Hot Posts

6/recent/ticker-posts

চোখের বালি উপন্যাস আলোচনা চোখের বালি উপন্যাস রিভিউ চোখের বালি উপন্যাস এর উক্তি

***চোখের বালি উপন্যাস আলোচনা চোখের বালি উপন্যাস আলোচনা চোখের বালি উপন্যাসের চরিত্র সমুহ চোখের বালি উপন্যাসের বিষয়বস্তু বিনোদিনী চরিত্র আশালতা চরিত্র রবীন্দ্রনাথ এর মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস ***

**বিঃদ্র-বাংলা বিভাগের সকল পড়াশোনা পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1 

"চোখের বালি "র চরিত্রসমুহঃ-

(১)মহেন্দ্র

(২)বিহারি (মহেন্দ্রর বন্ধু) 

(৩)রাজলক্ষী(মহেন্দ্রর মা)

(৪)আশালতা(মহেন্দ্রর স্রী)

(৫)অন্যপুর্ণা(মহেন্দ্রর মাসী)

(৬)বিনোদিনী (বিধবা)

 চোখের বালি'র কাহিনি সংক্ষেপ:- 

বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য ব্যাক্তিত্ব বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সাহিত্যের সকল বিষয়ে তার পারদর্শিতা, বাংলা সাহিত্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মানুষের মনোবৃত্তিও নানান উত্থান পতন তার সাহিত্যো কর্মে লক্ষ্য করা যায়। 

'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর "চোখের বালি" উপন্যাসটি রচিত হয়েছে পারিবারিক জীবনের নিগুর আবহকে কেন্দ্র করে।উপন্যাসের বিষয়, জীবন ও যুগযুগ ধরে সমাজে টিকে থাকার সংগ্রাম।  প্রথমেই  সংস্কারের সর্বময় কর্মীরা,  এক বাল্যবিবাহ এবং তার প্রতি আকৃষ্ট  দুই পুরুষকে কেন্দ্র করে আবর্তিত।  , সম্পর্কের অন্তর্নিহিতো সূক্ষ্ম অনুভূতির সাথে প্রবৃত্তির সংঘাতের ওপর ভিত্তি ই উপন্যাসটির মুল বিষয়।  উপন্যাসের প্রাকটি চরিত্রের মনোজগত বিদ্ধ হয়ে ওঠে ঘটনাপরম্পরায়। এমন চরিনো বন্ধ হতে দেখা যায় অনিন্দ্য সুন্দরী, আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও বা অঞ্চল বিষয় বিনোদিনী। সংসারের সর্বময় কর্মী ও পুত্রস্নেহে অন্ধ বাজলক্ষ্মী। অনভিজ্ঞা বালিকাবধু আশালতা: আত্মদম্ভী মহেন্দ্র,, অনন্য ব্যাক্তিত্বের অধিকারী বিহারী এবং শ্বাশত বাঙালি নারীর স্নেহশীল ও কল্যাণময়ী মায়ের প্রতিচ্ছবি অন্নপূর্ণাকে।

বিধবা রাজলক্ষ্মীর একমাত্র বিবাহযোগ্য ছেলে মহেন্দ্র। মহেন্দ্র মেডিকেল ছাত্র। মাকে অনেক অভিযোগ করে সে। মহেন্দ্রর শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু বিহারী। মাতৃহীন বিহারী রাজলক্ষ্মীর মাতৃদ্রোহে বড় হয়। বিহারী ধীর-স্থির নিশ্চুপ ধরনের কোনো ধরনের দুঃখ কষ্টের বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ নেই। ভালো-মন্দ তার নিজস্ব ব্যাপার। আশালতা পিতৃমাতৃহীনা দরিদ্র মেয়ে যে জ্যাঠার কাছে মানুষ।

মাসি অন্নপূর্ণার ইচ্ছা মহেন্দ্রর সাথেই বিয়ে হবে বোনঝি আশালতার। মহেন্দ্রর কাকি অন্নপূর্ণাকে যারপরনাই ভালোবাসে। কিন্তু অন্নপূর্ণা তার বোনের মেয়ে আশালতাকে বিয়ে করতে বললে, সে নিজে না করতে পারবে না তাই বিহারীর জন্য দেখতে যেতে রাজি হয়। অন্যদিকে বিহারীও অন্নপূর্ণাকে দেবীর মতো ভক্তি ও অনেক শ্রদ্ধা করে। আর সে জন্য অনুপূর্ণাকে সে না বলতে পারো না। মহেন্দ্র অনেক সাজসজ্জা করে বিহারীকে নিয়ে কন্যা দেখতে বের হয়। কিন্তু ঘটনা ঘটে উল্টো। বিহারী নয়, মহেন্দ্ৰ আশার রূপ দেখে তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়। শেষ পর্যন্ত সে বিয়ে হয় এবং দিনাতিপাত করতে থাকে। কিন্তু সে সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয় না। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র  বিনোদিনীর আবির্ভাবে আশালতার দাম্পত্য জীবনের সুখ ক্রমে ম্লান হতে থাকে।

