রেনেসাঁস-উত্তরকালে, পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার পরম বিকাশের যুগে, আধুনিক মানুষেরজীবনে দেখা দেয় বহুমাত্রিক বৈচিত্র্য এবং সীমাহীন জটিলতা। আধুনিক মানবচৈতন্যের সমুদ্রবিস্তৃতি ও বিভঙ্গতা, বহুভুজ বিসঙ্গতি ও বিপর্যয়, অন্তগূঢ় বেদনা ও উজ্জ্বল আশাবাদ—এই সব প্রবণতা প্রকাশের অনিবার্য মাধ্যম হিসেবে ঊনবিংশ শতাব্দীতে নতুন শিল্পআধিকরূপে ছোটগল্পের আত্মপ্রকাশ। পুঁজিবাদী সভ্যতার অভ্যন্তর সীমাবদ্ধতার চাপে,সময়ের শাসনে মানুষ যতই যান্ত্রিক হয়েছে, ছোটগল্প-সাহিত্যের বিকাশ ততই হয়েছে ঋন্ধ।পূর্ণ জীবন নয়, বরং বৈরী পৃথিবীতে জীবনের খণ্ডাংশই মানুষের কাছে প্রাধান্য পেল। এঅবস্থায় উপন্যাসের পরিবর্তে ছোটগল্প উঠে আসলো জনপ্রিয়তার শীর্ষে। কেননা, এককঅনুষঙ্গের আধারেই ছোটগল্পে ফুটে উঠলো পূর্ণ জীবনের ব্যঞ্জনা— পদ্মপাতার শিশিরে যেমনহেসে ওঠে প্রভাতের সম্পূর্ণ সূর্য
উপন্যাসের মতো ছোটগল্পেরও আদি উৎসভূমি ইউরোপ। ইউরোপীয় সমাজে প্রবহমাণরূপকথা, লোকগাথা বা রোমান্সকাহিনী—যা ছিল মানুষের মনোরঞ্জনের অন্যতম মাধ্যম—ইতালীয় রেনেসাঁসের পর রূপান্তরিত হয় নতুন চেতনায়, নব-প্রতিনব জিজ্ঞাসায়।বোৱাচ্চিও, চসার, র্যাবলে, সারভান্টেসের সামূহিক সাধনায় ধীরে ধীরে গড়ে উঠলোছোটগল্পের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান কাহিনী-চরিত্র-প্লট আর সাবলীল সংলাপরীতি। বস্তুত,এঁরাই আধুনিক ছোটগল্পের প্রত্ন-উৎসের জনয়িতা; এঁদের সাধনার সরণি ধরেই ঊনবিংশশতাব্দীতে ক্রমে আবির্ভূত হয়েছেন বিশ্বসাহিত্যের প্রধান ছোটগালিকরা।
ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রান্স-রাশিয়া-ইংল্যান্ড-আমেরিকায় ছোটগল্পের যে
শিল্পিত বিকাশ ঘটেছে, তার প্রভাব পড়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, ভারতবর্ষেও। পাশ্চাত্যরেনেসাঁসের প্রেরণায় ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলায় সংঘটিত হয়েছিল সীমাবদ্ধ নবজাগরণ।নবজাগরণের ফলে শিল্প-সাহিত্য-ধর্মচর্চা—সর্বত্র একটা বিপুল পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়।নতুন নতুন শিল্প-আঙ্গিকে পূর্ণ হতে থাকে বাংলা সাহিত্যের অঙ্গন। পঞ্চাশ-ষাটের দশকেইনাটক-প্রহসন-মহাকাব্য-গীতিকবিতা-উপন্যাস রচিত হলেও ছোটগল্পের আবির্ভাববিলম্বিত হয়েছিল শতাব্দীর শেষ দশক অবধি। উনিশ শতকের নব্বুইয়ের দশকেই, প্রকৃতঅর্থে, বাংলা ছোটগল্পের যাত্রা শুরু, এবং লেখাই বাহুল্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)হচ্ছেন সে-যাত্রার পথিকৃৎ।
বর্ণিল-যাত্রা। আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক কারণে পূর্ববঙ্গের মুসলিম মধ্যবি
বিকাশ হয়েছে শতবর্ষ বিলম্বিত। বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্য
