(দেবতা জিউস এর কন্যাগন
প্যালাস এথিনা (মিনার্ভা)
আফ্রোদিতি ভিনাস আর্মেটিস ডায়ানা
অ্যাথিনা জিউসের কন্যা
গ্রিক পুরানের বিখ্যাত তিন দেবী)
**প্যালাস এথিনা (মিনার্ভা)--
এথিনা (Athena) শুধুমাত্র জিউসের কন্যা। তাঁর কোনো গর্ভধারিণী জননী নেই। পূর্ণবয়স্কা এবং শস্ত্রশোভিতা এথিনা পিতা জিউসের মস্তিষ্ক থেকে উপজাত হন। ইলিয়াডে রয়েছে তাঁর সম্পর্কে আদিতম বর্ণনা : তিনি প্রচণ্ড এবং নির্মম যুদ্ধদেবী) অন্যান্য কাহিনীতে অবশ্য এথিনা রাষ্ট্র এবং গৃহকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে বাচানোর জন্যে রণমূর্তিতে আবির্ভূত হন। তিনি মূলত নগরের দেবী, সুসভ্য জীবনের রক্ষাকর্ত্রী এবং কারুশিল্প ও কৃষির অধিষ্ঠাত্রী দেবতা। তিনিই ঘোড়ার লাগামের আবিষ্কর্ত্রী, কেননা তিনিই ঘোড়াকে পোষ মানিয়েছেন যাতে মানুষরা তাঁকে ব্যবহার করতে পারে।
জিউসের প্রিয় সন্তান এথিনা। জিউস তাঁকে বহন করতে দিয়েছেন তার ভয়াবহ ধনুক, তাঁর ঢাল এবং তাঁর বিধ্বংসী মারণাস্ত্র বজ্র। এথিনার জন্য সর্বাধিক ব্যবহৃত বিশেষণটি— হলো 'ধূসরলোচনা' অথবা, কখনও কখনও, “চমকানো অক্ষিবিশিষ্টা”। তিনজন অবিবাহিতা দেবীর মধ্যে তিনি প্রধানা এবং এজন্য তাঁর নাম “কুমারী”, পার্থেনস্। তাঁর মন্দিরের নাম, অতএব, পার্থেনন। পরবর্তী কবিতায় এথিনার বিচরণ জ্ঞান, বিচারবুদ্ধি এবং পবিত্রতার প্রতিমূর্তি হিসেবে।
**আর্টেমিস (ডায়ানা)---
তাঁকে সিনৃথিয়াও বলা হয় ডেলস্-এ অবস্থিত মাউন্ট সিনথুস্ তাঁর জন্মস্থানের নামানুসারে।আর্টেমিস (Artemis) হলেন (আপোলোর যমজ বোন। জিউস এবং লেটোর সন্তান অলিম্পাসের তিনজন কুমারী দেবীর অন্যতমা তিনিঃ স্বর্ণময়ী আফ্রোদিতি, যিনি সমস্ত সৃষ্টিকে উদ্বেল করেন প্রেমে, তিনিও দোলাতে পারেন না তিনটি হৃদয় : একজন পৃতকুমারী ভেস্টা, একজন ধূসরলোচনা এথিনা যার ভালোবাসা শুধু যুদ্ধ আর কারিগরদের কারুকাজ, তৃতীয়জন আর্টেমিস, বনস্থলীর প্রেমিকা তিনি এবং পর্বতগাত্রে বন্যপ্রাণীর পশ্চাদ্ধাবনের) আর্টেমিস বন্যপ্রাণীর দেবী, দেবতাদের প্রধানা শিকারী, নারীর জন্য কাজটি যদিও একটু অদ্ভুত। উত্তম শিকারীর মতোই তিনি শাবকদের রক্ষায় তৎপর; তিনি শিশিরস্নিগ্ধ যৌবনের রক্ষাকর্ত্রী হিসাবে সর্বত্র পূজিত। তা সত্ত্বেও, পুরাণ কাহিনীসুলভ স্ববিরোধিতাও লক্ষ্যনীয় তাঁর মধ্যে। এই দেবী আর্টেমিসই আটকে দিয়েছিলেন ট্রয়গামী গ্রীকদের নৌবহর, আর দাবী করেছিলেন কুমারী কন্যার রক্ত। (যতক্ষণ না আগামেমনের কন্যা ঈফিজেনিয়াকে উৎসর্গ করা হয় তাঁর বেদীতে ততক্ষণ আটকে রেখেছিলেন তিনি ঐ নৌবহর।) অন্য অনেক কাহিনীতে আর্টেমিস হিংস্র এবং প্রতিশোধপরায়ণা। অন্যদিকে কোনো নারী যখন দ্রুত এবং কষ্টহীন মৃত্যুবরণ করে তখন বলা হয় যে দেবী আর্টেমিস তাঁর রূপোলি তীর দ্বারা তাকে বধ করেছেন।
ফীবাস যেমন সূর্য, আর্টেমিস তেমনি চন্দ্র; তাঁকে বলা হয় ফিবি (Phoebe) এবং সেলিনি (Selene), লাতিন ভাষায় লুনা (Luna)। এর কোনো নামই আদিতে তাঁর ছিল না। ফিবি ছিলেন একজন টাইটান অর্থাৎ আদি-দেবীদের একজন। সেলিনিও ছিলেন তাই চন্দ্ৰদেবী, কিন্তু আপোলোর সাথে সম্পর্কিত নন। তিনি ছিলেন সূর্য দেবতা হেলিয়সের ভগ্নি, যার সাথে আপোলোকে গুলিয়ে ফেলা হয়ে থাকে।
