Hot Posts

6/recent/ticker-posts

কমেডির সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য

 

----কমেডির সংজ্ঞা ও  বৈশিষ্ট্য  কমেডি বলতে কী বোঝ ট্র্যাজেডি কমেডির মধ্যে  পার্থক্য ট্র্যাজেডির বৈশিষ্ট্য 
কমেডি নাটকের উৎপত্তি প্রকারভেদ কমেডি কত প্রকার---
**বিঃদ্র-বাংলা বিভাগের সকল পড়াশোনা পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1 
***সাহিত্যের দৃশ্যকাব্য বলে পরিচিত নাটকের প্রধান দুটি ভাগ-

১.ট্র্যাজেডি(Tragedy) 

২.কমেডি(Comedy) 

**কমেডি(Comedy) এর সংজ্ঞা --

Comedy' শব্দটির আবির্ভাব গ্রীক 'Komoidia' থেকে, যার মূল "Komos 'merry-making', যদিও Poetics-এ অ্যারিস্ট নিশ্চিতভাবে 'কমেডি’র উদ্ভবের ইতিহাস ব্যাখ করতে পারেননি, তবু প্রাচীন গ্রীসের গ্রামা আনন্দ উদযাপন (Phallic songs) থেকেই এর উদ্ভব সে বিষয়ে তাঁর সন্দেহ ছিলো না। ""রস পরিণতির দিক থেকে যে নাটক মিলনাত্মক বা হাস্যরসাত্মক হয়, সাধারণত তাকেই কমেডি বলা হয়।""কমেডির সম্পর্কে অ্যারিস্টটল (Aristotle 384-322B.C) বলেন, 

"A comedy is an imitation of men worse than the average: worse. however, not as regards any and every sort of fault, lent only as regards particular kind, theRidiculous, which is a species of the ugly. The ridiculous may be defined as a mistake or deformity not productive of pain or harm to others." 

অর্থাৎ 'কমেডি সমাজের নিম্ন শ্রেণির চরিত্রের অনুকরণ। তবে যে অর্থে চরিত্র মন্দ বলে বিবেচিত হয়, সেই অর্থে নিম্ন নয়। হাস্যরস পরিবেশনের মাধ্যমে সমাজ মানসের অসঙ্গতি কিংবা বিকৃতির প্রেক্ষিতে চারিত্রিক ত্রুটি-বিচ্যুতিকে মিলনাত্মক দৃশ্যায়িত করাই কমেডির উদ্দেশ্য।

**ট্র্যাজেডি ও কমেডির মধ্যে পার্থক্য --

**কমেডির বৈশিষ্ট্যঃ 

(১) কমেডির সংবেদনা হাস্যরসোদ্দীপক। 

(২)কমেডিতে জীবনের আংশিক চিত্র থাকে।

(৩) কমেডিতে সামাজিক জীবন-বৈচিত্র্য এবং সাময়িক ব্যাপারই প্রাধান্য পায়।

(৪)কমেডিতে ‘টাইপ' মানুষের কথা থাকে বা একটা শ্রেণির।

(৫)কমেডিতে চাপল্য প্রকাশ পায়। 

(৬)কমেডির সুর লঘু হয়।

(৭) কমেডিতে পরিস্থিতিই ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করে।

(৮) কমেডিতে নায়কের চেয়ে নায়িকার প্রাধান্যই কিছুটা বেশি থাকে।

(৯)সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের ভাষাই কমেডির ভাষা বা কমেডির ভাষা লঘু।

(১০) কমেডি মানবসুগণ্ড ত্রুটি-বিচ্যুতি ও নির্বুদ্ধিতার পরিণাম অঙ্কনের সাহায্যে আমাদেরকে স্বাভাবিক হবার শিক্ষা দান করে।

**ট্র্যাজেডির বৈশিষ্ট্যঃ

(১) ট্র্যাজেডির সংবেদনা করুণ রসোদ্দীপক।

(২) ট্র্যাজেডিতে জীবনের পূর্ণতার ছবি থাকে।

(৩) ট্র্যাজেডিতে থাকে নিয়তির উপস্থিতি, ভাগ্যের অমোঘতা। (৪) ট্র্যাজেডিতে জীবনের নিয়মের সার্বজনীনতা থাকে।

(৫) ট্র্যাজেডি মহানুভবের দ্যোতক। 

(৬) ট্র্যাজেডির সুরে গভীরতা থাকে।

(৭) এখানে নায়কের চরিত্রাশ্রয়ী ত্রুটির জন্য ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে।

(৮) নায়কের ভূমিকা ট্র্যাজেডিতে প্রাধান্য পায়।

(৯) ট্র্যাজেডির ভাষা গভীর ভাবব্যঞ্জক। 

(১০) ট্র্যাজেডি আমাদের মানবসুলভ কামনা-বাসনা প্রশমন করে মানস-স্বাস্থ্যদান করে।

কমেডির প্রকারভেদ ঃ

(ক) কাব্যধর্মী কমেডি: কমেডির বিষয় যখন বিস্তৃত কল্পনার জগৎ থেকে আহূত হয়।

বা যে কমেডি অত্যধিক কল্পনা বা আবেগপ্রবণ, সে কমেডিকে কাবাধর্মী কমেচি বলা হয়। উদাহরণ- Shakespeare এর Twelfth Night. 

