বাংলাদেশের প্রবন্ধ ও প্রবন্ধকার (১৯৭১-২০১৫)
সন্তোষ গুপ্ত (১৯২৫-২008 )
"সত্যসন্ধ, ত্যাগী ও নির্ভীক পুরুষ, বিদ্বান, স্মৃতিমান ও যুক্তিবাদী' সন্তোষ গুপ্ত। তাঁর অনুত্তম বক্তব্য (১৯৮৭) তাঁর সাহিত্য সমালোচনাধর্মী গ্রন্থ। এখানে খ্যাতিমান চিত্রকরদের শিল্পরুচি নিয়ে যেমন আলোচনা আছে তেমনি কবিতা নিয়েও আছে। বিশ্লেষণ। সন্তোষ গুপ্তর মননচিন্তার প্রকাশ এ গ্রন্থটি। তাঁর প্রবন্ধের ভিত্তিটিও এখানে অনুমান করা যায়। শক্তিশালী এ লেখকের প্রবন্ধের বই : স্মৃতি বিস্মৃতির অতলে (১৯৯৬), ইতিহাসের ছায়াচ্ছন্ন প্রহর ও বঙ্গবন্ধু (১৯৯৬), ইতিহাস আমাদের দিকে (১৯৯৮), বাংলাদেশের চিত্রশিল্প : স্বরূপের সন্ধান (১৯৯৮), একুশের চেতনা ও আজকের বাংলাদেশ (১৯৮৮), শিল্প সমাজ ও বাস্তবতা (১৯৯৯), অসমাপ্ত কবিতা (১৯৯৯), সমাজতন্ত্রের অন্য ইতিহাস (২০০০), সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বনাম সাংবাদিকতা (২০০০), অনালোক আলোকস্তম্ভ (২০০১) ও ইতিহাসের ঝর্ণাধ্বনি (২০০৫)। পত্রিকার কলাম লেখক; কমিটেড, স্বচ্ছ প্রগতিমনস্কতার আজীবন পথিকৃৎ।
সৈয়দ নাজমুদ্দিন হাশেম (১৯২৫-১৯৯৯)
লেখকের প্রবন্ধ বন্দীশালা পাকিস্তান (১৯৯৪), অশ্লেষার রাক্ষসী বেলায়, স্মৃতিপটে শেখ মুজিব ও অন্যান্য (১৯৮৬)। এটি দশটি প্রবন্ধের সংকলন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্, সানাউল হক, ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ অনেক বড় ব্যক্তিদের নিয়ে রচিত। প্রবন্ধকারের আপনদৃষ্টি ও মেজাজে সুলিখিত এ গ্রন্থটি। সমাজ-সংস্কৃতির একটি নিরপেক্ষ মূল্যায়নও এখানে পরিলক্ষিত। ফজলুল করিম (১৯২৫-২০১৪)নানা কথা, নানা কথার পরের কথা, রুমীর আম্মা, নূহের কিশতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পূর্ববঙ্গীয় সমাজ (১৯৯৩), চল্লিশের দশকের ঢাকা, গল্পের গল্প, যুক্তিবিদ্যা সরদার ফজলুল করিমের গ্রন্থ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পূর্ববঙ্গীয় সমাজ সরদার করিমের অনবদ্য পুস্তক। আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে আলাপচারিতার ঢংয়ে রচিত এ গ্রন্থটি চমৎকার ও সুখপাঠ্য। আলাপচারিতায় লেখক ব্যক্তিকথা নয় উঠে আসে সমাজ-সংস্কৃতি, ইতিহাস-রাজনীতি- স্বদেশ সবকিছু। সময়ের দলিলে রূপান্তরিত হয় তাঁর রচনা। গ্রন্থটির পদ্ধতিগত বিন্যাস সুন্দর, ভঙ্গি প্রসাদগুণসম্পন্ন। নিপুণভাবে বর্ণিত এ রচনাটি বাংলাদেশের গদ্যবিবেচনায় অভিনব সংযোজন।
আতোয়ার রহমান (জ. ১৯২৭ )
