Hot Posts

6/recent/ticker-posts

পদ্মাবতী কাব্য আলোচনা / কাহিনী সংক্ষেপ


--পদ্মাবতী কাব্য আলোচনা কাহিনী সংক্ষেপ 
আলাওলের পদ্মাবতী  পদ্মাবতীর রুপ বর্ননা পদ্মাবতীর চরিত্র চিতোর রাজ্য পদ্মাবতীর স্বামী আলাওলএর কবিপ্রতিভা পদ্মাবতী কাব্যের বৈশিষ্ট্য--

**বিঃদ্র-বাংলা বিভাগের সকল পড়াশোনা পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1 

 **বাংলা সাহিত্যের একটি বিশেষ অংশ হলো অনুবাদ সাহিত্যে। মধ্য যুগে এই ধরনের সাহিত্য রচনা করা হতো।আর সেইসব অনুবাদ সাহিত্যের মধ্যে আলাওল এর পদ্মাবতী কাব্যটি অন্যতম।ঘটনা প্রবাহিত হয়েছে রাজা গন্ধর্বসেন,রত্নসেন এবং পদ্মবতী কে কেন্দ্র করে। রাজভবনে হীরামন নামে একটি অদ্ভুত শুকপক্ষী ছিল। পক্ষীটি ছিল পদ্মাবতীর অত্যন্ত প্রিয় পরাবর্তী শুককে সর্বদা তাঁর কাছে রাখতেন এবং তকের সঙ্গে সর্বপ্রকার আলাপ-আলোচনা করছেন। পদ্মাবতী : যৌবনবতী হলেন এবং তাঁর স্তূপের সংবাদ সমস্ত ভূমণ্ডলে পরিব্যাপ্ত হল। তাঁর বিয়ে হচ্ছে না দেখে হীরামণ তাঁকে বললো যে সে দেশ দেশান্তরে ঘুরে তাঁর উপযুক্ত বর খুঁজে আনবে। রাজা এ সংবাদ শুনে অত্যন্ত কুপ্ত হলেন এবং শুককে মারবার আদেশ দিলেন। পদ্মাবতী অত্যন্ত বিনয় করে তকের প্রাণ রক্ষা করলেন। কিন্তু এরপর থেকে শুক সুযোগ খুঁজতে লাগলো কোনক্রমে রাজবন ছেড়ে চলে যেতে।

