**আধ্যাত্নিক প্রেমের কবি দুরান্তে আলেগিয়েরি দান্তে,
(১২৬৫-১৩২৫) ইতালির একজন বিখ্যাত কবি।ইতালির ফ্লোরেন্সে তার জন্ম।চরম বাস্তবতার মধ্যে বড় হওয়া দান্তে জীবনকে খুব কাছে থেকে উপলব্ধি করেছেন।সাহিত্য হচ্ছে সমাজ কিংবা সময়ের প্রতিবিম্ব। সাহিত্যে সেই সময়ের সমাজ চিত্র, চিন্তা মনন,সংস্কার, বিশ্বাস ইত্যাদি ফুটে ওঠে। আর সেই সাথে লেখকের বাস্তব অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণে সাহিত্য হয়ে উঠে লেখকের চিন্তা ও মননের প্রতিচ্ছবি।
দান্তে মাত্র ৫ বছর বয়সে মা কে হারান।এরপর আবার ১২ বছর বয়সে তার বাবা মারা যায়।তার আগে বাবার সাথে ফলকো পোর্তিনের বাসায় গেলে,ফলকোর মেয়ে বিয়াত্রিস এর প্রেমে পড়ে যান।কিন্ত সেই সময়ের বাস্তবতায় সে আর বিয়াত্রিস এর প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ করলেও সেটির পরিনয় দিতে পারেননি।বিয়াত্রিস কে নিয়ে দান্তে বলেন,ঃঃ
"দেখ দেখ আমার চেয়ে শক্তিশালী কোন দেবতা স্বর্গ থেকে শাসন করতে এসেছে আমায়"
একদিকে বাবা মা কে হারানো,সেই সাথে বিয়াত্রিস কে হারিয়ে উদভ্রান্ত হয়ে পড়েন দান্তে।বিয়াত্রিস এর বিয়ের পরও তার সাথে সম্পর্ক থাকে আর এটিকে চরম পাপ মনে করেন দান্তে।সেই সাথে ২১ বছর বয়সে বিয়াত্রিস এর মৃত্যু, দান্তে কে চরম ভাবে আঘাত করে।আবার যখন এইসব যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য ওয়েলফ যুদ্ধের দলে তিনি যুক্ত হোন,তখন শ্বেত ও কালো এই দুই গ্রুপের দলাদলিতে তার নাম এসে যায়।এতে করে তাকে ধিক্কার জানানো হয়!...জীবনের চরম বাস্তবতায় বড় হওয়া দান্তে সুখের সন্ধানে খুঁজে ফিরেন তার বিয়াত্রিস কে।বিয়াত্রিস শুধু তার প্রেমিকা নন,বরং তার সুখ, শান্তি কিংবা প্রশান্তির প্রতিচ্ছবি।
আর সেই শান্তি কিংবা স্বর্গের খোজে বেরিয়ে পড়েন দান্তে।আার সেই স্বর্গ বা শান্তি লাণের যাত্রা, ডিভাইন কমেডিতে দেখানো হয়েছে।
মানুষ মৃত্যুর পর কোথায় যায়??তার কি হয়??কেনো এমন হয়??ধর্ম কি বলে!??ইত্যাদি অসংখ্য প্রশ্নের উওর দিয়েছেন দান্তে।ডিভাইন কমেডি তিনটি ভাগে বিভক্তঃ-
১.নরক বা ইনফার্নো
২.পরিশুদ্ধি বা পার্গেটোরিও
৩.স্বর্গ বা প্যারাদিসো
ডিভাইন কমেডি তে একজন পথ প্রদর্শক এর কথা বলা হয়েছে। তার নাম ভার্জিল।ভার্জিল মুলত সেই সব ব্যাক্তির প্রতিচ্ছবি, যাদের কে অনুসরণ করে মানুষ পরিশুদ্ধ হয় এবং স্রস্টা কিংবা স্বর্গের সন্ধান পান।
লেখক পাপে, জড়তা অসাড়তায় দগ্ধ হওয়া একজন মানুষ ।তাই সে যখন তার শান্তি, বিয়াত্রিস এর খোঁজে বের হোন,একটি পাহাড়ে আটকে পড়লে,ভা্রজিল তাকে উদ্ধার করে।
এর পর তাকে নিয়ে তাদের ভ্রমণ শুরু হয়।নরক পর্বে নরকের বর্ণনা দেওয়া আছে। দান্তে প্রথমে যে ইনফার্নো বা নরক প্রদেশের কথা বলেছেন, সে নরক এমন এক স্থান যেখানে মৃত্যুর পর পাপাত্মারা এক একটি ছায়ামূর্তি ধারণ করে। আপন আপন পাপের গুরুত্ব অনুসারে তার শাস্তি ভোগ করে থাকে। কিন্তু এখানে পাপ আর সে পাপের প্রতিফলজনিত যন্ত্রণায় পাপীদের অশরীরী চেতনা এমনভাবে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে যে এই সময় তাদের মধ্যে কোন অনুতাপ বা অনুশোচনা জাগে না। নরকে শাস্তিভোগপর্ব শেষ হলেই তবে সে পাপাত্মা পরিশুদ্ধির রাজ্যে গিয়ে অনুশোচনা আর প্রার্থনার মধ্যে সম্পূর্ণরূপে সব পাপ হতে বিমুক্ত হতে পারে।
এখানে ধর্মীয় বিভিন্ন মতবাদের পরিস্ফুটন দেখা যায়।
