Hot Posts

6/recent/ticker-posts

নাটক কি? নাটক এর গঠন /এর অঙ্ক

 

---নাটক কি নাটক এর গঠন এর অঙ্ক নাটক বলতে কি বুঝ নাটক কাকে নাটকের প্রকারভেদ নাটকের ঐক্য কয়টি নাটকের অঙ্ক কয়টি প্লট কাকে বলে ট্র্যাজেডি বলতে কী বোঝ কমেডি---

**বিঃদ্র-বাংলা বিভাগের সকল পড়াশোনা পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1 

**নাটক কি?

সাহিত্যের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে নাটক একটি অন্যতম অংশ। নাটক বা সর্বজনগ্রাহা অর্থে 'drama, পদ্য কিহা গদ্য সংলাপের রীতিতে রচিত মঞ্চে অভিনয় উপযোগী এক সাহিত্যকর্ম, যার উদ্ভব হয়েছিলো প্রাচীন বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ফর্মীয়-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকাণ্ডে। গ্রীক 'dran' শব্দের অর্থ কিছু করা— 'to do' অথবা 'lo act', আর তা থেকেই এসেছে 'drama'। আদিম শিকারী মানুষ তার পশুশিকারের আনন্দকে যক্ত করত নৃত্য ও মূকাভিনয়ের মাধ্যমে; শীত ঋতুর হিম-প্রতিকূলতার মাঝে বসন্তদিনের আবাহন ও প্রকৃতির পুরুজ্জীবনের আকাঙ্ক্ষাকে রূপ দিত নৃত্য-গীত-সংলাপে।
'Poetics'  গ্রন্থে নাটক সম্পর্কে  অ্যারিস্টটল বলেছেন "The name drama is given to such poems as representing action" । (অর্থাৎ –নাটক হচ্ছে দৃশ্যকাব্য যা মানব জীবনের কর্মদ্যোগকে রূপায়িত করে)। এই 'action' হচ্ছে লোকজীবনের ঘটনানির্ভর কর্মদ্বন্দের উপস্থাপন। যা একমাত্র নাটকের মাধ্যমে অভিনীত হয়ে মঞ্চে দৃশ্যত্ব বৈশিষ্ট্য লাভ করে। অতএব অ্যারিস্টটলের মতে নাটক হচ্ছে এক প্রকার কাব্য, যা দৃশ্য রূপে উপস্থাপিত কিংবা রচিত হয়।সাংস্কৃতিক অধ্যাপক এলারডাইস নিকল (Alerdice Nicol) নাটকের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে অ্যারিস্টটলের পোয়েটিক্‌স-এ যেমন, তেমনি সংস্কৃত অলঙ্কারশাস্ত্রে নাটককে কারা সাহিত্যের পর্যায়ভূক্ত করা হয়েছে। সংস্কৃত আলঙ্কারিকেরা নাটককে প্রধানত দৃশ্য-কাব্য" বলে অভিহিত করেছেন, যদিও দৃশা ও শ্রব্য কাব্যের সমন্বয়েই নাটক গতিশীল মানবজীবনের প্রতিচ্ছবি মূর্ত করে তোলে বঙ্গমঝের ভিত্তিভূমিতে। চরিত্র, সংলাপ ও ঘটনার সংস্থাপনে ব্যক্তিমানুষের সুখ-দুঃখের পরিপাশে বৃহত্তর সামাজিক জীবনের প্রতিচ্ছা ফুটে ওঠে নাটকে। দর্শকের সঙ্গে নাটকে চরিত্রসমূহের যে নিবিড় আত্মীয়তা গড়ে ওঠে, তেমনটা গল্প-উপন্যাস বা অন্য কোনো শিল্পকরণে দেখা যায় না।

**নাটকের উপাদান চারটি--

১.কাহিনী ( Plot)

২.চরিত্র ( Caracter)

৩.সংলাপ

৪.পরিবেশ ((Environment) 

**১.কাহিনী ( Plot):

একজন নাট্যকারকে প্রথমেই তাঁর নাটকের জন্য একটি নির্দিষ্ট কাহিনী নির্বাচন করতে হবে। কাহিনীটি সামাজিক কাহিনী হতে পারে, ঐতিহাসিক কাহিনী হতে পারে, দেবতা নির্ভর কিংবা কোনো রাজ-রাজার কাহিনীও হতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন, কাহিনীটি যেমনই হোক বা যার কথাই বলা হোক, তার জীবন প্রবাহ থেকে নির্দিষ্ট ঘটনা নির্বাচন করে নাটকে তা তুলে ধরতে হবে।কাহিনীর সুষ্ঠু বিকাশের ওপরই নাটকের সাফল্য নির্ভর করে। এ কারণেই বোধ হয় অ্যারিস্টটল কাহিনীকে নাটকের আত্মা বলে অভিহিত করেছেন।

