---বৌদ্ধ দর্শন ও এর পরিচয় বৌদ্ধ দর্শন ও এর পরিচয় বৌদ্ধ দর্শনের সজ্ঞা বৌদ্ধ দর্শন কাকে বলে প্রকারভেদ প্রতিষ্ঠাতা বৌদ্ধ দর্শনে নির্বাণ বলতে কি বুঝ চারটি আর্য সত্য পঞ্চশীল ---
দর্শন' শব্দের উৎপত্তি দৃশ ধাতু হইতে দৃশ্যঅনট)। 'দর্শন' শব্দের সাধারণ অর্থ হইল দেখা, তবে দর্শনশাস্ত্রে 'দর্শন' শব্দটিকে ঠিক সাধারণ অর্থে গ্রহণ করা হয় নাই, কারণ সাধারণ অর্থে দেখাই 'দর্শন' না। এই দর্শন হল 'সত্যকে' (truth) দেখা,' তত্তকে' (Reality) দেখা এবং তাহার স্বরূপ উপলব্ধি করা।দর্শনের সঠিক অর্থ হলো সত্য কে দেখা এবং উপলব্ধি করা। বিভিন্ন ভারতীয় দর্শনের মধ্যে বৌদ্ধ দর্শন অন্যতম।
গৌতমবুদ্ধের বাণী ও উপদেশের উপর ভিত্তি করে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে যে মতবাদ গড়ে উঠেছে সেই মতবাদই 'বৌদ্ধ দর্শন' বা 'বৌদ্ধ ধর্ম'।খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ গৌতমবুদ্ধের বাণী ও শতাব্দীতে হিমালয়ের পাদদেশে কপিলাবস্তু নগরে এক রাজ পরিবারে গৌতমবুদ্ধের জন্ম হয়। তাঁর আদি নাম ছিল গৌতম বা নির্ভর করে বৌদ্ধ ধর্ম সিদ্ধার্থী। গৌতমবুদ্ধ জৈনধর্ম ও দর্শনের মুখ্য প্রতিষ্ঠাতা মহাবীরের ও দর্শনের সৃষ্টি হইয়াছে সমসাময়িক।
বুদ্ধদেবের উপদেশাবলী প্রথমে মুখে মুখে প্রচারিত হলে পরে তাঁর তিনজন প্রিয় শিষ্য তাঁহার উপদেশাবলীকে তিনটি গ্রন্থে পালিভাষায় লিপিবদ্ধ করেন। তিনজন তিনটি এই পিটকগুলির নাম—বিনয় পিটক, সত্ত-পিটক এবং অভিধৰ্ম্ম পিটক।
এই গ্রন্থ তিনটিকে ত্রিপিটক বলা হয় প্রথম পিটকে আছে বৌদ্ধ সঙ্ঘের নিয়মাবলী, অর্থাৎ বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের আচরণ কি রকম হওয়া উচিত তৎসম্পৰ্কীয় নিয়মাবলী: দ্বিতীয় পিটকে আছে বুদ্ধদেব-কথিত উপদেশমূলক ছোট ছোট গল্প এবং তৃতীয় পিটকে আছে দার্শনিক তত্ত্বের আলোচনা।
**চারটি আর্য সত্যঃ-
গভীর চিন্তার এবং কঠোর সাধনার ফলে বুদ্ধদেব যে চারিটি সত্যের সন্ধান পাইয়াছিলেন সেই সত্যগুলি হইল (১) দুঃখ আছে, (২) দুঃখের কারণ আছে, (৩) দুঃখের নিবৃত্তি আছে, এবং (৪) দুঃখ-নিবৃত্তির মার্গ বা পথও আছে। এই চারিটি সত্যকে আর্য-সত্য বলা হয়।
(১) প্রথম আর্য-সত্য—–দুঃখ আছে (The First Noble Truth - There is a Suffering):
রোগ জরা এবং মৃত্যুর দৃশ্য দেখিয়া বুদ্ধদেব উপলব্ধি করিয়াছিলেন যে, এই সংসারে সবই দুঃখময় (সর্বং দুঃখম)। জন্ম, ব্যাধি, জরা, মরণ, শোক, উৎকণ্ঠা, আকাঙ্ক্ষা, প্রিয় বীজ প্রচ্ছন্ন আছে। বুদ্ধদেব বলেন, জগৎ ও জীবন অনিত্য এবং যাহা অনিত্য তাহা বিয়োগ, অপ্রিয় সংযোগ সবই দুঃখের বিষয়বস্তু। এমন কি, যাহাকে মানুষ আপাত সুখের বিষয় মনে করে। তাহার মধ্যেও দুঃখের বীজ" দুঃখময় (যৎ অনিত্যম্ তৎ দুঃখম্)।বুদ্ধদেবের মতে সুখ ক্ষণস্থায়ী তাই সুখের অবসান সুনিশ্চিত এবং এই সুখের অবসানও দুঃখের কারণ। এমন কি সুখবিসানের আশঙ্কা মানুষকে ভীত, সন্ত্রস্ত ও হতাশ করিয়া তুলে। এই সকল কথা চিন্তা করিলে আপাত সুখকে দুঃখ বলিয়া প্রতিপন্ন হইবে।এই দুঃখ আকষক
