Hot Posts

6/recent/ticker-posts

আলালের ঘরের দুলাল উপন্যাস হিসেবে সার্থকতা আলালের ঘরের দুলাল প্রশ্ন উওর

 

--আলালের ঘরের দুলাল উপন্যাস হিসেবে সার্থকতা আলালের ঘরের দুলাল উপন্যাস হিসেবে সার্থকতা বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস প্যারীচাঁদ মিত্র, আলালের ঘরের দুলাল এর চরিত্র বাংলা উপন্যাস আলালের ঘরের দুলাল উপন্যাস আলোচনা আলালের ঘরের দুলাল সারাংশ আলালের ঘরের দুলাল প্রশ্ন উওর, আলালের ঘরের দুলাল এর কাহিনী 

**বিঃদ্র-বাংলা বিভাগের সকল পড়াশোনা পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1 

***প্যারীচাঁদ মিত্র (১৮১৪-১৮৮৩) বিশুদ্ধ সাহিত্য চর্চার মনোভাব নিয়ে বাংলা সাহিত্যের জগতে প্রবেশ করেন। তিনি তার সাহিত্যে সমাজ,মানুষ, সামাজিকতা র বাস্তব চিত্র তুলে ধরতেন।  সমাজের নানা অসংগতি তিনি তার সাহিত্য কর্মে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। তিনি 'মাসিক' পত্রিকায় টেকচাঁদ ছদ্মনামে 'আলালের ঘরের দুলাল (১৮৫৮) প্রথম বর্ষের সপ্তম সংখ্যা (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৫) থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়ে তৃতীয় বর্ষের ১১ সংখ্যা পর্যন্ত ২৬ অধ্যায় প্রকাশিত হয়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন সম্পূর্ণ উপন্যাসটি এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। গ্রন্থাগারে উপন্যাসটি সম্পূর্ণ অবস্থায় প্রকাশিত হয়। বাংলা গদ্য সাহিত্যের ইতিহাসে এ উপন্যাসটির গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি বিদ্যাসাগরীয় সংস্কৃতবহুল গদ্যভাষার পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত হালকা গদ্যে লিখেছেন, যদিও তাঁর পদ্য সাধু।  এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র গুলো হলো--

মতিলাল,ঠকচাচা,রামবাবু,বাঞ্চারাম,বক্রেশ্বর, বরদা,বেণীবাবু ইত্যাদি। 

   বঙ্কিমচন্দ্র সর্বপ্রথম প্যারীচাঁদ মিত্রকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম ঔপন্যাসিক বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। সাহিত্য সম্রাট বঞ্চিমচন্দ্র তাঁর 'Bengali literature' শীর্ষক রচনায় মন্তব্য করেছিলেন প্যারীচাঁদের আলালের ঘরের দুলাল' গ্রন্থখানি "First Novel in Bengali Language" প্যারীচাঁদ মিত্র তাঁর ইংরেজি ভূমিকায় দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন বাংলাভাষায় 'আলালের ঘরের দুলাল' প্রথম উপন্যাস। ভূমিকার কতিপয় অংশ নিজে উল্লেখ করা হলো :


The above original Novel in Bengali being the first of the kind, is now submitted to the public with considerable diffidence. It chiefly treats the pernicious effects of allowing children to be improperly brought up....and is illustrative of the condition of the Hindu Society, manners, customs etc, andpartly of the state of things in the Moffussil.


উপরের এই উদ্ধৃতিগুলো বিশ্লেষণ করলে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় তা নিম্নরূপ :  

ক) বাংলা সাহিত্যে তিনি প্রথম এ গৌরবের অধিকারী। 

খ) মৌলিক উপন্যাস সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন। 

গ) তিনি তাঁর উপন্যাসের বিষয়বস্তু গ্রহণ করেছেন স্বসমাজের আচার-আচরণ রীতিনীতি থেকে।।

ঘ) তাঁর উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে।

(ঙ) সন্তানদের সঠিকভাবে পরিচর্যা না করার অশুভ ফল।


'আলালের ঘরের দুলাল' উপন্যাস শুধু বাঙালি পাঠক সমাজকে লক্ষ্য করে রচিত হয়নি; বরং যে-সব বিদেশী বাংলাভাষার বাগবৈশিষ্ট্য ও হিন্দুদের গার্হস্থ্য জীবন সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তাদের জন্যেও। এ কারণেই ড. সুকুমার সেন বলেছেন—“শুধু জনসাধারণ, বিশেষ করিয়া স্ত্রীলোকদিগের, পড়িবার জন্যই মাসিক পত্রিকার প্রস্তাবগুলি চলিত শব্দপূর্ণ হালকা ভাষায় লেখা হয় নাই, বাঙলা চলতি ভাষা শিক্ষার্থী ও বাঙালী সমাজের জ্ঞানলাভেঙ্গু সাহেবদিগের ব্যবহারে লাগা ও কতকগুলি প্রস্তাব রচনার বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল।"