খ্যাতিমান প্রাবন্ধিক। খ্যাতি শিশুসাহিত্যে। তাঁর প্রবন্ধ গবেষণা : সাহিত্য-সংলাপ (১৯৭৫), বাংলাদেশের শিশু পত্রিকা (১৯৭৭), সাহিত্য ও বিবিধ ভাবনা (১৯৮১), মেলা (১৯৮৮), একাত্তর : নির্যাতনের কড়চা (১৯৯২), সূর্যবাদ (১৯৯২), শিশু সাহিত্যে মুসলিম সাধনা (১৯৯৪), নজরুল বর্ণালী (১৯৯৪), লোককৃতি কথাগুচ্ছ (১৯৯৭), শিশুসাহিত্য নানা প্রসঙ্গ (১৯৯৭) প্রভৃতি । তাঁর প্রবন্ধ যুক্তিনির্ভর, সাবলীল। অভিজ্ঞতার নন্দন সৃষ্টি করেন তিনি প্রবন্ধে ।
জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী (১৯২৮-২০১৪)
শব্দের সীমানা (১৯৭৬), Literature of Bangladesh and other Essays (1983), আমার দেশ আমার ভাষা (১৯৮৪), অনুবাদ (১৯৮৫), পৃথিবী ও পাসপোর্ট (১৯৮৬), শান্তিনিকেতনে তিন মাস (১৯৮৯), বাঙালির আত্মপরিচয় (১৯৯১), প্রবাসে প্রতিদিন (১৯৯৪), যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ছিলাম (১৯৯৭) এ ছাড়াও তিনি বেশকিছু গ্রন্থের সম্পাদনা করেছেন। সমালোচনায় তাঁর আবেগ নিয়ন্ত্রিত। সেখানে বুদ্ধির প্রলেপ সঞ্চারিত করেন। চিন্তার স্বচ্ছতা আছে, সরল ও সহজ তাঁরউপপাদ্য। সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব কায়েম হয় প্রবন্ধে। অনুবাদ গদ্যটি তাঁর বেশি আকর্ষণীয়।
মালিহা খাতুন (জ. ১৯২৮)
বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ ও লেখক মালেকা বেগম। নারীমুক্তি বিষয়ে তাঁর অনেক তথ্যনিষ্ঠ গ্রন্থ রয়েছে। প্রাবন্ধিকের প্রবন্ধ সুপাঠ্য, পরিচ্ছন্ন। তাঁর বাংলা ভাষার বিকাশে ব্যবহারিক জীবন (১৯৭৪), নারী মুক্তি আন্দোলন, বাংলাদেশের নারী আন্দোলন (১৯৮৯), সমস্যা ও ভবিষ্যৎ, বাংলাদেশের নারী চিত্র : ৮০'র দশক (১৯৮৬), নৃশংসতার শিকার বাংলাদেশের নারী, ইলা মিত্র, উইনীর চোখে ম্যান্ডেলা (১৯৮৮), বাংলাদেশের নারী নির্যাতন (১৯৮৬), বাংলার নারী আন্দোলন (১৯৮৯), আমি নারী (১৯৯৮), প্রভৃতি গ্রন্থ। তাছাড়া বিভিন্ন পত্রিকা সংকলন ও সম্পাদনার সঙ্গেও মালেকা বেগম যুক্ত।
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান (১৯২৮-২০১৪)
রবীন্দ্র গবেষক, ভাষাবিদ, আইনজ্ঞ, ইতিহাসবিদ মুহম্মদ হাবিবুর রহমান। বিচিত্র বিষয়ে কাজ করেছেন। যথাশব্দ (১৯৭৪), মাতৃভাষার স্বপক্ষে রবীন্দ্রনাথ (১৯৮৩), রবীন্দ্র প্রবন্ধে সংজ্ঞা ও পার্থক্য বিচার (১৯৮৩), কোরানসূত্র (১৯৮৪), বচন ও প্রবচন (১৯৮৫), গঙ্গাঋদ্ধি থেকে বাংলাদেশ (১৯৮৫), রবীন্দ্র রচনার রবীন্দ্র ব্যাখ্যা (১৯৮৬), রবীন্দ্রবাক্যে আর্ট, সঙ্গীত ও সাহিত্য (১৯৮৬), আমি কি যাব না তাদের কাছে