**পাঠ সম্পাদনা কি? পান্ডুলিপি পাঠ ও পাঠ সম্পাদনা
**পাঠ সম্পাদনার উদ্দেশ্য এবং এর গুরুত্ব নিচে আলোচনা করা হলো।
**পাঠ সম্পাদনাবিদ্যার আবশ্যকতা
**পাঠ সম্পাদনার সহায়ক উপকরণ
--পাঠ সম্পাদনা কি?
ভাষা শিক্ষা দান পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন
সাহিত্য শিল্প সংস্কৃতি র সাথে যুগের পর যুগ মানুষ সম্পৃক্ত ছিলো।আর সেই সব পুরনো উপকরণ গুলোতে ফুটিয়ে তোলা হতো সেই সময়ের নানা আনুষঙ্গিক বিষয়বস্তু।পুরনো সেই সব শিল্প কিংবা সাহিত্য থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করার প্রক্রিয়ায় পাঠ সম্পাদনা।
"প্রাচীন ও মধ্যযুগের হাতে লেখা পুঁথির মূলপাঠ উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় টীকা-পাঠান্তর ভূমিকাসহ তা প্রকাশযোগ্য করে উপস্থাপন করার নামই পাঠ-সম্পাদনা।"
পাঠ সম্পাদনার উদ্দেশ্যঃ-
সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন কারণে প্রাচীন ও মধ্য যুগের লেখা নানা পুথি বিলুপ্তীর পথে,সেই সব পুরনো শিল্প ও সাহিত্য কর্ম পুনরায় উদ্ধার এবং সেখানে থাকা নানা উপকরণ থেকে প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু অনুসন্ধান করাই পাঠ সম্পাদনার উদ্দেশ্য। পাঠ-সম্পাদনার একাধিক উদ্দেশ্য রয়েছে। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, রচয়িতা নিজ হাতে যে-ভাষায়, যে বানানে, যে ছন্দে, যে-কলাকৌশলে তাঁর গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন, সেইসব বৈশিষ্ট্যসহ তাঁর গ্রন্থটির পাঠ পুনরুদ্ধার।
এখানে পাঠ-সম্পাদনার অন্যান্য গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও উদ্দেশ্যের কথা ব্যাখা করা যায়।
(এক) ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধারঃ-
একটি জাতির বিলুপ্তবান সম্পদ ও ঐশ্বর্য হচ্ছে তার পুরোনো পুঁথি- পরদি। পূর্বপুরুষের জ্ঞান, শিক্ষা ও সাহিত্যসাধনার রূপটি সুকায়িত আছে তার প্রাচীন পুঁথিপত্রের মধ্যে। আর সেইসব পুরনো ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার করা পাঠ সম্পাদনার উদ্দেশ্য।
(দুই) শিক্ষার স্বরূপ অনুসন্ধান :
পূর্বপুরুষের শিক্ষা, জ্ঞান ও সাহিত্যসাধনার বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্য অনুধাবন করা যায় তার প্রাচীন লিখিত নিদর্শন থেকে। মধ্যযুগের শিক্ষার সঙ্গে আমাদের আজকের সাধারণ শিক্ষার কী সম্পর্ক আছে এবং ঐতিহ্যবাহী শিক্ষার ধারা জনগণের মধ্যে কীভাবে বিদ্যমান তা বোঝার জন্য প্রাচীন পুঁথি-পুস্তক সম্পাদিত হওয়া দরকার।
(তিন) ভাষাতাত্ত্বিক উপকরণ সন্ধান :
