Hot Posts

6/recent/ticker-posts

পয়ার কি?পয়ার এর শ্রেণিবিভাগ।


***পয়ার কি?পয়ার এর শ্রেণিবিভাগ।পয়ার কি?পয়ার এর শ্রেণিবিভাগ পয়ার বলতে কি বুঝ তরল পয়ার কি মালঝাপ পয়ার কি মালতি বিশাখ পয়ার কি কুসুম মালিকা পর্যায়সম পয়ার কি মধ্যসম হীনপদ ভগ্ন  সমিল পয়ার****

 **বিঃদ্র-বাংলা বিভাগের সকল পড়াশোনা পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1 

***পয়ার--
পয়ারের প্রত্যেক চরণে মাত্রাসংখ্যা চৌদ্দ এবং প্রতি চরণ দুই পর্বে বিভক্ত। মাত্রাবিন্যাস ৮+৬ অর্থাৎ প্রথম পর্বে আটমাত্রা এবং দ্বিতীয় পর্বে ছয় মাত্রা (৮+৬=১৪)। দুই চরণে গঠিত হয় স্তবক চরণ দুটোর শেষে পরস্পর মিল থাকার জন্য একে মিত্রাক্ষর বলা হয়। ছান্দসিক কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পয়ারের বর্ণনা দিয়েছেন নিম্নরূপ :

‘"আট-ছয় আট-ছয় 

পয়ারের ছাঁদ কয়।"

আট ছয় আট ছয় অর্থাৎ পয়ার ছন্দের প্রতি পংক্তিতেই আট-ছয় হিসেবে চৌদ্দ মাত্রা থাকে। প্রথম আট মাত্রার পরে অর্ধতি এবং বাকি ছয় মাত্রার পর থাকে পূর্ণযতি।

(১)""পাখী নই তাঁর ঠাই | উরি পড়ি যাউ।

মেদিনী বিদার দেও। পসিয়া লুকাউ"""।

(২)অত বড় বৃদ্ধপতি, সিদ্ধিতে নিপুন।

কোন গুণ নাহি।তার কপালে আগুন।

কুকথায় পঞ্চমুখ | কন্ঠ ভরা বিষ।

কেবল আমার সনে|দ্বন্দ্ব অহর্নিশ |


*(১)*তরলপয়ারঃ

দুই পর্বের এবং চৌদ্দ মাত্রার চরণ। লঘু পয়ারে কেবল চরণের শেষেই মিল থাকে, কিন্তু তরল পয়ারে দুই চরণের অন্ত্যমিল ছাড়াও প্রতি চরণের চতুর্থ ও অষ্টম মাত্রায় অতিরিক্ত মিল থাকে।

যেমনঃ

""দেখদ্বিজ মনসিজ| জিনিয়া মুহূর্তি।

পদ্মপত্র 'যুগ্মনেত্র | পরশয়েশ্রুতি।

অনুপম তনুশ্যাম | নীলোৎপল-আভা।

মুখরুচি কত শুচি | করিয়াছে শোভা।।""

----কাশীরাম দাস (আনিপূর্ব-মহাভারত)

(২)মালঝাপ পয়ারঃ

পয়ারের চরণাস্তিক মিল ছাড়াও প্রত্যেক চরণে চতুর্থ, অষ্টম এবং স্বাদশ অক্ষরে মিল নাইলে তাকে মাদকাপ পয়ার বলে। স্বরবৃত্ত এবং চতুর্মাত্রিক মাত্রাবৃত্ত ছন্দের সঙ্গেও এর মিল রয়েছে। কাজেই মালঝাপ ছন্দকে পুরাপুরিভাবে পয়ার গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করা চলে কিনা তা আলোচনার অপেক্ষা রাখে।

দৃষ্টান্ত :

(ক) কোতোয়াল | যেন কাল | খাঁড়া ঢাল |

 ঝাঁকে। ধরি বাণ | খরশাণ | হানহান | হাঁকে |

(৩)মালতিঃ

পয়ারের চরণে অতিরিক্ত একামাত্রা থাকলে তাকে মালতী বলে। অর্থাৎ পয়ার অপেক্ষাএকমাত্র অধিক।(৮+৭=১৫) যেমনঃ

""তেজস্বীর তেজ সয়।তত দুঃখ হয় না । 

তার তেজে যার তেজ তার তেজ সয় না" ॥(না তে ১মাত্রা)


(৪)বিশাখ পয়ারঃ

মালতীর পরে ছয় মাত্রা থাকলে তাকে উনিশ শতকে বিশাখ পয়ার বলা হত। যেমনঃ

""স্বাধীনতা হীনতায় | কে বাঁচিতে চায় হে,

কে বাচিঁতে চায়?