যারা শুধু বাংলায় কথা বলে (১৯৯৬), বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হউক (১৯৯৬), আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা (১৯৯৭), বাংলা ভাষার সংগ্রাম এখনও অসমাপ্ত (১৯৯৭), কলম এখন নাগালের বাইরে (১৯৯৭), একুশে ফেব্রুয়ারী সকল ভাষায় কথা কয় (১৯৯৯), মিত্রাক্ষর (২০০০) প্রভৃতি। রবীন্দ্র পঠন-পাঠনকে একটা বিশেষ জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। তাঁর বাংলা অভিধান বিষয়ক গ্রন্থও গুরুত্বপূর্ণ।
অজয় রায় (জ. ১৯২৮)
বাংলাদেশের আর্থ-সমাজজিজ্ঞাসার বিশ্লেষণাত্মক প্রবন্ধ বাঙলা ও বাঙালি (১৯৭৭), বাংলাদেশের অর্থনীতি : অতীত ও বর্তমান (১৯৭৮), আমাদের জাতীয়তার বিকাশ (১৯৮২), বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থা : সংকট ও সমাধান (১৯৮৩), রাজনীতি কি ও কেন (১৯৮৬), পুঁজিবাদী অর্থনীতি (১৯৮৬), বাংলাদেশের কৃষক বিদ্রোহ (১৯৮৭), সাম্প্রতিক (১৯৮৬), শিক্ষানবিশীর হাতেখড়ি (১৯৯০)। এসব গ্রন্থে অজয় রায় কম্যুনিষ্ট দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করেছেন। বিশ্বাস ও বাস্তবের সমন্বিত প্রয়াসটি কায়েম হয় তাঁর রচনায়। পুঁজি, ভূমি, কৃষক মুক্তির ধারায় অনেক লেখকের মধ্যে অজয় রায়ের লেখা মানবজিজ্ঞাসায় ব্যতিক্রমী।
এম আর আখতার মুকুল (১৯২৯-২০০৪)
সাংবাদিক-প্রাবন্ধিক। 'চরমপত্র'খ্যাত লেখক। রাজনীতিবিষয়ক প্রবন্ধ লিখেছেন। পাঠ-অভিজ্ঞতায় অর্জন করেন ইতিহাস রাজনীতি বিষয়ে ধারণা। আজীবন প্রগতির পক্ষের লেখক ছিলেন। তাঁর গ্রন্থ : রূপালী বাতাস (১৯৭৩), মুজিবের রক্ত লাল (১৯৭৬), লন্ডনে ছক্কু মিয়া (১৯৮১), ভাসানী-মুজিবের রাজনীতি (১৯৮৪), আমি বিজয় দেখেছি (১৯৮৫), চল্লিশ থেকে একাত্তর (১৯৮৫), কোলকাতাকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী (১৯৮৭), নির্বাচিত প্রবন্ধ সংকলন (১৯৮৭), ওরা চারজন (১৯৮৭), লেছড়াগঞ্জের লড়াই (১৯৮৮), একাত্তরের বর্ণমালা (১৯৮৯), একুশের দলিল (১৯৯০), মহাপুরুষ (১৯৯১), দু'মুখী লড়াই।
বশীর আল হেলাল (জ. ১৯৩৬)
গদ্যকার, পরিশ্রমী লেখক। সমাজ-অনুষঙ্গি বিশ্লেষক। সাম্প্রতিক কবি সাম্প্রতিক কবিতা (১৯৭৫), বাংলা গদ্য (১৯৮৫), ভাষা-আন্দোলনের ইতিহাস (১৯৮৫), বাংলা একাডেমীর ইতিহাস (১৯৮৬), ইবরাহীম খাঁ (১৯৮৮), আদর্শ বাংলা বানান (১৯৯০) বেলগ্রেডের ডাক (১৯৯১), তাঁদের সৃষ্টির পথ (১৯৯৩) প্রভৃতি তাঁর গ্রন্থ। ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থগুলো তাঁর আকর গ্রন্থ।
) বেগম জাহান আরা (জ. ১৯৩৭ )
