Hot Posts

6/recent/ticker-posts

চর্যাপদ এর আবিস্কার ও এর পদকর্তাগণ

 



----চর্যাপদ এর আবিস্কার, ও এর পদকর্তাগণ, চর্যাপদ কবে আবিষ্কার হয়, চর্যাপদ এর পরিচয়, চর্যাপদ এর পদকর্তাগণ, কাহ্নপাদ, চর্যাপদ এর বিষয়বস্তু, চর্যাপদ কি, চর্যাগীতি----

***বিঃদ্র-বাংলা বিভাগের সকল পড়াশোনা পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন   https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1

 


**চর্যাপদ আবিষ্কারঃ-

৷ ।চর্যাপদ বাংলা কাব্যগগনের শুকতারা। শুকতারা যেমন আলোকে জ্বল নূতন প্রভাঙের বার্তা ঘোষণা করে তেমনি 'চর্যাপদ' সম্ভাবনাময় বিরাট বাংলা সাহিত্যের শুভ শূচনার ইঙ্গিত বহন করে এনেছে। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন আধ্যাত্মিক সংগীতসমষ্টি এই চর্যাগীতিকাগুলো। নেপালের রাজ দরবারের পুথিশালায় চর্যাগীতিকাগুলো বহুকাল অলক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়ে ছিল। ১৯০৭ খ্রীষ্টঃ প্রাচীন পাণ্ডুলিপির সন্ধান করতে গিয়ে মহামহোপাধ্যার হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মশাই এই মরমী সংগীতগুলো আবিষ্কার করেন। তারপর ১৯১৫ খ্রীষ্টাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ হতে প্রাপ্ত পুথির বিষয়বস্তু নিজের সম্পাদনায় প্রকাশ করেন। গ্রন্থের নাম দেন, 'হাজার বছরের পুরান বাঙালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা।” কিন্তু প্রাপ্ত পুঁথির পাণ্ডুলিপিতে এর নাম ছিল "চর্যাচর্য বিনিশ্চয়'। পরে তিব্বতে চর্যাপদের যে সংস্কৃত টীক। পাওয়া যায় তাতে নাম ছিল,” আশ্চর্য চর্যাচয়।” ডঃ শহীদুল্লাহ্ সম্পাদিত Buddhist Mystic Songs গ্রন্থের চর্যাপাঠের উপরও তিনি “আশ্চর্য চর্যাচয়" কথাটি রেখেছেন। তবে মূল গ্রন্থে যে নাম পাওয়া গেছে (চার্যাচর্য বিনিশ্চয়) তা গ্রহণ করাই উচিত মনে করি। চর্যাপদের সংকলক কানু ভট্ট এবং টীকাকার 'মনি দত্ত'। আচার্য শাস্ত্রীর সম্পাদিত গ্রন্থে ছেচল্লিশটি সম্পূর্ণগীতিকা এবং একটি খণ্ডিত গীতিকা অর্থাৎ সবশুদ্ধ সাড়ে ছেচল্লিশ টি গীতিকা সম্পাদিত হয়েছে। তাতে মনে হয় তাঁর পুথিটি খণ্ডিত ছিল। চর্যাচর্য বিনিশ্চয়ের টীকা পরবর্তীকালে নেপালেই আবিষ্কৃত হয়। এর কিছুদিন পর শাস্ত্রী-আবিষ্কৃত চর্যাপদগুলোর একটা তিব্বতী অনুবাদ ডক্টর প্রবোধচন্দ্র বাগচী মশাই নেপাল থেকে সংগ্রহ করে আনেন। এ পুথিটি সম্পূর্ণ এবং তাতে একান্নটি সম্পূর্ণ পদ ছিল। তাতে মনে হয় “চর্যাচর্য" বিনিশ্চয়-এর মোট পদসংখ্যা একান্ন।

কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালরের ভূতপূর্ব অধ্যক্ষ পৈরলোকগত ডঃ শশিভূষণ দাশস্বর নেপাল থেকে আরও একশটি নূতন চর্যাপদ সংগ্রহ করে আনেন। এগুলোর সন্ধান পান তিনি লওন বিশ্বাবিষালয়ের সংস্কৃত বিভাগের রীডার ডক্টর আর্নস্ট বাক্যের কাছে। ডক্টর বাকে ১৯৫৫ খ্রীষ্টাপে নেপালের বজ্রযান সম্প্রদায়ের এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর কাছে থেকে প্রায় বিশটি প্রচলিত টেপরেকর্ডারে তুলে নিয়ে আসেন। ডক্টর দাশগুপ্ত ১৯৬২ সালে দেশে ফিরে এসে বঙ্গীয় সাহি পরিষদ মন্দিরে ৭ই সেপ্টেম্বর এই চর্যাগুলো নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন। নেপালে গিয়ে তিনি চর্যাপদের খণ্ডিত বিচিত্র রকমের পুথির সন্ধান পান। সেগুলো হতে প্রায় আড়শৈত প্রচলিত গান ডক্টর দাশগুপ্ত সংগ্রহ করে আনেন। এবং বাছাই করে রেখেছেন একশো টি পদ। এর মধ্যে সামান্ত কিছুসংখ্যক পদ শাস্ত্রী মশাই এর সংগৃহীত পদগুলোর সমতুল্য। বাকী পদগুলো অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের এবং পরবর্তীকালের। সম্ভবতঃ এগুলো ত্রয়োদশ থেকে ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যবর্তীকালের রচনা। নেপালের এই আধুনিক লোকগীতিগুলো 'চাচা গতি নামে পরিচিত। 'চর্যাপদ' এবং শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের মধ্যে যে একটা শূণ্ণযুগ বিরাজ করেছে নেপালের এই চর্যাজাতীয় লোক গীতিগুলো। এ শূন্যযুগেরই সৃষ্টি বলে স্বীকার করে নিতে ইচ্ছে করে ।
এ সমস্ত সংগ্রহ ছাড়াও সুপণ্ডিত রাহুল সংকৃত্যায়ন নেপাল তিব্বতে কিছু চর্যাগীতি আবিষ্কর করেছিলেন। চর্যা সম্বন্ধে তিনি বিশেষ গবেষণাও করেছেন। তার চর্যাগুলো শশিভূষণ-আবিদ্ধত চর্যার সংগোত্রীয়।

চর্যাপদের গীতিকারঃ-
চর্যার গীতিকারগণ সকলেই সিদ্ধাচার্য। 'চর্যাচর্যবিনিশ্চয়ে' আমরা মোট তেইশজন সিদ্ধাচার্যের সাক্ষাৎ পাই। আশ্চর্য চর্যাচয়'-এ কাহ্নপা বা কানুপা'র পদের সংখ্যাই অধিক। তাঁর একখানি দোহাকোষ ও তেরোট চর্যাগান সংগৃহীত হয়েছে। এই তেরোটি গানের মধ্যে একটি গানের পাতা নষ্ট হয়ে গেছে। কাহ্নপা-র অপর নাম কাহ্নপাদ, কৃষ্ণাচার্য, কানুপা, কাহ্নপাদ, কৃষ্ণাচারী ইত্যাদি।

কাহ্নপাদ একজন বড় লেখক ছিলেন। তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। তন্মধ্যে “শ্রীহেব পঞ্জিকা যোগরত্নমালা এবং ‘ধর্মকায়দীপসিদ্ধি' প্রসিদ্ধ গ্রন্থ । তাঁর বাড়ী উড়িয়া দেশে। তিনি থাকতেন সোমপুরী বিহারে। সোমপুরী বিহার, বর্তমান রাজশাহী জেলার পাহাড়পুর' নামে পরিচিত। কানুপার শুরু জালম্বরীপা। নাথগীতিকার সিদ্ধাহাড়ী বা হাড়ীপাই; এই জালন্ধরীপা। তিনিও সোমপুরী বিহারের (রাজশাহী) অধিবাসী। তাছাড়া ধামপা, ভদ্রপা ও মহীধর ছিলেন কাহ্নপাদের সাক্ষাৎ শিষ্য।
চর্যাচর্য বিনিশ্চয়ে সংগৃহীত চর্যাকারগণের পদসংখ্যা এরূপঃ-
কাহ্নপাদ - ১৩ : ভুসুকুপাদ - সরহপাদ-৪; কুত্ত রীপাদ -০; লুইপাদ ২; শবরপাদ -২; শান্তিপাদ-২; আর্যদেব-১ ; কঙ্কণপাদ-১; কলম্বপাদ -১; ঔঞ্জরী পাদ -১; চাটলপাদ -১ : গুড্ডরীপাদ ১; জয়নলীপাদ-১; নেপাদ ১; তন্ত্রীপাদ -১; তাড়কপাদ -১; দারিকপাদ-১; ধামপাদ-১ : বিরুবা পাদ – ১ ; বীনাপাদ -১; অনুপাদ -১; মহীধরপাদ ১।
চর্যাকারগণ সকলেই বিরাট পণ্ডিত, শাস্ত্রজ্ঞ ও সিদ্ধপুরুষ ছিলেন। বৈচিত্র্যপূর্ণ এদের জীবন ও সাধনপদ্ধতি। তাঁদের সাধনমার্গ ও সাধনতত্ত্বের পরিচয় আমরা এ চর্যাগুলোতে পাই। পণ্ডিতগণ চর্যাগানগুলো বিচার করে একবাক্যে রায় দিয়েছেন যে, এগুলো বাংলা পদাবলীর প্রাচীনতম নিদর্শন।

**তথ্যসংগ্রহঃ-
**চর্যাগীতি (অধ্যাপক হরলাল রায়) 
**চর্যাগীতি পরিক্রমা(অধ্যাপক নির্মল কুমার দাশ)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