একদিন পদ্মাবতী মানসরোবরে এলেন সখীদের সঙ্গে নিয়ে স্নান ও জলক্রীড়া করতে। এই সুযোগে বলে উড়ে গেল। বনের অন্যান্য পাখীরা মহামানী জ্ঞানে শুককে ভক্তি জানালো। সেই বনে এক হ্যাং এলো। ব্যাধের আগমনে সব পাখীগুলি উড়ে গেল, কিন্তু চিন্তাশীল শুক ধরা পড়লো। ব্যাধ শুককে সিংহলের হাটে নিয়ে এলো বিক্রি করতে। সেখানে চিতোরের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে এক ব্রাহ্মণ হাটে এসেছিলেন। ব্রাহ্মণ জানতে পারলেন যে, এই শুকপক্ষী অত্যন্ত জ্ঞানী এবং সুপরিত। বাহ্মণ শুককে ক্রয় করে চিতোর দেশে এলেন। চিতোরে তখন রাজা চিত্রসেনের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র রত্নসেন রাজা হয়েছেন। তকের প্রশংসা শুনে রত্নসেন লক্ষ টাকা দিয়ে হীরামণ ক্রয় করলেন।একদিন রত্নসেন শিকারে গিয়েছেন। এই অবসরে রাণী নাগমতী শুককে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সমান সুন্দরী সংসারে আর কোথাও দেখেছো কী?' একথা শুনে শুকপক্ষী হাসলো এবং পদ্মিনী রমণীগণের বর্ণনা করে বললো তোমার এবং তাদের মধ্যে দিন ও অন্ধকারের অন্তর।' রাণী তখন ভাবলেন যদি এখানে এ পাখী থাকে, তাহলে একদিন না একদিন রাজা এ শুনবেন এবং আমাকে ছেড়ে পদ্মাবতীর জন্য যোগী হয়ে গৃহত্যাগ করবেন। তিনি তাই ধাত্রীকে ডেকে শুককে হত্যা করতে আদেশ দিলেন। ধাত্রী পরিণামের কথা চিন্তা করে শুককে লুকিয়ে রাখলো। রাজা ফিরে এসে শুককে না দেখে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন। সর্বান্তে শুককে অন্তরাল থেকে তাঁর সামনে আনা হ'ল। শুক সমস্ত বৃত্তান্ত শুনালো। রাজা পদ্মাবতীর রূপের কথা শুনে উৎকণ্ঠিত হলেন। হীরামণ তখন পদ্মাবতীর রূপের একটি বর্ণ দল। বর্ণনা শুনে রাজা ব্যাকুল হলেন, অবশেষে অজ্ঞান হলেন। তাঁর হৃদয়ে এমন প্রবল অভিলাষ জাগলো যে, তিনি হীরামণকে সঙ্গে নিয়ে যোগী হয়ে পথে বেরিয়ে পড়লেন।তাঁর সঙ্গে যোগ হাজার কুমারী যোগী হ'ল। মধ্য প্রদেশের নানা দুর্গম স্থান অতিক্রম ক'রে তাঁরা অবশেষে তলিঙ্গ দিশে এসে উপস্থিত হলেন। সেখানকার রাজা গজপত্তির কাছ থেকে নৌকা যোগাড় কারে সকলের সঙ্গে সিংহল দ্বীপের দিকে প্রস্থান করলেন। ক্ষার সমুদ্র, ক্ষীর সমুদ্র, দধি সমূদ্র, উদধি সমুদ্র এবং কিলকিলা সমুদ্র অতিক্রম করে মান সমুদ্রে এসে তাঁরা পৌঁছালেন। এখান থেকে তাঁরা এলেন সিংহলম্বীপে। যোগী রত্নসেন সমস্ত যোগীদের সঙ্গে নিয়ে মহাদেবের মন্দিরে এলেন জপতপ করবার জন্য এবং পদ্মাবতীর ধ্যান করবার জন্য। হীরামণ গেল পদ্মাবতীর সঙ্গে দেখা করতে যাবার সময় রত্নসেনকে বলে গেল-বসন্ত পঞ্চমীর দিনে পদ্মাবতী এই মন্দিরে পূজা করতে আসবেন। সেদিনতুমি দর্শন পাবে এবং তোমার আশা পূর্ণ হবে। অনেক দিনের পর হীরামণকে পেয়ে পদ্মাবতী আনন্দে আকুল হলেন। হীরামণ তার পালিয়ে যাওয়ার কথা এবং পরবর্তী সব বৃত্তান্ত পদ্মাবতীকে শোনালো। তারপর বর্ণনা করলো রত্নসেনের রূপ, কুল, শৌর্য এবং ঐশ্বর্য এবং বললো 'সবদিক থেকে এ তোমার যোগ্য পুরুষ। তোমারই হয়ে সে এখানে এসেছে। পদ্মাবতী এ কথা শুনে সিদ্ধান্ত করলেন যে, তাঁকে তিনি জয়মাল্য দিবেন। সমীর দিন পূজা উপলক্ষ্য করে বসেনকে দেখতে যাবেন। এ-সমপ্ত সমাচার নিয়ে রত্নসেনের কাছে ফিরে এ

