Hot Posts

6/recent/ticker-posts

চর্যাপদ এর প্রশ্ন /উওর



**চর্যাপদ রচনার পটভূমি বিশ্লেষণ কর এবং বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসেচর্যাপদের স্থান নির্ণয় কর।

***প্রাচীন যুগের নিদর্শন এর পরিচয় দাও।

**যে বিশেষ ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পটভূমিতে বাংলা চর্যাপদ রচিত হয়েছিল, তা বিশ্লেষণ কর।

***কোন বিশেষ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পটভূমিতে প্রাচীন যুগেরবাংলা সাহিত্যে চর্যাপদের সৃষ্টি হয়েছিল, তা সবিস্তার আলোচনা কর।

****বিঃদ্র-বাংলা বিভাগের সকল পড়াশোনা পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন   https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1

উত্তরঃ

 বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসে চর্যাপদ এক মাইলস্টোন'। হয়তোপ্রাচীনতম এবং প্রথমতমও। সংগত কারণেই বলা যায় এখান থেকেই বাঙলা সাহিত্যেরবিভিন্ন দিক থেকে চর্যাপদের আবিষ্কার বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাসে একগুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ভাষা বিচার, সাংস্কৃতিক পরিচয় প্রাচীনকালের বাঙালির জীবন ওসমাজ সমীক্ষা, তাদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক শ্রেণীসংগ্রাম এবং ধর্ম দেশনায় চর্যাগানেরমূল্য বহুকৌণিক।বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যের উদ্ভবের উৎস অনুসন্ধানে চর্যাপদের গুরুত্ব অপরিসীম। নব্যভারতীয় আর্যভাষাসমূহের বিবর্তন ধারায় বাঙলা ভাষা প্রাদেশিক ভাষানিচয়ের মধ্যেঅর্বাচীন নয়। তা এর নমুনা থেকেই বিশেষভাবে প্রমাণিত। সাড়ে ছেচল্লিশটি চর্যাগীতির

অবয়বে প্রাচীন বাঙলার শব্দ সম্পদ, ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব ও ব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্যসমূহউত্তীর্ণ। বাঙলা কবিতার ছল, পরিভাষা, রূপক, রূপকল্পনা, বাক্যগঠন রীতি, বাগ বৈদগ্ধ,কাঠামো ও ভাবাকাশ পরিচিতির ক্ষেত্রেও চর্যাপদ বিশেষ মূল্যবান।প্রান্ত পুঁথি বাঙলা। তাই বাঙলা লিপির ইতিহাস নির্ণয়ে চর্যাপদ যথেষ্ট মূল্যবান। বাঙলাসংগীত রীতির ইতিহাসেও চর্যাগান অমূল্য সম্পদ—অনেক লুপ্ত ঐশ্বর্যের বার্তাবহ। বেশকিছু অজ্ঞাত তথ্যের পরিচিতির উৎস হিসেবে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে চর্যাপদ ভিত্তিহিসেবে বিশেষ মর্যাদার স্থানে অধিষ্ঠিত। চর্যায় বিধৃত বাঙালির জীবন ও প্রতিবেশ প্রাচীনযুগীয় বাঙালি সংস্কৃতির পরিচয় প্রদান করায় চর্যা প্রাচীন সমাজের সামাজিক, অর্থনৈতিকও রাজনৈতিক তথ্যের উৎস হিসেবে বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী।

চর্যার কবিদের জীবনকাল ও পাল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন শাসকের শাসনকাল মেলালে এটাস্পষ্ট হয় যে, চর্যাপদসমূহ মোটামুটি পাল সাম্রাজ্যের গৌরবময় কালে বিরচিত।আলোচ্য সময়ের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থার অনুসন্ধান করলে দেখা যায়ধর্মপালের সময় পাল সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রীয় চরিত্র প্রজাতান্ত্রিক ছিল। রাজার উপর মন্ত্রী, ব্রাহ্মণও ভিক্ষুদের প্রভাব ছিল অধিক। রাজ্যের সকল ভূমির একমাত্র মালিক ছিলেন রাজা।প্রজার অনুমতি সাপেক্ষে রাজা প্রজাদের মধ্যে জমি বণ্টন করতেন। পাল রাজারা সমগ্ররাজ্যটাকে বংশগত সম্পত্তি বলে ভাবতেন না। জনসাধারণ কর্তৃক মনোনীত রাজা ছিলেন।তাদের মতে রাজ্য প্রজাদের। সকল ধর্মাবলম্বীর জন্যই রাজা নির্দিষ্ট। কাজেই নিজের ধর্মনিজেরই। কিন্তু নানা কারণে এ আদর্শ ধীরে ধীরে বিনষ্ট হয়।

