Hot Posts

6/recent/ticker-posts

প্রবন্ধের সংজ্ঞা প্রদানসহ এর বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ


--প্রবন্ধের সংজ্ঞা প্রদানসহ এর বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ  প্রবন্ধ বলতে কি বুঝ প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য লিখো বস্তুনিষ্ঠ বা তন্ময় প্রবন্ধ ব্যক্তিনিষ্ঠ বা মন্ময় প্রবন্ধ বলতে কি বুঝ এদের বৈশিষ্ট্য --

**বিঃদ্র-বাংলা বিভাগের সকল পড়াশোনা পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1 

‘প্রবন্ধ' বা 'Essay' এক বিশেষ ধরনের গদ্যরচনা।প্রবন্ধ শব্দটির বুৎপত্তি হয়েছে -প্র +√বন্ধ+অন থেকে।প্রাচীন প্রয়োগে ‘প্রবন্ধ' শব্দটির অর্থ ছিল ‘উপায়’ বা ‘ব্যবস্থা'। সংস্কৃত ভাষায় ‘প্রবন্ধ' বলতে বোঝাতো 'প্রকৃষ্টরূপে বন্ধন' এবং সাহিত্যের সব শাখাতেই প্রবন্ধের চলন ছিল। 

ড. স্যামুয়েল জনসনের মতে-

"'a loose sally of the mind, an irregular, indigested piece, not a regular and orderly performance"

শ্রীশচন্দ্র দাস বলেছেন, “কল্পনা ও বুদ্ধিবৃত্তিকে আশ্রয় করিয়া লেখক কোন বিষয় বস্তু সম্বন্ধে যে হাতুসচেতন নাতিদীর্ঘ সাহিত্য-রূপ সৃষ্টি করেন, তাহাকেই প্রবন্ধ বলা হয়"।

ড. শশীভূষণ দাস গুপ্ত রচনা বা Essay ও প্রবন্ধের মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য নির্দেশ করে বলেছেন, "‘রচনা হচ্ছে সৃষ্টিধর্মী; বিপরীত পক্ষে প্রবন্ধ হচ্ছে, কল্পনা ও বুদ্ধিবৃত্তি আশ্রিত বিষয় নির্ভর আলোচনা""।

**প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্যঃ

(১)একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে অবলম্বন করে প্রবন্ধ রচিত হয়।

(২)এখানে লেখকের মনোভঙ্গি বড় ভূমিকা পালন করে।

(৩)প্রবন্ধে লেখকের কল্পনার অবকাশ নেই। 

(৫)তথ্য ও বিষয়ের প্রাধান্যই প্রবন্ধের গৌরব।

(৬). প্রবন্ধে লেখকের আত্মপ্রকাশই প্রধান।

(৭)প্রবন্ধে লেখকের দৃষ্টি নিজের অন্তর অনুভূতিতেই নিবদ্ধ থাকে। 

(৮)প্রবন্ধ প্রায়শই চিন্তাগভীর এবং দৃঢ়কায় হয়ে থাকে।

(৯)প্রতিটি বিষয়কে অনিবার্য ভাষ্যরূপের মাধ্যমে প্রকাশ করাই প্রাবন্ধিকের ধর্ম।

(১০)প্রাবন্ধিকের ব্যক্তিত্বের প্রসঙ্গটিও তাৎপর্যপূর্ণ। প্রবন্ধের বিষয়বস্তুকে যথার্থরূপে প্রকাশের জন্য দৃষ্টিভঙ্গি ও ভাষারীতি সম্পর্কে লেখককে সচেতন থাকতে হয়।


**প্রবন্ধের শ্রেণিবিভাগ : বিষয়ের প্রকৃতি ও উপস্থাপন বৈশিষ্ট্য বিচারে প্রবন্ধকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।

১. বস্তুনিষ্ঠ বা তন্ময় প্রবন্ধ (Formal or Informative Essay) 

২. ব্যক্তিনিষ্ঠ বা মন্ময় প্রবন্ধ (Familiar or Intimate Essay)


(১) বস্তুনিষ্ঠ বা তন্ময় প্রবন্ধ : সমালোচক শ্রীশচন্দ্র দাস বস্তুনিষ্ঠ বা তন্ময় প্রবন্ধ সম্পর্কে বলেছেন, “বিষয়বস্তুর প্রাধান্য স্বীকার করিয়া যে সকল বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধ লিখিত হয়, তাহাদিগকে তন্ময় বা বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধ বলা যাইতে পারে।” 

বঙ্কিমচন্দ্রের 'বাঙ্গালা ভাষা’ ‘বিবিধ প্রবন্ধ’, শিবনাথ শাস্ত্রীর 'প্রবন্ধাবলী দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘প্রবন্ধমালা’ ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের "সামাজিক প্রবন্ধ",মোতাহের হোসেন চৌধুরী র ‘সংস্কৃতি কথা’, মুনির চৌধুরীর ‘বাংলা গদ্য রীতি’ এ জাতীয় প্রবন্ধের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

**বস্তুনিষ্ঠ বা তন্ময় প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য : 

(ক)যুক্তিনিষ্ঠা ও ভাবনার নির্দিষ্ট শৃঙ্খলা থাকবে। 

(খ)তত্ত্ব ও তথ্যের লক্ষণীয় প্রাধান্য থাকবে।

(গ)প্রাবন্ধিকের ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভবের পরিবর্তে বস্তুনিষ্ঠা ও মননের গুরুত্ব প্রাধান্য পাবে।