বসন্ত পঞ্চমীর দিন পদ্মাবতী সন্দ্বীদের নিয়ে মণ্ডপে এলেন। ঘুরতে ঘুরতে তিনি সেদিকেও এলেন যেদিকে ছিলেন রত্নসেন। পদ্মাবতীর চোখে চোখ পড়তেই রাজা মূর্ছিত হ'লেন। পদ্মাবতী রত্নসেনকে দেখে বুকলেন শুক যে কথা বলেছে তার কোথাও ত্রুটি নেই। তিনি মুর্হিত যোগীর কাছে এসে তাঁর গায়ে চন্দন ছিটিয়ে দিলেন। জেগে উঠে রান্না দেখলেন যে, চন দিয়ে তাঁর গায়ে লেখা আছে-"যোগী, fা পারার জন্য তুমি যোগা যোগ করনি। যখন ফলপ্রাপ্তির সময় এলো, তখনই তুমি তুমিয়ে ইলে বাজার হৃদয়ে বিরহের অনল জাগুলো। কামাকে না পেয়ে অগ্নিদাহনে তনুত্যাগ করবেন স্থির করলেন। দেবতারা ভয় পেলেন। এ অগ্নিতে সমস্ত সংসার জ্বলে যাবে। তাঁরা মহাদেব-পার্বতীকে ঢেকে আনলেন। মহাদেব কুণ্ঠরোগীর ছদ্মবেশে যোগীর কাছে এলেন এবং অগ্নিদাহনের কারণ জিজ্ঞেস করলেন। এদিকে পার্বতী সুন্দরী অঙ্গরীর রূপ নিয়ে রাজার কাছে এসে বললেন, 'আমাকে ইন্দ্ৰ পাঠিয়েছেন। তুমি পদ্মাবতীকে ভুলে যাও এবং অপরাকে গ্রহণ কর। এ কথায় রত্নসেনের মনে কোনও পরিবর্তন এলো না। পার্বতী তখন মহাদেবকে বললেন, 'রতুসেনের প্রেম ঘাঁটি।' বলেন যখন দেখলেন। যে, ছন্দবেশী পুরুষের ছায়া নেই, তাঁর দেহে মক্ষিতা বলে না এবং তাঁর চোখে পলক নেই, তখন তিনি বুঝলেন, এ ব্যক্তি মহাদেব। রত্নসেন তখন মহাদেবের পদধারণ করলেন। মহাদেক তাঁকে সিন্ধিগুটিকা দিলেন এবং সিংহল গড়ে প্রবেশের কৌশল জানিয়ে দিলেন। সিদ্ধিএটিকা পেয়ে বসেন যোগীদের নিয়ে সিংহলগড়ে উঠতে লাগে লাগলেন।

রাজা গবসেন যখন এ সংবাদ পেলেন, তখন তিনি মৃত প্রেরণ করলেন। বড়লেন দূতের কাছে পদ্মাবতী লাভের ডিপ্রায় জ্ঞাপন করলেন। দ্রুত অপমানিত হয়ে ফিরে গেল। এর মধ্যে ইরামণ রত্নসেনের সংবাদ নিয়ে পদ্মাবতীর কাছে এল এবং পদ্মাবতীর প্রেমবার্তা রচসেনকে জানালো। প্রেমবার্তা শুনে রত্নসেনের শরীরে আরো শক্তি এলো।গড়ের ভেতরে যে অগাধ কুণ্ড ছিল তার মধ্যে প্রবেশ করে ভেতরের দরজার বজ্র রূপাট মুললেন। এ সময়ে সকাল হলো এবং তিনি যোগীদের সঙ্গে বন্দী হলেন। রাজা গন্ধবনেন বিচারে সাব্যস্ত করলেন যে, এদের সবাইকে শূলে দিতে হবে। রত্নসেনের সঙ্গিগণ যুদ্ধের জন্য উৎসুক হলেন। কিন্তু রত্নসেন বললেন যে, প্রেমের পথে ক্রোধ অকর্তব্য। এদিকে এ সমস্ত সমাচার শুনে পদ্মাবতী ব্যাকুল হলেন। হীরামণ এক পদ্মাবতীকে বুঝালো যে, সেন সিদ্ধকাম পুরুষ-তাঁর মৃত্যু হতে পারে না।