পাল আমলে সংস্কৃতের পাশাপাশি অন্যান্য ভাষায়ও সাহিত্য চর্চা বৃদ্ধি পায়। অন্য ভাষারমধ্যে 'বঙ্গ কামরূপী' ভাষা সাহিত্যিক ভাষায় পরিণত হয়। চর্যার কবিরা প্রাকৃত ও সংস্কৃতউভয় ভাষায় সাহিত্য চর্চা করেন। এ সময় তান্ত্রিক বজ্রযান বৈদিক ব্রাহ্মণ্য ধর্মের সাথেবৌদ্ধ ধর্মের নৈকট্য গড়ে ওঠে। রাজা ও সামন্ত অভিজাত পুরোহিত শ্রেণীর মধ্যে এ অন্বয়সাধিত হলেও প্রজাপুঞ্জের দরিদ্র শ্রেণীর মধ্যে এমনটি হয় নি। অর্থশালী অভিজাতবৌদ্ধেরা যত ব্রাহ্মণ্য ধর্মের নৈকট্য লাভের প্রয়াস পেয়েছে, দরিদ্র শ্রেণীর উপর,ক্ষেত্রকরগণের উপর শোষণের শেকল ততই দৃঢ় হয়ে চেপে বসেছে। সমাজে শ্রেণীদ্বন্দ্ব ওঅর্থনৈতিক শ্রেণীসংগ্রাম ততই তীব্রতা লাভ করেছে। ফলে, শোষিত সাধারণ মানুষ বেশিকরে তান্ত্রিক আচারের দিকে ঝুঁকেছে।সমাজতান্ত্রিকদের ধারণা-ঐ সময় তন্ত্রের মধ্য দিয়েই শোষিত বাঙলাদেশের জনগণঐক্যবদ্ধ হবার প্রয়াস পায়। এরূপে সমাজে অর্থনৈতিক শ্রেণীসংগ্রামের পাশাপাশি একটিধর্মীয় শ্রেণীসংগ্রামের ধারাও প্রবাহিত হয়। পাল রাজাদের বিপর্যয়কালে এ দ্বিতীয় ধারাপ্রথম প্রবাহকে আচ্ছন্ন করে সমগ্র বাঙলায় বিকৃত বজ্রযান ও তা থেকে উৎপন্ন সহজযানধর্ম ছড়িয়ে দেয়। চর্যাপদ এ ধরনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয়আবহাওয়ায় রচিত। এ জন্য চর্যার অবয়বে সেকালের সামাজিক-অর্থনৈতিক বাতাবরণের

বিশেষ চিহ্ন বিদ্যমান।র্যাপদ মূলত ধর্ম সংগীতের আবরণে সামাজিক কবিতা। ধর্মই ছিল সেকালের মানুষেরপ্রধান সামাজিক চেতনা। শুধু চর্যার রচনাই নয় বরং তখন সমস্ত ঘটনার মূল হল ভূমিরউপর ব্যক্তিমালিকানার অভাব। রাজা বা সম্রাটই সমস্ত দেশের ভূমির একমাত্র মালিক।রাজা সে জমি ইজারা দিতেন, দেবতার নামে মঠ ও মন্দিরের জন্য, বিয়ের জন্য বা যজ্ঞ,পূজার্চনা প্রভৃতির দক্ষিণা স্বরূপ ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের উপহার দিতেন। এর জন্য প্রজাদেরআপত্তি করার কিছু থাকত না। তাদের সম্মতি গ্রহণেরও কিছু আবশ্যক হত না।

ভূমির উপর কার্যত প্রজাদের এ অনধিকার থেকে সমগ্র প্রাচ্য দেশীয় জনগণের যে দুঃখ তাথেকে চর্যার কবিরা মুক্ত ছিলেন না। এ অনুভূতি থেকেই তাদের মধ্যে জন্ম হয়েছিল ধর্মসংগীতের। চর্যার কবিরা তাই ধর্মসংগীত রচনায় আত্মনিয়োগ করতে গিয়ে নিজেদেরসামাজিক জীবনের দুঃখকে উপেক্ষা করতে পারেন নি। কারণ, তারা ভূমিহীন বিক্ষুব্ধ কৃষকসমাজের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে অবস্থান করতেন। তাদের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা ওদ্বন্দ্ব-সংঘাতের সাথে কবিদের একান্ত পরিচয় ছিল। পাল আমলের আদি মধ্য ভাগ থেকেঅর্থনৈতিক শ্রেণীসংঘর্যের পাশাপাশি যে ধর্মীয় কলহ শুরু হয় চর্যার কবিরা সে কলহে

সামস্ত পুরোহিত শ্রেণীর বিপরীতে অন্ত্যজ শ্রেণীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। চর্যাপদে তাইসামন্তদের প্রতি ও তাদের ধর্মের প্রতি প্রবল ঘৃণা বিদ্যমান। চর্যায় রাজা, উজির, ব্রাহ্মণ,পুরোহিতদের প্রতি অবজ্ঞা সীমাহীন। বেদ, ব্রাহ্মণ ও তাদের উপাস্য দেবতা থেকে মুখফিরিয়ে চর্দার কবিরা সহজ সাধনা, সাম্য ও প্রীতির ধর্ম প্রচার করেছেন।পাল রাজাদের বিকৃত রূপের ফলশ্রুতিতে উচ্চবিত্তদের প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধা প্রকারান্তরেনিম্নবিত্তের জন্য দুঃসহ অবস্থার সৃষ্টি করে, তা থেকে নব ধর্মীয় চেতনা ওজীবনাচরণের পটভূমিতে চর্যার কবিরা বলিষ্ঠ সমাজচেতনা ও বিস্ময়কর বাস্তববোধ থেকেচর্যার সৃষ্টি করে। চর্যার পটভূমিতে এ শ্রেণীরদ্ ও দ্বন্দ্ব সংঘাড় অনুভূতিই উচ্চারিত হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