সাহিত্য ও সংস্কৃতির পরিচয়, বাঙলা ভাষা সংস্কার : যুগে যুগে (১৯৮৫), বাঙলা উচ্চারণ বিধি ও রীতি, বাঙলা সাহিত্যে লেখিকাদের অবদান (১৯৮৫), আ-মরি বাংলা ভাষা (১৯৮৭), সর্বস্তরে বাংলা ভাষা এবং আমরা (১৯৮৮), বাঙলা উচ্চারণ বিধি ও রীতি (১৯৯৪), বেগম রোকেয়া রচনাবলী : নারীমুক্তি প্রসঙ্গ (১৯৮৯), বাঙলাদেশের নারী সংক্ষিপ্ত : পরিপ্রেক্ষিত।(১৯৯৩) প্রভৃতি গ্রন্থে তিনি সাবলীল ও সম্মুখগামী।
মুহম্মদ ইদরিস আলী (১৯৩৮- ২০০৮)
মুহম্মদ ইদরিস আলীর গবেষণাধর্মী রচনা বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে মধ্যবিত্ত শ্রেণী (১৯৪৭-১৯৭০) (১৯৮৫), আমাদের উপন্যাসে বিষয়-চেতনা : বিভাগোত্তর কাল (১৯৮৮), বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (১৯৯০) প্রভৃতি। তিনি জসীমউদ্দীন (১৯৮৮) ও শহীদ সাবের (১৯৮৯)-এর জীবনীও লিখেছেন।
মোবারক হোসেন খান (জ. ১৯৩৮)
সংগীতবিষয়ক প্রচুর গ্রন্থ লিখেছেন। সংগীত প্রসঙ্গ, বাদ্যযন্ত্র প্রসঙ্গ, সঙ্গীত সাধনা, রাগসংগীত তাঁর গুরুত্বপূর্ণ পুস্তক। সঙ্গীতের ঐতিহ্যিক সঙ্গতি সাপেক্ষে এসব গ্রন্থে যুক্তিনিষ্ঠা ও শাস্ত্রীয় আবেগ দুটোরই সৃজনশীল ব্যাখ্যা করেছেন মোবারক হোসেন খান। প্রত্যক্ষ বয়ানে তিনি অনেকটা সহজবোধ্য।
আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ (জ. ১৯৩৮)
প্রাবন্ধিক। ভাষাবিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত। আধুনিক ভাষাতত্ত্ব (১৯৮৪) তাঁর গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। এ গ্রন্থে ভাষাবিজ্ঞানের অনেক জটিল বিষয়ের তত্ত্বগত মীমাংসা সম্পন্ন করেছেন। ভাষাভঙ্গিতে মনজুর মোরশেদের ব্যক্তিত্বগুণ পরিলক্ষিত।
হাসান আজিজুল হক (জ. ১৯৩৯)
শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ে যুক্তিনিষ্ঠ প্রবন্ধ লিখেছেন হাসান আজিজুল হক। কথাসাহিত্যের কথকতা (১৯৮১), অপ্রকাশের ভার (১৯৮৮), অতলের আধি (১৯৯৮), কথা লেখা কথা (২০০৭), নির্বাচিত প্রবন্ধ (২০০৮), ছড়ানো ছিটানো (২০০৮) তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ। শিল্প-সাহিত্য-সমাজ-সংস্কৃতি নিয়ে তাঁর লেখালেখি। প্রগতিবুদ্ধীতে প্রদীপ্ত তাঁর রচনা। প্রথম প্রবন্ধে সাহিত্য বিষয়ক যে বক্তব্য প্রণয়ন করেছেন তা অনেকাংশে ঋদ্ধ। নতুন চিন্তার প্রকাশ যেমন আছে তাঁর রচনায় তেমনি ভূমি-মাটি ও সংস্কৃতির বিবর্তনের 'পরশপাথর' ইঙ্গিত আকর্ষণীয়। তাঁর 'অপ্রকাশের ভার প্রবন্ধটির ভাষা বিষয়ক তর্কটি এরকম : "আসলে আমরা ভাষা ব্যবহার করেই চিন্তা করতে