দাসত্ব শৃঙ্খল বল।কে পরিবে পায় হে,

কে পরিবে পায়।""

(৫)কুসুম মালিকাঃ

পয়ার এর প্রতি চরণে দুই মাত্রা অতিরিক্ত থাকলে অর্থাৎ দঘু পয়ার অপেক্ষা দুই মাত্রা অধিক হলে তাকে কুসুম মাণিকা বলে। কুসুম মালিকার চরণে মোট ১৬ মাত্রা থাকে।

দৃষ্টান্ত :

(১) যথা °চাতকিনী কুতুকিনী ঘন দরশনে।

যথা°কুমুদিনি প্রমোদিনী হিমাংশু মিলনে।

---মদনমোহন তর্কালঙ্কার

(৬)পর্যায়সম পয়ার

দুই পর্বের ও চৌদ্দ মাত্রার চরণ বা পংকি। পয়ারে যখন প্রথম ও তৃতীয় এবং দ্বিতীয় ও চতুর্থ চরণে বা পংক্তিতে অন্ত্যমিল থাকে তখন তাকে পর্যায়সম পয়ার বলে।

যেমন

"মরিতে চাহিনা আমি | সুন্দর ভুবনে,

মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই

 এই সূর্য-করে এই পুষ্পিত কাননে, 

জীবন্ত হৃদয় মাঝে যেন স্থান পাই।"

--রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রাণ-কড়ি ও কোমল)।

(৭)মধ্যসম পয়ারঃ

দুই পর্বের ও চৌদ্দ মাত্রার চরণ বা পংক্তি। পয়ারে যখন প্রথম ও চতুর্থ এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় চরণে বা পংক্তিতে অন্ত্যমিল থাকে তখন তাকে মধ্যসম প্রয়ার বলে।

যেমনঃ

(ক) ""প্রভাত হইল নিশি। হাতে লয়ে থালা, 

পুরিত উদ্যান সার। সুরসাল ফলে,

ধীরে ধীরে উপনীত, বকুলের তলে .

ধনশালী কোন একব,ণিকের বালা।""

----যদুগোপাল চট্টোপাধ্যায়।

(৮)হীনপদ পয়ারঃ

প্রথম চরণ বা পংক্তি আট মাত্রার এবং দ্বিতীয় চরণ বা পংক্তি চৌদ্দ মাত্রার হলে তাকে হীনপদ পয়ার বলে।

""ধনী-বিনত বদনে 

এসো এসো বসো বলি তোষে সম্বোধনে। """

(৯)ভঙ্গ পয়ারঃ

হীনপদ পয়ারের প্রথম চুরণের আট মাত্রা পুনরাবৃত্ত হলে ভঙ্গপয়ার বলে।যেমনঃ

""শুন রাজা মহাশয়, শুন রাজা মহাশয়। 

চৌরের কথায় কোথা কে করে প্রত্যয়।""

--মদনমোহন তর্কালঙ্কার।

( ১০)প্রবহমাণ পয়ার

পয়ার ছন্দে যখন পর্ব বিভাগ, মাত্রাবিন্যাস এবং অন্ত্যমিলের বন্ধন ঠিক রেখে তাতে যতিপাতের স্বাধীনতা এনে প্রবহমাণতার সৃষ্টি করা হয় তখন তাকে বলা হয় প্রবহমাণ পয়ার। পয়ারের ন্যায় প্রবহমাণ পয়ারেও প্রতি চরণ বা পংক্তি দুই পর্বে বিভক্ত হয় এবং অন্ত্যমিল থাকে। মাত্রাবিন্যাস ৮+৬=১৪ (প্রথমে পূর্বে আটমাত্রা এবং দ্বিতীয় পর্বে ছয় মাত্রা)।

(১১)সমিল প্রবহমাণ পয়ার :

 (১) হে সুন্দরী বসুন্ধরে, তোমা পানে চেয়ে

 কত বার প্রাণ মোর উঠিয়াছে গেয়ে  

প্রকাণ্ড উল্লাসভরে। ইচ্ছা করিয়াছে 

সবলে আঁকড়ি ধরি এ বক্ষের কাছে 

সমুদ্রমেখলা-পরা তব কটিদেশ;

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