(খ) সামাজিক কমেডি : যে কমেডিতে সমাজের নীতি, আদর্শ, জীবনাচরণ পদ্ধতি প্রভৃতি বিন্নুপাত্মকভাবে পরিবশেন করা হয়, তাকে সামাজিক কমেডি বলা হয়। উদাহরণ- দীনবন্ধু মিত্রের ‘সধবার একাদশী', রবীন্দ্রনাথের ‘অচলায়তন', প্রমথবিশীর ‘মৌচাকে ঢিল' উল্লেখযোগ্য।

(গ) চক্রান্তমূলক কমেডি : যে কমেডিতে পাত্র-পাত্রীরা ষড়যন্ত্রমূলক আচরণের দ্বারা প্রতিপক্ষকে নাজেহাল করার মধ্য দিয়ে নাট্য পরিণতি অনিবার্য করে তোলে- সে কমেডিকে চক্রান্তমূলক কমেডি বলা হয়। এ শ্রেণির নাটকে চরিত্রাঙ্কন অপেক্ষা আখ্যানভাগ রচনার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। Dryden এর The Spanish Friar, ক্ষীরোদ প্রসাদের 'জয়শ্রী' এ শ্রেণিভুক্ত নাটক।

(ঘ) সংলাপধর্মী কমেডি কমেডিতে যখন সংলাপের প্রাধান্য সূচিত হয়,তখন তাকে সংলাপধর্মী কমেডি বলা হয়। চরিত্রসমূহের অভিব্যক্তির ক্ষেত্রে ঘটনা বা কাহিনী অপেক্ষা সংলাপের বিশিষ্টতাই বেশি কার্যকরী হয়। Shakespeare এর As you like it'. রবীন্দ্রনাথের ‘চিরকুমার সভা' এ জাতীয় কমেডি।

উপর্যুক্ত শ্রেণিবিভাগ ছাড়াও অধ্যাপক নিকল কমেডিকে পাঁচটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন--

(১)ফার্স (Farce) বা প্রহসন : এ জাতীয় কমেডিতে চরিত্র সৃষ্টি ও সংলাপের প্রাধান্যের পরিবর্তে একটি সামগ্রিক হাস্যরসাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয় এবং ঘটনা, চরিত্র প্রভৃতি সব ক্ষেত্রেই সম্ভাব্যতার বিশেষ কোনোবাধ্যবাধকতা থাকে না।

(২). হিউমার কমেডি : এ জাতীয় নাটকে অস্বাভাবিক ও রোমাঞ্চকর পরিস্থিতি নির্মাণ বা ভাবাবেগের আতিশয্য পরিলক্ষিত হয়।

(৩)সাটায়ার বা Satirical কমেডি : এ জাতীয় কমেডিতে চরিত্রের ক্রিয়া অতিরঞ্জনের মাধ্যমে দেখানো হয় এবং বাতিকগ্রস্ত চরিত্রের ক্রিয়া-কলাপের ভেতর দিয়ে হিউমার বা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ ফুটে ওঠে।

৪. কমেডি অফ ম্যানারস বা উইট : এ জাতীয় কমেডিতে সামাজিক রীতি-পদ্ধতি বা আচার-আচরণ উপস্থাপনাই মুখ্য বিষয়। এখানে আবেগের পরিবর্তে চরিত্রের বুদ্ধিবৃত্তিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

৫. নৈতিক কমেডি : এ জাতীয় কমেডিতে ভাবাবেগের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। বাস্তব জীবনানুভব অপেক্ষা এক ধরনের কৃত্রিম চেতনার আলোকে মানব জীবনের

অসঙ্গভির ওপর নৈতিকতার মোড়ক সৃষ্টি করা হয়।

**তথ্যসংগ্রহ--

(১)সাহিত্য তত্ত্ব-কথা[সাহিত্যের রূপ, ছন্দ, অলঙ্কার ও রসতত্ত্ব]আবুল ফজল ও রেজাউল ইসলাম।

(২)কুন্তল চট্টোপাধ্যায় -সাহিত্যের রূপ-রীতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