**২.চরিত্র ( Caracter):

কাহিনীর বিকাশ ও পরিণতির জন্য বা কাহিনীকে জীবন্ত ও বলিষ্ঠভাবে প্রকাশের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত চরিত্র। চরিত্রই নাটকের মূল উপাদান। মানব চরিত্রের রূপ ও প্রকৃতি বিচিত্র। যেমন: সৎ-অসৎ, সরল-জটিল, আত্মসচেতন, সাবলম্বী অথবা পরিস্থিতির কাছে আত্মসমর্পণকারী ইত্যাদি। মানবজীবন রূপায়ণের প্রয়োজনে যে কোনো ধরনের চরিত্র নাট্যকার বেছে নিতে পারেন।প্রসঙ্গে অ্যারিস্টটল (Aristotle 384-322BC) বলেন, "By character, I mean than in virtue of which we ascribe certain qualities to the agents."

(গ) সংলাপ : সাহিত্যের অন্যান্য শাখা থেকে নাটকের পৃথক অবস্থানের কারণ এই সংলাপ। সংলাপ নাটকের প্রাণ। বিভিন্ন চরিত্রের সংলাপের মধ্য দিয়ে কাহিনী অগ্রসর হয়। নাটকে জীবনের যে রূপ-স্বরূপের সাথে আমরা পরিচিত হই, তার প্রকাশের মাধ্যম নর-নারীর অভিনয়ক্রিয়তা। নাটকে নাট্যকার থাকেন সমস্ত দৃশ্যের অন্তরালে। নাটক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অভিনীত হয় এবং এ অভিনয়ে যারা অংশগ্রহণ করে, সেই কুশীলবগণ তাদের আঙ্গিক, বাচিক, আহার্য ও সাত্ত্বিক- এ চার প্রকারের ক্রিয়াদি দ্বারা নাট্যস্থিত বিষয়কে দৃশ্যময় রূপে মঞ্চে উপস্থাপিত করেন।

(ঘ) পরিবেশ : নাটকের কাহিনী, চরিত্র ও সংলাপের পরিপ্রেক্ষিতে উপযুক্ত পরিবেশ সার্থক নাটকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আসবাবপত্র, নৃত্য, গীত, আবহসঙ্গীত, শব্দ সংযোজন, আলোক নিয়ন্ত্রণ ও মকনির্মাণ কৌশলের মাধ্যমে নাটকের দৃশ্য উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়। নাটকের কাহিনী, চরিত্র বা সংলাপের সাথে পরিবেশের অসামঞ্জস্য থাকলে দর্শকের কাছে সে নাটক আনন্দদায়ক না হয়ে বরং বিরক্তিকর মনে হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উল্লিখিত চারটি অঙ্গ বা উপাদান মিলেই একটি নাটক পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। এর কোনো একটি বাদ পড়লে নাটকের শিল্পমূল্য ক্ষুণ্ন হতে বাধ্য।

সাধারণভাবে নাটকে পাঁচটি অঙ্ক রয়েছে --

১. সূচনা বা প্রারম্ভ (Exposition/Introduction):

 ২. জটিলতা ও প্রবাহ (Complication and Development);

 ৩. শীর্ষবিন্দু (The Climax) : 

৪. গ্রন্থিমোচন (Falling Action): 

৫. সমাপ্তি (Resolution).

১. সূচনা বা প্রারম্ভ (Exposition/Introduction):

প্রারম্ভ বা সুচনা বলতে একটি নাটকের সুচনা বা start বোঝায়।কোনো একটি ঘটনা বা বিষয় কে কেন্দ্র করে চিন্তিত, উদ্বিগ্ন, বা উচ্ছাস এর মাধ্যমে শুরু হবে।অথবা কোন একটি পরিবেশের মধ্যে অবস্তান করে সেই ঘটনার ব্যাপারে নানা ক্রিয়াকলাপের আবর্তন এর মাধ্যমে নাটকের শুরু হবে। যেমন - সফোক্লিস এর 'রাজাঈদিপাস' নাটকের শুরুতে, থিবি রাজ্যে মহামারী নিয়ে প্রজাকুল এর মধ্যে উদ্বিগ্নতা দেখা দিয়েছে।আর সেই কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে এমন একটি সত্য র উদঘাটন হয়,যেটার জন্য কেউ ই প্রস্তুত ছিলেন না।

 (২)জটিলতা ও প্রবাহ (Complication and Development);

