Hot Posts

6/recent/ticker-posts

পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাস আলোচনা /চরিত্র

 

--পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাস আলোচনা চরিত্র পদ্মা নদীর মাঝি সারাংশ পদ্মা নদীর মাঝির চরিত্র পদ্মা নদীর মাঝি  প্রশ্ন উওর কুবের চরিত্র কপিলা চরিত্র সার্থকতা --- 

**বিঃদ্র-বাংলা বিভাগের সকল পড়াশোনা পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন   https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1 
 
পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাস আলোচনা /চরিত্রঃ-

সাহিত্যের অনেকগুলো শাখার মধ্যে উপন্যাস অন্যতম।বাংলা সাহিত্যে যে সকল উপন্যাসিক পাওয়া যায়,তাদের মধ্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম।মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯০৫৬ সালে মৃত্যু বরণ করেন।তিনি তার জীবদ্দশায় যে সকল সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি করেছেন তা বাংলা সাহিত্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে রয়েছে। তার রচিত উপন্যাস গুলোর মধ্যে রয়েছে ঃঃ-- জননী,দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মা নদীর মাঝি,পুতুল নাচের ইতিকথা, শহরতলী,চতুষ্কোণ, জীবন্ত ইত্যাদি। তার লেখা উপন্যাসগুলোর মধ্যে "পদ্মা নদীর মাঝি" উপন্যাসটি অন্যতম।'পদ্মানদীর মাঝি’ (১৯৩৬) মানিকের চতুর্থ উপন্যাস। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে উপন্যাসটির ইংরেজি অনুবাদ 'Boatman of the Padma' প্রকাশিত হয়।
‘পদ্মানদীর মাঝি' উপন্যাসে পদ্মার তীর সংলগ্ন কেতুপুর ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের পদ্মার মাঝি ও জেলেদের বিশ্বস্ত জীবন আলেখ্য চিত্রিত হয়েছে। শহর থেকে দূরে দীন-দরিদ্র জেলে ও মাঝিদের যে জীবনচিত্র এতে অঙ্কিত হয়েছে তা যেন বাস্তবের সঙ্গে হুবহু মিলে যাওয়া এক বিশ্বস্ত জীবনচিত্র। জেলেপাড়ার মাঝি ও জেলেদের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি কান্না-অভাব-অভিযোগ— যা কিনা প্রকৃতিগতভাবে সেই জীবনধারার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ তা এখানে বিশ্বস্ততার সাথে চিত্রিত হয়েছে।
‘পদ্মানদীর মাঝি’ বাংলা সাহিত্যের একটি বিশিষ্ট আঞ্চলিক উপন্যাস। অলঙ্কার শাস্ত্রে আঞ্চলিক উপন্যাসের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, সে অনুসারে সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে, এটি একটি সার্থক আঞ্চলিক উপন্যাস। উপন্যাসের আঙ্গিক গঠন, রচনাশৈলী, পাত্র-পাত্রীদের মুখে আরোপিত ভাষা, জীবনাচরণ, জীবনচর্চা এ সবই আঞ্চলিক উপন্যাসেরই পরিচয়বাহী। এ সকল কারণে উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যে বিশিষ্টতার দাবিদার এবং এ উপন্যাসের জগৎ বাংলা সাহিত্যের পাঠকের কাছে সম্পূর্ণ এক অজানা বস্তু বলে মনে হয়। নানা কারণে উপন্যাসটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে আরোহণ করে। এই উপন্যাসটির জনপ্রিয়তার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিশিষ্ট সমালোচক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর 'বঙ্গ সাহিত্যে উপন্যাসের ধারা' গ্রন্থে লিখেছেন–“ইহার একটি কারণ অবশ্য বিষয়ের অভিনবত্ব—পদ্মানদীর মাঝিদের দুঃ-- সাহসিক ও কতকটা অসাধারণ জীবনযাত্রার ও আকর্ষণী শক্তি। দ্বিতীয় কারণ, পূর্ববঙ্গের সরস ও কৃত্রিমতাবিবর্জিত কথ্য ভাষার সুষ্ঠু প্রয়োগ। কিন্তু উপন্যাসটির সর্বশ্রেষ্ঠগুণ হইতেছে ইহা সম্পূর্ণরূপে নিম্নশ্রেণী অধ্যুষিত গ্রাম্য জীবনের চিত্রাঙ্কনে সূক্ষ্ম ও নিখুঁত পরিমিতিবোধ, ইহার সঙ্কীর্ণ পরিধির মধ্যে সনাতন মানব প্রবৃত্তিগুলির ক্ষুদ্র সংঘাত ও মৃদু উচ্ছ্বাসের যথাযথ সীমা-নির্দেশ।”