পারি এবং এ প্রক্রিয়ার মধ্যেই চিন্তা করতে করতে নতুন করে ভাষা তৈরি করতে থাকি। কাজেই লিখিত গদ্যভাষাকে যেমন কেবলমাত্র স্বভাবের ওপর ছেড়ে দিলেই চলে না, তেমনি তার ওপর হাতুড়ি পেটানোও যায় না।' ভাষাবিষয়ক চিন্তায় 'মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষারীতি' তাঁর অনবদ্য প্রবন্ধ। আকর্ষণীয় এসব অনেক রকমের প্রবন্ধে হাসান আজিজুল হক তুলনায় আনেন দৈনন্দিন ব্যবহার্য ও প্রতিরোধ-সংগ্রামী অব্যর্থ উপমাসমূহ। যা কবির আখ্যান নয় বা তেমন মার্গেরও তত্ত্বকথা নয়, একেবারে নিটোল দুয়ারে প্রস্তুত বাস্তবতা। প্রবন্ধগাত্রে আবেগের টান আছে, সেটি প্রত্যেকের মতো, স্বাভাবিক, স্বাচ্ছন্দ্যময় কিন্তু কিছুতেই আরোপিত নয়। কথাসাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ আছে, সমকালীন আর্থ-সমাজ বিষয়ক প্রবন্ধও আছে, আছে স্মৃতিচারণঋদ্ধ কালের কথা। বাংলাদেশের প্রবন্ধে এ কথনভঙ্গিটিতে তিনি স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন।
মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ (জ. ১৯৩৯)
শেক্সপীয়র ও বাংলা কবিতা, সমালোচনা (১৯৮৫), শব্দের শিল্পরূপ ও অন্যান্য প্রবন্ধ (১৯৮৫), হাজার বছরের স্বপ্ন বাংলা একাডেমী (১৯৯৪), সত্যের প্রকাশ (১৯৯৪) হারুন-উর-রশিদের অনবদ্য প্রবন্ধগ্রন্থ। শেক্সপীয়র বিষয়ক গ্রন্থটি ভিন্নমনস্ক এবং গুরুত্বপূর্ণ। এখানে তাঁর চেতনা প্রজ্ঞাঋদ্ধ এবং ব্যক্তিত্বপূর্ণ। কবিতার যুক্তিটি তিনি নিজস্বতায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। যুক্তিনিষ্ঠ তাঁর গদ্য, শব্দসন্ধানী এ লেখক পরিচ্ছন্ন এবং স্বচ্ছচিন্তায় উৎকীর্ণ।
১৯৯২), আমাকে কথা বলতে দিন (১৯৯৩), বাংলা নাটকের গোড়ার কথা (১৯৯৪), হিন্দু-মুসলিম মৌলবাদীর চোখে নজরুল (১৯৯৪), কে ভারতের দালাল (১৯৯৫), বঙ্গবন্ধু (১৯৯৭), একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা (১৯৯৭), পঞ্চাশের দশকের আমরা ও ভাষা আন্দোলন (১৩৯১), বায়ান্নোর জবানবন্দী (১৩৯২) প্রভৃতি। এসব গ্রন্থে এম. আর. আখতার মুকুল একটা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পেরেছেন। তাঁর রচনা রসসমৃদ্ধ। সম্পাদনা : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র [এক খণ্ডে সমাপ্ত) (১৯৮৮), স্বাধীনতাযুদ্ধের আলোকচিত্র (১৯৮৮),আমিই খালেদ মোশাররফ (১৯৯০), বিজয় একাত্তর (১৯৯১), নকশালের শেষ সূর্য (১৯৮৯), বাহান্নোর ভাষা আন্দোলন (১৩৯১)।
দ্বিজেন শর্মা (১৯২৯-২019 )
