***নাট্যকার সাঈদ আহমেদ ---
সাঈদ আহমদ:-
(১ জানুয়ারি ১৯৩১ - ২১ জানুয়ারি ২১ ২০১০) ছিলেন বাংলাদেশি নাট্যব্যক্তিত্ব, যাঁকে বাংলা নাটকে আধুনিক নাট্যধারার প্রবর্তক বলে বিবেচনা করা হয়।[১][২] নানামুখী প্রতিভার অধিকারী হলেও সাঈদ আহমদ মূলত নাট্যকার হিসেবেই খ্যাতিমান ছিলেন। ষাটের দশকে ইংরেজি ভাষায় দি থিং শীর্ষক নাটক রচনার মাধ্যমে তিনি বাংলা নাটকে ইউরোপীয় প্রতীকীবাদী অসম্ভবের (ইংরেজি: Absurd) নাট্যধারা প্রবর্তন করেন।[৩] প্রকৃতির শক্তির বিরুদ্ধে মানুষ কীভাবে লড়াই করে টিকে থাকে তাঁর লেখায় তা তীব্রভাবে উঠে এসেছে। কালবেলা (১৯৬২), মাইলপোস্ট (১৯৬৫), এক দিন প্রতিদিন (১৯৭৪), শেষ নবাব (১৯৮৮) ইত্যাদি তাঁর প্রসিদ্ধ নাটক। তাঁর কয়েকটি নাটক ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান ও ইতালীয় ভাষাতেও অনূদিত হয়েছে।[৪] জীবিকাসূত্রে তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য ছিলেন।
ছেলেবেলা থেকেই সাঈদ আহমদ একটা সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠছে। মেজো ভাই নাজির আহমদ এবং সেজো ভাই হারি রহমান নিজ নিজ ক্ষেত্রে কৃতী পুরুষ। অসাধারণ কন্ঠারের অধিকারী নাজির আহমদ তাঁর যৌবনের ঊষাকাল থেকেই নিজেকে একজন সফল বেতার ঘোষক এবং অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আগে তিনি লেখালেখির কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তার হাত থেকে কিছু গল্প, গান ও কয়েকটি বেতার নাটিকা উৎসারিত হয়েছিলো। তাছাড়া তাঁর বাচনভঙ্গি ছিলো এমনই মধুর এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ যে আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। তাদের ১৭নং আশেক লেনের বাসায় তখন আসতেন ফতেহ লোহানী, আব্দুল আহাদ, কাদের জামেরী এবং আরো কেঁউ কেঁউ।
পরবর্তীকালে সেই একই বাসার নিভৃত কোণে একটা ছোট ঘরে, আমরা হাসান হাফিজুর রহমান, আলাউদ্দীন আল আজাদ, বোরহানউদ্দি খান জাহাঙ্গীর, চিত্রকর আমিনুল ইসলাম, মুর্তজা বীর এবং আমি - গুলজার করতাম। অবিশ্যি ঘরের প্রকৃত বাসিন্দা চিত্রকর হামিদুর রহমান ছিলেন সেই আড্ডার কেন্দ্রবিন্দু। পঞ্চাশের দশকেনা সেই আদিপর্বে আমরা শিল্প সাহিত্য বিষয়ে কত যে তুলকালাম আলাপ আলোচনা করেছি তার কোনো লেখাজোখা নেই।