জেলে অধ্যুষিত গ্রামের জীবনযাত্রাই আলোচ্য উপন্যাস টির মূল উপজীব্য। এখানকার সমস্ত কিছুই যেন পরিচালিত  হয় প্রকৃতির অমোঘ নির্দেশে। এই আঞ্চলিক উপন্যাসটির সার্থকতা বিষয়ে সমালোচকের এ উক্তিও সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য। এ উপন্যাসটির কোথাও “এই ধীবর পল্লীর জীবনযাত্রায় শিক্ষিত আভিজাত্যের মার্জিত রুচি ও উচ্চ আদর্শবাদের ছায়াপাত নাই।” এ উপন্যাসটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সমালোচক যথার্থই বলেছেন— “অধিবাসীদের ঈর্ষা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রীতি, সমবেদনা, চক্রান্ত, দলাদলি সমস্তই বাহিরের মধ্যস্থতা ছাড়া নিজ প্রকৃতি নির্ধারিত সঙ্কীর্ণ কক্ষপথে আবর্তিত হইয়াছে।”
একটি সুখপাঠ্য, সার্থক ও বিশিষ্ট আঞ্চলিক উপন্যাস হিসেবে এখানেই এর সার্থকতা।

**উপন্যাসের চরিত্র চিত্রণ, সামাজিক প্রেক্ষাপট ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনাঃ-

(১)কুবেরঃ-

‘পদ্মানদীর মাঝি' উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কুবের।কুবের এ উপন্যাসের নায়কও। সংসারের অভাব-দারিদ্র্য ও দুঃখ-বেদনাদগ্ধ কুবের এক দিকে যেমন তার সংসারের অভিভাবক, তেমনি সে চিরপঙ্গু মালার স্বামী, অন্য দিকে সে তার সন্তানদের স্নেহময় পিতা। শহর থেকে দূরে পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত অজগ্রাম কেতুপুরের সে বাসিন্দা। পদ্মানদীর সে এক পাকা মাঝি। সে নদীতে তার অন্যান্য সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে মাছ ধরে, বিশেষত ইলিশ মাছ ধরে সে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করে।কুবের গরিবের মধ্যেও গরিব, ছোটলোকের মধ্যেও ছোটলোক। তা সে হবেই বা না কেন? এ সংসারের সমস্ত দুঃখ-তাপ, ব্যথা-বেদনার সেও সমান অংশীদার। সংসারে তার অনেক অভাব, অনেক কষ্ট, তাই সে সৎ থাকার চেষ্টা করেও অনেক সময় সৎ থাকতে পারে না। এই কুবের তার বাড়িতে আশ্রিত ঘুমন্ত হোসেন মিয়ার পকেট থেকে দু এক পয়সা কম্পিত হস্তে চুরি করতেও দ্বিধা করে না। তার বিবেক তাকে শাসায়। তা ছাড়া পাছে হোসেন মিয়া জেনে ফেলে, সে ভয়েও সে তটস্থ থাকে। পরবর্তীতেও এ চুরির স্মৃতি তার মধ্যে সদা-জাগরুক ছিল। এই পাপবোধ ও অপরাধবোধ যেন তাকে সব সময়ই তাড়িয়ে বেড়াতো। সদাসর্বদাই হোসেন মিয়ার সামনে সে যেন এতটুকু হয়ে থাকত। তার মধ্যে অন্যান্য চুরির স্বভাবও আছে। প্রসঙ্গত, সবার অলক্ষে শেতল বাবুকে সে পয়সার লোভে মাছ দেয়। শৈতল এক ঘুঘু। মাছ নিয়ে সে কেটে পড়ে। পয়সা দেয় না। কুবের বলে ‘হালা ডাকাইত। কুবের সহজ সরল পদ্মানদীর মাঝি—তাকে অনেকেই ঠকায়।
একেবারে নিম্নবিত্ত ও নিম্নতম পর্যায়ের মানুষ কুবের। তার মধ্যেও স্বাভাবিক দোষগুণ ও কামনা-বাসনাও আছে। তা ছাড়া আছে তার একটি রোমান্টিক মন। সে তার স্ত্রী মালার বোন কপিলার প্রতি আদিম আকর্ষণ অনুভব করে। কপিলাও কুবের মাঝির মধ্যে তার প্রতি আদিম কামনা সৃষ্টিতে তৎপর হয়ে ওঠে। এই কুবের এক সময় ঘটি ও টাকা চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত হলে জেল খাটার ভয়ে হোসেন মিয়ার কাছে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করে। তার পর হোসেন মিয়ার কথা মতো সে হোসেন মিয়ার স্বপ্নের ময়নাদ্বীপের উদ্দেশে যাত্রা করে। কপিলা বলে—‘আমারে নিবা না মাঝি?' হ্যাঁ, সে কপিলাকেও সাথে নেয়। তার পর চির কালের জন্য চলে যায় হোসেন মিয়ার ময়নাদ্বীপের উদ্দেশে। পেছনে রেখে যায় তার সমস্ত অতীত জীবন আর পঙ্গু, অসহায় মালা ও তার সন্তান-সন্ততিদের। এক অসংস্কৃত, আদিম নিষিদ্ধ ভালোবাসার প্রতি আকৃষ্ট কুবের কপিলাকে নিয়ে চলে যায় হোসেন মিয়ার ময়নাদ্বীপে।

