**কপালকুন্ডলা--বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়**
কপালকুন্ডলা উপন্যাসের চরিত্র নারী চরিত্র কপালকুন্ডলা উপন্যাসের বিষয়বস্তু নবকুমার কপালকুণ্ডলা চরিত্র বিশ্লেষণ**
★বুক রিভিউ ★
বইয়ের নাম: কপালকুন্ডলা
লেখক: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ধরণঃউপন্যাস
পৃষ্ঠাসংখ্যা:৯৬
প্রকাশকাল: ১৮৬৬
.
"তুমি অধম- তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?"
"পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছো?"
দুটো লাইনই অবিস্মরণীয় উক্তি যা বাংলা ভাষার সুভাষিত উক্তিরূপে বহুল ব্যবহৃত ও চর্চিত হয়।
প্রথম লাইনটা শোনেনি, এমন বাঙালি বোধ হয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আর দ্বিতীয় লাইনটিকে বাংলা সাহিত্যে সর্বপ্রথম ও শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক ডায়লগের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। দুটো লাইনই বঙ্কিমচন্দ্রের এক উপন্যাসের অংশ- কপালকুণ্ডলা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিত কন্যা কপালকুণ্ডলা তার প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। স্থানীয় মন্দিরের অধিকারীর সহায়তায় নবমকুমার কপালকুণ্ডলাকে বিয়ে করে নিজের বাড়ি সপ্তগ্রামে ফিরে আসেন। পথে মতিবিবি বা লুৎফুন্নেসা নামে এক বিদেশী রমণীর সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয়।
কপালকুণ্ডলা বাল্যকাল থেকে জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে কাপালিকের কাছে বড় হওয়ায় স্বাভাবিক সামাজিক রীতিনীতির সাথে অপরিচিত ছিলেন। নবকুমারের বাড়িতে তিনি ধীরে ধীরে সমাজের মানুষজন ও আচার-আচরণ সম্পর্কে ধারণা পান এবং এসময় কপালকুণ্ডলা নাম বদলে তার নাম রাখা হলো মৃন্ময়ী।
মতিবিবি বা লুৎফুন্নেসা আসলে নবকুমারের প্রথম স্ত্রী পদ্মাবতী ছিলেন। পরে সপরিবারে মুসলমান হয়ে আগ্রা চলে যান। পথে নবকুমারকে দেখে তিনি পুনরায় তাকে স্বামীরূপে গ্রহণ করতে উৎসুক হন এবং সপ্তগ্রামে চলে আসেন। পদ্মাবতীর পরিচয় জানার পর নবকুমার তাকে প্রত্যাখ্যান করেন।
এদিকে কাপালিক কপালকুণ্ডলাকে বধ করতে সপ্তগ্রামে চলে আসেন। তার হাত ভেঙে যাওয়ায় সে পদ্মাবতীর সাহায্য চায়।
পদ্মাবতী ব্রাহ্মণবেশ ধারণ করে কপালকুণ্ডলাকে সব খুলে বলে এবং নবকুমারকে ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করে। ব্রাহ্মণবেশী পদ্মাবতীর সাথে কপালকুণ্ডলাকে দেখতে পেয়ে নবকুমার তাকে ভুল বুঝে কষ্ট পান। আর কাপালিক সুযোগ বুঝে সুরাপান করিয়ে নবকুমারকে উস্কে দিতে থাকেন।
শেষপর্যন্ত নবকুমার আর কপালকুণ্ডলার মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব সংঘাতের মধ্য দিয়েই উভয়েই জীবনের চরম উপসংহারে উপনীত হয়।
অধিকাংশ পাঠক পড়তে গিয়ে আমার মতো- চন্দ্ররশ্মিবর্ণাভা বা বারিধারাপরিসিঞ্চিত ঘরানার মতো বেশ কিছু শব্দের অর্থ বুঝতে সমস্যায় পড়বেন হয়তো। আবার বাটী অর্থ যে বাড়ি সেটা আমার জানা থাকলেও প্রথমে বাটির কথাই মনে আসে।
বানানের ক্ষেত্রেও একটু সমস্যায় পড়েছি যেমন ধরুন ধর্ম্ম বা কর্ত্তার মতো বানান দেখলে একটু ভিরমি খেতে হয় বৈ কি! তবে এসব শব্দ বা বানানে যদি ভয় না পেয়ে মনোযোগ দিয়ে এই বইটি যদি একটু ধৈর্য ধরে পড়া যায়, তাহলেই এই বইয়ের সার্থকতা এবং মর্মার্থ বোধগম্য হবে।
সবশেষে, বঙ্কিমের মতো হয়তো আপনারও প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করবে- আকাশে চন্দ্রসূর্য্য থাকিতে জল অধোগামী কেন?
সত্যিকার অর্থে রোমান্সধর্মী উপন্যাস বলতে যা বোঝায় "কপালকুণ্ডলা " তার প্রথম ও প্রকৃষ্টতম উদাহরণ নিঃসন্দেহে। বইটি পড়লে আশা করি ভাল লাগবে আপনাদের।
ধন্যবাদ 😊😊
**রিভিউপ্রদানকারী--
নাম-রুপিয়া ফারজানা খান
শিক্ষার্থী,বাংলা বিভাগ।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর।
0 মন্তব্যসমূহ