সাঈদ আহমদ কখনো কখনো আমাদের আড্ডায় শরিক হতেন, তবে বেশি ভাগ সময় তিনি কাটাতেন সেতার এবং সঙ্গীত শিল্পীদের সঙ্গে। মনে পরে তাঁর কাছে প্রায়শই আসতেন ওস্তাদ মাস্তান গামা, ওস্তাদ খাদেম হোসেন খান এবং তরুণ ওস্তাদ বাহাদুর হোসেন খান। নিজের সাধনায় এবং তাঁদের সুপরামর্শে সাঈদ আহমদ অল্প সময়ে একজন প্রতিশ্রুতিশীল সেতারশিল্পী হয়ে উঠেছিলেন। মনে পড়ে, তখনকার একজন উদীয়মান পদ্যকার অর্থাৎ আমার একটি নড়বড়ে পদ্য এবং সংক্ষিপ্ত বেতার-আলেখ্য অবলম্বনে তিনি তখন কয়েকটি অবেত্রা রচনা করেছিলেন রেডিওর জন্যে। সেগুলো বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিলো।
এই ঘটনার বেশ কয়েকবছর পর হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতোসাঈদ আহমদ আবির্ভূত হলেন একজন নাট্যকার হিশেবে, যদিও কোনো কোনো বাংলা নাটকে তিনি অনেক আগেই অভিনয় করেছিলেন। তিনি যে সাহিত্য ক্ষেত্রে পদার্পণ করবেন, এর কোনো আভাস আমি অন্ততঃ পাইনি। হাতা তিনি সবসময় নিশ্বাস নিয়েছেন সাংস্কৃতিক আবহাওয়ায়, কিন্তু লেখক হবার বাসনা তাঁর কণ্ঠে কখনো উচ্চারিত হয়েছে বলে মনে পড়ে না।
যৌবনে তিনি ইউরোপ ভ্রমণ করেছেন, কর্মসূত্রে বহুদিন ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে। তখন থেকেই তার সাহিত্যভাবনার প্রকৃত সূচনা এবং আমার দৃঢ় বিশ্বান পাশ্চাত্য ও প্রাচার ঐতিহ্যের টানাপোড়েনেই তিনি খুঁজে পান নাটক রচনার মূল সূত্র। যা হোক, ১৯৬১ সালে তাঁর প্রথম নাটক '' পাঠের পর আমি নানা কারণে চমৎকৃত হই। তার সাহিত্যয়ী, নর সূত্রপাত অধিবাস্তব নাটক রচনার কলাকৌশদের আত্তীকরণ, নাটকের বিষয়বস্তুর অভিনবত্ব-এর প্রত্যেকটি ছিলো আমার পক্ষে বিস্ময়ের ব্যাপার। যার কথা ছিলো একজন মুরসিদ্ধ শিল্পী হবার তাঁর প্রতিভার স্পর্শে মুঠ হলো বাংলাদেশের প্রথম প্রকৃত অধিবাস্তব । অ্যাবসার্ড) নাটক এক্ষেত্রে, বলা যায়, তিনি একজন পথিকৃৎ-এর ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি খুব বেশি নাটক লেখেননি, কিন্তু তাঁর 'কালবেলা', 'মাইল পোস্ট', 'তৃষ্ণায় ' ইতিমধ্যেই আমাদের নাট্য সাহিত্যের মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। কেউ কেউ বলতে পারেন তিনি স্যামুয়েল বেকেট, আয়েনেস্কো প্রমুখ বিশ্ববরেণ্য নাট্যকারের কাছ থেকে অনেক কিছু গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আমি বলি, গ্রহীতা যদি হন প্রতিভাবান তাহ'লে সেই ঋণ সুদাসলে খাটিয়ে তিনি নিজে লাভবান তো হনই উপরন্তু যে ব্যবসায়ে তিনি নিয়োজিত তাকেও জলজনে করে তোলেন।
• সাঈদ আহমদ নাটক লিখে তাঁর পরবর্তী নাট্যকারদের কাজ বেশ কঠিন করে দিয়েছেন। হেলা ফেলা করে, যেন তেন প্রকারে নাটক রচনাতে শিরোপা লাভের কোনো উপায় নেই আর। নাট্যক্ষেত্রে নিজস্ব সাক্ষর রাখতে হলে যে একজন নাট্যকারকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় তা সাঈদ আহমদ-এর নাটকসমূহ পাঠ করলে বিংবা দেখলে বোঝা যায়। পাশ্চাত্য