ভাষাতত্ত্বের বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহের জন্য প্রাচীন পুঁথি-পত্রের সহায়তা একান্ত আবশ্যক। শব্দ ও বানানের রূপ, ভাষার বিবর্তনসূত্রের উপকরণ, ব্যাকরণিক উপাদান, এসবই প্রাচীন ও মধ্যযুগের পুঁথি থেকে যথাসাধ্য গ্রহণ করতে পারলে আমাদের ভাষার ইতিহাস পুনর্গঠন করা সম্ভব হবে। এজন্য দরকার প্রাচীন পুঁথির নিখুঁত ও সুদক্ষ সম্পাদনা।
**সাহিত্যের রুপরীতি সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন
(চার) অভিধান প্রণয়ন :
প্রাচীন ও মধ্যযুগের অভিধান প্রণয়নের জন্য প্রচুর মধ্যযুগীয় সম্পাদিত পুঁথির দরকার। কারণ সম্পাদিত পুঁথি হাতে না আসা পর্যন্ত কোনো শব্দের বানান ও প্রয়োগ যথাযথ অনুধাবন করা যাবে না। লিপিকরের বানান অনুসারে শব্দ নির্বাচন করতে গেলে শব্দের নানান রূপবৈচিত্র্যে ও বানান বৈষম্যে অভিধান-সলেয়িতা অনিশ্চয়তাগত সমস্যায় ভুগবেন। এই জন্য অত্যন্ত সচেতন ও সূক্ষ্মভাবে সম্পাদিত পুঁথি অভিধান সঙ্কলয়িতার জন্য অত্যন্ত আবশ্যক।
পাঠ সম্পাদনাবিদ্যার আবশ্যকতাঃ-
সব কাজেরই কিছু নিয়ম ও পদ্ধতি থাকে। সেই নিয়ম-পদ্ধতিমাফিক কর্মসম্পাদন করলে কর্মটি শুধু আয়েসসাধ্যই হয় না তা অধিকতর নিখুঁত ও নির্ভুলও হয়। পাঠ-সম্পাদনাবিদ্যার উদ্দেশ্যও তাই।একটি পুঁথি-সম্পাদনার সময় প্রাথমিকভাবে কী করণীয়, কবির বাসস্থান ও কালু নির্ধারণে কী কী সূত্র অনুসন্ধান করা যায়, পাঠ কীভাবে বিকৃত ও প্রক্ষিপ্ত হয়, পুঁথির বানানের সমস্যা কী, সম্পাদ্য পুঁথির বানান আদর্শ কী হবে, কোন্ আদর্শে পাঠ-সম্পাদিত হবে? এ সব প্রশ্ন ও সমস্যার ইঙ্গিত এবং সম্ভাব্য সমাধানসূত্র পাঠ-সম্পাদনাবিদ্যা নিয়ে থাকে। সমস্যার প্রকৃত সমাধান করবেন সম্পাদক নিজেই। নিজের বুদ্ধি মেধা ও অভিজ্ঞতাই একজন সম্পাদকের প্রকৃত পথপ্রদর্শক।
পাঠ সম্পাদনার সহায়ক উপকরণ
পাঠ সম্পাদনার জন্য নিচের উপকরণ গুলো প্রয়োজনঃ-
(এক) পাঠ-সম্পাদনার পদ্ধতিসংক্রান্ত বইঃ-
এস. এম. কাতরে (S. M. Katre) প্রণীত Introduction to Indian Textual Criticism' (first ed. 1941. 2nd ed. 1954), মোহাম্মদ আব্দুল কাইউম প্রণীত 'পাণ্ডুলিপি পাঠ ও পাঠ-সমালোচনা' (প্রথম প্রকাশ ১৯৭০, দ্বিতীয় সং ১৯৭৬), নির্মল দাশ প্রণীত, 'মধ্যযুগের কাব্যপাঠ', (১৯৭৩) মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া প্রণীত 'বাংলা পাণ্ডুলিপি পাঠসমীক্ষা' (প্রথম প্রকাশ ১৯৮৪), কল্পনা ভৌমিক প্রণীত 'পাণ্ডুলিপি পঠন সহায়িকা' (১৯৯২) স্বাতী দাস সরকার প্রণীত 'বাংলার পুঁথি বাংলার সংস্কৃতি' (১৯৯৮) চিত্রাদের প্রণীত পুঁথিপত্রের আঙিনায় সমাজের আলপনা' (১৯৮৫), ইত্যাদি বইগুলো সংগ্রহ করতে হবে।
(দুই) বিভিন্ন পুঁথিশালার তালিকাগ্রস্থঃ-
উল্লেখযোগ্য সংকলক ও সম্পাদক হচ্ছেন, হারম্যান ইথ (১৯০৩), জে. এফ. ব্লুমহার্ট (১৯২৬), ভ্লাদিমির ইভান (১৯২৭), খান বাহাদুর শেখ আবদুল কাদির-ই সরফরাজ (১৯৩৫), চার্লস রিউ (১৯৬৬), মৌলভি আবদুল মুকতাদির খান বাহাদুর (১৯২৯), ওস্তান ফুজেন (১৮৬৭), এ. বি. এম. হাবিবুল্লাহ প্রমুখ।