(১৯২১) পূর্ববঙ্গের মুসলিম মধ্যবিত্তশ্রেণীর বিকাশে রাখে ঐতিহাসিক অবদান।
বিশ্ববিদ্যালয় এবং পূর্ববাংলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ নব্য-শিক্ষিতের সমবায়ে
বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক থেকেই ক্রমবিকশিত হচ্ছিলো ঢাকা শহরকেন্দ্রিক নতুন মা
বিষশ্রেণী। পূর্ববাংলার নবজাগ্রত এই মধ্যবিত্তশ্রেণীর চেতনাস্নাত কয়েকজন শিল্পীর সাধনায়
রচিত হয়েছে বাংলাদেশের ছোটগল্পসাহিত্যের প্রাথমিক ভিত্তি।
ঢাকা শহরকেন্দ্রিক নতুন মধ্যবিত্তশ্রেণী মর্মমূলে সামন্ত-মূল্যবোধ ধারণ করেও বুর্জোয়া
সমাজসংগঠনের চিন্তা-চেতনা, উদার মানবতাবোধ এবং যুক্তিবাদে আকৃষ্ট হয়ে ১৯২৮
সালে গঠন করণ (মুসলিম সাহিত্য সমাজ। অপরদিকে মার্কসবাদে বিশ্বাসী অথচ বুর্জোয়া
মানবতাবাদে প্রত্যয়ী লেখক ও শিল্পীদের মানসভূমিতে পূর্ববঙ্গ উপ্ত করেছে স্বাতন্ত্র্যের বীজ
এবং এঁরাই স্বাতন্ত্র্যাভিলাষী পূর্ববাংলার শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে আধুনিক জীবনচেতনায়
অনেকাংশে উদ্বুদ্ধ করেছে।
প্রাক্-সাতচল্লিশ পর্বে পূর্ববঙ্গের ছোটগান্ধিক-চেতনাপুঞ্জ প্রবাহিত হয়েছে দুটি ভিন্নস্রোতে। একটি স্রোতের উৎসে ছিলেন সামস্ত মূল্যবোধে বিশ্বাসী গল্পকাররা: অন্যটি সৃষ্টিহয়েছে উদার বুর্জোয়া মানবতাবাদে প্রত্যয়ী কথাকোবিদদের সাধনায়। প্রথম স্রোতটি নির্মাণ
করেছেন মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন (১৯০৪-১৯৮৬), বন্দে আলী মিয়া (১৯০৮-১৯৭১) প্রমুখআর দ্বিতীয়টি আবুল মনসুর আহমদ (১৮৯৮-১৯৭১), আবুল ফজল (১৯০৩-১৯৮৩),আবুল কালাম শামসুদ্দীন (১৮৯৭-১৯৭৯), আবু রুশদ (১৯১৯), সিকান্দার আবু জাফর(১৯১৯-১৯৭৫), সোমেন চন্দ (১৯২০-১৯৪২), সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ (১৯২২-১৯৭১),শওকত ওসমান (১৯১৭-১৯৯৮), আবু জাফর শামসুদ্দিন (১৯১১-১৯৮৮), শামসুদ্দীনআবুল কালাম (১৯২৬-১৯৯৭) প্রমুখ। এ প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন যে, অসম সমাজবিকাশেরকারণে বিশ শতকের সূচনাকাল থেকে চল্লিশের দশক পর্যন্ত মুসলিম মধ্যবিত্তশ্রেণীরমানসলোকে বুর্জোয়া ভাবধারার ভূমিকা ছিল প্রগতিশীল এবং সত্যস্পর্শী।মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন কিংবা বন্দে আলী মিয়ার গল্প শিল্পমূল্যে সমৃদ্ধ নয়, কিন্তুপূর্ববাংলার গল্পসাহিত্যের বিকাশ ধারায় তাঁদের প্রয়াস ঐতিহাসিক কারণে উল্লেখযোগ্য।তাঁদের গল্পে পূর্ববাংলার মুসলিম সমাজের ধর্মাশ্রিত সংস্কারস্নিগ্ধ প্রথাচল জীবনপ্রত্যয়
রূপায়িত হয়েছে সরল প্লটের আশ্রয়ে সাবলীল ভাষায়। সামন্ত মূল্যবোধের প্রতি প্রবলআসক্তি এবং উনিশ শতকী জীবনধারণা তাঁদের গল্পসাহিত্যের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। এ প্রসঙ্গেস্মরণ করা যায় মুহম্মদ মনসুরউদ্দীনের ধানের মঞ্জুরী (১৯৩২), শিরণী (১৯৩৩), পয়লাজুলাই (১৯৩৪), শিরোপা (১৯৩৭); এবং বন্দে আলী মিয়ার মেঘকুমারী (১৯৩৬), মৃগপরী(১৯৩৪), হরিণ (১৯৩৯), অরণ্যের বিভীষিকা (১৯৪৫) প্রভৃতি ছোটগল্প-সঙ্কলনের নাম।
