Hot Posts

6/recent/ticker-posts

জৈন দর্শন ও এর পরিচয়


-----জৈন দর্শন ও এর পরিচয় জৈন দর্শন ও এর পরিচয়  জৈন দর্শন বলতে কী বোঝ জৈন দর্শন এর প্রকারভেদ  জৈন দর্শনের মূল কথা জৈন ধর্মের মুলনীতি কি জৈন ধর্মের প্রবর্তক জৈন ধর্ম কি গ্রন্থ----

***বিঃদ্র-বাংলা বিভাগের সকল পড়াশোনা পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন---
 https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1 


***জৈন ধর্ম ও এর পরিচয়ঃ-

 জৈন দর্শন অতি প্রাচীন দর্শন। ইহার আবির্ভাব হয় প্রাগৈতিহাসিক যুগে (Pre. historic Age) চব্বিশজন তীর্থঙ্কর (শাস্ত্রকার) জৈন দর্শনের প্রচারক। এই প্রচারক দের প্রথম জনের নাম ঋষভদের এবং সর্বশেষ বর্ধমান।বর্ধমান এর অপর নাম ছিল মহাবীর।এই মহাবীর কেই জৈন ধর্ম ও দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। জৈন শব্দের উৎপত্তি 'জিন্' শব্দ হইতে। এই 'জিন্' শব্দের অর্থ হইল 'জয়ী'। জৈন তীর্থঙ্করগণকে 'জিন্' নামে অভিহিত করা হয়, কারণ তাঁহারা রাগ, দ্বেষ, প্রভৃতি রিপুগুলোকে জয় করেছিলেন।  জৈনগণ নিরীশ্বরবাদী। তাঁহারা বলেন, কি প্রত্যক্ষ, কি অনুমান কোনটির সাহায্যেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায় না। তবে সর্বজ্ঞতা (Omniscience), সর্বশক্তিমত্তা(Omnipotence) প্রভৃতি ঐশ্বরিক ঋণে বিভূষিত তীর্থস্থরগণকে তাঁহারা ঈশ্বরের স্থলাভিষিক্ত বলিয়া মনে করেন। তাঁহাদের মতে এই তীর্থঙ্করদের পূজা-অর্চনা করা উচিত।

সমস্ত জৈন দর্শনকে জ্ঞানতত্ত্ব (Theory of knowledge). পরাতত্ত্ব (Metaphysics) এবং নীতিশাস্ত্র ও ধর্ম (Ethics and Religion), এই তিন ভাগে ভাগ করিলে আলোচনার সুবিধা হয়। প্রথমে জ্ঞানতত্ত্বের আলোচনা করা যাউক।

***জ্ঞান (Knowledge) :

জৈন-মতে পদার্থের যথাযথ ধারণাই জ্ঞান অর্থাৎ যে জিনিস বাস্তবে যাহা তাহাকে  সেই জিনিস বলিয়া জানাকেই জ্ঞান বলা হয়।

**জ্ঞানের প্রকারভেদ (Different forms of Knowledge)ঃ-

জৈন মতে প্রমা বা জ্ঞান  পাঁচ প্রকারের, যথাঃ--

মতি,শ্রুত,অবধি, মনঃপর্যায় ও কেবল।

(1) মতিঃ–

পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় ও মনের মাধ্যমে যে জ্ঞান লাভ করা হয় তাহাকেই 'মতি' বলে। চক্ষু, কর্ণ প্রভৃতি পঞ্চ বহিরিন্দ্রিয়ের সাহায্যে প্রাপ্ত বাহ্যবস্তুর প্রত্যক্ষ জ্ঞান, মনের সাহায্যে মানসিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে আন্তঃপ্রত্যক্ষ জ্ঞান, স্মৃতি, প্রত্যভিজ্ঞা এবং অনুমান,এই সবই 'মতি' জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। 