উপকরণের সঙ্গে দেশজ উপাদান মিশিয়ে নাটক লেখার সর্বপ্রথম সার্থক উদ্যোগ আমাদের দেশে সম্ভবতঃ সাঈদ আহমদই নিয়েছেন। তাঁর নাটকে অ্যাকশন বলতে গেলে প্রায় অনুপস্থিত, তিনি আমাদের বাধ্য করেন নাটকের পাত্রপাত্রীর সংলাপে কান পেতে রাখতে। এতটুকু অমনোযোগী হবার জো নেই, তাদের কথাবার্তা অবলীলাক্রমে আমাদের জীবনের গভীরে নিয়ে যায়, জীবনের জটিল গ্রন্থিগুলোকে তুলে ধরে আমাদের সামনে। এ কাজটি যিনি দক্ষতার সঙ্গে করতে পারেন তিনি তর্কাতীতভাবে অসামান্য। ভাই সাইদ আহমদ সম্পর্কে যদি কেউ 'অসামান্য' শব্দটি প্রয়োগ করেনতাহলে তাঁর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা কঠিন।
সাঈদ আহমদ রচিত সর্বশেষ নাটকের নাম 'শেষ নবাব নাটকের কেন্দ্রবিন্স নবাব সিরাজদ্দৌলা সিরাজদ্দৌলাকে নায়ক করে বাংলা ভাষায় এর আগে বেশ কয়েকটি নাটক লেখা হয়েছে, গিরিশচন্দ্র ঘোষ এবং শচীন সেনগুপ্ত তো লিখেছেনই, ১৯৪৭ সাল থেকে এযাবত প্রায় বারোটি নাটক লেখা হয়েছে। এসব নাটকের মধ্যে গিরিশ ঘোষ এবং চীন সেনগুপ্তের নাটক দু'টিই বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, সন্দেহ নেই। বিশেষ করে শচীন সেনগুপ্তের নাটকটির বহু সংলাপ একদা বাংলার ঘরে ঘরে জনিত প্রতিজনিত হয়েছে। এখনো হয়।
যে বিষয় নিয়ে গিরিশচন্দ্র ঘোষ এবং শচীন সেনগুপ্তের মতো নন্দিত নাট্যকার লেখনী চালনা করেছেন, সে বিষয় অবলমবনে নতুন করে নিজে লেখা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। সাঈন আহমদ দীন নাট্যকার ; ফলে, এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে তিনি ছিলেন অকুণ্ঠিত। তিনি শেষ নবাব' (১৯৭৮ সালে লেখা শুরু করেন এবং শেষ করেন। ১৯৮৮ সালে। অর্থাৎ দশ বছর ধরে তিনি এই নাটকটি রচনা করেছেন। অন্য কোনো নাটক লিখতে ইতিপূর্বে সাঈদ আহমদ এত দীর্ঘ সময় ব্যয় করেন নি। প্রশ্ন উঠতে পারে, 'শেষ নবাব রচনা করতে এত সময় কেন লাগলো ? আমরা জানি, সৃষ্টির প্রক্রিয়া রহস্যময়। কোনো কোনো লেখা তাড়াতাড়ি হয়ে যায়, আবার কোনো কোনো রচনার পেছনে ব্যয়িত হয়। দীর্ঘ সময়। তাছাড়া নাটক লেখার সময় সাঈদ আহমদ-এর মনের পেছনে একটি চিন্তা সবসময় জাগ্রত ছিলো— সিরাজদ্দৌলা বিষয়ক দু'টি জননন্দিত নাটক আমাদের নাট্যসাহিত্যে ভাস্বর হয়ে আছে; নাটক দুটির সাফল্য যে-কোনো নাট্যকারের পথে মস্ত বাধা, এই বাধা অতিক্রম করা দুরূহ কম। ফলে সাঈদ আহমদকে অনেক ভাবতে হয়েছে, পরিশ্রম করতে হয়েছে প্রচুর। সাঈদ আহমদের 'শেষ নবাব' বহুবার আদ্যোপান্ত পড়তে হয়েছে আমাকে নাট্যকারের অনুরোধে। আমি জানি নাটকের কোনো কোনো অংশ কতবার তিনি পরিমার্জনা করেছেন। যোগ-বিয়োগের