ব্যঙ্গ ও বিদ্রুপাত্মক গল্প রচনায় আবুল মনসুর আহমদের কৃতিত্ব সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।রাজনৈতিক ব্যঙ্গ রচনায় তিনি সিদ্ধহস্ত। সমাজের নানা দোষ-ত্রুটি ও অসঙ্গতি তিনি ব্যঙ্গেরআবরণে উন্মোচন করেন। ভণ্ড ধার্মিক, অসৎ রাজনীতিবিদ এবং কপট সমাজসেবকেরবহুমাত্রিক রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করি আবুল মনসুর আহমদের ছোটগল্পে। ও সাবলীল ভাষা,চরিত্রানুগ সংলাপ এবং সরল প্লট আবুল মনসুর আহমদের গল্পের জনপ্রিয়তার মূল কারণ।আয়না (১৯৩৫), ফুড কনফারেন্স (১৯৫০) প্রভৃতি গ্রন্থে আবুল মনসুর আহমদ সমাজের নানাঅসঙ্গতি তুলে ধরেছেন এবং একই সঙ্গে প্রত্যাশা করেছেন মানবিক অন্তঃসঙ্গতির উদ্বোধন।
মুসলিম মধ্যবিত্তের সংস্কারচেতনা ও চিত্তের প্রবঞ্চনা, নাগরিক মধ্যবিত্তের আত্মগ্লানি ওজীবনবোধের দীনতা, এবং দেশবিভাগের আবেগ-উচ্ছ্বাস-উদ্বেগে সিক্ত আবু রুশদেরগল্পভুবন। দেশবিভাগের পূর্ববর্তী-পরবর্তী সামাজিক সঙ্কট নিয়ে গল্প-উপন্যাস রচনায় তিনিঅতি-উৎসাহী, কিন্তু সে-উৎসাহ ইতিহাসচেতনা ও সম্প্রদায়-নিরপেক্ষতার অভাবে প্রায়ইমানবরসে হতে পারেনি জারিত। মধ্যবিত্তজীবনের নানা অসঙ্গতি ও অন্তঃসারশূন্যতা আবু
রুশদেরবিষয়। শাড়ী বাড়ী গাড়ী (১৯৬৩) এবং মহেন্দ্র মিষ্টান্ন ভাঙার (১৯৭৪) গল্পগ্রন্থেনাগরিক মধ্যবিত্তের চিত্তপ্রবঞ্চনা অসঙ্গতি এবং অনন্বয় শিল্পিত ভাষ্যে রূপলাভ করেছে।বিভাগ-পূর্বকালে রচিত ব্রাজধানীতে ঝড় (১৯৩৮) গল্পগ্রন্থে রোমান্টিক জীবনচেতনার যেপ্রকাশ ঘটেছিল, পরবর্তীকালের গল্পে সে-জগৎ ছেড়ে আবু রুশদ মুসলিম মধ্যবিত্তেরবাস্তবজীবনে করেছেন বিচরণ। ছোটগাল্পিক সংহতি এবং নাট্যিক ব্যঞ্জনায় আবু রুশদেরগল্প বিশিষ্ট।
সোমেন চন্দের গল্প বাংলা ছোটগল্পের ধারায় সংযোজন করেছে নতুন মাত্রা। বাংলাসাহিত্যে সমাজবাদী চিন্তার শিল্পরূপ নির্মাণে তিনি পালন করেছেন পথিকৃতের ভূমিকা। নিরন্নখেটে-খাওয়া মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযন্ত্রণার ছবি ফুটে উঠেছে তাঁর ছোটগল্পে। সোমেনচন্দের গল্পে মানুষের মুক্তিকামনা উচ্চারিত হয়েছে, ধ্বনিত হয়েছে মানবাত্মার বিজয়গাথা।রাজনীতি-সচেতনতায় এবং সমাজকাঠামো পরিবর্তনের বাসনায় সোমেনের গল্প বিশিষ্ট ওব্যক্তিক্রমধর্মচিহ্নিত। এ প্রসঙ্গে তাঁর “বনস্পতি,” “একটি রাত”, “ইঁদুর”, “সঙ্কেত" প্রভৃতিগল্প স্মরণ করা যায়।