নিসর্গপ্রেমী দ্বিজেন শর্মার প্রবন্ধগ্রন্থ জীবনের শেষ নেই (১৯৭৮), শ্যামলী নিসর্গ (১৯৮০), সপুষ্পক উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস তত্ত্ব (১৯৮১), সতীর্থ বলয়ে ডারউইন (১৯৮৪), ফুলগুলির যেন কথা (১৯৮৮), স্বদেশে প্রবাসে (১৯৯৩), গহন কোন বনের
ধারে (১৯৯৪), মম দুঃখের সাধন (১৯৯৪), ডারউইন ও প্রজাপতির উৎপত্তি (১৯৯৭) প্রভৃতি। প্রকৃতির রংকে কল্পনামাধুরীতে মিশিয়ে পরিবেশন করেন দ্বিজেন শর্মা। পরিপক্ব গদ্য, চেতনায় গৃহীত সাম্যবাদ, তথ্যউপাত্তের বৃক্ষবন্দনা সবকিছু মিলে ধরিত্রির অধিকার সম্পর্কে সচেতন। গদ্যময় তাঁর বসুধা। মা-মাতৃকায় ——– অংশীদারকৃত এ প্রকৃতি অনেকটা একার্থক। সুতরাং নিখুঁত তাঁর বয়নভঙ্গি। বেশকিছু সম্পাদনা গ্রন্থও আছে দ্বিজেন শর্মার।
আবুল কাশেম চৌধুরী (জ. ১৯৩৩)
গবেষক ও মননশীল প্রাবন্ধিক। বাংলা সাহিত্যে সামাজিক নক্শা : পটভূমি ও প্রতিষ্ঠা ( ১৮২০-১৮৪৮) (১৯৮৩) বাংলাদেশের গবেষণা-সাহিত্যে একটি অনবদ্য গ্রন্থ। প্রচণ্ড পরিশ্রমে ও মেধায় সমাজমনকে চিহ্নিত করে অনেক অনালোকিত দিক এ গ্রন্থে উন্মুক্ত করেছেন তিনি। তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ (১৯৬৮), নজরুল ইসলামের অগ্নি-বীণা (১৯৮৯) প্রভৃতি। তাঁর মননধর্মী রচনা মূল্যবোধের অবক্ষয় : ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে (১৯৮৭)। শুদ্ধ সংস্কৃতিচিন্তাকেই পাথেয় জ্ঞান করেছেন এলেখক ।
সৈয়দ শামসুল হক (১৯৩৫-২০১৬)
অনবদ্য প্রবন্ধকার। হৃৎকলমের টানে / ১ম খণ্ড (১৯৯১), হৃৎকলমের টানে / ২য় খণ্ড (১৯৯৭), মার্জিনে মন্তব্য (২০০৫) অসামান্য গদ্যগ্রন্থ। আত্মতামূলক এসব প্রবন্ধে সৈয়দ হক কবিমনস্কতার পরিচয় দিয়েছেন। জীবন সমাজ-সংস্কৃতির বিচিত্র বিষয়কে তিনি পঠনে এনেছেন। স্বচ্ছচিন্তার পরিপক্ক মননের দৃষ্টান্ত সৈয়দ হক। কয়েক দশকের সাহিত্যচিন্তায় এসব গ্রন্থেতিনি অনেক পর্যায় অতিক্রম করেছেন।
১৯৯২), আমাকে কথা বলতে দিন (১৯৯৩), বাংলা নাটকের গোড়ার কথা (১৯৯৪), হিন্দু-মুসলিম মৌলবাদীর চোখে নজরুল (১৯৯৪), কে ভারতের দালাল (১৯৯৫), বঙ্গবন্ধু (১৯৯৭), একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা (১৯৯৭), পঞ্চাশের দশকের আমরা ও ভাষা আন্দোলন (১৩৯১), বায়ান্নোর জবানবন্দী (১৩৯২) প্রভৃতি। এসব গ্রন্থে এম. আর. আখতার মুকুল একটা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পেরেছেন। তাঁর রচনা রসসমৃদ্ধ। সম্পাদনা : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র [এক খণ্ডে সমাপ্ত) (১৯৮৮), স্বাধীনতাযুদ্ধের আলোকচিত্র (১৯৮৮),
