কাতা কি?? কাতার বৈশিষ্ট্য কাতার গঠন শৈলী
** কাতা ও কাসিদার সংজ্ঞা এবং উদাহরণ সহ কাতা ও কাসিদার গঠনশৈলী :
ভূমিকা : সময়বিশেষে কোন একটি বিশেষ সূত্রকে অবলম্বন করে কবির আনন্দ বেদনা যখন প্রকাশের পথ পায়, তখনই কবিতার জন্ম। মোটামুটি সকল ভাষাতেই কবিতা এভাবেই গড়ে ওঠে। উর্দু বা ফরিশি ভাষার কাব্যের ক্ষেত্রেও কবিতা হয়ে উঠেছে উর্দু ও ফারসি ভাষার কবিদের ভাব কল্পনা প্রকাশের অন্যতম পথ। আর এ দুই ভাষার কাব্যের দুটি অন্যতম রীতি হলো কাতা ও কাসিদা। এই রীতি দুটোর সংজ্ঞা ও গঠনশৈ লী নিম্নরূপ
কাতা : উর্দু ও ফারসি ভাষার কাব্যের অন্যতম একটি রীতির নাম কাতা। মূলত কাব্যের যে রীতিতে সাধারণত উচ্চ কবি কল্পনাও গভীর অনুভূতির প্রকাশ না পেয়ে একটি কথাই গোটা কবিতার বিষয়বস্তু হয়, তাকে কাতা বলে।
ভাষা শিক্ষাদান সুত্রাবলী সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন!
কাতার গঠনশৈলী :
১. কাতা মূলত দুই couplet বা চার পভুক্তির হয়ে থাকে । পঙ্ক্তিসংখ্যা কত হবে তা নির্দিষ্ট নয়। এখানেও গজলের মতো দুই পক্তি মিলে একটি শের গঠিত হয়। উদাহরণ -
"আসেনিক প্রিয়া বৃিষ্টির লাগি,পুবালি উর্ধ্বে
বাতাস নেচে বেড়ায় এখানে দারুন চোখের জলেতে সিখান আমার ভাসছে হায়!"
('দীওয়ান-ই-গালিব', ৫ নং কবিণ)
2. অনেক সময় গজলের ন্যায় কাতার ক্ষেত্রেও কাফিয়া মিল লক্ষ করা যায়। মূলত প্রথম চরণের শেষ শব্দটির পূর্ববর্তী শব্দেরঅঙ্গে দ্বিতীয় চরণের শেষ শব্দটির পূর্ববর্তী শব্দের ধ্বনিগত মিল থাকে। উদাহরণ- সেখানে সঙ্গী কণ্ঠভূষণে মুক্ত গাঁথা পড়েছে ধুম এখানে অশ্রুবিন্দুর দলে বৃষ্টি আমার করেছে গুম।” ('দীওয়ান-ই-গালিব’৫ নং কবিতা))
৩. কাতায় একটি কথাই গোটা কবিতার বিষয়বস্তু হয়। যেমন মির্জা আসাদুল্লা খাঁ গা- লিব তাঁর দীওয়ান-ই-গালিব' গ্রন্থে ৫ নং কবিতার মাধ্যমে অর্থাৎ গোটা কবিতায় তাঁর মনের বেদনা বা বিরহচেতনা ফুটিয়ে তুলে ছেন। এছাড়াও এ গ্রন্থের ১৩ নং কবিতায় কবির প্রেমঘটিত বিরহ এবং ৩৩ নং কবিতায় বা কাতায় প্রতিকূল পারিপার্শ্বিকতার বিরু ঝিঁ দ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে । অর্থাৎ এ তিনটি কাতায় একটা বিষয়ই গোটা কবিতার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে
৪. কাতার ছন্দরীতি গজলের ছন্দরীতিরই অনুরূপ। গজলে যেমন দুইটি পক্তি একটি সুসম্পূর্ণ unit, কাতাতেও তেমনি। গজনের মতো কাতায়ও দুই পঙ্ক্তিতেই একটা ভাবকে সম্পূর্ণতা দান করা হয়। তবে কাতায় মালা বা মাতা থাকে না। উদাহরণ –
শুধু “প্রেম সে তো বাসনার খুন আর তো দেখি না কিছু
প্রাণে প্রাণে গাঁথা মালা ঝরে পড়ে ঝোড়ো বাতাসের পিছু ।”
(ঐ, ১৩ নং কবিতা)
“এমন ঘরের প্রয়োজন আজ নেই যার চাল-চুলো, প্রতিবেশী কী বা সহায়তাকারী না থাকুক,
e
। সেই ভালো ।” (ঐ, ৩৩ নং কবিতা
কাসিদা : কাসিদা একটি ফারসি শব্দ যার অর্থ কবিতার ছন্দে কোন প্রিয়জনের প্রশংসা করা। মূলত আরবি শব্দ 'কাসাদ' থেকে ফার সি শব্দ 'কাসিদা' এসেছে।