উপন্যাসের মতো, ছোটগল্পেও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র শিল্পনৈপুণ্য একক অনতিক্রান্ত এবংপ্রাতিস্বিকতাচিহ্নিত। শিল্পবোধ ও জীবনচেতনার প্রশ্নে পূর্বাপর সতর্ক, সপ্রতিভ এবংবিশ্ববিস্তারী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর গল্পসমূহ বাংলা সাহিত্যের ধারায় সংযোজন করেছে স্বকীয়মাত্রা। যুদ্ধোত্তর বিনাশী প্রতিবেশে বাস করেও মানবীয় অস্তিত্বের ক্লান্তিহীন সাধনায় তিনিছিলেন স্থিতপ্রাজ্ঞ। নিরস্তিত্বের শূন্যতায় ফুরিয়ে যাওয়া জীবন নয়, অন্ধকার ভেঙে ভেঙেঅস্তিত্বের দায়িত্বশীল স্বাধীন সত্তায় উত্তীর্ণ হওয়াই তাঁর ছোটগল্পের মৌল বৈশিষ্ট্য। গল্পেরবিষয় নির্বাচনে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ছিলেন বাংলাদেশের জনজীবনসম্পৃক্ত, কিন্তু বক্তব্য ওপ্রকরণে সর্বজনীন, বিশ্বপ্রসারিত, স্বনিষ্ঠ এবং পরীক্ষাপ্রিয়। চেতনা ও আঙ্গিকে সৈয়দওয়ালীউল্লাহর গল্পসমূহ যেন তাঁর পরিব্যাপ্যমান জীবনবোধের অনুবিশ্ব। মানুষের অস্তিত্বঅভীপ্সা, নৈঃসঙ্গ্য, ভয়-অনুশোচনা প্রভৃতি তাঁর গল্পের উপজীব্য। ৪
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর অধিকাংশ গল্পই মনস্তত্ত্বধর্মী ও মনোময়। সমাজের বহির্বাস্তবতারচেয়ে মানবজীবনের অন্তর্বাস্তবতার জগতে বিচরণ করতে তিনি অধিক উৎসাহী। তাঁর গল্পেপ্রাধান্য পেয়েছে মানুষের অন্তর্জীবনের ইতিকথা, হার্দিক অগ্ন্যুৎপাত। বাংলাদেশেরগ্রামীণজীবন ডিটেইলস নিয়ে তাঁর সৃষ্টিতে উদ্ভাসিত হয়েছে কখনো কখনো, যেমন“নয়নচারা”। পঞ্চাশের মন্বন্তর ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা এই গল্পে ময়ূরাক্ষীরস্মৃতিময় জনপদ উন্মোচিত যেন। গ্রামীণজীবনের নানা কুসংস্কার, ধর্মীয় অন্ধতা এবংধর্মজীবীদের ভণ্ডামি ওয়ালীউল্লাহর গল্পের একটি বহু-ব্যবহৃত বিষয়। “নয়নচারা”,“মৃত্যুযাত্রী,”, “খুনী”, “দুই তীর”, “একটি তুলসী গাছের কাহিনী”, “পাগড়ি”, “সীমাহীন প্রভৃতি গল্প।
মুনির চৌধুরীর, খরম,মানুষের জন্য, নগ্ন পা ইত্যাদি গল্পও বিশেষভাবে সমাদৃত।।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামে নতুন রাস্ট্রের সৃষ্টি হয়,,আর এর মাধ্যমে পুর্ব বাংলার অগ্রগতি হয় বাধাপ্রাপ্ত। পশ্চিমাদের বৈষম্যের বিষয় গুলো হয়ে উঠে মুল উপজীব্য।
বিভাগোত্তর কালে প্রথম দশকে ছোটগল্প রচনায় যাঁরা ব্রতী হন, তাঁদের মধ্যে
সরদার জয়েনউদ্দীন (১৯১৮-১৯৮৬), মিরজা আবদুল হাই (১৯১৯-১৯৮৪), শাহেদ
আলী (১৯২৫-), আবু ইসহাক (১৯২৬-২০০১), আশরাফ সিদ্দিকী (১৯২৭-), মিল্লাত
আলী (১৯২৭-২০০২), শহীদ সাবের (১৯৩০-১৯৭১), আবদুল গাফফার চৌধুরী
(১৯৩১-), আলাউদ্দিন আল আজাদ (১৯৩২), হাসান হাফিজুর রহমান (১৯৩২
১৯৮৩), জহির রায়হান (১৯৩৩-১৯৭২), সৈয়দ শামসুল হক (১৯৩৫-), বোরহানউদ্দীন
খান জাহাঙ্গীর (১৯৩৬-), আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ (১৯৩৮) প্রমুখ শিল্পীর অবদান
উল্লেখযোগ্য। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৭, সময়ের এ পর্বে প্রকাশিত ছোটগল্পসমূহ প্রধানত
