(মেডুসা সর্পকেশিনী মেডুসা মেডুসা কে মেডুসার কাহিনী মেডুসা জীবন কাহিনি মেডুসার ঘটনা মেডুসার দ্বীপ মেডুসার বর্ণনা)
**বিঃদ্র-বাংলা বিভাগের সকল পড়াশোনা পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1
***সর্পকেশিনী মেডুসা ---
পৃথিবীতে যতো গুলো যুদ্ধ হয়েছে তার মধ্যে ট্রয় এর যুদ্ধ অন্যতম।ট্রয় নগরীর ধ্বংসের মুল কারণ ছিল এই যুদ্ধ.।যুদ্ধ কতটা টা ভয়াবহ ভাবে একটি নগর সভ্যতা ধ্বংস করে দিতে পারে তার ই উতকৃষ্ট উদাহরণ এই ট্রয়ের যুদ্ধ। এঐ যুদ্ধের আগে যে সকল চরিত্র পাওয়া গিয়েছিলো, তার মধ্যে সর্পকেশিনী মেডুসা অন্যতম।দেবতা জিউস তার সন্তান কে ভাসিয়ে দিলে সিন্ধুকটি চোখে পড়ল এক দরিদ্র ভালোমানুষ জেলের নাম ডিক্টিস । সিন্ধুক ভেঙে মা ও শিশুকে উদ্ধার করল ডিকটিস, নিয়ে এল তার স্রীর কাছে। । তার স্ত্রী একইরকম ভালোমানুষ। নিঃসন্তান জেলে-দম্পতি ডানা শিশুপুত্রকে আপন করে নিল।
বহুদিন কেটে গেল সেই দ্বীপে। বড় হল পারসিউস, বেছে নিল ধীবরের ডানায়েও খুশি, কারণ অন্তত নিরাপদ থাকবে তার ছেলে। কিন্তু তবুও এল বিপদ,একেবারে অচিন্তিত পথে।
ঐ ছোট দ্বীপের রাজা পলিডেটিস্ ছিল আসলে ধীবর ডিক্টিসের ভাই। সে খুব নির ও অত্যাচারী। দীর্ঘ দিন সে ডানায়ে আর তার পুত্রের খবর জানত না। কিন্তু একর যখন তার চোখ পড়ল ডানায়ের ওপর, তখনই ঘটল বিপদ। পুত্র পারসিউস বর্ণিত ততদিনে পূর্ণযুবক, ডানায়ে তখনও অনিন্দ্যসুন্দরী ও আকর্ষক দেহবল্লরীর অধিকারিক প্রেমে পড়ল পলিডেটিস্ । নিজের ক'রে পেতে চাইল ডানায়ে-কে। কিন্তু পারসিউসার গ্রহণ করতে রাজী হল না সে। রাজা ফন্দি আটলো কী করে পারসিউসকে মেরে ফেলা যায়।
কাছেই একটি দ্বীপে বাস করত গর্গনের তিন কন্যা, তিন ভয়ঙ্কর দানব (Demogorgons)। তাদের ভয়াবহ ক্ষমতার কথা বিদিত ছিল সকলের। এই তিন দানবীর একজনের নাম মেডুসা (Medusa) : তার মাথায় চুলের পরিবর্তে অসংখ্য কেউটে সাপ। যে কেউ তার চোখের দিকে তাকালে সাথে সাথে রূপান্তরিত হয়ে হয় পাথরে। কবির ভাষায় :
""গর্গনের তিন মেয়ে, চুলে ওড়ে সাপের ছোবল
পাখাওয়ালা দানবীরা, মানুষের ভয়াল দুশমন। নেই কোনো সাহসী মানুষ যে একবার ওদের দেখেও
টেনে নেবে পৃথিবীতে প্রাণের নিঃশ্বাস।""
পলিডেটাস ঐ তিন দানবীর গল্প করল পারসিউসের কাছে এবং কথায় কথায় এমনও বলল যে, কেউ যদি ওদের একজনের মাথা কেটে এনে দিতে পারে তবে সেই হবে তার জন্য সবচেয়ে বড় উপহার। রাজা নিমন্ত্রণ করল বন্ধুবান্ধবদের ভোজসভায়। পারসিউস্ও বাদ পড়ল না। রাজাকে কতরকম উপহার উপঢৌকন দিল অভ্যাগত অতিথিরা। কিন্তু পারসিউসের দেয়ার মত কিছু নেই। তরুণ এবং অহংকারী পারসিউস মরমে মরে যেতে লাগল। অবশেষে উঠে দাঁড়াল পারসিউস এবং উপস্থিত সবাইকে
উদ্দেশ করে বলল, “আমি রাজাকে এমন উপহার দেব যা এখানকার সকল সামগ্রীর চেয়ে মূল্যবান। আমি মেডুসার কাটা মুণ্ডু এনে হাজির করব রাজার সামনে।” সামান্যতম বুদ্ধি যার আছে, সে এরকম ভয়াবহ সংকল্প করতে পারে না। কোনো মানুষের পক্ষে মেডুসাকে হত্যা করা কল্পনার বাইরে। আহত অহংবোধ পারসিউসকে দিয়ে এমন অসম্ভব প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিল।
