Hot Posts

6/recent/ticker-posts

মহাপয়ার বা দীর্ঘপয়ার বা দীর্ঘদ্বিপদী ও প্রকারভেদ


 ----মহাপয়ার বা দীর্ঘপয়ার বা দীর্ঘদ্বিপদী ও প্রকারভেদ  মহাপয়ার কাকে বলে বৈশিষ্ট্য সমিল অমিল মহাপয়ার পর্যায়সম মহাপয়ার বলতে কি বুঝ  মধ্যসম মহাপয়ার প্রবহমান-----

**বিঃদ্র-বাংলা বিভাগের সকল পড়াশোনা পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1 


***মহাপয়ার বা দীর্ঘপয়ার বা দীর্ঘদ্বিপদী ও প্রকারভেদঃ--

'পয়ার' বলতে সাধারণত আট-ছয় মাত্রাবিভাগের হ্রস্ব বা লঘু পয়ারকে বোঝায়। তবে পরবর্তীকালে পয়ারের একটা দীর্ঘ রূপও প্রচলিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ এই দীর্ঘ পয়রের নাম দিয়েছেন মহাপয়ার।

আঠার মাত্রার পয়ারকে মহাপয়ার বা দীর্ঘপয়ার বলা হয়। এর প্রথম পর্বে আট এবং দ্বিতীয় পর্বে দশ মাত্রা থাকে (৮ + ১০=১৮ মাত্রা)। মহাপয়ারের শেষ পর্বটি সাধারণত প্রথম পর্ব অপেক্ষা দীর্ঘ হয় বলে পয়ার অপেক্ষা মহাপয়ার অধিক গুরুগঞ্জীর। মহাপয়ারে প্রবহমাণতা এনে প্রবহমাণ মহাপয়ার সৃষ্টি করা হয়েছে।

(১)সমিল মহাপয়ারঃ

যে মহাপয়ারে অন্ত্যমিল থাকে তাকে সমিল মহাপয়ার বলে।

(১) ধ্বনি খুঁজে প্রতিধ্বনি | প্রাণ খুঁজে মরে প্রতিপ্রাণ জগৎ আপনা দিয়ে | ইজিছে তাহার প্রতিদান।

অসীয়ে উঠিছে, প্রেম, শুধিবারে অসীমের ঋণ

যত দেয় তত পায় কিছুতে না হয় অবসান।

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (চিরদিন-কড়ি ও কোমল)

মাত্রা বিন্যাস : ৮+১০=১৮।

(২)অমিল মহাপয়ারঃ

মহাপয়ারে যখন অন্ত্যমিল থাকে না তখন তাকে অমিল মহাপয়ার বলে।যেমনঃ

সেই কথা জাগে মনে। তবু হায় পারি না ভুলিতে,

 প্রেম সে চপল বটে | এ জীবন আরও যে চপল।

মাত্রাবিন্যাস: ৮+১০=১৮

(৩)পর্যায়সম মহাপয়ারঃ

দুই পর্বের ও আঠার মাত্রার (৮+১০) চরণ বা পংক্তি। মহালয়াকে যখন প্রথম ও তৃতীয় এবং দ্বিতীয় ও চতুর্থ চরণে বা পংক্তিতে অন্ত্যমিল থাকে তখন তাকে পর্যায়সন মহাপয়ার বলে। যেমন

 ""ক্লেদাক্ত প্রবাহে আমি | সর্বদাই করি সন্তরণ

কখনো কখনো হই,। সচেতন বিবেক প্রহারে

তির্যক দৃষ্টিতে দেখি,। মানুষের শুভ আয়োজন

মোল্লার খোতবায় সাড়া। ওঠে নাকো হৃদয়ের তারে""।

---আতাউর রহমান : (একজন নৈরাশ্যবাসীর উক্তি-নিষাদনগরে আছি)

(৪)মধ্যসম মহাপয়ারঃ

* দুই পর্বের ও আঠার মাত্রার চরণ বা পংক্তি। মধ্যসম পয়ারের ন্যায় যে মহাপরার্জের প্রথম ও চতুর্থ এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় চরণে বা পংক্তিতে অন্ত্যমিল থাকে তাকে মধ্যসম মহাপয়ার বলা হয়।(৮+১০=১৮ মাত্রা) যেমনঃ

"কোথা রাত্রি, কোথা দিন, কোথা ফুটে চন্দ্র সূর্য তারা, কেবা আসে কেবা যায়, কোথা বসে জীবনের মেলা,

কেবা হাসে কেবা গায়, কোথা খেলে হৃদয়ের খেলা,

কোথা পথ কোথা গৃহ. । কোথা গাছ কোথা পথহারা?"

--রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (চিরদিন --কড়ি ও কোমল)।

(৫)প্রবহমাণ মহাপয়ারঃ

আঠার মাত্রার পয়ারকে যেমন মহাপয়ার বলা হয়, তেমনি আঠার মাত্রার ৮+১০ অথবা ১০+৮ প্রবহমাণ পয়ারকে প্রবহমাণ মহাপয়ার বলা হয়। প্রবহমাণ মহাপয়ার সমিল এবং অমিল দুই প্রকারেরই হতে পারে। 

(ক)সমিল প্রবহমাণ মহাপয়ার :


(১) হে আদি জননী সিন্ধু, বসুন্ধরা সন্তান তোমার,

একমাত্র কন্যা তব কোলে। তাই তন্দ্রা নাহি আর। 

চক্ষে তব, তাই বক্ষ জুড়ি সদা শঙ্কা, সদা আশা, 

সদা আন্দোলন; তাই উঠে বেদমন্ত্ৰসম ভাষা।

(খ)অমিল প্রবহমাণ মহাপয়ার

প্রবহমাণ মহাপয়ারে যখন অন্ত্যমিল থাকে না তখন তাকে অমিল প্রবহমাণ মহাপয়ার বলে।

**যেদিন চৈতন্য মোর মুক্তি পেল লুপ্তি তহা হতে

 নিয়ে এল দুঃসহ বিস্ময় ঝড়ে দারুণ দুর্যোগে

কোন্ নরকাগ্নিগিরি গহ্বরের তটে; গুপ্তধূমে

 গর্জি উঠি ফুঁসিছে সে মানুষের তীব্র অপমান, 

অমঙ্গল ধ্বনি তার কম্পান্বিত করে ধরাতল,

কালিমা মাখায় বায়ুস্তরে।

**তথ্যসংগ্রহ--

ছন্দ পরিচিতি(এস এম আবদুল লতিফ) 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