আমিই খালেদ মোশাররফ (১৯৯০), বিজয় একাত্তর (১৯৯১), নকশালের শেষ সূর্য (১৯৮৯), বাহান্নোর ভাষা আন্দোলন (১৩৯১)।
দ্বিজেন শর্মা (১৯২৯-২019 )
নিসর্গপ্রেমী দ্বিজেন শর্মার প্রবন্ধগ্রন্থ জীবনের শেষ নেই (১৯৭৮), শ্যামলী নিসর্গ (১৯৮০), সপুষ্পক উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস তত্ত্ব (১৯৮১), সতীর্থ বলয়ে ডারউইন (১৯৮৪), ফুলগুলির যেন কথা (১৯৮৮), স্বদেশে প্রবাসে (১৯৯৩), গহন কোন বনেরধারে (১৯৯৪), মম দুঃখের সাধন (১৯৯৪), ডারউইন ও প্রজাপতির উৎপত্তি (১৯৯৭) প্রভৃতি। প্রকৃতির রংকে কল্পনামাধুরীতে মিশিয়ে পরিবেশন করেন দ্বিজেন শর্মা। পরিপক্ব গদ্য, চেতনায় গৃহীত সাম্যবাদ, তথ্যউপাত্তের বৃক্ষবন্দনা সবকিছু মিলে ধরিত্রির অধিকার সম্পর্কে সচেতন। গদ্যময় তাঁর বসুধা। মা-মাতৃকায় ——– অংশীদারকৃত এ প্রকৃতি অনেকটা একার্থক। সুতরাং নিখুঁত তাঁর বয়নভঙ্গি। বেশকিছু সম্পাদনা গ্রন্থও আছে দ্বিজেন শর্মার।
আবুল কাশেম চৌধুরী (জ. ১৯৩৩)
গবেষক ও মননশীল প্রাবন্ধিক। বাংলা সাহিত্যে সামাজিক নক্শা : পটভূমি ও প্রতিষ্ঠা ( ১৮২০-১৮৪৮) (১৯৮৩) বাংলাদেশের গবেষণা-সাহিত্যে একটি অনবদ্য গ্রন্থ। প্রচণ্ড পরিশ্রমে ও মেধায় সমাজমনকে চিহ্নিত করে অনেক অনালোকিত দিক এ গ্রন্থে উন্মুক্ত করেছেন তিনি। তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ (১৯৬৮), নজরুল ইসলামের
অগ্নি-বীণা (১৯৮৯) প্রভৃতি। তাঁর মননধর্মী রচনা মূল্যবোধের অবক্ষয় : ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে (১৯৮৭)। শুদ্ধ সংস্কৃতিচিন্তাকেই পাথেয় জ্ঞান করেছেন এলেখক ।
সৈয়দ শামসুল হক (১৯৩৫-২০১৬)
অনবদ্য প্রবন্ধকার। হৃৎকলমের টানে / ১ম খণ্ড (১৯৯১), হৃৎকলমের টানে / ২য় খণ্ড (১৯৯৭), মার্জিনে মন্তব্য (২০০৫) অসামান্য গদ্যগ্রন্থ। আত্মতামূলক এসব প্রবন্ধে সৈয়দ হক কবিমনস্কতার পরিচয় দিয়েছেন। জীবন সমাজ-সংস্কৃতির বিচিত্র বিষয়কে তিনি পঠনে এনেছেন। স্বচ্ছচিন্তার পরিপক্ক মননের দৃষ্টান্ত সৈয়দ হক। কয়েক দশকের সাহিত্যচিন্তায় এসব গ্রন্থে
তিনি অনেক পর্যায় অতিক্রম করেছেন।
আলী আনোয়ার (১৯৩৫-২০১৪)
আলী আনোয়ারের দুটি প্রবন্ধের বই : সাহিত্য-সংস্কৃতি নানা ভাবনা (২০১৩) এবং সাহিত্যের বিরল আঙিনায় (২০১৭)।