গ্রামকেন্দ্রিক ঘটনাংশ আশ্রয় করে নির্মিত হয়েছে। পূর্ববঙ্গের প্রশাসনিক কার্যক্রমের কেন্দ্র
হলেও ঢাকা শহরের প্রকৃত নগরায়ণ ঐতিহাসিক কারণেই হয়েছে বিলম্বিত। ফলতঃ
আমাদের শিল্পসাহিত্যেও নাগরিক চেতনার প্রতিফলন, আলোচ্য পর্বে, প্রায় অনুপস্থিত। তবু
আলোচ্য কালখণ্ডের ছোটগালিকদের মধ্যে আলাউদ্দিন আল আজাদ, আবদুল গাফফার
চৌধুরী, সৈয়ত শামসুল হক, হাসান হাফিজুর রহমান, বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর
প্রমুখের রচনায় নির্মীয়মাণ মহানগর ও তার জীবনবৈচিত্র্য উদ্ভাসিত হতে আরম্ভ করে
বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনায়। পঞ্চাশের গল্পকার হিসেবে যাঁরা সুপরিচিত, তাঁদের প্রধান প্রবণতা
সমালোচক নির্দেশ করেছেন এভাবে
.""""".. তাঁরা ছিলেন প্রবলভাবে জীবনবাদী ও সমাজসংলগ্ন। তাঁদের গল্পের বিষয়ে যেমনদেশবিভাগ পূর্বকালের জীবনচিত্র রূপায়িত তেমনি আছে বিভাগ পরবর্তী কালের।উদ্বাস্তুসমস্যা, মন্বন্তর, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, দাঙ্গা ইত্যাদি নিয়ে তাঁরা গল্প লিখেছেন, তবেপ্রাধান্য পেয়েছে বাংলাদেশের গ্রামজীবন। গ্রামের বা শহরের যে ধরনের বিষয়তখনকার গল্পকারেরা অবলম্বন করুন না কেন, গল্পে যাপিত জীবনের সংকট ওসমস্যার আলেখ্যই তাঁরা রচনা করেছেন। কোন কোন শিল্পীর রচনায় শ্রেণীসঘামওপ্রমূর্ত হয়েছে।"""
সরদার জয়েনউদ্দীনের গল্পে প্রাধান্য পেয়েছে বাংলার গ্রামজীবন। ইতিহাস-ঐতিহ্যেরসঙ্গে সংলগ্ন হয়ে সামাজিক অসঙ্গতিকে চিত্রিতকরতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন,
তাই তাঁর সৃষ্টিতে ইতিহাসবোধ ও সমকালচিন্তার যুগলস্রোত লক্ষণীয়। তাঁর গল্পের প্রধানউপজীব্য যুদ্ধ দাঙ্গা অসঙ্গতি ও অসাম্য আর এই সব বিরূপতা-বৈনাশিকতা থেকে মানবিকমুক্তিকামনা। সরদার জয়েনউদ্দীনের গদ্যরীতি সরল ও চিত্তাকর্ষক, প্লট জটিলতামুক্ত, আরপরিচর্যা মূলত বর্ণনাধর্মী।
আবু ইসহাকের গল্পে রূপায়িত হয়েছে গ্রামীণ বাংলার নিম্নবিত্ত মানুষের সুখ-দুঃখহাসি-কান্না-আনন্দ-বেদনা আর দ্বন্দ্ব-ষড়যন্ত্র সংগ্রামের কাহিনী। গল্পের শরীরে তিনি এঁকেদিয়েছেন গ্রামবাংলার সামাজিক অনাচার, অর্থনৈতিক শোষণ এবং ব্যক্তিক অসঙ্গতিরনানামাত্রিক চিত্র ( ইতিবাচক জীবনবোধের আলোয় আবু ইসহাকের নায়কেরা সমস্ত অন্ধতাকুসংস্কার আর শোষণের শৃঙ্খল ভেঙে একটি সুন্দর সমাজপ্রতিবেশ নির্মাণে হয়েছে জাগত।এ প্রসঙ্গে তাঁর বিস্ফোরণ”? “জোঁক”, “খুঁতি” প্রভৃতি গল্পের কথা উল্লেখ করা যায়।শ্রেণীসংগ্রামের শিল্পভাষ্য হিসেবে “জোঁক” গল্প আবু ইসহাকের প্রগত জীবনবোধেরপরিচয়বাহী। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র মতো, আবু ইসহাকের গল্প বর্ণনাপ্রধান এবং প্রথাশ্রয়ী,সেখানে নেই আঙ্গিক-সংগঠন বা ভাষা নিয়ে সতর্ক কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ছাপ।
