'কমলাকান্তের দপ্তর' এ বঙ্কিম-মানসকে মনোবেদনা, শূন্যতাবোধ, নিঃসঙ্গতা ও আত্মাধিক্কারঅধিকৃত করে রেখেছিল, তখনকার সামাজিক-রাজনৈতিক ও ঔপনিবেশিক দুঃশাসন ওস্বার্থপরতার কারণে। সমাজে তখন আদর্শের এবং বাস্তবজীবনের সংকটই শুধু ছিলো না; বুদ্ধিবৃত্তি
বিকাশের সম্ভাবনা তখন জনমনকে পর্যুদস্ত করে ফেলেছিল। বহরমপুর ক্যান্টনম্যান্টের কমান্ডিংঅফিসার কর্ণেল ডাফিন বঙ্কিমচন্দ্রকে (১৮৭৩-৭৪) লাঞ্ছিত করলে বঙ্কিম মনে প্রচন্ড ক্ষোভ সৃষ্টিহয়। যদিও কর্ণেল প্রকাশ্য আদালতে সহস্ৰলোকসম্মুখে বঙ্কিমের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সেইসমকালেই ‘কমলাকান্তের দপ্তর' (১৮৭৫) রচিত হয়।‘কমলাকান্তের দপ্তর' শুধু বঙ্কিমচন্দ্রের মানস দ্বন্দ্বের ফসল নয়; বরং তৎকালীন শিক্ষিতমধ্যবিত্ত মানুষের মানসিক-সংকটেরই প্রতিনিধিত্ব করছে এই তীব্র-তীক্ষ্ণ-ব্যঙ্গাত্মক-করুণহাস্যরসাত্মক প্রবন্ধ গ্রন্থ। রাজনৈতিক-সামাজিক ক্ষেত্রে, শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক –সর্বক্ষেত্রেই এমন নেতিবাচকতা, রুদ্ধশ্বাসের অবস্থা, স্তম্ভিত বিহ্বলতা, চাপা ক্ষোভ এবং নৈঃসর্গেরবেদনাময়তা কার্যকর ছিল যে শিল্পী মানসে তো দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হওয়া তখন অনিবার্য হয়ে পড়েছিল।ঔপনেবেশিক শাসক কর্তৃক শোষণ ও কুটচক্রের ফলে এবং কতিপয় স্বার্থান্ধ দালাল ও চাটুবাররাশাসকদের সঙ্গে দহরম-মহরমের কারণে সমাজ ও রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ণ, দুর্নীতিকরণ, এবংসর্বোপরি মনুষ্য-অকল্যাণকরতার পরিবেশ তখন তীব্রভাবে বিরাজিত ছিল। বঙ্কিমের সচেতনপ্রাজ্ঞ মানবকল্যাণপ্রবণ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শিল্পীমন তখন বিপর্যস্ততার দোলাচলে গভীরভাবেআলোড়িত ছিল। সে সময়পর্বের প্রচলিত আদর্শ, সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক জীবনাচার এমনই একনেতিবাচকতার নষ্টভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত ছিল যে, সচেতন বুদ্ধিজীবী-মনন তখন মানস-সংকটেরঘূর্নাবর্তে পড়তে বাধ্য। এজন্যই ‘কমলাকান্তের জবানবন্দী' তে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন যে, 'মানুষটাক্ষেপিয়া গিয়াছে'। কমলাকান্ত তো আসলে বঙ্কিমচন্দ্র স্বয়ং। সমাজের সামাজিক অসাম্য,সামাজিক ভন্ডামি, রাজনৈতিক কর্মনীতির একদেশদর্শিতা ও ঔপনেবেশিক শাসকদের অর্থগৃধ্নতারআকাশচুম্বিতা বঙ্কিম-মানসকে বিচলিত ও পীড়িত করেছে বলেই কমলাকান্তের জবানিতে বঙ্কিমচন্দ্র
সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতার নির্মমতাকে স্পষ্টভাবে প্রবন্ধাকারে এই প্রবন্ধসমূহে তুলে
ধরেছেন। একবিংশ শতাব্দীর এই প্রথম দশকে সমাজ-রাজনীতির স্বার্থান্ধতা এবং মানুষের লোভ
ও দুর্নীতির উত্তুঙ্গতার সময়পর্ব কমলাকান্তের দপ্তরের বুদ্ধিবৃত্তিক অন্তসারের কথাই আমাদের স্মরণ
করিয়ে দেয়। এই খানেই এই প্রবন্ধগ্রন্থ বুদ্ধিবৃত্তিক দূরদর্শিতার সাক্ষ্য বহন করে।
কমলাকান্তের দপ্তর সমকালীন মধ্যবিত্ত জীবনের আশা ও স্বপ্নভঙ্গের আর্তনাদ ও তাদেরজীবন-সংকটের অনিবার্য কষ্টকর বাস্তবতাকেই উপস্থাপিত করে। সমকালীন সামাজিকপ্রতিবেশের বিকৃত-বিভ্রান্ত অবয়বের সঙ্গে জনমানসের ঘাত-প্রতিঘাতের দ্বন্দ্বচিত্রের হাহাকারময়দীর্ঘশ্বাসবার্তাই এই প্রবন্ধগ্রন্থে বিঘোষিত হয়েছে। সে সময়ের বর্ধিষ্ণু মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়েরআত্মোপলব্ধির পথই তখন শুধু অবরুদ্ধ হয়ে পড়েনি; বরং নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনেও অনিশ্চয়তারমহাজকার ঘনিয়ে ওঠেছিল। তখনকার নবজাগ্রত ব্যবসায়ী শ্রেণীও তাদের শিল্পায়নের পথকেজনগণ-মনোমধ্যে কল্যাণকরতার স্পষ্টতায় আলোড়িত করতে সক্ষম হননি। ফলে সমাজ উন্নয়নেরপ্রকৃত দর্শন তখন রুদ্ধতার বাতাবরণে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। জীবনকর্ম ও জৈবনিক চিন্তারজটিলতার রুদ্ধগৃহে বঙ্কিম-মানস ছটফট করছিলো তখন; কমলাকান্তের ভাষ্যমধ্যদিয়ে জীবনেরসে বিপর্যয়ের ব্যাকরণই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।কমলাকান্ত চরিত্রটি শ্রেষ্ঠ কমিক চরিত্র; কিন্তু ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্রের চেয়ে কমলাকান্তেরদপ্তরের বঞ্চিমচন্দ্রের অধিকতর সাফল্য এখানেই যে এখানে হাস্যরস ও ব্যঙ্গের মাধ্যমেমানবজীবনের অনেক গভীর তাৎপর্যপূর্ণ অবলোকনকে তিনি দার্শনিক অন্তদৃষ্টিকে বৃত করে এইপ্রবন্ধগ্রন্থে উপস্থাপনে চরম নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন। কমলাকান্ত জীবনের অন্তর্নিহিত শূন্যতা ওসমাজের অন্তসারশূন্যতাকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। কমলাকান্তের প্রজ্ঞাদৃষ্টি সামাজিক ও
ব্রাজনৈতিক জীবনের গভীরতলে প্রবেশ করে মানুষের ক্ষুদ্রতা, নীচতা, ও হীনতাকে দেখিয়ে দিতেপেরেছে।সাহিত্যের একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও ওজস্বিতাসম্পন্ন আঙ্গিক হলো প্রবন্ধ। এটি গদ্যে রচিত হয়।