বিনোদিনী দরিদ্র ঘরের মেয়ে হলেও সে শিক্ষিত, আধুনিকা, অপরূপা ও আকর্ষক নারী। মিশনারি মেয়ের কাছে সে পড়াশোনা করেছিল। বিনোদিনী বুদ্ধিমতী। বিয়ের পরপরই তার স্বামী মারা যায়। যে গ্রামে ফিরে যায় এবং তার সাথে রাজলক্ষ্মীর দেখা হয়। মহেন্দ্রর সাথে একসময় বিনোদিনীর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেই বিয়ে আর হায়নি। অন্যদিকে বিহারীর সাথে প্রথমে বিয়ে হওয়ার কথা থাকলেও আশালতায় বিয়ে হয় মহেন্দ্রর সাথে। আশালতা ছিল একদমই অনূর্য ও অ-সংসারী প্রকৃতির। সরল মনের অধিকারী আশা বিনোদিনীকে আপন করে নেয়। মহেন্দ্ৰ একসময় উপলব্ধি করে বিনোদিনীই ছিল তার জন্য উপযুক্ত। পরে মহেন্দ্ৰ বিনোদিনীর দিকে আকৃষ্ট হয় । কিন্তু এই বিনোদিনীই ধীরে ধীরে ব্যাপক ও দুর্নিবার হয়ে তার আকর্ষণে সারা জীবন ছারখার হয়ে গিয়েছিল।বিহারী ও ত্রিভুজ প্রেমে জরিয়ে পড়েন।রাজলক্ষ্মীর বিধবা অন্যপুর্ণার  এক কঠিন ভূমিকা আছে এই আখ্যানে। তবে কঠিনতর ভূমিকা রাজলক্ষ্মীর, মহেন্দ্র তার একমাত্র সন্তান, চোখের মণি। মহেন্দ্রও ছিল মায়েরই ছেলে, অতিমাত্রায় মা নির্ভর। কিন্তু সব সাজানো ছক উলটে দিয়েছিল বিনোদিনী। অভাবনীয় ঘাত

প্রতিঘাত মহেন্দ্রর মাকে শুধু বেদনাহত নয়, প্রবলভাবে ঈর্শাকাতর করে তুলেছিল। অন্যদিকে ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন বিহারীর প্রতি বিনোদিনীর দুর্বলতা প্রথম থেকেই লক্ষ্য   করা যায় কিন্তু তার প্রতি বিহারীর কোনো দুর্বলতা প্রকাশ পায় না। অল্প কিছুদিনের মধ্যে বিনোদিনী বুঝতে পারে আশার প্রতি কেবল মহেন্দ্ররই নয়, বিহারীরও অপ্রকাশিত ভালোবাসা বিরাজ করছে। আর তা উপলব্ধি করে আশার প্রতি বিনোদিনীর প্রচণ্ড হিংসে হতে থাকে, কারণ একটা সময় মহেন্দ্রর সাথে তার বিয়ে হবার কথা ছিল কিন্তু ভাগ্যের ফেরে আজ সে বিধবা। তাই মনের ক্ষোভে এবং লোভের বশবর্তী হয়ে সে আশু সহজ সরলতাকে উপেক্ষা করে মহেন্দ্রকে আকৃষ্ট করতে শুরু করে। মহেন্দ্র বিনোদিনীর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। এভাবেই ত্রিভুজ প্রেমের এই সমীকরণ ভয়ংকর আকার ধারণ করতে থাকে।

মহেন্দ্র-আশার নাটকীয় দাম্পত্য জীবনের সূচনায় তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক  সত্যিই আন্তরিক ছিল। কিন্তু আশার অপটুতা, আশাকে নিয়ে মহেন্দ্রর প্রায় ই বাড়াবাড়ি প্রকাশ সমস্ত সংসার থেকে আশাকে করে পৃথক, একগুঁয়ে রাজলক্ষ্মীর মনে আশার প্রতি সৃষ্টি করে আরো বিতৃষ্ণা, আশার মাতৃস্থানীয়া অন্নপূর্ণার সাথে সৃষ্টি করে রাজলক্ষ্মীর কোন্দল।

