মহাকাব্য (Epic):
মহাকাব্য কবিতার প্রাচীনতম শাখা। গ্রিক Epos শব্দের ইংরেজি রূপান্তর Epic মহাকাব্যের ইংরেজি প্রতিশব্দ। Epos এর প্রাচীন অর্থ ছিল ‘শব্দ’। সময়ের বিবর্তনে এই শব্দের ওপর বিভিন্ন অর্থ আরোপিত হয়ে রূপান্তরের মাধ্যমে Epic এর অর্থ হয়। আখ্যানমূলক বা বীরত্বব্যঞ্জক কবিতা।মহাকাব্য সাধারণত বস্তুনিষ্ঠ আদি-মধ্য-অন্ত-সমন্বিত বর্ণনাত্মক কাব্য। এ কাব্যের বস্তু-উপাদান জাতীয় জীবনের ঐতিহাসিক বা পৌরাণিক তথ্য; এ কাব্যের অনুপ্রেরণা অধিকাংশ সময়ই ঐশীশক্তি; এ কাব্যে মানব-দানব ও দেব-দেবীর চরিত্রের সমাবেশ ও প্রয়োজনবোধে অতিলৌকিক স্পর্শও থাকতে পারে।নানা সর্গে বা পরিচ্ছেদে বিভক্ত যে কাব্যে কোনো সুমহান বিষয় বস্তুকে অবলম্বন করে এক বা বহু বীরোচিত চরিত্র অথবা অতিলৌকিক শক্তি সম্পাদিত কোনো নিয়তি-নির্ধারিত ঘটনা ওজস্বী ভাষায় বর্ণিত হয়, তাকে মহাকাব্য বলে।
Aristotle (384-322BC) এর বিখ্যাত মন্তব্য: An epic should be based on a single action, one that is complete and whole in itself, with a begining, middle and end, so to enable the work to produce its own proper pleasure with all the organic unity of a living creature. As for its metre, the heroic heyametre has been assigned to it from experience. বাংলায় এভাবে বলা যায়, এপিক একটি নির্দিষ্ট কার্যাবলীর ভিত্তিতে রচিত হবে, যা একটি প্রারম্ভ, মধ্যভাগ ও অন্ত নিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ; এবং তা জীবন্ত প্রাণীর পরিপূর্ণ সাংগঠনিক গড়নগত ঐক্য নিয়ে তার ইন্সিত আনন্দেরই সৃষ্টি করবে। অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এর ছল হবে বীর-রসাত্মক।
মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্য ঃ
আচার্য বিশ্বনাথ কবিরাজ তাঁর 'সাহিত্য গর্পন' গ্রন্থে মহাকাব্যের নিম্নলিখিত লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্যগুলো নির্দেশ করেছেন :
১.মহাকাব্যের আখ্যান বস্তু হবে পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক। ২. মহাকাব্যের নায়ক ধীরোদাত্ত গুণ সমন্বিত কোনো দেবতা বা উচ্চবংশজাত বা নৃপতি।
৩.কমপক্ষে ন'টি ও সর্বাধিক তিরিশটি সর্গে মহাকাব্য বিভক্ত হবে। প্রতি সর্গের শেষে পরবর্তী সর্গের সূচনা থাকবে; বিভিন্ন সর্গ একই ছন্দে রচিত হবে, যদিও সর্গের শেষে অন্য ছন্দ ব্যবহৃত হবে।
৪. আশীর্বচন, নমক্রিয়া বা বস্তুনির্দেশ দিয়ে মহাকাব্যের আরম্ভ।
৫.মহাকাব্যের পটভূমি হবে ষর্গ-মর্ত্য-পাতাল প্রসারী।
৬. শৃঙ্গার, বীর ও শান্তরসের একটি হবে প্রধান ও অন্যগুলো প্রধানরসের অঙ্গিরস
৭. মহাকাব্যে প্রকৃতিজগৎ, মিলন-বিরহ, যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদির বর্ণনা থাকবে।
৮.রচনা হবে অলঙ্কার সজ্জিত ও রসভাব সম্মলিত
৯. মহাকাব্যের ভাষা হবে তেজষী ও গাম্ভীর্যপূর্ণ।
**মহাকাব্যের শ্রেণিবিভাগ :
মহাকাব্য দু প্রকার। যথা
(১) জাত মহাকাব্য (Epic of Growth)
(২) অনুকৃতি বা সাহিত্যিক মহাকাব্য (Literary Epic)
**জাত মহাকাব্য (Epic of Growth) : জাত মহাকাব্য একটা জাতি বা যুগের মর্মস্থল থেকে উদ্ভূত হয়। কোনো সুপ্রচলিত জাতীয় কাহিনীর ভেতর দিয়ে কবি সেই যুদ্ধে দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রকাশ করেন এবং সেগুলোর ভেতরসাধারণত বহু কবির রচনা সন্নিবিষ থাকে; যদিও পরিণামে একজন কবি তাঁর প্রতিভার শেষ স্পর্শ দিয়ে তাকে সম্পূর্ণতা পায় করেন। হোমারের ‘ইলিয়াদ' (Iliad) ও ওডিসি'Odyssey), বাল্মীকির রামায়ণ”, ব্যাস-রচিত 'মহাভারত'-এরূপ মহাকাব্যের উদাহরণ।
অনুকৃতি বা সাহিত্যিক মহাকাব্য (Literary Epic) : এ জাতীয় মহাকাব্য পরবর্তী কালের সৃষ্টি। জাত মহাকাব্যের মতো এগুলো অতিকায় নয়; কিন্তু এর ঘটনাবস্তু সংহত ও সুসংবদ্ধ।খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে লেখা ভার্জিলের ‘ঈনিদ’ (Aeneid). দান্তের 'ডিভাইন কমেডি’ (Divine Commiedia), জন মিল্টনের ‘প্যারাডাইস লস্ট’ (Paradise Lost ). মাইকেল মধুসূদনের 'মেঘনাদবধ কাব্য' সাহিত্যিক মহাকাব্যের স্মরণীয় উদাহরণ।
**তথ্যসংগ্রহ--
(১)সাহিত্য তত্ত্ব-কথা[সাহিত্যের রূপ, ছন্দ, অলঙ্কার ও রসতত্ত্ব]আবুল ফজল ও রেজাউল ইসলাম।
(২)কুন্তল চট্টোপাধ্যায় -সাহিত্যের রূপ-রীতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ।
0 মন্তব্যসমূহ