ঘট বা দৈবিক ঘটনা নয়। এই দুঃখ কারণ-প্রসূত।
(২) দ্বিতীয় আর্য-সত্য—দুঃখের কারণ আছে (The Second Noble Truth — There is Cause of Suffering) :-
বুদ্ধদেব বুঝেছিলেন, সংসারে কেবল যে দুঃখ আছে তা নয়, এই দুঃখের কারণও আছে।বুদ্ধদেব বলেন, জরা-মরণ প্রভৃতি দুঃখের কারণ হহল জাতি বা জন্ম'। সংসারে মানুষ জন্মগ্রহণ না করিলে তাহার কোন দুঃখভোগ করিতে হইত না। সুরাং 'জন্ম'ই এই দুঃখের কার্য-কারণ সকল দুঃখের কারণ। কিন্তু জন্ম হয় কেন? জন্মেরও নিশ্চয় কারণ শৃঙ্খল বা দ্বাদশ নিদান আছে। বুদ্ধদেবের মতে এই জন্মের কারণ হইল (ভব্য। 'ভব' শব্দের অর্থ হইল ‘হওয়া', অর্থাৎ পুনরায় জামাতের বাসনা বা ভার হওয়া। কিন্তু এই বাসনার কারণ কি? এই বাসনার কারণ হইল উপাদান, অর্থাৎ জাগতিক বস্তুর প্রতি আসক্তি। এই আসক্তিই বা হয় কেন? এই আসক্তির কারণ হইল তষ্ণা, অর্থাৎ ইন্দ্রিয়-বিষয় ভোগের স্পৃহা। আবার এই তৃষ্ণার কারণ হইল বেদনা ব্রা অতীতের ইন্দ্রিয়অভিজ্ঞতা, অর্থাৎ পূর্বে বিষয়বস্তু মানুষের ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তিসার্বন করিয়াছে এই অভিজ্ঞতা না থাকিলে মানুষের তৃষ্ণা বা ভোগস্পৃহা জাগিত না। কিন্তু এই বেদনা বা ইন্দ্ৰিয়-অভিজ্ঞতা হয় কেন? বুদ্ধদেব বলেন, এই বেদনার কারণ হইল বিষয়বস্তুর সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের স্পর্শ বিষয়বস্তু ইন্দ্রিয়ের সংস্পর্শে না আসিলে ইন্দ্রিয়অভিজ্ঞতা বা বেদনা সম্ভব নহে। আবার এই স্পর্শও হইত না যদি আমাদের ছয় রকমের ইন্দ্রিয় ---
যথা, চক্ষু, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক ও মন,
না থাকিত। এই ষট্ইন্দ্রিয়কে বৌদ্ধেরা বলেন, ষড়ায়তন। কর্ণ, সুতরাং স্পর্শের কারণ হইল ‘ষড়ায়তন। আবার দেহ-মনের সংগঠন (Mind-body Organism) না থাকিলে মরবর্তন বা ষট্ইন্দ্রিয়ের কাজ করা সম্ভব নয়। দেহ-মনের 'সংগঠনকে বলা হয় 'নামরূপ। অতএব ষড়ায়তনের কারণ হইল নামরূপ। এই ‘নামরূপের কারণ হইল (বিজ্ঞান' বা চেতনা। দেহ-মনের সংগঠন মাতৃগর্ভে বর্ধিত হইত না যদি ঐ সংগঠনে চেতনা না থাকিত। এখন প্রশ্ন, এই বিজ্ঞান বা চেতনার কারণ কি? বুদ্ধদেব বলেন, মাতৃগর্ভস্থ ভ্রূণে চেতনা বা বিজ্ঞানের আবির্ভাব হয় পূর্বজীবনের সংস্কারের ফলে। সুতরাং বিজ্ঞানের কারণ পূর্বজন্মের ‘সংস্কার"। সংস্কার বলিতে বুদ্ধদেব পূর্বজীবনের কৃতকর্ম হইতে উৎপন্ন এক রকম শক্তিকেই বুঝিয়েছেন। সুতরাং অতীত জীবনের অভিজ্ঞতার ছাপই হইল সংস্কার। এই সংস্কারের ফলেই পুনর্জন্ম হয়। এই সংস্কার হয় কেন?