যখন রত্নসেনকে বন্দী করে বধ্যভূমিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন তাঁকে দেখে সকলেই বলাবলি করলো ইনি নিশ্চয়ই কোনও রাজপুত্র হবেন। এদিকে শূল প্রস্তুত হচ্ছিলো। এদিকে রহসেন নাম রূপ করছিলেন। মহাদেব যখন যোগীদের এই সঙ্কট দেখলেন, তখন তিনি এবং পার্বতী কাট এবং ভোটিনির রূপ ধারণ করে সেখানে এলেন। এর মধ্যে হীরামণ রত্নসেনের কাছে পদ্মাবতী বার্তা পৌঁছে দিল, মার মরণ- তোমার সঙ্গে ভাট অর্থাৎ মহাদেব রাজা গন্ধর্বসেনকে অনেক বুঝালেন। বললেন- এ ব্যক্তি যোগী নয়-রাজা। এ তোমার কন্যার যোগ্য নয়। এ কথায় রাজা আরও ক্রুদ্ধ হ'লেন। যখন যোগীরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন, তখন হনুমান আপন পুচ্ছে জড়িয়ে যুদ্ধের হাতীগুলোরে আকাশে ছুঁড়ে দিল। গন্ধবসেন তখন মহাদেবের পায়ে পড়লেন এবং বললেন-কন্যা আপনার, যাকে ইচ্ছে তার সঙ্গে বিয়ে দিন। এ সময় হীরামণ পাখী সকলকে শুনালো, কি করে রাজা রত্নসেন চিতোর থেকে সিংহলে এসেছেন। অনে আড়ম্বরের মধ্যে রত্নসেনের সঙ্গে পদ্মাবতীর বিবাহ,এদিকে চিতোরে বিরহিণী নাগমতী রাজার কথা ভেবে ভেবে এক বর্ষ কাটালেন। তাঁর বিলাপ শুনে পত্র-পক্ষী বিহবল হল। একদিন অর্ধেক রাত্রে একটি পাখী নাগমতীকে তাঁর দুঃখের কারণ জিজ্ঞেস করলো। নাগমতী তাঁকে রাজার কাছে পাঠিয়ে দিলেন। পাখী নাগমতীর বার্তা নিয়ে সিংহলে এলো এবং সমুদ্রের তীরে একটি গাছের ডালে বসলো। ভাগ্যক্রমে সেদিনই রাজা রত্নসেন মৃগয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে চেই বিশ্রামের জন্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন। রাজাকে দেখে পাখী নাগমতীর দুঃখের কথা এবং ডিভোরের হীন দশার কথা বর্ণনা করলো। বাসেনের মনে দেশের কথা উদয় হ'ল। তিনি চিতোরের বিষ মুহুর্তে সিংহলের রাজা তাঁকে প্রচুর সম্পদ দিলেন। পেয়ে সেনের মনে অহঙ্কার এলো। তিনি ভাবলেন, সংসারে তাঁর সমকক্ষ আর কেউ নেই।

