**বিঃদ্র-বাংলা বিভাগের সকল পড়াশোনা পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1
**নাটক কে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়--
(১)ট্র্যাজেডি( Tragedy)
(২)কমেডি(Comedy)
**(১)ট্র্যাজেডি( Tragedy)
দৈব বা অদৃষ্টের অনিবার্যতায় পীড়িত, গভীর অন্তর্দ্বন্দ্ব ও বহির্দ্বন্দ্বে পরাভূত শথচ নায়কোচিত আত্ম-প্রতিষ্ঠার ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যে মহিমময় মানবজীবনের করুণরসাত্মক কাহিনীই সাধারণভাবে ট্র্যাজেডিরূপে পরিচিত। দেবতা কিংবা পুরাণকথিত হীরদের কীর্তিকলাপ, দুঃখ-যন্ত্রণা, সংঘাত-বিনাশকে উপজীব্য করে প্রাচীন গ্রীসে উদ্ভব ও প্রতিষ্ঠা ঘটেছিলো এই বিষাদাত্মক নাট্যরূপের।আনুমানিক খ্রীস্টপূর্ব ৩৩০ অব্দে রচিত অ্যারিস্টটলের দি পোয়োটিকুস্ গ্রন্থে। এক সংযত ও প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ সংজ্ঞায় তিনি ট্রাজেডির স্বরূপ ও লক্ষণসম্পর্কে বলেন-
''Tragedy is an imitation of an action that is serious, complete and of a certain magnitude, in language embellished with each kind of artistic ornament. the several kinds being found in separate parts of the play: in the form of action. not of narrative; through pity and fear effecting the proper purgation of these emotions''
***
(১)ট্র্যাজেডি বা করুণরসাত্মক নাটক মানুষের ‘কর্মবৃত্তি' (action)-র 'অনুকরণ’,তথা নির্মাণ যাকে অ্যারিস্টটল বলেছিলেন 'mimesis। এই প্রসঙ্গে তিনি ‘অনুকরণ' শব্দটি পিথাগোরাস ও প্লেটোর থেকে এক স্বতন্ত্র ও নতুন অর্থে ব্যবহার করেছিলেন।
(২)ট্র্যাজেডির সংজ্ঞায় অ্যারিস্টটল ‘কর্মবৃত্তি'-র অনুকরণের কথা বলেছেন; ব্যক্তিজীবনের অনুকরণ নয়।
(৩)ট্র্যাজেডি যে ‘কর্মবৃত্তি-কে অনুকরণ করে তাকে অ্যারিস্টটল বলেছেন গুরুগম্ভীর বা ‘serious'; আর এখানেই ‘কমেডি' বা হাস্যরসাত্মক নাটকের সঙ্গে করুণরসাত্মক নাটকের পার্থক্য।
(৪)ট্র্যাজেডির action-কে হতে হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আদি-মধ্য-অন্ত—এই তিনটি পর্বে বিন্যস্ত হবে একটি সমগ্র ও নিটোল কাঠামো।
(৫)নাটকে রূপায়িত ‘ক্রিয়া’ বা ‘কর্মবৃদ্ধি’-র থাকবে একটি 'মাত্রা' বা 'magnitude এই থাকবে একটি মাপ বা দৈর্ঘ্য যাতে করে নাটাক্রিয়া সংহত ও যুক্তিপূর্ণ বিন্যাসের মধ্যে দিয়ে সম্ভাব্য ও অবশ্যম্ভাবী “উপসংহার' (Catastrophe)-এ উপনীত হতে পারে।
(৬) ট্র্যাজেডির আলোচ্য সংজ্ঞায় অ্যারিস্টটল অলংকরণের উপাদানরূপে ছন্দ ও সুরের ব্যাবহার করেছেন।
(৭)ট্র্যাজেডির অনুকরণীতি বর্ণনাত্মক নয়, ঘটনার গতি ও পরিণতি তথ্য চরিত্র ও ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্কবদ্ধতায় নাটকোচিত প্রক্রিয়ায় তাকে উপস্থাপিত করতে হয়।
(৮)করুণা বা preaty র উদ্রেক হবে।
অর্থাৎ ট্র্যাজেডির বৈশিষ্ট্য কে নিম্নোক্ত ভাবে সাজাতে পারি--
১) ট্রাজেডির বিষয় হবে গুর গম্ভীর ও তাৎপর্যবাহী।
২) প্লট হবে ষড়ঙ্গ ও পরিমিত আয়াতনের যা আদি মধ্য অন্ত, তিন স্তরে বিন্যস্ত।
৩) ট্রাজেডির লক্ষ হবে ভীতি ও করুণার উদ্রেক করে দর্শক মনে করুণ রসের আনন্দ দান করা।
৪) ট্রাজেডির ভাষা হবে ছন্দবদ্ধ।
৫) ট্রাজেডির নায়ক হবে সাধারণ থেকে অনেক উর্ধের মানুষ কিন্তু ভালো ও মন্দের মাঝামাঝি।
**ট্র্যাজেডির প্রকারভেদ --
১. ক্ল্যাসিক্যাল ট্রাজেডি :
খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে করিস্থ ও তারপর এথেন্সে ডায়নোসীয় উৎসব উপলক্ষে গীত সম্মেল স্তোত্র বা dithyramb থেকে জন্ম হয়েছিলো গ্রীক ট্রাজেডির। এই সম্মেলক স্তোত্রের গায়ক, পুরোহিত অথবা কবি স্বয়ং—ক্রমে রূপান্তরিত হয়েছিলেন অভিনেতায় ; প্রথমে একজন অভিনেতা; পরে একে একে অনেকে। ট্র্যাজেডির উদ্ভবের এই যুগ ছিলো অসংখ্য নগররাষ্ট্রে বিভক্ত প্রাচীন গ্রীসে ভূস্বামী অভিজাততন্ত্রের সঙ্গে উদীয়মান বাণিয়া শ্রেণীর দ্বন্দ্ব ও বাণিয়া নিয়ন্ত্রণাধীন গণতন্ত্রের যুগ। ইস্তিলাসের এথেন্সে ট্র্যাজেডি ছিলো এই গণতান্ত্রিক চেতনার বাহক।
ক্লাসিকাল ট্র্যাজেডিতে মুলত স্থান কাল ও ঘটনার ঐক্য পরিলক্ষিত হয়।তাছাড়া কমিক গল্প,প্লটের সারল্যতা, ভীতি,নিয়তি র অপুর্ব মিশ্রণ ঘটে।আর এর সাথে 'কোরাস' যুক্ত হয়ে অনন্য মাএা প্রদান করে।যেমন-সফোক্লিসের, রাজা ঈদিপাস।
২. এলিজাবেথীয়/ রোমান্টিক ট্র্যাজেডি :
চিরশ্রেষ্ঠ উইলিয়াম শেকসপীয়ারকে মধ্যমণি ভাবলে তাঁর পূর্বসূরীদের মধ্যে কিড ও মার্লো এবং উত্তরসুরীদের মধ্যে ওয়েবস্টার, মার্সটন, মিলটন প্রমুখ নাট্যকারএলিজাবেথের যুগ ও এলিজাবেথ-উত্তর সময়পর্বে ভিন্ন স্বাদ ও রুচির যে ট্র্যাজেডির বিবর্তন ঘটান তাই মোটের ওপর রোমান্টিক ট্র্যাজেডি বা এলিজাবেথীয় র অভিধায় চিহ্নিত হয়ে থাকে। রোমান্টিক ভাবকল্পনা, নবজাগরণের মানবতন্ত্রী দার্শনিক ৰীক্ষা, অতিপ্রাকৃতের রহসা, হৃদয়াবেগের অশান্ত ঘূর্ণি এই বিশেষ ট্র্যাজেডিকে এক স্বতন্ত্র মাত্রা দিয়েছিল।যেমন - মর্লোর (the jew of malta), শেক্সপিয়ার এর hamlet ইত্যাদি।
৩. হিরোইক ট্র্যাজেডি :
১৬৬০ খ্রীস্টাব্দে ইংলণ্ডে রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর এক নতুন ধাঁচের ট্র্যাজেডির প্রচলন হয় যার প্রবর্তক ছিলেন কবি ও নাট্যকার জন ড্রাইডেন। একে বলা হয়ে থাকে নব্য-ধ্রুপদী (Neo-Classical) তথা হিরোইক (Heroic) ট্রাজেডি।যেমন --জর্জ কার্টরাইটের (the heroic lover)।
8. গার্হস্থ্য বিষাদনাটা (DomesticTragedy):
রাজন্যবর্গ তথা উচ্চপদাধিকারী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কুশীলব হিসেবে নিয়ে সাধারণভাবে রচিত হয়ে। থাকে ট্র্যাজেডি। তবে এক ধরনের ট্র্যাজেডি আমাদের গোচরে আসে যেখানে সামাজিক মধ্যশ্রেণ নর-নারীর পারিবারিক বা গার্হস্থ্য জীবনের ঘটনাবলী নাটকের উপজীব্য।যেমন --টমাস হেইডেনের(a women killed with kindness), শেক্সপিয়ার এর (othello) ইত্যাদি।
৫. আধুনিক সমাজ-সমস্যামূলক ট্র্যাজেডি (Modern Social Tragedy) :
ইউরোপীয় নাট্যচর্চার ইতিহাসে আধুনিক সমাজ-বাস্তবতার পথিকৃৎ ইবসেন। 'ডোমেস্টিক অসহ ট্র্যাজেডি’-তে ব্যক্তির নিজস্ব তথ্য পারিবারিক সমস্যা-সংঘাতের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছিলে নাবী তাই সমকালীন সমাজজীবনের বিস্তৃততর প্রেক্ষিত লাভ করেছে ইবসেনের সামাজিক ট্র্যাজেডি বা সমস্যা-নাটক (problem play) গুলিতে।
যেমন--জন গলস্ ওয়ার্দির-- justice,, strif অন্যতম।
৬. কাব্য-নাটক (Poetic Drama) ট্র্যাজেডি:
সাধারণভাবে কাব্য-নাটক বা Poetic Drama বলতে এলিজাবেথীয় যুগপর্ব থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত কাব্যরূপে লেখা সমস্ত ট্র্যাজেডি এবং সপ্তদশ শতকের শেষ পর্যন্ত কাব্যমাধ্যমে রচিত সমস্ত কমেডিকে বোঝানো হয়ে থাকে।!যেমন--w.b.yeats এর the countries cathelin,the land of hearts desire ইত্যাদি।
0 মন্তব্যসমূহ