এ গ্রন্থে বাংলা “ভূমিকা'য় লেখক বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোনো আলোকপাত করেননি। এই গ্রন্থে রচনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেছেন—“অন্যান্য পুস্তক অপেক্ষা উপন্যাসাদি পাঠ করিতে প্রায় সকল লোকেরাই মনে স্বভাবত অনুরাগ জন্মিয়া থাকে এবং যে স্থানে এতদেশীয় অধিকাংশ লোক কোন পুস্তকাদি পাঠ করিয়া সময় ক্ষেপণ করিতে রত নহে, সে স্থানে উক্ত প্রকার গ্রন্থের অধিক আবশ্যক। এতদ্বিবেচনায় এই ক্ষুদ্র পুস্তকখানি রচিত ‘আলালের ঘরের দুলাল' যথার্থ উপন্যাসের সকল লক্ষণ অঙ্গীভূত করেই


বাংলাসাহিত্যের অঙ্গনে আবির্ভূত হয়েছে। প্যারীচাঁদের এ উপন্যাসের যে-সব বৈশিষ্ট্য


দেখা যায় তা নিম্নরূপ :


ক) এই উপন্যাসে সমস্যার প্রথম সাক্ষাৎ পাওয়া যায়।


দেশস জীবনপটের বিস্তৃত পরিচয় পাওয়া যায়।


৭) প্রকৃতি ও মানুষের প্রথম ব্যবহার এখানে পাওয়া যায়।


(ঘ) সর্বোপরি জীবন সম্পর্কে অসাধারণ মানসদৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায়। এ উপন্যাসে বৈদ্যবাটীর ধনাঢ্য বুদ্ধিসবহু বাবুরাম বাবুর সৎ শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে বোধহীনতা ও নিজের নৈতিকতার অভাবের জন্য বড় ছেলে মতিলাল কুসঙ্গে পড়ে সমাজ বিগর্হিভ নানা কুকর্মে লিপ্ত হয়। কলকাতার স্কুলে পড়ার সময় অসৎ সঙ্গীদের সাহচর্যে জুয়াখেলা ও মারপিট করার জন্য মতিলালের গ্রেফতার ও ঠকচাচার মিথ্যা সাক্ষ্যে মুক্তিলাভ, এক বিবাহিত অজ্রকন্যর ওপর সঙ্গীসহ মতিলাল অত্যাচার করতে উদ্যত হলে তার মায়ের বাধাদান, মতিলালের বিবাহ ও বাবুরামের মৃত্যু। পিতার মৃত্যুতে বিষয়সম্পত্তির অধিকার লাভের পর মতিলালের বাবুগিরি, মার মৃদু উৎসনায় ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁকে প্রহার, মায়ের কন্যাসহ গৃহপরিত্যাগ, মতিলাল বাড়ি ঢুকতে নিষেধ করায় তার ছোট ভাই রামলালের দেশান্তর গমন, কুসঙ্গীদের পরামর্শে একজন সাহেবের মুৎসুদ্দিবনে সওদাগিরি ব্যবসায়ের জন্য মতিলাপের কলকাতায় অবস্থান এবং নিজের শিক্ষাহীনতা ও বুদ্ধি বিবেচনার অভাবের জন্য প্রচুর ধার দেনা হলে বৈদ্যবাহিনীতে পলায়ন। বাবুদের যশোরে তালুক থেকে অর্থলাভের আশায় মতিলালের দলবলসহ যশোরে অবস্থান এবং তার অযোগ্যতার সুযোগ নিয়ে নায়েবের প্রবঞ্চনা ও নীলকর সাহেবের সঙ্গে সংঘর্ষে বিপর্যস্ত হয়ে যশোর ত্যাগ, বাবুরামের ওপরে মতিলালের পরামর্শদাতা বাঞ্ছারামের তার উত্তমর্ণ হেরম্ববাবুকে প্ররোচিত করে বৈদ্যবাটীর বাড়ি অধিকার এবং মতিলালের স্ত্রী ও বিমাতাকে বিতাড়ন, মতিলালের দেশভ্রমণ ও বানারসীতে আগমন, খারাপ সঙ্গীদের দ্বারা পরিত্যক্ত হয়ে ও দুর্গতিতে পড়ে তার হৃদয়ের পরিবর্তন এবং নিজের সুকর্মের জন্য অনুতাপ একজন ধর্মনিষ্ঠ ও শাস্ত্রজ্ঞ প্রাচীন পুরুষের উপদেশে মতিলালের মধ্যে ঈশ্বরভক্তির উল্লেখ। অবশেষে কাশীতেই মা, বোন, ছোট ভাই রামলাল, বিমাতা ও নিজের স্ত্রীর সঙ্গে মিলন এবং বৈদ্যবাটীতে ফিরে গিয়ে সকলের সঙ্গে পরমসুখে জীবনযাপন 'আলালের ঘরের দুলাল'-এর মূল কাহিনী এই। এই উপন্যাসে যে আখ্যান উপস্থাপিত হয়েছে তাতে নতুনত্ব তেমন কিছু নেই, আছে গভীরতা। তবুও নিপুণ কথনভঙ্গি এর মাধ্যমে এই আখ্যানটিকে লেখক মনোগ্রাহী করে তুলেছেন। নায়ক মতিলাল যে-সব ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে বিজড়িত, তাদের মধ্যদিয়েই গল্পের কাঠামো তৈরি হয়েছে, আর স্থান হলো বৈদ্যবাটী, বালী, কলকাতা, যশোর ও বানারসী।