(2)শ্রুতঃ-

বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি বা শাস্ত্রবাক্যের উপর নির্ভর করিয়া, যে জ্ঞান লাভ করা হয় তাহাই শ্ৰুত; অর্থাৎ শব্দ প্রমাণ হইতে যে জ্ঞান লাভ করা হয় তাহাকে জৈনগণ শ্রুত বলেন। শ্রুত ও পরোক্ষ জ্ঞান, কেন-না, ইহাও অপরের নিকট হইতে পাওয়া। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, জৈনগণ বেদকে “শব্দ' প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করেন ন 

(৩) অবধি ঃ--

জ্ঞাতা তাহার সাধনালব্ধ অসাধারণ শক্তিবলে সুদূর অতীত ও ভবিষ্যৎ অতি দূরবর্তী এবং সূক্ষ্ম পদার্থ সম্পর্কে যে জ্ঞান অর্জন করেন সেই জ্ঞানই অবধি'।

(৪) মনঃপর্যায়ঃ- —–

রাগ, হিংসা, দ্বেষ প্রভৃতি রিপুকে মানুষ জয় করিতে পারিলে, তাঁহার ভিতর এমন একটি শক্তির উদ্ভব হয়, যাহার দ্বারা তিনি অন্যের সুখ, দুঃখ প্রভৃতি মানসিক অবস্থাকে সাক্ষাৎভাবে জানিতে পারেন। অপরের মানসিক অবস্থাকে সাক্ষাৎভাবে জানাই হইল মনঃপর্যায়।

(৫) কেবলঃ-

সর্বকালের সর্বদেশের এবং সর্বপদার্থের সাক্ষাৎ জ্ঞানকে 'কেবল-জ্ঞান' বলা হয়। কেবল-জ্ঞান' দেশ, কাল প্রভৃতি সকল রকমের সীমা ও বিভেদের ঊর্ধ্বে। একমাত্র বন্ধনমুক্ত সিদ্ধ পুরুষই এই জ্ঞানের অধিকারী হইতে পারেন।

***স্যাদবাদ ও সপ্নভঙ্গী নয়---

কোন বস্তুর অসংখ্য গুণের মধ্যে যে-কোন একটি সম্পর্কে যে জ্ঞান তাহাকে জৈনেরা 'নয়' বলেন। বস্তুর এই আংশিক জ্ঞানের মূলে যে অবধারণ তাহাকেও তাঁহারা 'নয়' বলেন। জৈনগণ বলেন, সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন জীবনে কোন বস্তু সম্পর্কে যে সকল অবধারণ রচনা করে সেই অবধারণ কোন একটি দৃষ্টিভঙ্গী হইতে ঐ বস্তুর কোন একটি গুণ সম্পর্কে সত্য হইতে পারে, সর্বভাবে সত্য হইতে পারে না।জৈন মতে দার্শনিকের মতবাদ তত্ত্বের কোন এক দিক সম্পর্কে সত্য, কিন্তু সকল দিক সম্পর্কে সত্য নয়। জৈনগনের সপ্তভঙ্গি নয়,এর উতপত্তি হয় স্যাদবাদ হতে।

**জৈনমতে ৭ ধরনের অবধারণ রচনা করা যায় ঃঃ

স্যাৎ অস্তি,স্যাৎ নাস্তি, স্যাত আস্তি চ-নাস্তি চ, স্যাত অবক্তব্যম,স্যাত অস্তি চ-অব্যাক্তব্যাম চ,স্যাত নাস্তি চ- অব্যাক্তব্যাম চ,স্যাৎ অস্তি চ-নাস্তি চ-অব্যাক্তব্যম চ।।


