Hot Posts

6/recent/ticker-posts

রাজা ঈদিপাস-কাহিনী আলোচনা

 

(((রাজা ঈডিপাস কাহিনী আলোচনা ঈদিপাস নাটকের চরিত্র ঈদিপাস নাটকের লেখক সফোক্লিস রাজা ঈদিপাস নাটকের বিষয়বস্তু সফোক্লিস এর ঈদিপাস নাটক ঈদিপাসের স্রী র নাম))

**বিঃদ্র-বাংলা বিভাগের সকল পড়াশোনা পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1 

রাজা ঈদিপাস-কাহিনী আলোচনা ---

  ঈদিপাস নাটকের লেখক সফোক্লিস।ধারণা করা হয় সফোক্লিস, খ্রীস্টের জন্মের চারশতত পচানব্বই বছর আগে এথেন্সের নিকটবর্তী কলোনাস নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার লেখা রাজা ঈদিপাস নাটকটি ৪৩০/৪২৬ খ্রীস্টপূর্ব এর দিকে রচনা করা হয়েছিল। সংলাপ, চরিত্র নির্মান এবং প্লট নির্মানে তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। নাটকটির  চরিত্র গুলো হলো-

ঈদিপাস : থিবি’র রাজা,

জোকাস্টা : ঈদিপাসের স্ত্রী,

ক্রিয়ন : জোকাস্টার ভ্রাতা টিরেসিয়াস : অন্ধ ভবিষ্যত্বক্তা,

যাজক,

করিন্থীয় দূত,

থিবি'র মেষপালক,

প্রতিহারী,

রাজার পরিচারকবৃন্দ রানির পরিচারকবৃন্দ,

থিবি’র নাগরিকদের কোরাস।।

 নাটকের শুরুতেই দেখা যায় থিবির রাজপ্রাসাদের সামনে বিনীত ভঙ্গিতে বসে আছে থিবির আবালবৃদ্ধ নাগরিকগণ। নগরীতে বেশ কিছুকাল ধরে চলছে মড়ক; মারা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। শস্যক্ষেত্রসমূহ নিষ্ফলা, রমণীরা সন্তান ধারণে অক্ষম। এক বিরাট পোড়োভূমি যেন সমস্ত থিবি। প্রতিকারের উপায় অন্বেষণের জন্য তারা এসেছে তাদের শেষ আশ্রয়স্থল, তাদের রাজা ঈদিপাসের কাছে। ঈদিপাস একবার ভয়াল দানব স্ফিংক্সের জটিল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে নগরীকে রক্ষা করেছিল, এবারও হয়তো সে-ই হবে রক্ষাকর্তা। ঈদিপাস তাদের অপেক্ষা করতে বলে তার স্ত্রী জোকাস্টা'র ভ্রাতা ক্রিয়নের জন্য– ক্রিয়ন গিয়েছেন ডেলফিতে অবস্থিত আপোলোর মন্দিরে তার দৈববাণী জানতে— থিবির দুর্দশার কারণ কী আর কীই-বা তা থেকে পরিত্রাণের পথ। ক্রিয়ন ফেরেন এবং ঘোষণা করেন আপোলোর বাণী— পূর্বতন রাজা লেয়াসের হত্যাকারী এই নগরীতেই পালিত হচ্ছে এবং তার ফলে সেখানে জন্ম নিয়েছে এক ভয়াবহ পাপ। সেই পাপীকে শনাক্ত করে নির্বাসিত করাই মুক্তির একমাত্র পথ। ঈদিপাস শপথ নেয়, সে লেয়াসের হত্যাকারীকে খুঁজে বার করবেই। নাটকের মূল ড্রামাটিক আয়রনির আগমন এখানে। ঈদিপাস জানে না যাকে সে খুঁজে বের করতে চায় সেই ব্যক্তি সে নিজেই এবং সে শুধু একজন সাধারণ খুনি নয়, সে পিতৃহত্যা এবং মাতৃগমনের মতো অজাচারের পাপে পঙ্কিল। ঈদিপাসের সত্যানুসন্ধান একটি অন্ধ আবেগের মতো তাকে গ্রাস করে, এবং সাথে যুক্ত হয় তার অনমনীয়তা এবং ক্রোধ। ডেকে পাঠানো হয় ত্রিকালদর্শী অন্ধ ভবিষ্যত্বক্তা টিরেসিয়াসকে দৈবজ্ঞানের মাধ্যমে অপরাধীকে খুঁজে বের করার জন্য। টিরেসিয়াস সত্য প্রকাশ করতে দ্বিধাগ্রস্ত ও অনিচ্ছুক। এতে ক্রুদ্ধ হয় ঈদিপাস এবং অভিযোগ করে যে, ক্রিয়ন এবং টিরেসিয়াস ষড়যন্ত্র করে তাকে সিংহাসন থেকে সরাতে চাইছে। টিরেসিয়াস রুষ্ট হয়ে তার অঙুলি নির্দেশ করে ঈদিপাসের দিকে এবং বলে : 'তুমিই সে ঘৃণ্য পাপী যার পাপে থিবি

আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত... তুমি জান না তুমি কাদের সাথে বাস করছ.... ইত্যাদি। জোকাস্টা ঈদিপাসের ক্রোধকে প্রশমিত করার চেষ্টা করেন। এই বলে যে, দৈববাণী প্রায়শ সত্য হয় না, যেমন সত্য হয়নি পুত্রের হাতে লেয়াসের নিহত হবার দৈববাণী। কারণ লেয়াস তো ওই পুত্রকে জন্মের পরপরই নিক্ষেপ করিয়েছিলেন পর্বতচূড়া থেকে, আর লেয়াসের মৃত্যু ঘটে অনেককাল পর দস্যুদলের হাতে, এক নির্জন পথের তেমাথায়। ঈদিপাসের মনে পড়ে, যৌবনে থিবিতে আগমনের পথে সে এক পথের তেমাথায় এক বৃদ্ধ রাজপুরুষকে হত্যা করেছিল। এখন মৃত লেয়াসের মৃত্যুর ঘটনার সাথে ওই ঘটনার মিল দেখে সে শঙ্কিত হয়ে পড়ে। জোকাস্টা’র কথায় তার স্মরণে আসে তার নিজের জীবনের এক দৈববাণীর কথা। সেখানেও ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, ঈদিপাস পিতৃঘাতী হবে এবং মাতাকে বিবাহ করবে। সে জানত করিন্থের রাজা পলিবাস তার পিতা এবং রানি মেরোপি তার মা। দৈববাণীকে এড়ানোর জন্যেই সে পালিয়ে আসে করিন্থ থেকে। ইতিমধ্যে করিন্থের দূত এসে রাজাকে জানায়, পলিবাস মৃত। ঈদিপাস সাময়িকভাবে উৎফুল্ল হয় এই ভেবে যে তার সম্পর্কিত দৈববাণী অবশেষে মিথ্যা হল তার পিতার স্বাভাবিক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। ড্রামাটিক আয়রনির একটি অত্যুজ্জ্বল নিদর্শন এই দৃশ্য কেননা অল্পক্ষণ পরেই থিবির মেষপালকের আগমন ঘটে এবং করিন্থীয় দূতের সাথে কথোপকথনে স্পষ্ট হয় যে ঈদিপাস পলিবাসের সন্তান নয়; রাজা লেয়াস ও রানি জোকাস্টা'র সন্তান। দৈববাণীর ভয়ে লেয়াস তাকে তুলে দিয়েছিলেন মেষপালকের হাতে, হত্যা করার জন্য। কিন্তু মেষপালক সিথেরনের চারণক্ষেত্রে অন্য এক মেষপালকের (বর্তমানে করিন্থীয় দূত) হাতে লালনপালন করার জন্য তুলে দেয় শিশুটিকে। সেই পরিত্যক্ত শিশুসন্তানই ঈদিপাস। যে সত্যের অনুসন্ধান ঈদিপাসকে করে তুলেছিল দিগ্বিদিকজ্ঞানহীন, জোকাস্টা'র নিষেধসত্ত্বেও যার সন্ধানে সে ছুটেছে, সেই সত্য অবশেষে সমাগত। অপরিসীম ভ্রান্তির কুয়াশার মধ্য দিয়ে দৈবাজ্ঞা রূপলাভ করেছে, কলঙ্কিত করেছে তার জীবন। পিতৃহত্যা এবং মাতার স্বামী হিসেবে মানুষ ও দেবতার অভিশাপ, নিন্দা এবং সামূহিক বিনষ্টির মুখোমুখি হয় সে। ইতিমধ্যে জোকাস্টা ছুটে গিয়েছেন প্রাসাদাভ্যন্তরে, উদ্বন্ধনে আত্মহত্যা করেছেন। আর ঈদিপাস মৃতা জননীর পোশাক থেকে কাঁটা খুলে নিয়ে নিজের দুই চোখে বিদ্ধ করে। ক্রিয়ন এখন থিবি'র নতুন শাসক। ঈদিপাস তাঁর কাছে নির্বাসন, তার নিজেরই ঘোষিত দণ্ড, প্রার্থনা করে। এবং অবশেষে, দুই কন্যা আন্তিগোনি ও ইজমিনির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নির্বাসনে চলে যায় অন্ধ, দুঃখী ঈদিপাস।

***তথ্য সংগ্রহ --

*রাজা ঈদিপাস-সফোক্লিস৷(অনুবাদ -খোন্দকার আশরাফ হোসেন)।

*বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