সৎ শিক্ষা, প্রকৃত ধর্মবোধ বা ঈশ্বরভক্তি ও নৈতিকতা, দেহ-মনের যথোপযুক্ত অনুশীলন এবং যে-সমস্ত বিষয় বাস্তবজীবনে কাজে লাগে তাদের ভালোভাবে শিক্ষা করা এই ভিত্তিতেই একজন মানুষ সুষ্ঠুভাবে বিষয়কর্মসহ অন্যান্য কাজ করতে পারে। সমাজের কল্যাণসাধনে এবং নিজের পরিবারের সকলের প্রতি কর্তব্য পালনে নিজের জীবনে সার্থক করে তুলতে সক্ষম হয়—এটাই আলালের ঘরের দুলালের থিম।


উপন্যাসটিতে ছড়ানো কাহিনী কথকের মন্তব্যগুলো থেকে আমরা থিমের ছয়টি মোটিফকে নির্দেশ করতে পারি—

১.-- সৎ স্বভাব, সৎ চরিত্র, সুবিবেচনা, ছাত্রদের বয়ঃক্রম অনুসারে মনের শক্তি ও ভাব সকল সমান বলে চালিত করা এবং যে যে বিষয় কাজে লাগাতে পারে তাদের ভালো করে শিক্ষাই হলো লেখাপড়ার তাৎপর্য।

২. --এই শিক্ষার জন্য বাপ-মার ও শিক্ষকের যত্নের দরকার এবং ছেলেকে সৎ করতে হলে আগে বাবার সৎ হতে হবে।

৩..,--- প্রড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলা দরকার।  

৪.. ---সঙ্গ দোষ সব থেকে ভয়ানক।

৫.--- দুঃখভোগ না হলে নম্রতা অর্জন করা যায় না, আর নম্রতা না থাকলে নিজেরদোষগুণের বিচার শোধন কখনোই সম্ভব হয় না।

৬..---, ঈশ্বরভক্তি থেকেই সহিষ্ণুতা, অভিমানশূন্যতা, দীনদরিদ্রদের প্রতি করুণনীতি ঈশ্বরের প্রিয় কর্মের প্রতি আসক্তি ও প্রিয়কর্মে বিতৃষ্ণা, আত্মগোপন সন্ধান, পিতা-মাতা ও পরিবারের অন্যান্য সকলের প্রতি স্নেহ-মমতা প্রভৃতি সৎগুণের বিকাশ হয়।

এই উপন্যাসের বিষয়বস্তুতে আমরা 'টমাস রীড', 'ড্যুগাল্ড স্টুয়ার্ট' প্রভৃতি স্কটিশ দার্শনিকদের নৈতিকতত্ত্বের প্রতিফলনও লক্ষ করি। স্কটিশ দার্শনিকদের নৈতিক দর্শনে শিক্ষাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে। এই উপন্যাসের থিমে বা শিক্ষাচিন্তায় মূল ভিত্তিরূপে ঈশ্বর চিন্তার উল্লেখ রয়েছে। এই উপন্যাসের বীমে বাল্যকালে পিতার ভূমিকা ও সঙ্গ যে প্রভাব বিস্তার করে আমরা উল্লেখ করেছি। এই উপন্যাসের থিমে বাল্যকালে পিতার ভূমিকা ও সঙ্গ যে প্রভাব বিস্তার করে আমরা উল্লেখ করেছি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