**দ্রব্য(substance) ঃ-

সাধারণতঃ ‘ধর্ম' বলিতে গুণকে বুঝায় এবং ধর্মী বলিতে গুণের অধিকারীকে বুঝায়। সাধারণ অর্থে এই ধর্মীকেই দ্রব্য বলা হয়। জৈনগণ দ্রব্যকে এই সাধারণ অর্থেই গ্রহণ জৈনমতে দ্রব্য গুণ ও পর্যায়-বিশিষ্ট করিয়াছেন। জৈনগণের মতে দ্রব্য গুণ ও পর্যায় বিশিষ্ট (গুণপর্যায়বদ্ দ্রব্যমিতি)। গুণ ছাড়া যেমন দ্রব্যকে উপলব্ধি করা যায় না, তেমনি দ্রব্য ব্যতীত গুণের অস্তিত্ব ও অনুভব করা যায় না। দ্রব্যকে আশ্রয় করিয়াই গুণগুলি অবস্থান করে (দ্রব্যাশ্রয়ী গুণাঃ)। দ্রব্যের গুণগুলি দুই রকমের; যথা, স্বাভাবিক এবং আগন্তুক।

**দ্রব্যের শ্রেণীবিভাগঃ-

জৈনগণ দ্রব্যকে প্রথমে দুই ভাগে ভাগ করেন; যথা— অস্তিকায় ও অনস্তিকায়। 'অস্তিকায়’ দ্রব্য আবার দুই ভাগে বিভক্ত; যথা, জীব ও অজীব। জীব দুই প্রকার; যথা, মুক্ত ও বন্ধ। বদ্ধজীব আবার দুই প্রকার; যথা—এস ও স্থাবর। এসকে আবার চারি ভাগে ভাগ করা যায়; যথা—পঞ্চ ইন্দ্রিয় বিশিষ্ট (যেমন, মানুষ, পশু, পক্ষী), চারি ইন্দ্রিয় বিশিষ্ট, (যেমন, মশা), তিন ইন্দ্ৰিয় বিশিষ্ট, (যেমন, জোক) ও দুই ইন্দ্রিয় বিশিষ্ট (যেমন, শামুক)।অপরদিকে অজীব দ্রব্যকে চারিভাগে ভাগ করা যায়; যথা–ধর্ম, অধর্ম, আকাশ ও পুদ্গল। গুগল আবার দুইভাগে বিভক্ত; যথা—অণু ও সংঘাত। এই শ্রেণীবিভাগকে নিম্নে একটি ছক কাটিয়া দেখান হইল।



**জৈন নীতিশাস্ত্র ঃ-


জৈনমতে চেতনাসম্পন্ন দ্রব্যই জীব, অর্থাৎ অন্যান্য ভারতীয় দর্শন যাহাকে আত্মা বলিয়াছেন, জৈনগণ তাহাকে বলিয়াছেন জীব। জৈনমতে জীব বা আহ্বা এই জীব বা আত্মা স্বভাবতঃ পূর্ণ এবং অনন্ত জ্ঞান, অসীম শক্তি ও আনন্দের অধিকারী।জৈনমতে পুদগল-সৃস্ট দেহই জীবের পুর্নতা লাভের প্রধান বাধা।জৈনগণ চারিটি ভাবের উল্লেখ করিয়াছেন; যথা—ক্রোধ (Anger). মান (Pride), মায়া (Infatuation) এবং লোভ (Greed)। এই ভাবগুলিকে ‘কষায়' বলা হয়। তাঁহাদের মতে এই ভাবগুলি আত্মার বন্ধনের প্রাথমিক কারণ, যেহেতু ইহারা আত্মায় পুগল-পরমাণু প্রলিপ্ত করে। আত্মার পুগলের অনুপ্রবেশকে 'আস্রব' বলা হয়।জৈনমতে বন্ধন দুই প্রকার; যথা—ভাববন্ধ এবং দ্রব্যবন্ধ। আত্মাস্থিত কু-ভাবনার যে জৈনমতে বন্ধন দুই বন্ধন তাহাকে 'ভাববন্ধ', আর এই কু-ভাবনার ফলে পুগলের প্রকার—ভাববন্ধ ও দ্রব্যবন্ধ দ্বারা দেহের সঙ্গে আত্মার সংযুক্তিরূপ বন্ধকে 'দ্রব্যবন্ধ' বলা হয়।

**তথ্যসংগ্রহঃ-

ভারতীয় দর্শন--অর্জুনবিকাশ চৌধুরী। 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