সংস্কার হয় কেন। এই সংস্কারের কারণ হইছল অবিদ্যা বা অজ্ঞানতা তত্ত্বজ্ঞানের অভাবই অবিদ্যা। অর্থাৎ, অবিদ্যা কে দুঃখের মুল কারণ বলা হয়। কারণ হইতে কার্যের দিকে অগ্রসর হইলে দ্বাদশ নিদানের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাঁড়াইবে
নিম্নরূপ :
(১) অবিদ্যা দুঃখের মূল কারণ; অবিদ্যা হইতে (২) সংস্কার, সংস্কার হইতে (৩) বিজ্ঞান বা চেতনা বিজ্ঞান হইতে (৪) নামরূপ বা দেহ-মন সংগঠন, নামরূপ হইতে (৫) ষড়ায়তন বা ষট্ ইন্দ্রিয়, ষড়ায়তন হইতে (৬) স্পর্শ, স্পর্শ হইতে (৭) বেদনা বা ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা, বেদনা হইতে (৮) তৃষ্ণা বা ভোগস্পৃহা, তৃষ্ণা হইতে (৯) উপাদান বা জাগতিক বস্তুর প্রতি আসক্তি, উপাদান হইতে (১০) ভব বা জন্মলাভের বাসনা, ভব হইতে (১১) জাতি বা জন্ম, এবং জাতি হইতে (১২)জরা-মরণ উদ্ভুত হয়।
(৩) তৃতীয় আর্য-সত্য—দুঃখের নিবৃত্তি আছে (The Third nobel Truth--There is the Cessation of Suffering)ঃ-
তৃতীয় আর্য-সত্য (দুঃখের নিবৃত্তি আছে) নিঃসৃত হয় দ্বিতীয় আর্য-সত্য (দুঃখের কারণ আছে) হইতে। বুদ্ধদেব বলেন, দুঃখ যেহেতু শর্তাধীন সেইহেতু শর্ত বা কারণকে অপসারিত করিতে পারিলেই দুঃখের নিবৃত্তি সুনিশ্চিত। তাই তিনি বলিয়াছেন, দুঃখের নিবৃত্তি সম্ভব।বুদ্ধের মতে দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তির অবস্থাই হলো নির্বান।বুদ্ধদেবের মতে কর্ম দুই প্রকার ঃ-
(১)সকাম কর্ম
(২)নিস্কাম কর্ম
(৪) চতুর্থ আর্য-সত্য–দুঃখ-নিবৃত্তির মার্গ বা পথও আছে (The Fourth Noble Truth-There is the Path to the Cessation of Suffering):
মতে দুঃখের কারণ অপসারণ করিবার মার্গ বা পথই হইল দুঃখ-নিবৃত্তির পথ। এই পথের বুদ্ধদেবের মতে দুঃখের আটটি অঙ্গ বা স্তর আছে। তাই এই পথকে বৌদ্ধদর্শনে অষ্টাঙ্গিক কারণ অপসারণ করিবার মার্গ (Eight fold path) বলা হয়।
এই মার্গের আটটি স্তর হইল—
(১) সম্যক দৃষ্টি (সম্মাদিখি), (২) সম্যক্ সংকল্প (সম্মাসংকল্প), (৩) সম্যক্ বাক্ বা বাক্ সংযম (সম্মাবাচা), (৪) সম্যক্ কর্মান্ত বা সংযত আচরণ (সম্মা-কমান্ত), (৫) সম্যক্ আজীব (সম্মা-আজীব), (৬) সম্যক ব্যায়াম (সম্মা-ব্যায়াম), (৭) সম্যক্ স্মৃতি (সম্মাসতি) এবং (৮) সম্যক্ সমাধি (সম্মা-সমাধি)।
**বুদ্ধদেবের নৈতিক উপদেশাবলীর অন্তর্নিহিত দার্শনিক তত্ত্ব (The Philosophical Implications of Buddha's Ethical Teaching)ঃ-
বুদ্ধদেব বৌদ্ধ দর্শনে চারটি মতবাদ এর কথা বলেছেনঃ-
(ক) প্রতীত্য সমুৎপাদ বা শর্তাধীন সৃষ্টিবাদ,
(খ) কর্মবাদ,
(গ) সর্বব্যাপক পরিবর্তনবাদ ও অনিত্যতাবাদ এবং
(ঘ) অনাত্মবাদ।
*বুদ্ধদেবের মতে মানুষ হইল পঞ্চ স্কন্ধের সংঘাত বা সমাহার (সমষ্টি)। এই স্কন্ধগুলি হইল,
(১) — রূপ (দেহ),
(২) বেদনা (সুখ-দুঃখ প্রভৃতির অনুভূতি),