শিশু মনস্তত্ত্বের গল্প হিসেবে শাহেদ আলীর “জিবরাইলের ডানা" অর্জনকরে বহুল প্রশংসা। “সিতারা", "মা", "পুতুল", "মহাকালেরপাখনায়”, “একই সমতলে",“অতীত ব্রাতের কাহিনী” প্রভৃতি গল্প তাঁর ছোটগাল্পিক-প্রতিভার স্বাক্ষরবাহী। কাব্যময়তা,সংহতি এবং অন্তিম ব্যঞ্জনাসৃষ্টিতে শাহেদ আলীর গল্প বিশিষ্ট।
প্রথম পর্বের গল্পে আলাউদ্দিন আল আজাদের দেশ-কাল-শ্রেণীসচেতন মানসতারসুস্পষ্ট প্রকাশ লক্ষণীয়। জেগে আছি (১৯৫০), ধানকন্যা (১৯৫১), মৃগনাভি (১৯৫৩) প্রভৃতিগ্রন্থে শ্রেণীচেতনায় সজাগ থেকে তিনি নির্মাণ করেছেন মানবতার অপরাজেয় গৌরবগাথা।
কিন্তু দ্বিতীয় পর্বের গল্পে মার্কসীয় শ্রেণীধারণা থেকে বিচ্যুৎ হয়ে তিনি জীবনের অন্তঃঅসঙ্গতিসন্ধানে ফ্রয়েডীয় মনোবিকলন ও যৌনধারণায় আকৃষ্ট হলেন। জীবনদৃষ্টির এই পশ্চাৎগতিতাঁর গল্পের শিল্পসিদ্ধিকেও করেছে ক্ষুণ্ন। মনোবিকলন ও মনোগহনের শিল্পরূপ হিসেবে তাঁর
অন্ধকার সিঁড়ি (১৯৫৮), উজান তরঙ্গে (১৯৫৯), যখন সৈকত (১৯৬৭), জীবন জমিন১৯৮৮) প্রভৃতি সঙ্কলনভুক্ত গল্পগুলোর কথা আমরা উল্লেখ করতে পারি। আলাউদ্দিন আলআজাদ গল্পের সাংগঠনিক বৈশিষ্ট্য এবং ভাষা ব্যবহারে সচেতন শিল্পদৃষ্টির স্বাক্ষররেখেছেন। ছোটগাল্পিক সংহতি, নাটকীয়তা এবং কাব্যিক ব্যঞ্জনা তাঁর ছোটগল্পের অন্যতমবৈশিষ্ট্য। সংহতি এবং ইঙ্গিতময়তায় ঋদ্ধ তাঁর গদ্যের এক উজ্জ্বল এলাকা—
""তখন সমস্ত আকাশে মেঘেদের হুড়োহুড়ি লুটোপুটি লেগে গেছে, মন্ত্র-গর্জনেএকেকবার কেঁপে কেঁপে উঠছে সারা পৃথিবী। একটানা ঝড়ের তীব্র বেগে ছিন্ন ভিন্নহয়ে যাচ্ছে গাছপালা, মত্ত হয়ে কে যেন লেগেছে লুণ্ঠনের উচ্ছৃঙ্খল তৎপরতায়।স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল মন্থন করে যেন এক মহাপ্রলয়ের উচ্ছ্বসিত শব্দের ভয়ংকরসুন্দর রাগিণী।এভাবে কতক্ষণ ঝড় চলল হয়তো কেউ বলতে পারবে না। বাতাস যখন কমতেলাগল, তখন অযুত মুক্তাবিন্দুর মতো নামল বৃষ্টি। [বৃষ্টি]""""
নাগরিক মধ্যবিত্তের স্বপ্ন, সংগ্রাম আর হৃদয়রহস্য নিয়ে গড়ে উঠেছে জহির রায়হানেরগল্পভূবন। জহির রায়হানের সমাজসচেতন মানস্রতা এবং বস্তুতান্ত্রিক জীবনার্থের সুস্পষ্টপ্রভাব পড়েছে তাঁর ছোটগল্পে। মানবমনের গভীরতর রহস্যলোকে সন্ধানী আলো ফেলতেতিনি নিয়ত উৎসাহী শিল্পী। ভাষা ব্যবহার এবং প্রকরণ-প্রসাধনে জহির রায়হান পরীক্ষাপ্রিয়কথাকার। তাঁর গল্প-আঙ্গিক চিত্রনাট্যধর্মী, সংহত এবং কবিতারিগ্ধ। তবে অতিনাটকীয়তারকারণে এবং উৎকণ্ঠার আধিক্যে কখনো কখনো তাঁর গল্প অর্জন করতে পারেনি শৈল্পিকসিদ্ধি। জীবনবোধের স্বাতন্ত্র্য দিয়ে, প্রাকরণিক প্রাতিস্বিকতা দিয়ে বাংলাদেশের গল্পের ধারায়জহির রায়হান সংযোজন করেছেন একটি নতুন মাত্রা।