---শেষ বিকেলের মেয়ে -জহির রায়হান শেষ বিকেলের মেয়ে -জহির রায়হান শেষ বিকেলের মেয়ে উপন্যাসের রিভিউ শেষ বিকেলের মেয়ে উপন্যাসের চরিত্র শেষ বিকেলের মেয়ে উপন্যাসের বিষয়বস্তু আলোচনা --
**বিঃদ্র-বাংলা বিভাগের সকল পড়াশোনা পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1
*বুক রিভিউ *
বই-শেষ বিকেলের মেয়ে(জহির রায়হান)
লেখকঃজহির রায়হান
বইয়ের ধরণঃউপন্যাস
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ৮০
মানুষ চায় এক হয় আরেক। অথবা যা চায় তা ভুল করে চায়, যা পায় তা চায় না। এই চাওয়া পাওয়ার পৃথিবীতে একেক জনের চাওয়া পাওয়া একেক রকম। কেউ চায় ধন, কেউবা মন আবার কেউ একটু সুখের আশায় দিনকে দিন অপেক্ষার প্রহর গুনে। ভাগ্যের গুণে কেউ তার কাঙ্খিত চাওয়াকে পেয়ে যায় আবার কেউ পায়না। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক জহির রায়হান তাঁর শেষ বিকেলের মেয়ে উপন্যাসে মানুষের চাওয়া পাওয়ার কথা তুলে ধরতে গিয়ে উপন্যাসের চরিত্র কাসেদকে সুনিপুণভাবে সাজিয়েছেন।
কাসেদ উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র। তার পেশা কেরানি। মাঝে মাঝে কবিতা লিখে সে। তবে কবি হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি কখনো। সে জাহানারা নামের একটি মেয়েকে ভালবাসে এবং তাকে নিয়েই ঘর বাঁধতে চায়। অপরদিকে জাহানারারও কাসেদের সাথে ভালো সম্পর্ক। কিন্তু সে সম্পর্ক কি শুধুই বন্ধুত্বের নাকি প্রেমের তা কেউই ভালো করে জানতো না। অথবা জাহানারাও কখোনোই তা বুঝতে দেয় নাই কাসেদকে। তবুও কাসেদ শয়নে স্বপনে জাহানারাকে নিয়েই ভবিষ্যতের জাল বুনে। অপরদিকে জাহানারার জন্মদিনে তার এক কাজিনের সাথে আলাপ হয় কাসেদের। নাম তার শিউলি৷ শিউলি চতুর মেয়ে, সেও কাসেদকে প্রেমের ছলে নিজের করতে চায়। কিন্তু যখনি কাসেদ জাহানারার কাছ থেকে হতাশ হয়ে শিউলিকে বিয়ে করতে চায় তখন সে নদীর মতো বাঁক পাল্টে নেয়।
উপন্যাসে লেখক কেন্দ্রীয় চরিত্রের সাথে অনেকগুলো পার্শ্বিক চরিত্রের যোগসাজেশ ঘটিয়েছেন। যাদের প্রত্যকের প্রেমেই কেন্দ্রীয় চরিত্র একবার হলেও হাবুডুবু খেয়েছেন। তবে সবার উপরে যার প্রতি কাসেদের ভালবাসা ছিল সে ছিল জাহানারা। তাইতো যখন তাকে সেতারা শিখানোর মাস্টারের সাথে দেখত তখন তার বুকের ভিতর দুমড়েমুচড়ে যেত। অজানা আশংকা সব সময় তাকে তাড়া করত। মনের অজান্তেই অফিসে বসে ফাইলের উপর জাহানারার নাম লিখে লিখে কলমের কালি পোড়াত সে। তার সাথে দেখা করার জন্য প্রায় সময় তাদের বাসায় ছুটে যেত। কিন্তু কোনদিন সে তার মনের কথাটা জাহানারার সামনে উপস্থাপন করতে পারে নাই। হয়তো জাহানারাও বলতে চেয়েছিল কিন্তু নিয়তি তাদের এক করতে দেয়নি। কাসেদ যে শুধু জাহানারাকে ভালবাসতো তা নয়, তার মা ও জাহানারার মতো এমন একটা লক্ষী মেয়েকেই পুত্রবধূ হিসেবে চেয়েছিলেন। কিন্তু মায়ের জীবদ্দশায় তা সম্ভব হয়নি এমনকি মৃত্যুর পরও না।