সমুদ্রতটে যখন তিনি এলেন, সমুদ্র তখন যাকের রূপ ধারণ করে দান গ্রইলো। রাজা তখন তাকে তিরস্কার করলেন। এ সমুদ্রের মধ্যে প্রচও ফান এলো, হাহাজ ভুল পথে দক্ষিণ লতার দিকে গেল। সেখানে হিচীষণ নামক এক রাক্ষম মৎস্য শিকার করছিলো। সে রাজা এবং তার সঙ্গীদের দেখে আপন সম্ভাব্য আইয়ে ভেবে আনন্দিত হ'ল। সে রাজাকে পথ দেখাবে বলে আশ্বাস দিল। তার কথামত চলতে গিয়ে জাহাজ পৌছলো এক ভয়ঙ্কর সমুদ্রের মধ্যে। এ ভয়ানক সমুদ্রের মধ্যে যাহাজ আবর্তিত হতো লাগলো, হাতী-মোড়া মানুষ ডুনতে লাগলো। রাক্ষস সকলের দুরবস্থা দেখে আনদে নৃত্য করতে লাগলো। এ সময় এক রায়পন্থী ডানায় প্রচণ্ড শব্দ করে সেখানে উপস্থিত হল। সে রক্ষাকে নিয়ে উড়ে গেল। রাজা বসেন রাক্ষসের কাছ থেকে নিস্তার তো পেলেন কিন্তু জাহাজ খণ্ড হয়ে গেল। জাহাজের একটি ভক্তায় রাজা ও অন্য একটি তক্তায় রাণী সমুদ্রের উপর ভাসতে ভাসতে দু'দিকে চ্যালেন।ভেসে ভেসে পদ্মাবতী সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলেন যেখানে সমুদ্রের কন্যা লক্ষ্মী সখীদের সঙ্গে খেলা করছিলেন। লক্ষ্মী মূর্হিতা পদ্মাবতীকে গৃহে নিয়ে এলেন। চৈতন্য এলে পদ্মাবর্তী রত্নসেনের কথা বলে বিলাপ করতে লেন। লক্ষ্মী তাঁকে প্রবোধ দিলেন এবং আপন পিতা সমুদ্রকে বাজার সন্ধানের জন্য অনুরোধ করলেন। এদিকে ভেসে ভেসে রাজা এমন এক নির্জন স্থানে উপনীত হলেন যেখানে প্রবাল এবং অর্পূরের পাহাড় ছিল। রাজা পদ্মাবতীর জন্য অনেক বিলাপ করলেন এবং বড়ড়্গ নিয়ে হত্যা করতে উদ্যত হলেন। ব্রাহ্মণের রূপ ধারণ করে সমুদ্র তাঁর সামনে এলো এবং বললো তুমি। আমার লাঠি ধরে চক্ষু বন্ধ কর। যেখানে পদ্মাবতী আছে, আমি তোমাকে সেখানে নিয়ে যাচ্ছি।যখন রাজা ডটপ্রান্তে পৌঁছালেন, পদ্মাবতীর প্রতি রাজার প্রেমের পরীক্ষার জন্য লক্ষ্মী পদ্মাবতীর রূপ ধারণ করে এলেন। যখন লক্ষ্মী বললেন, আমি পদ্মাবতী', রাজা ঠিক জানলেন যে এ পদ্মাবর্তী নয়। অবশেষে লক্ষ্মী পদ্মাবতীর কাছে রাজাকে নিয়ে গেলেন। রত্নসেন এবং পদ্মাবতী কিছুদিনের জন্য সমুদ্রের অতিথি হলেন। পদ্মাবতীর প্রার্থনায় সন্ত্রী তার সখীদের নানা জায়গা থেকে আনালেন। যারা মরে গিয়েছিল, অমৃত পান করে তারা জীবন পেল। এভাবে সকলকে সঙ্গে নিয়ে রাজা চিতোরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। যাত্রার প্রাক্কালে সমুদ্র রাজাকে অমুল্য রত্ন দিল। রাজা সমুদ্রের কাছ থেকে “প্রলেন অমৃত, হংস, বাজপক্ষী, শাদল এবং পরশ পাথর এসব অমুল্য পদার্থ নিয়ে রয়সেন এবং পদ্মাবতী চিতোরে উপস্থিত হলেন। নাইমুর্তা এবং প্রশ্নবর্তী দুই রাণীকে নিয়ে রাজা মুখে সময় নির্বাহ করতে লাগলেন। রাজার দুই পুত্র হলো নাগমতীর গর্জে নাগসেন ও এরাবতীর গর্ভে ক্রমপ্রসেন। চিতোরের রাজসভায় রাঘবচেতন নামে এক পণ্ডিত ছিলেন যিনি ছিলেন যক্ষিণী সিদ্ধ। একদিন রাজা পণ্ডিতদের জিজ্ঞেস করলেন, দ্বিতীয়া করে? রাঘবের মুখ থেকে হঠাৎ নির্গত হল-'আজ' অন্যান্য পণ্ডিতেরা এত বাক্যে বললেন-আজ নয়, কালু হবে। রাঘবচেতন বললেন-'যদি আজ দ্বিতীয়া না হয়। তবে আমি পঢ়িত নই। পণ্ডিতেরা বললেন, রীঘর বামমাগী, সে যক্ষিণীর পূজা করে। যা ইচ্ছে করে তাই দেখাতে পারে। রাঘর যক্ষিণীর প্রভাবে সেইদিন সন্ধ্যায় দ্বিতীয়ার চন্দ্র উঠলো তখন পণ্ডিতেরা রাজাকে বললেন- 'দেখুন, যদি গতকাল দ্বিতীয়া হতো তবে আজ চন্দ্রমার কলা আরও বৃদ্ধি হতো। মিথ্যা এবং সত্যের পরীক্ষা করে দেখুন। রাঘবের অপকৌশল ধরা পড়ল এবং রাজা রত্নসেন তাঁকে নির্বাসন দিলেন।