মনোগহনের জটিলতা ও অসঙ্গতি উন্মোচনে বাংলাদেশের গল্পসাহিত্যে সৈয়দ শামসুলহক অনতিক্রান্ত শিল্পী। প্রথম পর্বে সৈয়দ শামসুল হক বৃহত্তর জনজীবনের পটে গল্পলিখেছেন, কিন্তু দ্বিতীয় পর্বে মানবজীবনে অন্তঃঅসঙ্গতি ও অন্তঃর্বাস্তবতার গল্পরূপ অঙ্কনেইহলেন অধিক উৎসাহী। তাঁর গল্পে জীবন ভিন্ন সুর পেয়েছে, গল্পে দেখা দিয়েছে প্রাণ।দেহের কাঠামো ছাড়িয়ে গল্পে প্রাণের সঞ্চার এবং শুধুমাত্র গল্পের জন্য গল্প এই ধারণা থেকেগল্পের মুক্তি, !... তাঁর হাতেই প্রথম সার্থকভাবে ঘটেছে। ১ নাগরিক মধ্যবিত্তের মনস্তাত্ত্বিকজটিলতা, অসঙ্গতি আর নির্বেদ অঙ্কনেই সৈয়দ শামসুল হকের মনোযোগ সমধিক। এরবাইরে জীবনের বৃহত্তর প্রাঙ্গণে তিনি ফেলতে চাননি কোন সন্ধানী আলো। আমাদেরসামাজিক অবস্থার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ নাগরিক জীবনচর্যানিয়ে গল্প লিখতে গিয়ে, বোধ করিপ্রায়শই তিনি কৃত্রিমতার দ্বারস্থ হয়েছেন। এসব গল্পের ভাবনা ও উপাদান আরোপিত, ফলেশিল্প-সার্থকতায় শীর্ষমুখ-অভিসারী হয়েও তা হঠাৎ-স্খলিত। “আনন্দের মৃত্যু”, “পরাজয়েরপর”, “বন্ধুর সঙ্গে সন্ধ্যে”, ‘শেষ বাস” প্রভৃতি গল্পে এ ধরনের কৃত্রিমতা সুস্পষ্ট।।
ষাটের দশকে বাংলাদেশের গল্পসাহিত্যে সূচিত হয় একটি নতুন স্রোত। আর্থ-সামাজিকরাজনৈতিক কল্লোল আর সংক্ষোভের পটে রচিত এ কালের গল্প প্রকৃত অর্থেই উদ্ভাসিতকরেছে ষাটের উন্মাতাল বাংলাদেশকে বাংলাদেশের সংক্ষুব্ধ জনগোষ্ঠীকে। একদিকেসামরিক শাসনের পেষণ, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিপর্যয়, অবাঙ্গালী পুঁজির বিকাশ;অন্যদিকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এই সময়কে অস্থিরকরে তোলে। এই সময়ে অগ্রজ গল্পকারেরা যখন গল্পের জগৎ থেকে এক প্রকার প্রস্থানকরেছেন, তখন উঠে এসেছেন নতুন প্রজন্মের গল্পকারেরা।
আলম (১৯২৭-), সুচরিত চৌধুরী (১৯৩০-১৯৯৪), মুর্তজা বশীর (১৯৩২-), সাইয়িদআতীকুল্লাহ (১৯৩৩-১৯৯৮), মাফরুহা চৌধুরী (১৯৩৪-), শহীদ আখন্দ (১৯৩৫),হুমায়ুন কাদির (১৯৩৫-১৯৭৭), শওকত আলী (১৯৩৬), জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত (১৯৩৯-),হাসনাত আবদুল হাই (১৯৩৯-), ব্রিজিয়া রহমান (১৯৩৯-), রাহাত খান (১৯৪০),বুলবন ওসমান (১৯৪০), মাহমুদুল হক (১৯৪০), দিলারা হাশেম, রশীদ হায়দার(১৯৪১-), আবদুস শাকুর (১৯৪১), মাহবুব তালুকদার (১৯৪১), আখতারুজ্জামানইলিয়াস (১৯৪৩-১৯৯৭), আহমদ ছফা (১৯৪৩-১৯৯৯), আবদুল মান্নান সৈয়দ (১৯৪৩),সুব্রত বড়ুয়া (১৯৪৫-), সেলিনা হোসেন (১৯৪৭-), কায়েস আহমদ (১৯৪৮-১৯৯২)প্রমুখ। শৈল্পিক সিদ্ধি এবং জীবনার্থের প্রশ্নে এঁদের অনেকের মধ্যে রয়েছে মেরুদূর ব্যবধান;তবু আমরা তাঁদের একই পংক্তিতে বিন্যস্ত করছি—কেননা, এঁদের সকলেরই রয়েছে অভিন্নকুললক্ষণ—এঁরা সকলেই দ্রোহ-বিদ্রোহ-সংক্ষোভ-সংঘামময় উত্তাল ষাটের গল্পকার।নাজমুল আলম, সুচরিত চৌধুরী, মুর্তজা বশীর, মাফরুহা চৌধুরী, হুমায়ুন কাদির,হাসনাত আবদুল হাই, রিজিয়া রহমান, বুলবন ওসমান, মাহবুব তালুকদার প্রমুখ শিল্পীরগল্পরচনাপ্রয়াস ষাটের দশকে শুরু হলেও, এ দশকের প্রধান বৈশিষ্ট্য প্রকরণ-সতর্কর্তা এবংমনোগহন-বিশ্লেষণ এঁদের রচনায় অনুপস্থিত।