(২) কপিলাঃ-

‘পদ্মানদীর মাঝি' উপন্যাসের নায়িকা কপিলা। ব্যক্তিগত পরিচয়ে সে মালার বোন, সাংসারিক পরিচয়ে সে এক জনের স্ত্রী। মালার মত সে পশু নয়। পুরুষের হৃদয়ে আদিম আবেদন সৃষ্টিকারী কপিলা কুবেরের সাথে যেন উদাসীনভাবে প্রেমের অভিনয় করে যায়। তার স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় সে বাপের বাড়িতে চলে আসে। অনেক দিন কাটায় সেখানে। বন্যার সময় সে কিছু দিন থাকে কেতুপুরে কুবেরের বাড়িতে।চিরপঙ্গু মালার স্বামী কুবের তার শ্যালিকা কপিলার কিছু অসঙ্গত আচরণের কাছে অসহায় বোধ করতে থাকে। অবচেতন মনে কপিলার প্রতি সে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। এ দিকে কপিলা কিছুটা বাচাল ও চপল প্রকৃতির মেয়ে। সেই সাথে তার মধ্যে আছে যথেষ্ট উপস্থিত বুদ্ধি। সব কিছু পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে কপিলাকে তাই বলা যায় চতুর, চপল ও উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন এক যুবতী। তার আচরণের মধ্যে কিছুটা আদিম ও অসংস্কৃত মনেরও পরিচয় লক্ষণীয়। যা সমাজের চোখে অনেকটাই নিন্দনীয়।
কপিলার অন্য পরিচয় সে এক জনের স্ত্রী। স্বামীর সাথে ঝগড়া-ফ্যাসাদ করে বাপের বাড়িতে চলে এলেও সেই স্বামী ও সেই সংসারের প্রতি তার দুর্বলতা রয়েছে। নারীরা যতই চপল ও অসংস্কৃত হোক না কেন প্রকৃতিগতভাবেই সংসারের প্রতি তারা খুবই দুর্বল এবং অনুগত হয়ে থাকে। কপিলাও তার ব্যতিক্রম নয়।
চপলমতি কপিলা ইচ্ছা করেই হোক আর অনিচ্ছাকৃতই হোক, কুবেরকে কিছুটা ব্যতিব্যস্ত করে। ফলে কুবের কিছুটা অসহায় বোধ করতে থাকে। তার পর সময়ের চলমান ধারায় কপিলার ভাগ্য পরিবর্তিত হয়ে যায়। কপিলার সতীন মারা গেলে তার স্বামী তাকে আবার নিতে এলে কপিলা অনুগত স্ত্রীর মতো তার সাথে আবার আকুর টাকুরে চলে যায়। এতে তার সংসার ও বিষয়বুদ্ধিরও পরিচয় পাওয়া যায়।
অবশেষে, এই কপিলাই আবার কুবেরের কাছে গিয়ে হাজির হয় এবং পূর্ব প্রেমভাবের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে থাকে। কুবের কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায় না যে, কপিলা তাকে ভালবাসে। ভাবে, এ সব তার ছলচাতুরী, এ সব তার অভিনয়। কিন্তু কুবের যখন চুরির দায় এড়াতে হোসেন মিয়ার ময়নাদ্বীপে যেতে মনস্থ করে, তখন কপিলা তার অতীত জীবনের সব কিছু ফেলে সেই যাত্রায় কুবেরের সাথী হয়। চিরসাথী। এ ভাবে এক আদিম, অসংস্কৃত ও নিষিদ্ধ প্রেম এক সময়ে সংসার ত্যাগের মাধ্যমে পরিণতি লাভ করে।