পদ্মাবতী যখন একথা শুনলেন, তখন তিনি ভাবলেন যে, এরকম একজন গুণী পণ্ডিত অসন্তষ্ট হয়ে যাবেন এটা ঠিক নয়। তিনি পণ্ডিতকে প্রসন্ন করবার জন্য সূর্যগ্রহণের দান দেবার উদ্দেশ্যে তাঁকে ডেকে পাঠালেন। গবাজ থেকে তিনি হাতের কঙ্কণ ফেলে দিলেন। কঙ্কণ কুড়িয়ে নিতে গিয়ে রাঘবচেতন পদ্মাবর্তীতে দেখলেন, বিমোহিত হলেন এবং ভাবলেন যে, আমি দিল্লীতে গিয়ে বাদশাহর কাছে পদ্মাবতীর পে বলবো। বাদশাহ নিশ্চয়ই চিতোর স্বাক্রমণ করবেন। এভাবেই আমি প্রতিশোধ নেবো। 

এসব চিন্তা করে রাঘবচেতন প্রিনীতে পৌঁছেলেন। বাদশাহ আলাউদ্দীনকে পদ্মাবতীর কাঁকন দেখালেন এবং পদ্মাবতীর রূপের বর্ণনা করলেন। আলাউদ্দীন ব্রাহ্মণকে অনেক আপ্যায়নের সঙ্গে রাজদরবারে স্থান দিলেন এবং সাবধা নামে এক দৃত্তের হাতে রান্না করসেনের কাছে পত্র দিলেন, আমাকে পদ্মাবতী দাও, তার বিনিময়ে যত রাজ্য চাও দেবো। পত্র পেয়ে রাজা রত্নসেন অত্যন্ত কুম হলেন এবং দূতকে বিদায় দিলেন। আলাউদ্দীন চিতোরগড় আক্রমণ করলেন (আট বৎসর পর্যন্ত তিনি ডিভোরগড় ভৌন করে রইলেন, কিন্তু অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারলেন না। এ সময় দিল্লী থেকে সমাচার এলো হয়েওবাদীরা আবার তাঁর রাজ্য আক্রমণ করেছে। বাদশাহ তখন গড়ে প্রবেশ অবাধ্য, জেনে হৃপটতা করলেন। তিনি বরুসেনের কাছে সন্ধির প্রস্তাব করলেন-'পদ্মাবতীর প্রয়োজন নেই, সু থেকে তুমি যে পাঁচ অমূল্য বন্ধু পেয়েছ, তা আমাকে দাও।


রাজা স্বীকার করলেন এবং বাদশাহকে চিতোরগড়ের ভেতরে আমন্ত্রণ করলেন। রাজার দুই বিশ্বস্ত অনুচর রাজাকে অনেক বুঝালেন, বাদশাহকে বিশ্বাস করবেন না। বাজা সে কথা শুনলেন না। নীতিজ্ঞ অনুসরন্বয় তখন গৃহে প্রত্যাগমন করলেন। কিছুদিন পর্যন্ত বাদশাহের আতিথা চললো। একদিন চলতে চলতে বাদশাহ পদ্মাবতীর মহলে এলেন। সেখানে অনেক রূপসী রমণী স্বাগত ভাষণের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলো। বাদশাহ্ রাঘবকে জিজ্ঞেস করলেন, “এদের মধ্যে পদ্মাবতী কোন জন?" রাঘব উত্তরে বললো, “পদ্মাবর্তী এখানে কোথায়? এরাতো তাঁর দাসী। বাদশাহ্ পদ্মাবতীর মহলের সামনে এক স্থানে বসে। বাজার সঙ্গে সভবগ্ন খেলতে লাগলেন। সামনে এক মর্পণ রাখলেন যে যদি পদ্মাবতী গরাক্ষে দাঁড়ান তবে দর্পণে তাঁর প্রতিবিম্ব দেখতে পাবেন। কৌতূহলবশে পদ্মাবর্তী ঝরোখার কাছে এলেন আর তাঁর প্রতিবিম্ব দর্পণে পড়লো। বাদশাহ প্রতিবিধ দেখে হতচেতন হবেন।

