Hot Posts

6/recent/ticker-posts

চিতা বহ্নিমান-- ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় (বুক রিভিউ)


**চিতা বহ্নিমান-- ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় (বুক রিভিউ)
----চিতা বহ্নিমান-ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় (বুক রিভিউ) চিতা বহ্নিমান উপন্যাস আলোচনা চিতা বহ্নিমান উপন্যাস এর চরিত্র তপতী তপন চিতা বহ্নিমান উক্তি ----
**বিঃদ্র-বাংলা বিভাগের সকল পড়াশোনা পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1 
#বুক_রিভিউ_

#চিতা_বহ্নিমান
লেখক: ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়

✌#বই_নিয়ে_কিছু_কথাঃ ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের অসাধারণ লেখনীর ২য় প্রমাণস্বরূপ এই বইটি পড়লাম।  শাপমোচন ও চিতা বহ্নিমান বইদুটি কেন এতো বেশি পাঠকহৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে তা বুঝতে হলে অবশ্যই বইদুটি পড়তে হবে। 

👉#কাহিনি_সংক্ষেপঃ বইটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেদনাতুর বিষাদের ছায়া কালো মেঘের মতো বিরাজমান। বাংলা সাহিত্যের আর কোন লেখক পুরোটা বইজুড়ে বিচ্ছেদ বেদনার গান গেয়েছেন কিনা জানিনা। তবে এই উপন্যাস প্রেম,সংঘাত,বিচ্ছেদের এক অন্যরকম সুর শুনিয়ে গেছে পাঠক হৃদয়ে। 

চ্যাটার্জি বাড়ির একমাত্র মেয়ে তপতী। ধনীর দুলালী, উচ্চশিক্ষিতা, আধুনিকা,সুন্দরী রমনী তপতীকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখে আধুনিক বড়লোক বাড়ির  ছেলেগুলো। বিয়ের আসরে নগদ লেনদেন নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে বিয়ে ভেংগে যায় তপতীর। ওইদিনই নিজের বাবার পুরনো কিছু কাগজে দরকারি একটা দলিল পেয়ে সে দলিল নিয়ে মি.চ্যাটার্জি এর কাছে হাজির হয় গ্রামের দরিদ্র, অল্পশিক্ষিত ছেলে তপনজ্যোতি গোস্বামী৷ শেষে মি.চ্যাটার্জি তার সাথেই বিয়ে দেন নিজের একমাত্র মেয়ে তপতীর। মেয়ে জামাইকে ত আর কেরানির চাকরি করতে হবেনা, থাকবে ত শ্বশুরবাড়িতেই,তাই শিক্ষিত না হলেও চলে, এরকম ভেবেই নিজেকে সান্তনা দিচ্ছিলেন তারা। তাদের একটাই আশা, তপনের বাবার এক অংশ গুনও যদি তপন পেয়ে থাকে তাহলেই সে হবে অসাধারণ। 

তপনের ধনীর দুলালী বিয়ে করার স্বপ্ন ছিলনা কখনোই। তপতী তাকে গ্রহণ করবে কিনা এ চিন্তায় মশগুল তপনকে সত্যিই গ্রহণ করেনি তপতী। ঠাকুরদা তাকে যোগ্য আর্যনারী করে গড়ে তুললেও তার পরবর্তী শিক্ষা ও চালচলনে সে তখন অনেকটাই বদলেছে। বন্ধুদের কাছে মূর্খ, টিকিধারী,পুথি পাঠক তপনের কথা শুনে তার রাগ হয় পিতার প্রতি। নিজে যাচাই করতে চায়না স্বামীর দোষ-গুনের৷ তপনকে অপমান অবহেলায় জর্জরিত করে বাড়িছাড়া করতে পারলেই সে বাঁচে। 

