Hot Posts

6/recent/ticker-posts

চর্যাপদ এর রচনাকাল /সময়সীমা,, প্রশ্ন/ উওর

 


****বিভিন্ন পণ্ডিতের মতামত আলোচনা করে চর্যাপদের রচনাকাল নির্ণয় কর।

****অথব চর্যার রচনাকাল নির্ণয় কর।

অথবা,

 ***সাহিত্যের প্রাচীন যুগের সময়সীমা নির্ধারণ কর।

**বিঃদ্র-বাংলা বিভাগের সকল পড়াশোনা পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন   https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1

উত্তর-----

 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস হাজার বছরের অধিক সময়ের পুরাতন বলে মনেকরা হয়। তবে এ সাহিত্যের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্যের অভাবে বাংলা ভাষার

উদ্ভবকাল সম্পর্কে সুস্পষ্ট করে কিছু বলা যায় না বলে এ ব্যাপারে নানা মুণি নানাভাবেবলেছেন। বাংলা ভাষা পূর্ববর্তী রূপ অপভ্রংশ থেকে কোন মুহূর্তে স্ব-পরিচয়ে চিহ্নিতহয়েছে তা বিতর্কমূলক হলেও সবাই চর্যাপদকে বাংলা সাহিত্যের আদি গ্রন্থ হিসেবেস্বীকার করেছেন। তাই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ও চর্যাপদের রচনাকাল সমান্তরালড. সুনীতিকুমার ঠাপাধ্যায় চর্যার রচনাকাল দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে সীমাবদ্ধবলে মনে করেন। এ মত কলকাতার সকল পণ্ডিতই বিনা দ্বিধায় মেনে নিয়েছেন। কিন্তুকলকাতার বাইরে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং রাহুল সাংকৃত্যায়ণ প্রমাণ করেছেন- লুইপাদএবং সরহপাদ এ দুজন প্রাচীন সিদ্ধাচার্য রাজা ধর্মপালের সময়ে (৭৬৯ খ্রি. – ৮০৯ খ্রি.)বর্তমান ছিলেন। তাই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চর্যাপদের রচনাকাল সপ্তম শতাব্দীর মধ্যভাগথেকে দ্বাদশ শতাব্দী মনে করেন।মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী লুইপাকে আদি সিদ্ধাচার্য মনে করেন। তিনি লুইপারসময়কাল নির্দেশ করেছেন ৯৫০ থেকে ১০৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। তাঁর মতে লুইপার একখানাগ্রন্থ 'অভিসমর বিভঙ্গা' রচনাকালে দীপংকর শ্রীঘ্রান লুই পারে সাহায্য করেছিলেন।অতএব লুই পা এবং দীপংকর সমসাময়িক ছিলেন। ১০৩৮ খ্রিস্টাব্দে ৫৮ বছর বয়সেদীপংকর তিব্বত গিয়েছিলেন তার ঐতিহাসিক প্রমাণ মেলে। এই হিসেবে দীপংকরের জন্ম