ষাটের দশকে আমাদের ছোটগল্পের অঙ্গনে যে-সব প্রতিভাধর শিল্পী আবির্ভূতহয়েছেন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তাঁদের অন্যতম। পুরোনো ঢাকার ক্ষয়িষ্ণুতা,মূল্যবোধের অবক্ষয়, স্বার্থপরতা আর জীবনসংগ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছে তাঁর গল্পেরসমৃদ্ধবন। পুরোনো ঢাকাকে ইলিয়াসের মতো এমন অনুপুঙ্খভাবে আর কেউ দেখেননি।তাঁর গল্পে কাহিনী অপেক্ষা চরিত্র-মনস্তত্ত্ব মুখ্য হয়ে দেখা দিয়েছে, যা আধুনিক ছোটগল্পেরঅন্যতম বৈশিষ্ট্য। নেতি দিয়ে শুরু করে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তাঁর চরিত্রকে সমাপ্তিতেপৌঁছে দেন ইতির রাজ্যে। ডিটেইলস্ তাঁর গড়ে উঠে আসে অবলীলায়। তবে কখনোকখনো এক গল্পের মধ্যে একাধিক উপগন্ন পীড়িত করে মূল গল্প-স্রোতকে। প্রায় তিরিশবছরের সাহিত্যসাধনায় তিনি লিখেছেন মোট তেইশটি গল্প— এমনই স্বল্পপ্রজ এই শিল্পী।তবে হাতে গোনা এই গল্পগুলোর মধ্যেই ফুটে উঠেছে জীবনের বিচিত্র প্রান্ত, উপলব্ধিরবহুবর্ণিল জগৎ। তাঁর জন্য ঘরে অন্য স্বর (১৯৭৬) গল্পগ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে মানবিকসম্পর্কের আন্ত্যম্ভিক বিনটি, খোয়ারি-তে (১৯৮২) যুব-মানসের নির্বেদ; দুধভাতেউৎপাত-এ (১৯৮৩) নিরন্ন মানুষের জীবনে অমোঘ নিয়তিশাসন, আর দোজখের এম(১৯৮৯) গ্রন্থে নেতি থেকে ইতিতে উত্তরণের কথকতা।
সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশের ছোটগল্পসাহিত্য গ্রামজীবন অতিক্রম করে ক্রমশশহরমুখী হয়ে উঠেছে। তুলনাসূত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আমাদের ছোটগাল্পিকরাগ্রামীণজীবন চিত্রণে যতটা স্বচ্ছন্দ বস্তুনিষ্ঠ, নগরজীবন চিত্রণে ততটা নন। তিরিশেরপশ্চিমবঙ্গীয় কথাসাহিত্যের প্রভাবে এ পর্বে নবীন ছোটগাল্পিকদের রচনায় এসেছে আধুনিকনাগরিকচেতনা, লিবিডোতাড়িত মনোবিকলন এবং যুদ্ধোত্তর পশ্চিমী অবক্ষয়ীচেতনা।পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনে অবরুদ্ধ সংক্ষুব্ধ পূর্ববাংলার আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিকসঙ্কটও এ সময়ের ছোটগল্পে অভিব্যঞ্জিত হয়েছে। পাকিস্তানোত্তর প্রথম দশকের তুলনায় এপর্বের ছোটগাল্পিকরা অনেক বেশি আঙ্গিকসচেতন ও প্রকরণনিষ্ঠ; বিষয়াংশ নির্বাচন, ভাষাব্যবহার এবং প্রকরণ-পরিচর্যায় অধিকাংশ ছোটগাল্পিক পরীক্ষাপ্রবণ ও বৈচিত্র্যসন্ধানী।স্বাধীনতা পূর্ববর্তীকালের এই উত্তরাধিকারের ওপরই নির্মিত হয়েছে বিদেশী শত্রুমুক্তস্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের ছোটগল্পসাহিত্য।
0 মন্তব্যসমূহ