায়, বিভিন্ন ঐতিহাসিক, সামাজিক ভৌগোলিক তথ্যে সে টীকাটিপ্পনি সমৃদ্ধ।
পরিশিষ্টের এই তালিকাগুলির সঙ্গে পাঠসমালোচনার হয়তো বিশেষ কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু গবেষক এবং অনুসন্ধিৎসু পাঠকের কাছে এর মূল্য অপরিসীম। একথা সকলেই স্বীকার করবেন যে, একাধিক পুঁথির মধ্যে একটির পাঠকে মূলপাঠরূপে গ্রহণ করে মধ্যে মধ্যে অন্যান্য পুঁথিগুলিতে প্রাপ্ত পাঠান্তর লিপিবদ্ধ করলেই পাণ্ডুলিপির আদর্শ সংস্করণ প্রস্তুত হয় না। সম্পাদিত গ্রন্থের উৎকর্ষ এবং গৌণ্ড্রর প্রধানত সম্পাদনার ত্রুটিহীনতা ও নৈপুণ্যের উপর নির্ভরশীল। সেজন্য বিশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার হ্যাতো প্রয়োজন নেই, কিন্তু পাণ্ডুলিপি, পাণ্ডুলিপির পাঠবিকৃতির কারণ ও প্রকৃতি, সম্পাদনা-পদ্ধতি প্রভৃতি বিষয়ে তাঁর প্রত্যক্ষ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। এছাড়া, নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপরও তাঁর দখল থাকা চাই। যেমন-
(ক) লিপিবিদ্যা। সম্পাদকের পুঁথি পড়ার ভাল অভ্যাস থাকা চাই। লিপির বিবর্তন এবং বিভিন্ন যুগের লিপির বিশিষ্টতা সম্পর্কে তাঁর সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক। সে স্নান তাঁকে অনেক পাঠবিকৃতির সংশোধনে সাহায্য করবে।
(খ) প্রাচীন সাহিত্যের ভাষা।
বিভিন্ন যুগের ব্যাকরণও সম্পাদকের জানা থাকা দরকার। প্রাচীন সাহিত্যের
ভাষা সম্পর্কে যদি তিনি পূর্ণজ্ঞান রাখেন, তাহলে পরবর্তীকালের লিপিকর প্রমাদ
সহজেই তাঁর চোখে ধরা পড়বে। এ-প্রসঙ্গে শব্দার্থতত্ত্বের কথাও উল্লেখ করতে হয়। কারণ, প্রাচীনকালে কোন কোন শব্দ যে অর্থে ব্যবহৃত হয়েছিল পরবর্তীকালে তার অর্থের পরিবর্তন ঘটেছে অথবা সেগুলি অপ্রচলিত হয়েছে। এ জাতীয় কয়েকটি শব্দের উল্লেখ করা যায়-নেহা (পূর্বে প্রেম অর্থে-পরে স্নেহ অর্থে), তাবক (প্রেমিক), শ্রদ্ধা (ইচ্ছা অর্থে), পারী (সিংহ), বহিত্র (জাহাজ)।
(গ) প্রাচীন সাহিত্যের ছন্দ। স্বদশাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি প্রাচীন সাহিত্য সম্পাদনায় বিশেষ সাহায্য করে। লিপিকরের রুটিতে যদি কোন বর্ণ বা শব্দের অপযোজন বা পরিবর্তন ঘটে, তাহলে ছন্দ-বিচারে অনেক সময় তার আবিষ্কার ও সংশোধন সক্ষম।
(ঘ) সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান ।
সম্পাদক যে বিষয়ের পুঁথি সম্পাদনা করবেন সে বিষয়ে তাঁর অবশ্যই জ্ঞান থাকা চাই। যেমন, চর্যাপদ বা নাথগীতিকা সম্পাদনার নামধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান সম্পাদককে বিশেষ সহায়তা করবে। সুফী সাহিত্য সম্পাদনার ক্ষেত্রে সুফী মতবাদ সম্পর্কে সম্পাদককে অবশ্যই অবহিত হতে হবে।
0 মন্তব্যসমূহ