পালা লেগেই ছিলো শেষ পর্যন্ত। অত্যন্ত সতর্ক লেখক বলেই তিনি একটি শব্দ ব্যবহার করার আগে অনেক চিন্তা করেছেন, যথোপযুক্ত শব্দটির খোঁজে কাটিয়েছেন ঘণ্টার পর ঘন্টা। পুরো দশবছর সর্বক্ষণ 'শেষ নবাবের কথাই ভেবেছেন, চরিত্রগুলোকে বিশ্লেষণ করেছেন বছরের পর বছর। এই নাটক রচনার পথে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বই পড়েছেন, সহিভ চরিত্রাঙ্কনের জন্যে বিতর্কিত লেখক নীরদ চৌধুরীর ক্লাইভ অব ইন্ডিয়া এটি খুঁটিে পড়েছেন। আত্মতৃত্তি শিল্পীর শত্রু, এই সত্য সাঈদ আহমদের কাছে উদ্ভাসিত, তাই তার পান্ডুলিপিতে লক্ষ্য করেছি পুনর্লিখনের নানা রূপ।তাঁর পূর্ববর্তী নাট্যকারদের পথ তিনি মাড়ান নি। যাতে তাঁদের লেখা প্রভাবাধিত করতে না পারে, সেদিকে কড়া নজর রেখেছেন। তাই, গাঙ্গন আহমদের 'শেষ নবাব' শেষ হয়েছে তিনটি অঙ্কে, সেখানে দৃশ্য বিভাজন বা পাননি। তিনি তাঁর নাটকে প্রত্যবোধ ও রচনাশৈলীর নবতা বজায় রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। কোনোরকম বাংলা ফ্যান্টাসিকে প্রশ্রয় দেন নি, অথচ তার পূর্ববর্তী নাট্যকারদের মধ্যে সেই দুটি <ন্তু বিস্তর ভালাপালা মেলে বসেছে। গিরিশচন্দ্র ঘোষ এবং শচীন সেনগুপ্ত উভয়েই সিরাজদ্দৌলার চরিত্রের গাম্ভীর্য পুরোপুরি ফুটিয়ে তুলতে পারেন নি। সিরাজ যখন রমনীদের সান্নিধ্যে আসেন তখন তার আচরণ নবাবসুলভ থাকে না, চাপল্য প্রকট হয়ে ওঠে। তখন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের খটকা লাগে। কিন্তু সাঈদ আহমদ বাংলার শেষ নবাবের চরিত্রের গভীর রূপটি সৃষ্টি করেছেন বিশ্বস্তভাবে, নাটকের কোনো অংশেই সিরাজদ্দৌলাকে লঘু কিংবা চতুলচিত্তের ব্যক্তি বলে মনে হয় না। যার ভাগ্যের সঙ্গে বাংলার নিয়তি জড়িত তিনি কী করে মেতে উঠবেন চপলতায় ? সাঈদ আহমদের এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের একজন নতুন সিরাজদ্দৌলা উপহার দিয়েছে। তিনি নাটকের নন্দনতাত্ত্বিক দিক সম্পর্কে সচেতন, এই সচেতনতা তাঁকে এটা উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে, যে-নাট্যকার চরিত্রের রূপায়নে শুধু শাদা এবং কেবল কালো রঙ-এর দিকেই ঝোঁকেন, এর মাঝখানকার কোনো বর্ণের দিকে দৃষ্টিপাত করেন না উঁচুদরের নাটক রচনায় তিনি সার্থক হতে পারেন না। সুপ্তি তাই ইন্জার ও ক্রাইলের চরিত্রে উড়তে গিয়ে শাদা কালো দুটো রঙকেই তিনি মিশিয়েছেন। সিরাজদ্দৌলাও এর ব্যতিক্রম নন।