কাসেদের খালাতো বোন ছিল সালমা। ছোটবেলায় একইসাথে বেড়ে উঠা তাদের। কত আবেগ অনুভূতি মিশে আছে তাদের জীবনে। সালমাও কাসেদকে খুব নিজের করে চাইতো। কিন্তু কাসেদের গাফেলতিতে তার অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায় এবং সেখানে একটি মেয়েও হয়। বছর তিনেক পর আবার যখন তাদের দেখা হয় তখন সালমা জাহানারার সম্পর্কে জানতে পারে এবং কাসেদের প্রতি ক্ষোভে ফেটে পড়ে। সে পুণরায় কাসেদকে একান্ত নিজের করে পেতে চায় ও কাসেদকে তাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কাসেদ দোটানায় থেকে জাহানারাকে পাওয়ার নেশায় এবারও সালমাকে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাহানারা বা শিউলি কেউই কাসেদের জীবনে আসলোনা। যে এসেছিল তার আগমনী ছিল পাঠকের দৃষ্টির অগোচরে। কেননা, লেখক ঐ মানবীকে সাজিয়েছেন শেষ বিকেলের সঙ্গী হিসেবে। আর সে ছিল কাসেদের নিজ ঘরে বেড়ে উঠা তার দূর সম্পর্কের পিতৃমাতৃহীন খালাতো বোন নাহার। এমন গম্ভীর নিশ্চুপ মেয়ে, যে কিনা প্রয়োজন ব্যতীত একটা কথাও কারো সাথে বেশী বলতোনা। অথচ এই মেয়েটিকে নিয়ে কাসেদ কখনোই ভেবে দেখেনি বা ভাবার প্রয়োজন বোধ করেনি। সে নিজ ঘরে সোনার খনি রেখে অন্যত্র ভালোবাসা পেতে চেয়েছিল। তাইতো রবি ঠাকুর বলেছিলেন মানুষ যা চায় তা ভুল করে চায়। উপন্যাসটিতে লেখক মানব মানবীর মনের অবস্থাকে চতুভুজ কিংবা বহুভুজ প্রেমের কাহিনির মতো সাজিয়েছে। যার এক কোণে কাসেদ এবং অন্যকোণে জাহানারা, শিউলি, সালমা এবং অফিসের বৃদ্ধ বসের নাম না জানা মেয়ে। সবমিলে কাসেদ চরিত্রে একরকম লুচ্চামি ভাব আমি লক্ষ্য করি।দ্যোদুল্যমনের একজন মানুষ কাসেদ।সে তার মনকে স্থির করতে পারেনা,, একজন মানুষের মনে এত রমনীর আনাগোনা.. সত্যিই এক অনন্য প্রকাশভঙ্গি।
এতজনের ভিড়ে প্রকৃত জীবনসঙ্গীনীকে পাঠিয়েছেন সবার শেষে। যখন কাসেদের মা মারা যান এবং নাহারের বিয়ের সব ব্যবস্থা হয়ে যায় আর কাসেদ একা হয়ে যায়। একদিন বিকেল বেলার শেষ প্রান্তে সে অন্যমনস্ক হয়ে জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখতেছিল। ভাবতেছিল জাহানারা আর শিউলি দেহ ভিন্ন কিন্তু মন এক। তার ধারণা হয়েছিল মেয়েরা এমনি হয়। প্রয়োজন শেষে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। তবে সালমাকে তার ব্যতিক্রম মনে হয়েছিল। কেননা, সব কিছু শেষেও সে কাসেদের হাত ধরে চলে যেতে চেয়েছিল। এমন সময় হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে কাসেদ স্তম্ভিত ফিরে পায়। তার মনে উদ্যেল খেলে যায়, কে আসতে পারে এই অবেলায়? জাহানারা, শিউলি কিংবা সালমা নয়তো? অতিউৎসাহী কাসেদ দরজা খুলে যা দেখলো তার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলনা সে। এ যে নাহার! মেহেদি হলুদ মাখা গা নিয়ে, গায়ে হলুদের শাড়ি পড়ে সে চলে এসেছে কাসেদের কাছে। যে মেয়েটি এতো নিশ্চুপ সেই আজ মুখরা হয়ে অকপটে বলে যাচ্ছে একের পর এক সব। যার সাথে সারাটা জীবন একই পরিবারে ছিল, যার সেবা যত্ন করে মনে মনে ভালোবাসার বীজ বুনেছিল তাকে ছেড়ে যে সে একটা মূহুর্তের জন্যও থাকতে পারবেনা নাহার তা ভালো করেই বুঝেছিল৷ তাইতো জীবনের কঠিন সময়ে সে সঠিক সিদ্ধান্তটাই নিয়েছিল এবং বিয়ের আসর ছেড়ে কাসেদের কাছেই ফিরে এসেছিল। লেখক এখানে দেখিয়েছেন শিক্ষিত জাহানারা, শিউলি বা সালমার থেকে নিশ্চুপ স্বল্পশিক্ষিত মেয়ে নাহারের অব্যক্ত ভালবাসাই সবথেকে দামী। তাইতো নাহার নামের মেয়েটিই শেষ বিকেলের মেয়ে। কেননা, শেষ বেলায় যে আসে সে কখনো মুখ ফিরিয়ে নেয় না।
বইটি পড়লে আপনিও আবেগে আপ্লুত হবেন।কাসেদকে জানতে হলে,তার আবেগ-ভালবাসার চক্র জানতে হলেও আগ্রহ নিয়ে পড়তে পারেন।
ধন্যবাদ 😍😍
**রিভিউ প্রদানকারী --
0 মন্তব্যসমূহ