(তিন) অভিজ্ঞান ও কোষগ্রন্থঃ-
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'বঙ্গীয় শব্দকোষ', জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের 'বাঙ্গালা ভাষার অভিধান', বিশেষভাবে কাজে লাগবে। যেহেতু মধ্যযুগের বাঙলা ভাষায় আরবি ফারসি, পর্তুগিজ প্রভৃতি ভাষার শব্দ প্রচুর আছে। তাই এ জাতীয় অভিধান এবং বিভিন্ন ব্যক্তিঅভিধান ও বাংলা বিশ্বকোষ' মধ্যযুগের পাঠ সম্পাদনায় নানাভাবে সহায়ক হবে। এরূপ অভিধানের মধ্যে Perso - Arabic Elements in Bengali, by Shaikh Ghulam Maqsud Hilali; Persian-Bengali-English Dictionary. Prepared by Ali Avarseji: Hobson-Jobson, by Col. Henry Yule and A. C. Burnell; সুধীরচন্দ্র সরকার প্রণীত 'পৌরাণিক অভিধান'।
(চার) ব্যাকরণ :
মধ্যযুগের পুঁথি সম্পাদনায় চতুর্থ উল্লেখযোগ্য সহায়ক উপাদান হবে। মধ্যযুগের বাঙলা ব্যাকরণ।সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রণীত “The Origin and Development of the Bengali Language', সুকুমার সেন বিরচিত 'ভাষার ইতিবৃত্ত', মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বিরচিত "বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত', মুহম্মদ এনামুল হক প্রণীত 'মণীয়া মঞ্জুষা' বিজনবিহারী ভট্টাচার্যের 'বঙ্গভাষা ও বঙ্গসংস্কৃতি ইত্যাদি।
**উপন্যাস এর আলোচনা জানতে এখানে ক্লিক করুন
(পাঁচ) সম্পাদিত পুঁথি :
এরপ গ্রন্থ হচ্ছেন সম্পাদিত 'পদ্মাবতী', মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ সম্পাদিত 'বিদ্যাপতি শতক', মুহম্মদ এনামুল হক সম্পাদিত 'ইউসুফ জোলেখা', আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া সম্পাদিত 'গুণিচন্দ্রের সন্ন্যাস', আলী আহমদ সম্পাদিত ‘ইমাম বিজয়', আহমদ শরীফ সম্পাদিত 'নবীবংশ', 'লায়লী-মজনু' প্রভৃতি,
(ছয়) বিষয়ভিত্তিক গ্রন্থঃ-
রামায়ণ বা মহাভারত সম্পর্কিত কোনো পুঁথি সম্পাদনায় পৌরাণিক শব্দ চরিত্র ও ঘটনাবলির জ্ঞান সম্পাদককে বিশেষভাবে সাহায্য করবে।
(সাত) ইতিহাসমূলক গ্রন্থাদি :
একটি বিষয়কে নির্ভুল ও তথ্যবহুল করার জন্য সম্পাদককে শুধু সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ইতিহাস নয়, বিভিন্ন গেজেট, সরকারি নথি, পারিবারিক কুলপঞ্জি, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, অভিলিখন এ সবেরও সাহায্য গ্রহণ করতে হয়।
**তথ্যসংগ্রহঃ-
মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম ঃ-পাণ্ডুলিপি পাঠ ও পাঠ সমালোচনা
মুজাম্মিল হকঃপাণ্ডুলিপি পাঠ পাঠ সম্পাদনা
0 মন্তব্যসমূহ