কাব্যের যে রীতিতে কোন ব্যক্তির বা মহৎ বস্তু র স্তুতিমূলক বর্ণনা করা হয়, সে রীতিকে কাসিদা বলে।
**কাসিদা কি??, কাসিদার বৈশিষ্ট্য কাসিদার গঠন শৈলী কাতা কাসিদার মধ্যে পার্থক্য ---
কাসিদার গঠনশৈলী :
১. গজলের মতো উর্দু কাসিদাও ফারসি কাসিদারই অনুকরণ ও অনুসরণ। গজলে যেমন কবি চিত্তের ভাবনাই প্রধান, কাসিদা য় তেমন নয়।
২. কামিদার কাব্যরীতি অনেকটা বস্তুনির্ভর বা objective. তবে বক্তব্যের প্রকৃতি ভেদে তাতে গীতি কবিতার মূল বৈশিষ্ট্য এসে যাওয়াও দো- ষের বলে গন্য নয়।
৩. ফারসি ও উর্দু কাসিদার উৎপত্তি ও বিকাশ রাজতন্ত্রের যুগে হওয়ায় সেগুলোতে রাজপুরু ষদের স্তুতিই বেশি উচ্চারিত হয়। যেমন: মির্জা গালিব তাঁর 'দীওয়ান-ই-গালিব' গ্রন্থের ৫০ নং কবিজয় দিল্লির বাদশাহ্ বাহাদুর শাহ্- এর স্তুতি গেয়েছেন। উদাহরণ –
তত তোমার আকাশ সমান দিল্লি
শাহান শাश, শাসন তোমার সূর্যস্বরূপ জীবন স্বরূপ আহা!”
৪. কাসিদার কবি-কর্মে অবাধ কল্পনা বিস্তা- রের অবকাশ আছে।
৫. কাসিদা কমপক্ষে ১৫ couplet বা ত্রিশ পঙ্ক্তির হয় । ঊর্ধ্বপক্ষে কত বড় হবে তার কোনো নিয়ম নেই ।
৬. গজলের মতো কাসিদারও দ্বিতীয় গ ক্তিতে রদিফ বা কাফিয়ার মিল থাকবে। কিন্তু তাতে মাহলা বা মাতা থাকবে না। উদ- হরণ -
বেঁচে থাক প্রভু, হাজার বছর প্রতিটি
বছরে দিন।
পঞ্চ হাজার দশেক করে গো, আল্লা তোমারে * দিন।”
("দীওয়ান-ই-গালিব, ৫০ নং
৮) কবিতা)
সাহিত্যিক ইবনে কুতাইবাহ কাসিদাকে তিনটি অংশে বিভক্ত করেছেন —
• প্রথম অংশ নসিব’: শুরু হবে থেকে । উদাহরণ স্মৃতিকাতরতা
" ছিলাম আমি তো দরিদ্র এক গৃহকোনে সমাসীন, ছিলাম হৃদয় অনুভূতি নিয়ে একান্তে হয়ে লীন।”
দ্বিতীয় অংশ ‘তায়াল্লাস' : এতে স্মৃতিকাতরত বিবরণ থাকবে, সাথে থাকবে গোষ্ঠীর জীবন- যাত্রা, প্রকৃতির বর্ণনা, এরপর আবেগ- আছন্ন- তা থেকেই দেয়া হবে অভিযাত্রার বর্ণনা, যা 'রাহিল' নামে পরিচিত। উদাহরণ
কত আর লোক আগুন পোয়ায় কত পারে তাপ সতে- হে খোদা, বাঁচাও জাহান্নামের আগুনের ভয় হতে।” (ঐ-২য় অংশ)
তৃতীয় অংশ 'উপদেশ' : ১. ফাথর : স্ব-গোষ্ঠীর গুনকীর্তন করা হবে, ২. হিজা : অপরাপর।
গোষ্ঠী সম্পর্কিত স্যাটায়ার স্থ করা হবে। ৩. হিকাম : প্রচার করা হবে নৈতিক বানী। উদাহরণস্বরূপ দীওয়ান-ই-গালিব' গ্রন্থের ৫০ নং কবিতার শেষ অংশ
“ বেঁচে থাক প্রভু, হাজার বছর প্রতিটি বছরে দিন পঞ্চ হাজার দশেক করে গো,আল্লা তোমারে দিন।ত
উপসংহার : সুতরাং পরিশেষে বলা যায় ও ফারসি সাহিত্যের কবিগণ অন্যান্য কাব্যরীতির মতো কাতা ও কাসিদা কাব্যরীতির মাধ্যমে তাঁদের কল্পনা, অনুভূতি, বর্ণনা করেছেন। এ দুই কাব্যরীতির মধ্যেও স্তুতিমূলক কবি কর্মে কল্পনা বা ব্যক্তিগত অনুভূতি বিস্তা- রের অবকাশ থাকায় তা উর্দু ও ফারসি সাহিত্যের অনেক কবিকে উর্দু ও ফারসি কাতা ও কাসিদা রচনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল ।
0 মন্তব্যসমূহ