কিন্তু না। অন্তত দু'জন দেবতা অলিম্পাস্ চূড়া থেকে লক্ষ্য রাখছিলেন পারসিউসের উপর। এদের একজন পত্রবাহক দেবতা হার্মিস; অন্যজন দেবী এথিনা। পারসিউস তার মাকে জানাতে সাহস করল না তার সংকল্পের কথা। একটি জাহাজ নিয়ে সরাসরি চলে গেল ডেল্ফিতে আপোলোর মন্দিরে, জানার জন্য, কোথায় রয়েছে ঐ তিন গর্গন নিষ্ঠুর দানবী। ডেল্ফির বাসিদ্ধারা তেমন কিছুই বলল না পারি উস্কে, শুধু বলল খুঁজে দেখতে এমন দেশ, যেখানে মানুষেরা শস্যদেবী ডিমিটারের সোনালী দানা (গম, যব ইত্যাদি) খায় না, তারা বরং একর্ন (ওক্ গাছের মোচাসদৃশ ফল) খেয়ে বাঁচে। তো, পারসিউস্ পৌছাল ওক্ গাছের দেশ ডোডোনায় (Dodona) ; সেখানে ওক্ গাছেরা কথা বলে। তারা পারসিউসকে বলে, “কোথায় সেই গর্গনদের দেশ তা আমরা জানি না, তবে যে দেশে মানুষ একর্ন খেয়ে বাঁচে সে দেশের সন্ধান তোমাকে দিতে পারি।” গাছেরা তাকে আরো জানায় যে, পারসিউস্ এখন দেবতাদের রক্ষণাধীন রয়েছে।পথ হাঁটে পারসিউস। দীর্ঘ সেই পথ। অবশেষে সে দেখা পায় এক অদ্ভূত এবং অত্যন্ত সুদর্শন এক তরুণের। হেসিয়ড, পিন্ডার ছাড়াও অনেক কবি বর্ণনা দিয়েছেন সেই সুশ্রী ও সুগ্রীব যুবার। তরুণের মুখমণ্ডল সদ্যগজানো হালকা লোমরাশিতে আবৃত ; এই নেই যৌবনের উন্মেষকাল যখন মনে হয় পৃথিবী কত সুন্দর। রমণীমোহন, কন্দর্পকান্তি ঐ যুবার হাতে একটি স্বর্ণদণ্ড, যার এক প্রান্তে সংযুক্ত দুটি পাখা; তাঁর শিরোভূষণটিও পক্ষযুক্ত; তাঁর পায়ে পাখাওয়ালা চটি। তাঁকে দেখেই আশার সঞ্চার হলো পারসিউসের মনে : ইনি ভ্রমণকারীদের পথপ্রদর্শক ও সর্বমঙ্গলের দেবতা হার্মিস না হয়ে যান না।সেই জ্যোতির্ময় পুরুষ পারসিউসকে পরামর্শ দিলেন : মেডুসাকে আক্রমণ করার আগে নিজেকে অস্ত্রসজ্জিত করতে হবে, এবং সে অস্ত্র আছে উত্তর দেশের জলপরীদের (nymphs) দখলে। জলপরীদের ঠিকানা জানতে প্রথমে যেতে হবে ‘ধূসর রমণীকুল' এর কাছে; তারাই একমাত্র পথের নিশানা দিতে পারে। কোথায় থাকে এই ধূসর রমণীরা? তারা থাকে এমন একটি দেশে যেখানে নিরন্তর গোধূলির আবছায়া। সূর্যের আলোক কখনো পৌছায় না সে দেশে ; রাতে উদিত হয় না আলোকময়ী চাঁদ। সেই গোধূলির দেশে বাস করে ধূসরশুভ্রকোশিনী লোলচর্যা এই বৃদ্ধা রমণীরা। তারা আরো অদ্ভুত এজন্য যে তাদের তিনজনের শুধু একটি মাত্র চোখ। একজনের দেখা শেষ হলে আছে গা-মোচড়ানো অসংখ্য সাপ। দেবী এথিনা এখন হার্মিসের পাশাপা পারসিউস্কে সহায়তা করছেন। তিনি দেখিয়ে দিলেন কোন্ জন মেডুসা। ব্যাপারী গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, তিন বোনের মধ্যে কেবল মেডুসাকেই হত্যা করা যেতে পারে। অন্য দুজন অমর। পাখাওয়ালা-জুতাপরা পারসিউস্ উড়ে উড়ে দেখতে লাগল চালের দিকে চোখ রেখে ঃ সরাসরি তাকালে সে হয়ে যেত অন্ধ। একসময় সে মেডুসার গল তাক করে তরবারি চালাল। ঢাল থেকে চাখ না সরিয়েই সে নেমে এল নীচে এবং মেডুসার সাপের ঝুটিঅলা মাথা খামচে ধরল। কাটা মুণ্ডুটি চালান করে দিল যার থলের মধ্যে। মেডুসার খেলা শেষ, কিন্তু ততক্ষণে জেগে উঠেছে অন্য দুই দানব। মেডুসা নিহত হয়েছে দেখে তারা তাড়া করল হত্যাকারীকে। কিন্তু ইতোমধে পারসিউস্ নিরাপদ দূরত্বে উড়ে এসেছে। তার মাথায় যাদুর টুপি; ফলে দানবীরা তাকে মোটেই দেখতে পেল না।
0 মন্তব্যসমূহ