(ঘ)প্রাবন্ধিক বৈজ্ঞানিক তথা বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দেবেন। 

(ঙ)প্রবন্ধের বিষয় সম্পর্কে প্রবন্ধকারের থাকবে নিঃস্পৃহতা, নিরপেক্ষতা ওআনুষ্ঠানিক মেজাজ।

(চ)ভাষা ব্যবহারে সতর্কতা ও সংযমের পরিচয় দেবেন। মার্জিত ভাষার মাধ্যমে প্রবন্ধের বক্তব্য প্রকাশিত হবে। (ছ)পাঠকের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে প্রবন্ধকার শিক্ষক পরামর্শদাতার ভূমিকা পালন করবেন।

**তন্ময় প্রবন্ধকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :

(1) তথ্যপ্রধান প্রবন্ধ : রাষ্ট্র বিজ্ঞানের বিচিত্র প্রসঙ্গ, নিঃসর্গ প্রসঙ্গ, সমাজ সংস্কৃতিমূলক প্রকল্প।

(২) বিবৃতি বা বিবরণমূলক প্রবন্ধ : বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের জীবন-বৃত্তান্তমূলক রচনা কিংবা ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সমসাময়িক ঘটনা বিষয়ক রচনা। 

(৩) ভাবনাশ্রিত প্রবন্ধ : দর্শন, ধর্ম ইত্যাদি তত্ত্বমূলক রচনা।

(8) সমালোচনামূলক প্রবন্ধ : শিক্ষা ও সাহিত্য বিষয়ক নানা সমালোচনাধর্মী রচনা।

**(২) ব্যক্তিনিষ্ঠ বা মন্ময় প্রবন্ধ :

ব্যক্তিনিষ্ঠ প্রবন্ধে ব্যক্তিগত সৌরভই শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ। যে প্রবন্ধে 'লেখকের ব্যক্তি চিন্তা অপেক্ষা ব্যক্তি হৃদয়ই প্রধান' তাকে ব্যক্তিনিষ্ঠ বা মন্বয় প্রবন্ধ বলে। এ প্রবন্ধ ব্যক্তিনিষ্ঠ ও ভাব-প্রধান। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কমলাকান্তের দপ্তর', রবীন্দ্রনাথের ‘বিচিত্র প্রবন্ধ’ এ জাতীয় প্রবন্ধের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। এছাড়াও প্রমথ চৌধুরী, অতুলচন্দ্র গুপ্ত, বুদ্ধদেব বসু প্রমুখ অন্যতম।

**ব্যক্তিনিষ্ঠ বা মন্ময় প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য :

(ক)যুক্তি ও মননশীলতার পরিবর্তে লেখকের হৃদয় আবেগেরই প্রাধান্য থাকবে। 

(খ) বিষয়বস্তু লেখকের কল্পনা তথা ভাবরসে জারিত হয়ে পাঠক হৃদয়কে স্পর্শ করবে।

(গ)সরস, মর্মস্পর্শী, আত্মগত ভঙ্গিতে পাঠককে কাছে টেনে নেন প্রাবন্ধিক।

(ঘ)বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধকারের মতো মন্ময় প্রাবন্ধিক সোচ্চার বা উদ্দেশ্য তাড়িত নন বরং আত্মমগ্ন ও কিছুটা রহস্যময়। (ঙ)ব্যক্তিনিষ্ঠ প্রবন্ধ মূলত ব্যক্তিগত, নৈর্ব্যক্তিক নয়।

(চ)আবেগ ও কল্পনার উজ্জ্বলতা এ প্রবন্ধে লেখকের ব্যক্তিত্বের দর্পণ। 

(ছ)ভাষার ব্যবহারে প্রবন্ধকার অনেক বেশি স্বাধীনতা পান এবং পাঠকের সঙ্গে আন্তরিক বিনিময় গড়ে তোলেন।

**শ্রেণিবিভাগ :

মোহিতলাল মজুমদার ব্যক্তিনিষ্ঠ বা মন্ময় প্রবন্ধকে দু শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। যথা

(১) মনঃপ্রধান প্রবন্ধ।

(২) অন্তরানুভূতি প্রধান প্রবন্ধ।

(১)মনঃপ্রধান প্রবন্ধ : এ জাতীয় প্রবন্ধে লেখক মনের স্থূল অনুভূতিকে হাস্য রসাত্মক উপকরণের মাধ্যমে প্রবন্ধের পট নির্মাণ করেন। বীরবলের প্রবন্ধগুলো এ জাতীয় প্রবন্ধের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

(২)অন্তরানুভূতি প্রধান প্রবন্ধ : এ জাতীয় প্রবন্ধে লেখক মনের স্থূল আবরণ ভেদ করে সূক্ষ্ম স্তরে অবতরণ করেন এবং শাশ্বত মানবিক প্রবৃত্তির রহস্য ও সৌন্দর্য তন্ময় হয়ে তাঁর সৃষ্টিতে উপস্থাপন করেন। রবীন্দ্রনাথের ‘কালান্তর’ এ জাতীয় প্রবন্ধের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

*তথ্যসংগ্রহ--

(১)সাহিত্য তত্ত্ব-কথা[সাহিত্যের রূপ, ছন্দ, অলঙ্কার ও রসতত্ত্ব]আবুল ফজল ও রেজাউল ইসলাম।

(২)কুন্তল চট্টোপাধ্যায় -সাহিত্যের রূপ-রীতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