৯৮০ খ্রিস্টাব্দে। অর্থাৎ লুই পার জন্মও এ সময়ে।ভাষা ও বচয়িতাদের সম্ভাব্য আবির্ভাবকাল ধরে চর্যাসমূহের রচনাকাল নির্ধারণের চেষ্টাহয়েছে। ভাষার কথা বলতে গিয়ে ড. সুনীতিকুমার মত দিয়েছেন যে, চর্যার ভাষায় দ্বাদশশতকের প্রোচীন বাংলার রূপ বর্তমান। তিনি শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের ভাষায় আদি মধ্য বাংলার যেরূপটি প্রত্যক্ষ করেছেন, চর্যার ভাষাকে তদপেক্ষা দেড় বা দুশো বছরের প্রাচীন হতে পারেবলে মনে করেন। শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের ভাষাকে চতুর্দশ শতাব্দীর ধরে নিয়ে চর্যার ভাষাকেদ্বাদশ শতাব্দীর বলে মনে করেন। অবশ্য সবকটা চর্যাই দ্বাদশ শতাব্দীতে রচিত এ কথাতিনি বলেন নি। প্রাচীন চর্যাগুলোর রচনাকাল দশম শতাব্দীর দিকে বলে তিনি স্বীকারকরেনতিনি আরো বলেন "হবজ্র পঞ্জিকা যোগ রত্নমালা' নামে যে পুঁথি তাঁর হাতে এসেছে তাগোবিন্দের রাজত্বকালে ৩৯ অব্দে (১১১৯) মগধে লেখা হয়েছিল। পুঁথিখানি মগধ থেকেনেপালে যায় এবং নেপাল থেকে সংগৃহীত হয়ে কেম্ব্রিজে আসে। সুতরাং সিদ্ধাচার্য কাহ্নপাদদ্বাদশ শতকের শেষ দিকে বর্তমান ছিলেন। ড. সুনীতিকুমার লুইপাদকে দশম শতাব্দীরবলে মনে করেন।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মনে করেন, বাংলা সাহিত্যের উৎপত্তিকাল সপ্তম শতক এবং বাংলাভাষা অন্তত আরো একশত বছর পূর্বের। তিনি সামেন্দ্রনাথকে প্রথম বাঙালি কবি বলে মনেকরেন এবং প্রমাণ করেন যে, সামেন্দ্রনাথ সপ্তম শতকে জীবিত ছিলেন। তিনি বলেন ফরাসী কবি সিলভালেভার মতে সামেন্দ্রনাথ ৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে রাজা নরেন্দ্র দেবের রাজত্বকালেনেপালে গমন করেন। এ থেকে আমরা ৬৫০ খ্রিস্টাব্দকে বাংলা সাহিত্যের আরম্ভকাল বলে

ধরতে পারি।চর্যাপদ যে সপ্তম শতকের দিকে রচিত এর যুক্তিস্বরূপ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ৮নং

চর্যাগীতির রচয়িতা কম্বলাম্বর ইন্দ্রভূতি ও জালন্ধরী শুরু ছিলেন। বজ্রযোগীনি শুরু পরম্পরারমতে ইন্দ্রভূতির শুরু কুক্কুরী পা, তার গুরু লুই পা। জার্মান পণ্ডিত Schlaginfweil-এরমতে ইদ্রভৃতির পালিত পুত্র পদ্মসম্বর ৭২১-৭২২ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। পদ্মসম্বরের শুরু

গোরক্ষনাথ, গোরক্ষনাথের শুরু সামেন্দ্রনাথ। গোরক্ষনাথের সমকালীন জালস্কপার শিষ্যছিলেন কাহ্নপা। এ সমস্ত তথ্য থেকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমাণ করেছেন সামেন্দ্রনাথ,গোরক্ষনাথ, গোপিচাদ, লুইপা, কম্বলাম্বরপা, কুক্কুরীপা, জালন্ধরীপা সপ্তম শতকের

দ্বিতীয়ার্ধের লোক ছিল।

ড. সুনীতিকুমারের মতে মীননাথের শিষ্য গোরক্ষনাথ দ্বাদশ শতকের লোক। অতএবমীননাথও দ্বাদশ শতকের লোক হবেন। অধ্যাপক নলিনীনাথ দাশগুপ্ত সামেন্দ্রনাথকে দশমশতাব্দীর শেষার্ধের লোক মনে করেন।কিন্তু ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ নাথ গীতিকার গোপীনাথ এবং চর্যাপদের লুইপাদের সময়কাল

আলোচনা করে দেখিয়েছেন যে, সামেন্দ্রনাথের সময়কাল সপ্তম শতকের পরে হতে পারে।না। সুতরাং ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মত অনুসরণে আমরা বলতে পারি যে, চর্যাপদ শুরুসপ্তম শতকের মধ্যভাগ থেকে। অর্থাৎ চর্যাপদের রচনাকাল ৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।।। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