(৩.) হোসেন মিয়াঃ-

‘পদ্মানদীর মাঝি' উপন্যাসের রহস্যময় অথচ গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রধান চরিত্র হোসেন মিয়া। নোয়াখালির এই লোকটি বহুদর্শী ও বহু অভিজ্ঞ এক ব্যক্তি। কেতুপুর এলাকায় প্রথমে তাকে দীনহীন ও কপর্দকশূন্য একব্যক্তিৰূপে দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু অসাধারণ কর্মী ও মানসিক শক্তির অধিকারী উদ্যমী এই ব্যক্তিটির ভাগ্য পরিবর্তনটা যেন ভেল্কিবাজির মত মনে হয়। নানা দিকে নানা রকমের ব্যবসার মধ্য দিয়ে সে ফুলে কেঁপে উঠেছিল। এই ব্যক্তিটি এক সময় কেতুপুর ও সংলগ্ন এলাকার দীন দরিদ্র জেলে মাঝিদের পরম বন্ধুরূপে আবির্ভূত হয়েছিল। সে হয়ে গিয়েছিল তাদের নিত্য দিনের সুখ-দুঃখের সাথী। হয়ত এ সব সহযোগিতা দ্বারা সে নানা রকম মতলব হাসিল করত, তার প্রতি অনেক মানুষের হয়ত অনেক রকমের অভিযোগ ছিল। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার যে কেউ তার প্রতি কোন অভিযোগও করতে পারত না আবার কোন প্রতিশোধও নিতে পারত না। এর কারণ ছিল, দীন-দরিদ্র জেলেদের এক চরম অসহায়ত্ব। হোসেন মিয়াকে দেখলে তারা সব অভিযোগ ভুলে যেত আর তার প্রতি তারা গভীর আকর্ষণ অনুভব করত।
নোয়াখালি সন্দ্বীপ থেকে সুদূর পূর্ব-দক্ষিণে সমুদ্রের বুকে হোসেন মিয়া একটি দ্বীপের পত্তনি নিয়েছিল। বিভিন্ন এলাকার দরিদ্র মানুষদের নানা উপকারের মধ্য দিয়ে সে সেই এলাকা থেকে লোকজন নিয়ে ময়নাদ্বীপে লোকবসতি গড়ে তুলেছিল। সত্যি, লোকটার উদ্যম ও কর্মশক্তির প্রশংসা না করে পারা যায় না। এই ময়নাদ্বীপকে ঘিরেই হোসেনের স্বপ্নকল্পনার বেসাতি। এটাই যেন তার জীবনের এক মাত্র স্বপ্ন। সেখানে সে এমন একটা জনসমাজ গড়ে তুলতে চায়, যেখানে দলমত ও ধর্মমত নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ একটা মানবীয় মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ গড়ে তুলবে। মনুষ্যত্ব ও মানবতাই হবে সে সমাজের প্রধান ভিত্তি।
এই উপন্যাসে হোসেন মিয়ার চরিত্রের মধ্য দিয়ে লেখক যেন তাঁর সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন সাকার করে তুলেছেন। সব কিছু বিবেচনা করে বলা যায় যে, হোসেন মিয়া শুধু এই উপন্যাসের নয়, সমগ্র বাংলা সাহিত্যের একটি অভিনব চরিত্র।