পরবর্তী কাব্যকাহিনীতে আর্টেমিস্কে একাত্ম ভাবা হয় হেকাটের (Hecate) সাথে। তিনি ত্রিরূপিণী দেবী : আকাশে তিনি সেলিনি, পৃথিবীতে আর্টেমিস্ এবং পাতালে। হেকাটে। হেকাটে হলেন অমাবস্যার দেবী, যখন কালো রাত্রির খামে আকাশের চাঁদ থাকে ঢাকা। হেকাটেকে অন্ধকারের যাবতীয় কর্মের সাথে যুক্ত ভাবা হয়। তিনি গোলকধাঁধারও দেবী, যে গোলকধাঁধা অশুভ যাদুবিদ্যার ভুতুড়ে স্থান। তিনি ভয়ানকা দেবী একজন :
""নরকের দেবী হেকাটে
যে কোনো একগুঁয়ে জিনিষকে স্বশক্তিতে কাটে।
ঐ শোন শোন ! তাঁর কুকুরগুলো চিৎকার করছে শহর জুড়ে। যেখানে তিন রাস্তা এসে মিলেছে, সে দাঁড়িয়ে সেই মোড়ে।""
এটি একটি আশ্বর্য রূপান্তরই বটে। কোথায় সেই সুন্দরী শিক্ষারী সেবী তিনি বনভূমিে ছুটে বেড়াচ্ছেন; কোথায় সেই চন্দ্রদেবী যিনি কিন্ধ আলোকে সুন্দর করে তুলে চরাচর কোথায় সেই কুমারী দেবী যার জন্যে --
"যে কেউ আত্মার দিক দিয়ে পবিত্র পুরোপুরি সেই তুলতে পারে পত্রালি, পুষ্প এবং ফলের সম্ভার। অসতী যে, সে কখনও নয়।"
আর্টেমিসের মধ্যে সুতরাং আমরা দেখি ভালো এবং মদের অনিশ্চয় সহাবস্থান, যা অন্য সকল দেবদেবীর মধ্যেই বর্তমান। আর্টেমিসের কাছে পবিত্র সাইপ্লেন বৃক্ষ, সদ বন্যপ্রাণী বিশেষত মৃগ।
***আফ্রেদিতি (ভিনাস)--
(আফ্রোদিতি (Aphrodite) প্রেম এবং সৌন্দর্যের দেবী। মানুষ এবং দেবতা সবাইকে তিনি করেছেন মোহিত। তিনি সুহাসিনী, হাস্যপরায়ণা; কখনও তিনি বিদ্রূপের হাসিতে বিন্ধ করেন তাদের যাদের তিনি ছলনায় জয় করেছেন। অপ্রতিরোধ্য দেবী তিনি যাঁকে দেখে মুনির ধ্যানভঙ্গ হয়, জ্ঞানীরও বুদ্ধিনাশ ঘটে।
ইলিয়াডে তিনি জিউস্ এবং ডিওনি'র কন্যা, কিন্তু পরবর্তী কাব্যকাহিনীতে তিনি সমুদ্র ফেনা থেকে উত্থিতা এবং তাঁর নামের অর্থও তাই। গ্রীক ভাষায় 'আফ্রোস' অর্থ সমুদ্রের ফেনা। এই সাগরিকার জন্মস্থান সিথেরা, যেখান থেকে ঢেউয়ে ভেসে ভেসে আসেন সাইপ্রাসে ! দুটো দ্বীপই তাঁর কাছে পবিত্র এবং প্রায়শ তাকে ডাকা হয় সাইথেরিয়া অথবা সাইপ্রীয় নামে।
হোমারের একটি স্তবগানে আফ্রোদিতি-কে ডাকা হয়েছে। “সুন্দরী, স্বর্ণময়ী দেবী" নামে, এবং বলা হয়েছে।
বোমনরা একই রকম সপ্রশংস বর্ণনা লিখেছে ভেনাসের। তিনি এলে সৌন্দর্য আসে, বাতাস পালায় দূরে এবং অন্তর্হিত হয় ঝঞাবাহী মেঘদল: সুগন্ধী পুষ্পে শোভিত হয়। পৃথিবী; সমুদ্রের ঢেউরা হেসে উঠে। তাঁর চটুল গতির ছন্দে জ্বলে ওঠে উজ্জ্বল আলো। তাঁর বিহনে নেই কোনো আনন্দ, নেই কোনো সুন্দর কোথাও। কবিরা তাঁর এমনতরো ছবি আঁকতেই ভালোবাসেন।
কিন্তু আফ্রোদিতির ভিন্ন একটি চিত্রও আছে। ইলিয়াড মহাকাব্যে, যেখানে বিষয় হলো বীরদের সংঘাত, স্বভাবতই তাঁর ভূমিকা অনুজ্জ্বল। ঐ কবিতায় তিনি নরম, দুর্বল এক দেবী যাকে আক্রমণ করতে মরণশীল মানবেরাও ভীত নয়। পরবর্তী কাব্যকাহিনীতে আফ্রোদিতি প্রতারক এবং বিদ্বেষভাবাপন্ন : মানুষের উপর তিনি তাঁর বিধ্বংসী ও মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করেন।
বেশিরভাগ গল্পে আফ্রোদিতি স্বর্গের কারিগর দেবতা, কদাকার ও পঙ্গু, হেফ্যাসটুস্-এর পত্নী। তাঁর বৃক্ষ হলো মার্টল নামের চিরহরিৎ পুষ্পলতা) তাঁর পাখি (পায়র), এবং, কখনও কখনও, চড়ুই ও রাজহাঁস।
( তথ্য সংগ্রহ - চিরায়ত পুরাণ-খন্দকার আশরাফ হোসেন।)
0 মন্তব্যসমূহ