শাশুড়ী মায়ের ভালোবাসা-যত্ন, আর তপতীর ও তার বন্ধুদের অবহেলা,অপমান নিয়ে দিন কাটে তপনের। কিন্তু তপনের আলাদা একটা পরিচয় আছে। যা জানেনা শ্বশুরবাড়ির কেউ। কারণ তপন ভাবে "অযোগ্য জেনে যে আমাকে ভালোবাসলোনা, যোগ্য আমিকে ভালোবাসার তার আর অধিকার নেই।যে আমায় মূর্খ ভেবে গ্রহণ করলো না,আমাকে পন্ডিত দেখে গ্রহণ করবার তার অধিকার নেই।যদি সে অন্য কাউকে চায় তবে তারই হাতে ওকে তুলে দিব।" 

"সে আমায় ভালো যদি বাসে, এমনিই বাসবে, কারো প্ররোচনায় নয়। আমি যেমন, যেমনটি সে আমায় দেখেছে,তেমনি ভাবেই আমি তার হৃদয় জয় করতে চাই। যদি না পারি, জানবো সে আমার নয়।" তপন এক অমূল্য রতন৷ এই রতনের মূল্য বুঝেছিল তপতীর বান্ধবী শিখা,আর তাই তপনকে নিজের দাদার পরিচয়ে বসিয়েছিলো দেবতার আসনে। শিখা বুঝেছিল কি সম্পদ হারাচ্ছে তপতী৷ 

সময় চলে তার গতিতে। আর একসময় তপতীও বুঝে তপনের ভালোবাসা। কিন্তু ততোদিনে খুব দেরি হয়েছে। অপমানের ছলে নিজের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে ফেলেছে সে। মুক্তি চেয়ে নিয়েছে তপনের কাছে। কিন্তু তপনের কাছে তার সত্য বজ্রের মত কঠিন,মৃত্যুর চেয়েও নিষ্ঠুর।তাই সত্যই তপতীকে মুক্তি দেয় সে। তপতী তাকে ভালোবেসে মরে গেলেও কিছু করার থাকবেনা তার। ভুল বুঝে যখন তপতী নিজেকে সপে দিয়ে চায় তপনের কাছে তখন আর তপতীর কোন মূল্য বাকি নেই। সহধর্মিণীরূপে সে আর ঠাই পাবেনা কোনদিন। 

#পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ বাংলা সাহিত্যের অসাধারণ এই সৃষ্টি পড়ে ধন্য আমি। প্রেমের উপন্যাস বরাবরই পছন্দ। তবে চিতা বহ্নিমান উপন্যাসটি প্রেমের এক অন্য শিক্ষা। মানুষ যখন খুব বেশি ভালোবাসে তখন অন্যের সুখের জন্যে তাকে ছাড়তেও পারে। দাঁত থাকতে আমরা দাঁতের মর্যাদা বুঝিনা,তারই প্রমাণ এই উপন্যাস। আর মর্যাদা বুঝিনা বলেই একদিন দাঁতে পোকা ধরে৷ তখন খুব কষ্ট হলেও তা মেনে নিতেই হয়। তপন চরিত্রটি হৃদয় ছুয়ে গেছে। আত্মাভিমানী তপতী নিজের অহংকারে হারিয়েছে তার জীবনের সবথেকে বড় সম্পদকে। 
এই বইটির মধ্যে আকর্ষণ ক্ষমতা এতো বেশি যে বইটি শেষ না করা পর্যন্ত শান্তি হচ্ছিলোনা। তপতীর প্রতি রাগ হলেও শেষে মন চেয়েছিলো তপন ফিরে আসুক। এই ক্ষত একদিন মিলিয়ে যাক। তপন-তপতীর হৃদয়ে যে বিচ্ছেদ বেদনা জন্মেছিল, তা যেন আমিও অনুভব করছিলাম। ভালোবাসার মানুষকে খুব কাছে পেয়েও যখন চোখের জলের ব্যবধান টুকু রয়ে যায়, সে বেদনা যে কি কঠিন তা লেখক পাঠক হৃদয়ে সার্থক ভাবে প্রচার করেছেন।

**চরিত্র
১.মি.চ্যাটার্জী---তপতীর বাবা
২.তপতী
৩.মহাদেব-চ্যাটার্জীর বন্ধু +তপনের বাবা
৪.তপন
ইত্যাদি। 
**রিভিউ প্রদানকারীঃ


নামঃরুপিয়া ফারজানা খান
শিক্ষার্থী,বাংলা বিভাগ। 
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর। 
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