ঐতিহাসিকগণ তদনুযায়ী বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের তিনটি প্রধান যুগ-বিভাগ করে থাকেন—(১) আদি বা প্রাচীন যুগ, (২) মধ্যযুগ এবং (৩) আধুনিক যুগ। এগুলোর মধ্যে আবার সূক্ষ্মতর বিভাগ বা উপবিভাগও করা হয়ে থাকে। যেমন আদি মধ্যযুগ, মধ্য-মধ্যযুগ, অন্তঃ-মধ্যযুগ ইত্যাদি।
সকলের মতের মধ্যে যে সাধারণ অভিন্নতাটুকু পাওয়া যায় তাতে খুব সহজেই বাংলা সাহিত্যকে উপরিউক্তরূপে (ক. প্রাচীন যুগ খ. মধ্য যুগ গ. আধুনিক যুগ—এই তিনটি যুগে) চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু সমস্যা হয় কাল-পরিধি নির্ণয়ে তথা যুগের সন-তারিখ নির্ধারণে। < সঠিক কাল অবশ্য প্রায় কোনো প্রাচীন বা মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের নিদর্শনেরই বলা যায় না' >
যুগবিভাগের কয়েকটি ধ্রুপদী উদাহরণ দেখা যেতে পারেঃ-
***ড. সুনীতিকুমারের মতেঃ-
(১) প্রাচীন যুগ বা মুসলমান পূর্ব যুগ (৬৫০-১২০০ খ্রিঃ)
(২) তুর্কি বিজয়ের যুগ (১২০০-১৩০০ খ্রিঃ)
(৩) আদি মধ্যযুগ বা প্রাকচৈতন্য যুগ (১৩০০-১৫০০ খ্রিঃ)
(৪) অন্ত্য মাধ্যযুগ (১৫০০-১৮০০ খ্রিঃ)
(৫) চৈতন্য যুগ বা বৈষ্ণব সাহিত্য যুগ (১৫০০-১৭০ খ্রিঃ)
(৬) নবাবি আমল (১৭০০-১৮০০ খ্রিঃ)
(৭) আধুনিক যুগ (১৮০০-বর্তমান কাল) ড. গোপাল
***গোপাল হালদারের মতেঃ-
(১) প্রাচীন যুগ : ৯০০-১২০০ খ্রিঃ
(২) মধ্যযুগ: মুসলমান রাজত্বকাল ১২০০-১৮০০ খ্রিঃ
ক. যুগসন্ধিকাল : ১২০০-১৩৫০ খ্রিঃ
খ. প্রাক-চৈতন্য যুগ : ১৩৫০-১৫০০ খ্রিঃ
গ. চৈতন্য যুগ : ১৫০০-১৭০০ খ্রিঃ ঘ. নবাবি আমল : ১৭০০-১৮০০ খ্রিঃ
(৩) আধুনিক যুগ :১৮০০ থেকে বর্তমান
***-ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতেঃ-
(১) প্রাচীন যুগ : ৬৫০-১২০০ খ্রিঃ
(২) সন্ধিযুগ : ১২০০-১৩৫০ খ্রিঃ
(৩) মধ্যযুগ : ১৩৫০-১৮০০ খ্রিঃ (এর মধ্যে তিনি পাঠান। আমাল বলে ১৫৭৬ খ্রিঃ পর্যন্ত ধরেন)
(৪) নব্যযুগ : ১৮০০ থেকে বর্তমান কাল?
তাঁর এই যুগ বিভাগ অন্য সকলের মতকে ধারণ করেছে বলা চলে, শুধুমাত্রফরাসি পণ্ডিত সিলভা ল্যভি-র গবেষণার সূত্রের বাংলা সাহিত্যের আদিতম পদকর্তা 'মীননাথ' ৬৫৭ খ্রিঃ বর্তমান ছিলেন ধরে নিয়ে ৬৫০ খ্রিঃ বাংলা সাহিত্যের আরম্ভ বলে স্থির করেন। ৬৫০-১২০০ খ্রিঃ কালকে তিনি বৌদ্ধ-হিন্দুযুগ রূপে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে
বৌদ্ধকাল ৬৫০-১১০০ খ্রিঃ এবং হিন্দুকাল ১১০০-১২০০ খ্রিঃ কাল বলে নির্দেশ করেন। তাঁর মতে ধর্মমঙ্গলের আদি কবি ময়ূরভট্ট সম্ভবত সন্ধিযুগে বর্তমান ছিলেন; হিন্দুকালের কোনো বাংলা সাহিত্য পাওয়া যায়নি কারণ হিন্দু সেন রাজাগণ সংস্কৃতের উৎসাহদাতা ছিলেন, বাংলা নয়।
**বিভিন্ন পণ্ডিতের অভিমত দৃষ্টিভঙ্গী ও মূল্যায়নের সমন্বয়ে নিম্নরূপ যুগ-বিভাগ গ্রাহ্য বলে ধরে নেয়া যেতে পারে :-
(১)প্রাচীন যুগ (৬৫০-১২০০ খ্রিঃ)
(২)মধ্যযুগ (১২০০-১৮০০ খ্রিঃ)
মধ্যযুগকে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়ঃ-
ক) পরিবর্তনের যুগ (১২০০-১৩৫০ খ্রিঃ)
খ) আদি মধ্যযুগ (১৩৫০-১৫০০ খ্রিঃ)
গ) অন্ত্য মধ্যযুগ (১৫০০-১৮০০ খ্রিঃ)
(৩)আধুনিক যুগ (১৮০০ খ্রিঃ থেকে)
**ড. ক্ষেত্র গুপ্তের মতেঃ-
১৮০০ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত দেড়শ বছরকে সাধারণ ভাবে আধুনিক যুগ বলা চলে’। এই সময়-পরি- ধিকে তিনি কয়েকটি সুস্পষ্ট পর্বে ভাগ করে পাঠ করার পক্ষপাতী, কিন্তু সাহিত্যের ইতিহাসে পৰ্ববিভাগ সংক্রান্ত সন-তারিখ গুলো কড়াকড়িভাবে মেনে নেয়া কিছু কঠিন বলে তিনি মনে করেন। তাই তিনি এই যুগের ইতিহাসের চারটি সুস্পষ্ট সাহিত্যিক পর্বের অস্তিত্ব লক্ষ্য করতে বলেন :
(এক) ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ (১৮০০-১৮৫০) : নব জাগৃতির প্রস্তুতি;
(দুই) ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ (১৮৫০-১৯০০) : নব জাগৃতির সৃষ্টি উল্লাস;
(তিন) রবীন্দ্রপর্ব : তাবৎ রবীন্দ্র সাহিত্য ও তাঁর প্রভাবিত সমকালীন ও পরবর্তী সাহিত্য;
(চার) সাম্প্রতিক সাহিত্য (১৯০০-১৯৫০) : রবীন্দ্র ভাবমণ্ডলের বাইরের সাহিত্য
**তথ্যসংগ্রহঃ-
বাংলা ভাষা সাহিত্য উল্লেখ্য (মুহম্মদ দানীউল হক)
0 মন্তব্যসমূহ