আপাতদৃষ্টিতেতে মহেন্দ্ৰ-আশার নবজীবনকে অনুভূতির রসে টইটম্বুর মনে হলেও তাতে নিয়মিত জলসিঞ্চনের জন্য যে পারিবারিক বন্ধন, দায়িত্ব-কর্তব্যের স্বাভাবিক বেড়াজাল প্রয়োজন তা শিথিল হয়ে যাচ্ছিল। আদতে তাতে ঢিলে হচ্ছিল পারিবারিয় সংহতিই। মহেন্দ্রর উথাল-পাথাল প্রেমে ডুবন্ত ও মোহগ্রস্ত আশা সংসারের অমা ক্রমাসন্ন বুঝেও বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাব ও সংকোচের দরুন মহেন্দ্রর বাসনাবিলাসবে নিবৃত্ত করার কোনো চেষ্টাই করতে পারেনি। সেখানেই তার অক্ষমতা ও অযোগ্যতা প্রমাণিত হয়। উৎকটভাবে প্রকাশিত তাদের দৃষ্টিকটু,, প্রেমময় জীবনও একসময় হারিয়ে ফেলে ছন্দ, হেঁটে চলে অনিবার্য ধ্বংসের দিকে। মহেন্দ্রর একসময়ের প্রত্যাখ্যাত বিনোদিনীর প্রবেশ তাই সহজেই সে সংসারের দুর্বলতা খুঁজে নেয়। বিধবা বিনোদিনীয় সাথে মহেন্দ্রর সমাজ-অস্বীকৃত সম্পর্কে নানা ভাবানুভূতির দোলাচলে প্রকাশিত হয়েছে মানবহৃদয়ের বিচিত্র গতিরেখা। তবে মহেন্দ্রও অন্তর্দন্দে জ্বলেছে। একদিকে নিশ্চয় আশার খাদহীন ভালোবাসা, অন্যদিকে বিনোদিনীর প্রতি তার রাশছাড়া আকর্ষণ ইত্যাদি নিয়ে মহেন্দ্ৰও দোলাচলে ভুগেছে।

বিনোদিনী কলকাতায় এসে তার এক ভিন্ন চরিত্র দেখায়। সে মহেন্দ্র এবং আশার সোনার সংসার দেখে ঈর্ষান্বিত হয়। সে মনে মনে ভাবে আশার সব সুখ তার প্রাপ্য। মহেন্দ্রর ভালোবাসা, সম্পদ, ঐশ্বর্য সবকিছুর অধিকার তারই প্রাপ্য বলে সে বিবেচনা করে। সে আশার প্রতি চরম ঈর্ষান্বিত হয়। সে ভাবে সে এক পরিপক্ব, শিক্ষিত নারী, সেখানে এক পুতুলকে নিয়ে এরা মেতে আছে। এসব তো আমারই হওয়ার কথা ছিল। মহেন্দ্র তাকে না দেখেই বিয়েতে না করে দেওয়ায় তার ওপর রাগ জন্ম নেয়। তাই সে তাদের সোনার সংসার ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা করে।

শুরু হয় বিনোদিনীর ধ্বংসলীলা। মহেন্দ্র এবং আশার সংসার সে পলকেই ধ্বংস করে দেয়। আর এটা সে করে মহেন্দ্রকে ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে। মহেন্দ্ৰ বিনোদিনীর রূপ ও গুণের প্রেমে পড়ে যায়। সে উন্মত্তের মতো বিনোদিনাকে কামনা করতে থাকে। কিন্তু বিনোদিনী তার পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে থাকে। একপর্যায়ে বিনোদিনীকে নিয়ে মহেন্দ্র দেশান্তরী হয়ে যায়।

একসময় যে মহেন্দ্র তার মা রাজলক্ষ্মীর অনুরোধ সত্ত্বেও বিনোদিনীকে বিয়ে করতে অপরাগতা প্রকাশ করেছিল, সেই মহেন্দ্রই বিনোদিনীকে নিয়ে রচে অন্য ভুবন। ভুলে যায় গর্ভধারিণী মা, স্ত্রী আশা, কাকি অন্নপূর্ণা ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিহারীকে। ত্যাগ করে তাদের সবাইকে। ফলস্বরূপ রাজলক্ষ্মী চলে যান পৈতৃক বাড়িতে, অন্নপূর্ণা চিরতরে গৃহ ত্যাগ করেন। যদিও নানা বাধা-বিঘ্ন শেষে আবারও ফিরে আসে মহেন্দ্র। কিন্তু ততদিনে বদলে যায় অনেক কিছু, এলেমেলো হয়ে যায় সাজানো স্বপ্ন। বারবার ঝড়ের কবলে পড়তে থাকা একসময়ের সাজানো-গোছানো, স্নেহ-ভালোবাসায় গড়া পরিপাটি পরিবারটি শেষাবধি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ঠেকে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা মানেই খুব কাছ থেকে জীবনকে উপভোগ করা। তাঁর প্রত্যেকটা লেখাতেই অসংখ্য শিক্ষণীয় বিষয় থাকে, 'চোখের বালি' উপন্যাসটিও তার ব্যতিক্রম নয়। এই উপন্যাসে ভালোবাসার উত্থান-পতন খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। তাই বলা যায়, একজন নারী একজন পুরুষকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করতে পারে, কিন্তু তার ফলাফল মোটেও কল্যাণকর ও সুখের নয়। আবার একজন বিবাহিত পুরুষের অন্য নারীর প্রতি দুর্বলতা একটি সুখের সংসার ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতে পারে। 'চোখের বালি' উপন্যাসের করুণ পরিণতি তারই ইঙ্গিত বহন করে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