অবশেষে বাদশাহ বিদায় নিলেন। রাজা বিদায় দেবার জন্যে তাঁর সঙ্গে সঙ্গে চললেন। গড়ের এক এক সিংহদ্বারে বাদশাহ রাজাকে এক এক উপটোকন দিলেন। সর্বশেষ সিংহয়ার অতিক্রম করার সময় ইঙ্গিতে বাদশাহ রত্নসেনকে বন্দী ক্যালেন। রত্নসেন বন্দী অবস্থায় দিল্লীতে আনীত হলেন। সেখানে এক ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে তাঁকে বন্দী করে রাখা হল। এদিকে চিতোরে হাহাকার পড়লো। দুই রাণী । দুঃখে মৃতপ্রায় হলেন। এ অবসরে রত্নসেনের শত্রুন কফলনের রাজা দেবপাল কুমুদিনী নামে এক সতীতে পদ্মাবতীর কাছে পাঠালেন। তাঁকে বললেন, “তুমি কুমুদিনী-নির্ণীয় পদ্ম। রাতের যে চন্দ্র আকাশে থাকে তোমার হৃদয়ে তার স্থিতি। যে পদ্ম-রাণী চিতোরে আছে, তুমি তা অপহরণ করে জানবে।। কুমুদিনী নানা কৌশলে পদ্মাবতীকে বশীভূত করবার চেষ্টা করলো। উচিত মত দিয়ে পদ্মাবর্তী তাকে বিতাড়িত করলেন। । এদিকে আলাউদ্দীনও এক দূতী পাঠালেন। যোগিনীবেশে দূতী রত্নসেনের সঙ্গে সাক্ষাতের ছলে পদ্মাবতীকে দিল্লী আনতে চেষ্টা করলো, কিন্তু অসফল হল।এরপর পদ্মাবর্তী গোয়া এবং বাদলের গ্রহে যেয়ে তাদের অনুরোধ করলেন রাজাকে মুক্ত করে আনতে। আলাউদ্দীন যেমন প্রতারণা করে রইসেনকে বন্দী করেছিলেন, তারাও তেমনি অপকৌশলের সাহায্যে রাজাকে মুক্ত করবে সিদ্ধান্ত করলো। যোলশত পাক্ষীর মধ্যে ষোলশত সহস্র রাজপুত যোদ্ধাকে রাখলো এবং সর্বোত্তম পান্তির মধ্যে বসালো একজন লোহারুকে। ঘোষিত হল সর্বত্র যে রাণী পদ্মাবতী ষোলশত দাসী সঙ্গে নিয়ে রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের জন্যে দিল্লী যাচ্ছেন। দিল্লী যাত্রার দিন গোৱার পত্র বাদলের স্ত্রী দ্বিরাগমন করে গৃহে এসেছে। নব বধূ তাকে যুদ্ধে যেতে নিষেধ করলো। নববধূর নিষেধ উপেক্ষা করে বাদল দিল্লী চললো। দিল্লীতে বাদশাহের কর্মচারীদের ঘুষ দিয়ে বশীভূত করলো। কেউ পান্তি অনুসন্ধান করলোনা। বাদশাহের কাছে খবর গেল যে পদ্মাবর্তী এসেছেন এবং অনুরোধ জানিয়েছেন যে, রাজার সঙ্গে প্রথমে সাক্ষাৎ করে চিতোরের রাজভামরের চাবী তাঁকে অর্পণ করতে চান। তারপর মহলে যাবেন। বাদশাহ অনুমতি দিলেন। রড্রসেনের বন্দীশালায় সুসজ্জিত পাল্কি পৌঁছল। পাল্কির ভেতর থেকে লোহার বেরিয়ে এসে বাজার বন্ধন খুললো। রাজা সশস্ত্র হয়ে নিকটে প্রস্তুত একটি ঘোড়ায় আরোহণ করলেন। এদিকে পাড়ী থেকে ষোল শত শস্থ রাজপুত্র বেরিয়ে এলো। গোরা এবং বাদল রাজাকে নিয়ে চিতোর যাত্রা করলো। আলাউদ্দীন এদের পশ্চাদ্ধাবন করলেন। গোৱা তখন এক হাজার সৈন্য নিয়ে বাদশাহকে বাধা দেবার জন্য প্রস্তুত হল। প্রচণ্ড যুক্ত হল। যুদ্ধে গোৱা হত হল। ইতিমধ্যে রত্নসেন চিতোর পৌঁছালেন। চিতোর পৌঁছেই রাজা পদ্মাবতীরকাছে দেবপালের ধৃষ্টতার কথা শুনলেন। সকালেই তিনি কুত্তলনের অভিমুখে যাত্রা করলেন। বসন এবং দেবপালের মধ্যে দ্বৈরথ যুদ্ধ হল। দেবপাল নিহত হলেন। রত্নসেন আহত অবস্থায় চিতোরে ফিরে এলেন এবং অল্পদিন পরেই প্রাণত্যাগ করলেন। মৃত্যুর পূর্বে চিতোর রক্ষার ভার বাদলের হাতে অপর করলেন, নাগমতী ও পদ্মাবতী অনুমৃতা হলেন। বাদশাহ এ সময় চিতোরে এসে পদ্মাবতীর সতী হবার সমাচার শুনলেন। বাদল চিতোর রক্ষার জন্য শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করলো। অবশেষে নিহত হলো। চিতোর দুর্গ মুসলমানের অধিকারে এলো--

"জৌহর তই সব ইস্তিরী

পুরুষ এ সংগ্রাম।

বাদশাহ গঢ় চুরা

চিতউর তা ইসলাম।।" 

আর এভাবেই পদ্মাবতী কাব্যের উপসংহার টানা হয়েছে। 

****তথ্যসংগ্রহ -আলাওল এর পদ্মাবতী(সৈয়দ আলী আহসান)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