 ৪. অন্যান্যঃ-
কুবের, কপিলা ও হোসেন মিয়া ছাড়াও আরো কয়েকটি চরিত্র এই উপন্যাসে রয়েছে। যেমন— রাসু, ধনঞ্জয়, পীতম মাঝি, মালা, গণেশ, আমিনুদ্দি, রসুল, ফাতেমা প্রভৃতি চরিত্র। এ সব চরিত্রাবলির সমন্বয়ে এ উপন্যাসটিতে একটি সার্থক সমাজচিত্র অঙ্কনের কৃতিত্বদেখিয়েছেন ঔপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।সব কটি চরিত্রই যেন এই উপন্যাসের পটভূমি এবং সমাজের বাসিন্দাদের অকৃত্রিম রূপায়ণ। আশ্চর্য এবং অদ্ভুত শৈল্পিক সৌকর্য ও পরিমিতি দিয়ে লেখক অতি যত্নসহকারে চরিত্রগুলোকে গড়ে তুলেছেন। এরা এ সমাজের একেবারেই খাঁটি ও অকৃত্রিম চরিত্র। তারা একান্তভাবেই যেন এই সমাজেরই উপযুক্ত।

পদ্মা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী। এর ভাঙন প্রবণতা ও প্রলয়ংকরী স্বভাবের কারণে একে বলা হয় 'কীর্তিনাশা' বা রাক্ষুসী পদ্মা। এ নদীর তীরের নির্দিষ্ট কোনো সীমারেখা নেই। এই নদী এলাকার কয়েকটি গ্রামের জেলেদের জীবনের নিখুঁত চিত্র এ উপন্যাসে চিত্রিত হয়েছে। এই পদ্মানদীর সাথেই তাদের জীবন ও জীবিকার অবিচ্ছেদ্য বন্ধন গড়ে উঠেছে।

***আঞ্চলিক উপন্যাস হিসেবে উপন্যাসটির সার্থকতাঃ-

বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কয়েকটি আঞ্চলিক উপন্যাসের নাম করলে প্রথমেই মুখে আসবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি' উপন্যাসের নাম বিশ্বের একাধিক ভাষায় অনূদিত ও জননন্দিত এ উপন্যাসটি কতিপয় বৈশিষ্ট্যের জন্য শ্রেষ্ঠ আঞ্চলিক উপন্যাসের মর্যাদা পেয়েছে।

**যেমনঃ—

১. এ উপন্যাসের পটভূমি পদ্মানদীর তীরবর্তী কেতুপুর সংলগ্ন যে এলাকাটির মানুষের জীবনচিত্র এখানে অঙ্কিত হয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে বাইরের সম্পর্ক বিবর্জিত।
২. এ উপন্যাসের পাত্র-পাত্রীরা একান্তভাবেই এই এলাকা ও পরিবেশের উপযুক্ত।
 ৩. এ উপন্যাসের পাত্র-পাত্রীদের মুখে প্রযুক্ত কৃত্রিমতা বিবর্জিত আঞ্চলিক ভাষা। 
৪. উপন্যাসের বর্ণনার ভাষা সাধু, কিন্তু পাত্র-পাত্রীদের মুখের ভাষা আঞ্চলিক। উপন্যাসের লেখকের নিজস্ব বর্ণনার ভাষা ও পাত্র-পাত্রীদের মুখে প্রযুক্ত আঞ্চলিক ভাষার পরিমিত ও শৈল্পিক প্রয়োগ উপন্যাসটিকে উপভোগ্য ও সার্থক করে তুলেছে।

***তথ্যসংগ্রহঃ-
পদ্মা নদীর মাঝি-মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়(সম্পাদনা-মুহাম্মদ জালালউদ্দীন বিশ্বাস) 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