(৩) সংজ্ঞা (প্রত্যক্ষণ),
(৪) সংস্কার (পূর্ব অনুভূতিজাত ভাবনারাজি) এবং
(৫) বিজ্ঞান (চৈতন্য)।
বুদ্ধদেবের মতে মানুষ এই পঞ্চ স্কন্ধের যে-কোন একটা স্কন্ধকে মানুষ বলা যায় না।
**বৌদ্ধ দর্শনের সম্প্রদায়সমুহ(The school of bauddha philosophy)ঃ-
বুদ্ধদেবের শিষ্যগণ তাঁহার দার্শনিক মতবাদের বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেন। ফলে, বৌদ্ধ দর্শনের প্রায় প্রায় ত্রিশটি বৌদ্ধ দার্শনিক সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। তবে ভারতীয় ত্রিশটি শাখার মধ্যে দর্শন-সাহিত্যে মুখ্য চারিটি সম্প্রদায়ের বিবরণ পাওয়া যায়ঃ-
(ক) মাধ্যমিক সম্প্রদায়,
(খ) যোগাচার সম্প্রদায়,
(গ) সৌত্রান্ত্রিক সম্প্রদায়
(ঘ) বৈভাষিক সম্প্রদায়
দার্শনিক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রথম দুইটি 'মহাযান' নামক বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্তর্গত এবং দ্বিতীয় দুইটি ‘হীনযান' নামক বৌদ্ধ ধর্মসম্প্রদায়ের অন্তর্গত।
(ক) মাধ্যমিক সম্প্রদায় বলেন, বাহ্য বস্তু বলিয়া কোন কিছুর সত্তা নাই। সবই শূন্য (Void)। এই কারণে মাধ্যমিক মতবাদকে শূন্যবাদ (Nihilism) বলা হয়।
(খ) যোগাচার সম্প্রদায় বলেন, বাহ্য বস্তুর সত্তা নাই বটে, কিন্তু মনের সত্তা আছে। মন বা চেতনাকে ভারতীয় দর্শনে বিজ্ঞান বলা হয় বলিয়া যোগাচার মতবাদকে বিজ্ঞানবাদ বলা হয়।
(গ) ও (ঘ) সৌত্রাস্তিক এবং বৈভাষিক এই দুই সম্প্রদায় প্রথম প্রশ্নটির ব্যাপারে একই মত পোষণ করেন।
তাঁহারা বলেন, মন ও বাহ্য বস্তু উভয়েরই সত্তা আছে, অর্থাৎ সব কিছুরই সত্তা আছে। তাঁহাদের মতবাদকে সর্বাস্তিবাদ বলা হয়।
***বৌদ্ধ ধর্ম-সম্প্রদায়সমুহ(the religious schools of Buddhism) ঃ-
বৌদ্ধ ধর্ম সম্প্রদায় সমুহ আবার দুই প্রকারঃ-
(ক)হীনযান সম্প্রদায়(Hinayana school) ঃ-
হীনযান পন্থীরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না।হীনযানপন্থীরা মনে করেন, বুদ্ধদেবের ধর্মোপদেশ, নীতি ও বাণী যথাযথ অনুসরণ করাই বৌদ্ধের একমাত্র কর্তব্য।হীনযানদের মতে নিজের চেষ্টায় নির্বান লাভ করা যায়।হীনযান পন্থীরা সামাজিক জীবন যাপনের বিরোধী। হীনযান পন্থীরা সর্বাস্তবাদী।এদের মতবাদকে স্থবিরবাদ বা সেরাবাদও বলা হয়।
(খ) মহাযান সম্প্রদায় (Mohajana School) :
মহাযান ধর্ম-সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হয় সম্রাট অশোক এবং কনিষ্কের মধ্যবর্তী সময়ে।মহাযান পন্থীরা হীনযান দের মতো এত গোড়া ও রক্ষণশীল নয়।বৌদ্ধধর্মের মহাযান শাখায় যে সকল নূতন ভাব ও তথ্য পাওয়া যায়, তার মধ্যেঃ-
(১) বোধিসত্ত্বের আদর্শ,
(২) বুদ্ধদেবই ঈশ্বর এবং
(৩) আত্মার পুনঃপ্রতিষ্ঠা অন্যতম।
***তথ্যসংগ্রহঃ-
ভারতীয় দর্শন(অর্জুনবিকাশ চৌধুরী)
0 মন্তব্যসমূহ