ঘটনা প্রবাহ এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয়, যেখানে পরস্পর বিরুদ্ধ চরিত্রসমূহের সক্রিয় উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে দ্রষ্টব্য সমস্যার জটিলতার সৃষ্টি করা হয়।জটিলতা ও প্রবাহ (Complication and Development): নাট্যকাহিনীর ঊর্ধ্বগতি (Rising Action): এই পর্বে ‘বৃত্ত’ ও ‘উপবৃত্ত' গুলির সন্নিবেশে ঘটনাগতির ক্রমবিস্তার ঘটেছে। দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে সেকেন্দারের মৃত্যুসংবাদ ও এশিয়ার সম্রাটপদে সেলুকসের অভিষেক এই বিস্তারকে সূচিত করে। এই সঙ্গেই পাই কন্যা হেলেনের কাছে সেলুকসের ভারতগুয়ের অভীক্ষা প্রকাশ ; সৈন্যাধ্যক্ষ আন্টিগোনাসের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব; হেলেনের প্রতি আন্টিগোনাসের প্রেমনিবেদন; হেলেনের প্রত্যাখ্যান ও তার নালিশে সেলুকসের হাতে প্রথমে আন্টিগোনাস ফন্দী ও পরে রাজ্য হতে বিতাড়িত করা হয়।

৩. শীর্ষবিন্দু (The Climax) : 

তৃতীয় অঙ্কে নাট্য বিষয়ের উৎকর্ষ সংঘটিত হয়ে চরম অবস্থার সৃষ্টি করে, নাটকের মূল সমস্যা ঘটনা পরম্পরায় চূড়ান্ত রূপ প্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ এই অঙ্কটি মুলত "raising action " হিসেবে পরিচিত। এই অংশেই নাটকের সবচেয়ে বড়ো সার্থকতা পরিলক্ষিত হয়।আর নাটক একবার ই শীর্ষবিন্দুতে অবস্থান করে।পরবর্তীতে ঘটনা প্রবাহ নিচের দিকে ধাবিতো হয়।

৪. গ্রন্থিমোচন (Falling Action): 

চতুর্থ অঙ্কে গ্রন্থিমোচন, যেখানে অতি দ্রুত ঘটনাসমূহের জটিলতার নিরসন ঘটতে থাকে এবং নির্দিষ্ট পরিণামমুখী হয়।অর্থাৎ নাটক আস্তে আস্তে নিচের দিকে ধাবিত হয়।৩য় অঙ্কে থাকা চরম মুহূর্তের সমাধান এই অংশে করা হয়। 

৫.সমাপ্তি(Resolution):

পঞ্চম অঙ্কে নাট্যবৃত্তের উপসংহার বা সমাপ্তি ঘটে।

একটি রেখা চিত্রের মাধ্যমে অঙ্কগুলো দেখানো হলো -

**নাটকের ঐক্য ---

(১) ঘটনার ঐক্য (Unity of Action): নাটকে দৃশ্য সংযোজন এবং চরিত্র সমাবেশ এমনভাবে ঘটাতে হবে যাতে নাটকের লক্ষ্যবস্তুর স্বাভাবিক বিকাশ অটুট থাকে। নাটকের মূল বিষয়ের পরিস্ফুটনের জন্যই চরিত্র ও দৃশ্যসমূহের সামঞ্জস্য বিধান করতে হবে। 

(২) স্থানের ঐক্য (Unity of Place): নাটকে সংঘটিত ঘটনা স্থান প্রেক্ষিতেই ঘটে থাকে। তবে এমন কোনো স্থানের বর্ণনা নাটকে থাকবে না যেখানে নাটকের পাত্র-পাত্রীগণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চলাফেরা করতে পারবে না।

(৩) সময়ের ঐক্য (Unity of Time): নাটকের জীবনবৃত্ত যে সময়ের মধ্যে অভিনীত হয়, তার সাথে বাস্তব জীবনের ঘটনা সংঘটনের কালগত ঐক্য বিধান করতে হবে।

 **নাটকের প্রকারভেদ --

মুলত দুই প্রকারঃ

১.ট্র্যাজেডি

২.কমেডি

নাটকের প্রকারভেদ নিচে দেওয়া হলোঃ



***তথ্যসংগ্রহ--

(১)সাহিত্য তত্ত্ব-কথা[সাহিত্যের রূপ, ছন্দ, অলঙ্কার ও রসতত্ত্ব]আবুল ফজল ও রেজাউল ইসলাম।

(২)কুন্তল চট্টোপাধ্যায় -সাহিত্যের রূপ-রীতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