এর পর পরিশুদ্ধি পর্বে দেখা যায় মানুষ কিভাবে তাঁদের পাপ থেকে মুক্ত হয় বা প্রশ্চিত্ত করে।অপরাধ ভেদে তাদের বিভিন্ন রকম শাস্তি হয়।এর পর যখন তারা শুদ্ধ হয়ে উঠে তখন তাদেরকে স্বর্গে স্থান দেওয়া হয়।প্রতীক অর্থে এই পরিশুদ্ধি পর্বত হলো মানবমনের এমনই এক অবস্থা যাতে মানুষ কোন অন্তায় বা পাপকর্ম করার পর অনুতপ্ত হয় মনে মনে স্বেচ্ছায় সে অন্যায়ের সব শাস্তি মেনে নিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করে। অনুতাপীর যে বেদনা তাকে দুঃসহ পাপচেতনা থেকে বিমুক্ত করে ধীরে ধীরে সে বেদনা যতই অসহনীয় হোক না কেন, সে বেদনার মাঝে আছে এক নিগূঢ় মহর আর অনাস্বাদিতপূর্ব মাধুর্য। কোন অন্যায়কারী জীবদ্দশাতেই অনুতাপের সে বেদনার মধ্যে সেই মাধুর্যের আস্বাদ লাভ করে ঈশ্বরের আশীর্বাদে ধন্য হয়ে উঠতে পারে।
অবশ্য নরক বা পরিশুদ্ধির মূল ভাবকল্পনাগুলি খৃস্টীয় ধর্মতত্ত্ব হতেই দন্তে খুজে পায় তার বিয়াত্রিস কে।।মানুষ খুজে পায় শান্তি।
ডিভাইন কমেডি দুই রকম অর্থ প্রদান করে
(১)একটি ধর্ম কেন্দ্রিক
(২)বাস্তবতা নির্ভর।
মানুষ কে শান্তি বা প্রায়শ্চিত্তের জন্য আকাশের স্বর্গ বা নরকের সন্ধান করতে হবে না।মানুষ তার নিজের মধ্যে ই সর্গ ও নরক খুজে পাবেন।ভালো কাজ করলে যেমন পুরস্কার হিসেবে স্বর্গ পাবেন,আবার খারাপ কাজের জন্য শাস্তি হিসেবে নরক যন্ত্রণা ভোগ করবেন। আর মানুষ পাপ করার পর যে অনুশোচনা বোধ করেন,সেখানেই তার প্রাশ্চিত্ত হয়ে থাকে।অর্থাৎ
""কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক,
কে বলে তা বহুদুর,
মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক,
মানুষেতে সুরাসুর।"
পণ্ডিতেরা authentic বা তথ্যগত এবং literary বা সাহিত্যগত এই দুই শ্রেণীতে বিশ্বের সকল মহাকাব্যকে বিভক্ত করেছেন। দান্তের 'ডিডাইন কমেডি' নিঃসন্দেহে দ্বিতীয় শ্রেণীভুক্ত। দান্তে তাঁর মহাকাব্যের পটভূমি হিসাবে সমগ্র ইতালি দেশ এবং অতীত ও বর্তমানের ইতালীয় জাতির ধর্ম, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বহু কথা বললেও তার আসল বিষয়বস্তু হলো অন্য। সে বিষয়বস্তু হলো আত্মগত এক প্রেমাহভূতিকে ক্রমশঃ এক উত্তুঙ্গ প্রসারতা- দান করে অভিমানস এক মহাজাগতিক চেতনার রাজ্যে উন্নীত করা এবং আধ্যাত্মিক ও ঐশ্বরিক অনুভূতির বিস্ময়কর বিশালতায় তাকে বিসর্জন দিয়ে এক গৌরবময় মুক্তিদান করা। শুধু পটভূমির বিশালতা ও জাতীয় জীবনের ঘটনাবলীর উল্লেখ দাস্তের মহাকাব্যের একমাত্র উপাদান নয়। স্বর্গমর্ত্যপাতাল- ব্যাপী কবিকল্পনার সীমাহীন মহাকাশতলে আত্মগত প্রেমানুভূতির এক ক্রম- প্রসারিত পটভূমিকায় বিশালায়তন প্রাণসত্তার এক উদার ব্যাপ্তির মাঝে একটি। সমগ্র দেশের ধর্ম, পুরাণ, ইতিহাস ও সমাজের অসংখ্য ঘটনাকে যেভাবে একত্রিত ও সংহত করে একটিমাত্র রসস্ফুরণের পথে পরিচালিত করেছেন লাম্বে তা অঞ্চ কোন মহাকাব্যে পাওয়া যায় না। অন্তান্ত মহাকাব্যের মত দান্তের ডিভাইন কমেডির প্রধান উপজীব্য হলো শাস্তরস। পরম মঙ্গলময় ও প্রেমময় যে ঈশ্বরের প্রেম বিশ্বের সব কিছুকে আলো ও গতি দান করছে, সব কিছুকে পরিচালিত করছে, সেই পরম প্রেমের আস্বাদনের মাঝেই ঘটতে পারে মানুষের সকল চাওয়া-পাওয়ার দ্বন্দ্বের নিঃশেষিত অবসান ।
3 মন্তব্যসমূহ
❣️❣️❣️
উত্তরমুছুনInformative post ... Keep it up ❤️❤️❤️❤️
উত্তরমুছুনপাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ ❣️❣️
মুছুন