বাংলাদেশের সমালোচনা সাহিত্যে তিনি নতুন মাত্রার সঞ্চার করেছেন। প্রবন্ধে আছে তার নতুন চিন্তার উজ্জ্বল উপস্থিতি। তাঁর মননশীলতা- আধুনিক ও বৈশ্বিক-বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রসূত। সমাজ-সাহিত্য-দর্শন-বিজ্ঞান সবকিছুর উপরে স্বতন্ত্র উজ্জ্বল দৃষ্টিকোণ- পাঠককে একপ্রকার মুগ্ধই করে। এবং যুক্তিশীলতার দিকেও ঠেলে দেয়। “বাঙালি সংস্কৃতির ভেতর-বাহির", “ভাষার রাজনীতি”, “বিজ্ঞান শিক্ষা, বিজ্ঞানমনস্কতা ও বিজ্ঞানে সৃষ্টিশীলতা", "উপদ্রুত মানুষ ও অসহায় মানবতাবাদ"- এমন প্রবন্ধ সুগভীর চিন্তার যোগান দেয়। এমনটাই আলী আনোয়ারের বিশেষত্ব।
আবু হেনা মোস্তফা কামাল (১৯৩৬-১৯৮৯)
যশস্বী সমালোচক ও মনস্বী অধ্যাপক আবু হেনা মোস্তফা কামালের প্রবন্ধ শিল্পীর রূপান্তর (১৯৭৫) ও কথা ও কবিতা (১৯৮১)। তাঁর পিএইচ. ডি.র প্রস্তুতকৃত গবেষণা The Bengali Press and Literary Writing (1818-1831) (1977)। তাঁর দুটি প্রবন্ধের বই-ই মূল্যবান। বাংলাদেশের সাহিত্য-সমালোচনামূলক এ প্রবন্ধ অত্যন্ত যুক্তিশীল এবং তীক্ষ্ণধী। বিষয়ের মননধর্মী বিশ্লেষণ এখনও এককভাবে মহিমান্বিত। খুব কম লিখলেও সমালোচনা-সাহিত্যে তিনি প্রসিদ্ধ। আবু হেনা মোস্তফা কামালের গদ্য সরল কিন্তু শক্তিশালী, স্নিগ্ধ, বৈদগ্ধ্যপূর্ণ। সেজন্যই তাঁর সমালোচনা সাহিত্যধর্মী হয়ে উঠেছে।
জিয়া হায়দার (১৯৩৬-২০০৮)
নাট্য বিষয়ক প্রবন্ধ (১৯৮১), থিয়েটারের কথা (১ম-৪র্থ খণ্ড), বাংলাদেশের থিয়েটার ও অন্যান্য রচনা, স্ট্যানিসলাভস্কী ও তার অভিনয় তত্ত্ব, নাট্যকলার বিভিন্ন ইজম ও এপিক থিয়েটার, বিশ্বনাট্য প্রত্যেকটিই তাঁর মূল্যবান গ্রন্থ। নাটকের বিশ্বভ্রমণ সম্পন্ন হয় তাঁর প্রবন্ধে। অনেক নতুন দিকের উন্মোচন করেছেন জিয়া হায়দার তাঁর লেখনিতে। নাট্যনন্দন পরিবেশন কিংবা বিভিন্ন ইজমে নাটকের কৌশল কুশলতা কেমন সে জিজ্ঞাসার বিশ্লেষণ আছে তাঁর লেখায়। নাট্যতত্ত্বের একটি ভিন্নতর পাঠ এখানে বিরাজমান।
আলী আনোয়ারের দুটি প্রবন্ধের বই :
সাহিত্য-সংস্কৃতি নানা ভাবনা (২০১৩) এবং সাহিত্যের বিরল আঙিনায় (২০১৭)।
বাংলাদেশের সমালোচনা সাহিত্যে তিনি নতুন মাত্রার সঞ্চার করেছেন। প্রবন্ধে আছে তার নতুন চিন্তার উজ্জ্বল উপস্থিতি। তাঁর মননশীলতা- আধুনিক ও বৈশ্বিক-বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রসূত। সমাজ-সাহিত্য-দর্শন-বিজ্ঞান সবকিছুর উপরে স্বতন্ত্র উজ্জ্বল দৃষ্টিকোণ- পাঠককে একপ্রকার মুগ্ধই করে। এবং যুক্তিশীলতার দিকেও ঠেলে দেয়। “বাঙালি সংস্কৃতির ভেতর-বাহির", “ভাষার রাজনীতি”, “বিজ্ঞান শিক্ষা, বিজ্ঞানমনস্কতা ও বিজ্ঞানে সৃষ্টিশীলতা", "উপদ্রুত মানুষ ও অসহায় মানবতাবাদ"- এমন প্রবন্ধ সুগভীর চিন্তার যোগান দেয়। এমনটাই আলী আনোয়ারের বিশেষত্ব।
0 মন্তব্যসমূহ