অপ্রয়োজনীয় চরিত্রগুলোকে ছেঁটে বাদ দিয়েছেন সাঈদ আহমদ। তার অগ্রজ নাট্যকার হয়—গিরীশচন্দ্র ঘোষ ও শচীন সেনগুপ্ত—এমন কিছু চরিত্র সৃষ্টি করেছেন, যাদের অহেতুক প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। সাঈদ মাত্র একটি নারী চরিত্রের অবতারণা করেছেন শেষ নবাব-এ। ঘসেটি বেগম তাঁর নিজস্ব ফিরে অত্যন্ত জীব, শক্তিশালী চরিত্র, নাটকের জন্যে অপরিহার্য। সা জাহমন সহজেই আরো নারী চরিত্রের অবতারণা করতে পারতেন, জনপ্রিয়তা হাসিল করার উদ্দেশ্যে নাটকে জুড়ে দিতে পারতেন নৃত্যগীত। বি এ ক্ষেত্রে তাঁর সংযম প্রসেনীয়। তাছাড়া তিনি নাটকটিকে সিরাজের মৃত্যু পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান নি, পলাশীর প্রাত্তর থেকে নবাব সিরাজদ্দৌলার পলায়নের পরই নামিয়ে দিয়েছেন যবনিকা।
পলাশীর যুদ্ধের নানা তথ্য পরিবেশন করে সাঈদ আহমদ 'শেষ নবাব'-এ নতুন উপাদান যোগ দেন। এই দিকটির প্রতি তাঁর পূর্ববর্তী নাট্যকারগণ মনোযোগ দেন নি। মীরজাফরের বিখ্যাত নিষ্ক্রিয়তা সত্ত্বেও নবারের অনুগত হাজার হাজার সৈন্যসামন্ত, তবু কেন পরাজয় মেনেনিতে হলো সিরাজদ্দৌলাকে ? মীরজাফরের দোষ অনেক, তবে ঘটনার আরো বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে। সেদিকেই নাট্যকার সাঈদ আহমদ অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন। ওমরবেগ মীরজাফরের অঙ্গীকার সম্পর্কে যে তথ্য তুলে ধরেছেন তা' আমরা প্রথমবারের মতো সাঈদ আহমদ-এর নাটকে পাই। ক্লাইভ চরিত্রের রূপায়নে তিনি নতুন বিশ্লেষণের পরিচয় দিয়েছেন। যে চরিত্রটি সিরাজদ্দৌলার এক প্রধান প্রতিপক্ষ, যে ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সেই চরিত্রের এর বেশি গভীরে সাঈদ আহমদের আগে কোনো নাট্যকার যেতে পেরেছেন বলে মনে হয় না।
সংলাপের ওপরই একটি নাটক দাড়িয়ে থাকে। সংলাপ রচনাতেও সাঈদ আহমদ অন্যান্য নাট্যকারের ধরন পরিহার করে একটা স্বতন্ত্র ভঙ্গি আয়ত করেছেন। কম কথায় অধিক ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করাই তাঁর উদ্দেশ্য। আর এই উদ্দেশ্য তিনি সাধন করেছেন এমনই দক্ষতার সঙ্গে যে তারিফ না করে উপায় নেই। কোথাও একটি বাড়তি কথা নেই, পুরোপুরি নির্মেদ এই নাটক।
আরেকটি কথা। 'শেষ নবাবের পাণ্ডুলিপি পড়তে পড়তে বারবার আমার মনে পড়েছে সমকালীন বাংলাদেশের কথা। আর সবকিছু ছাপিয়ে সিরাজদ্দৌলার অন্তরালে এক অতিকায় ছায়ার মতো জেগে রয়েছেন সেই মহানায়ক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান যাঁর নাম। সৎ সাহিত্যের একটি গূদ এই যে তা কোনো বিশেষ কালে সীমাবদ্ধ থাকে না।
শামসুর রাহমান
ঢাকা, ২৮। ৮। ৮৮।
সংযুক্তি:-
https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%88%E0%A6%A6_%E0%A6%86%E0%A6%B9%E0%A6%AE%E0%A6%A6
0 মন্তব্যসমূহ