বলে জীবনের বিচিত্র বিষয়ের মননগভীরতা এতে প্রত্যাশিত থাকে। সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি,দর্শন, ধর্ম, সংস্কৃতি, নৃবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান অর্থাৎ জ্ঞান শাখার এমন কোনশাখা নেই যা নিয়ে প্রবন্ধ রচিত হয়না। তবে বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধে ব্যক্তিক-আবেগের চেয়ে বুদ্ধিবৃত্তিকউদ্দেশ্য প্রবণতা বেশি কাজ করে। অন্যদিকে, মন্ময়ধর্মী বা ব্যক্তিনিষ্ঠ প্রবন্ধে ব্যক্তি-আবেগেরসঙ্গে সমাজ-মানসের আন্তসম্পর্ক রূপায়িত হয়। এই ধরনের ময়তা-নির্ভর সাহিত্যিক প্রবন্ধগ্রন্থহলো বঙ্কিমের কমলাকান্তের দপ্তর।সাহিত্যের প্রবন্ধ-আঙ্গিকে প্রবন্ধের একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য, ঘনবদ্ধতা ও উদ্দেশ্য প্রবণমননধর্মিতা কার্যকর থাকে। তবে 'Cursory' বা ভাসা-ভাসা ভাবে বিষয়ের মধ্যে যে প্রাবন্ধিকমানস যুক্ত থাকে, তা আমি মনে করিনা। বরং প্রবন্ধে থাকতে হবে অর্ন্তগভীর দর্শন। একটি উদ্ধৃতিলক্ষ্যযোগ্য As a form of literature, the essay in a composition of moderate length,
usually in prose, which deals in an essay, cursory way with a subject, and in strict
ness with that subject only as it affects the writer. প্রাবন্ধিক যদি শক্তিশালী চিন্তাবিদ হন,
তাহলে, "The thoughts of the author at length become the thought of the reader.
পাঠকের মনকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে শুধু জাগ্রতই নয়; বরং প্রভাবিত করাও প্রাবন্ধিকের কাজ।বঙ্কিমচন্দ্রের 'কমলাকান্তের দপ্তর' এর বিষয়বস্তুর সমাজ-রাজনীতি-সাহিত্য-সংস্কৃতির অন্তদর্শনেরবহুরূপিতা বর্তমান সময় ও সমাজ-মানসের মধ্যেও প্রযোজ্যতা রাখার স্পর্ধায় স্পর্ধিত।'কমলাকান্তের দপ্তর' এর সর্বপ্রথম বাক্যটি হলো: অনেকে কমলাকান্তকে পাগল বলিত।'কমলাকান্ত আসলে পাগল নয়; বরং পাগলের অভিনয় করে সমাজ-রাজনীতির সবনেতিবাচকতাকে তিনি চোখে আঙুল দিয়ে সকলকে দেখিয়ে দিয়েছেন।কমলাকান্ত যে বলেছেন, 'সাহের সুলোর কাছে যাওয়া আসার মাধ্যমে মো
মাসে যে যোগ্যতা সমাজ সে আ
বরিয়া বলেছেন। বর্তমান সময়ের এ বণতা খুবই বুদ্ধি পেয়েছে। দুর্ধরা যারা শুধু নিয়ে।
মন্তখত করতে পারে? যারা 'তালুক মুলুক' করেছে বলার মোসাহেবি করে অযোগ্যরা যে ধনবান
হয়েছে সমাজে ভাই লেখক বোঝাতে চেয়েছেন।
সমাজের মধ্যে অধিকাংশ লোকই স্বার্থের পেছনে ছুটতো। বমিচণ্ড 'কে গায় ৩ থে
বলেছেন, পুষ্প যেমন নিজের জন্য ফুটে না; তেমনি মানুষ যাতে অন্য মানুষের কল্যাণে তার হৃদয়কুসুমকে প্রস্ফুটিত করে। 'মনুষ্য হল' বলে 'রমণীমণী' কে এ সংসারের নারিকেলহয়েছেন। কুশীন ব্রাহ্মণেরা 'কাঁপি কাঁপি' নারিকেল 'গাড়িয়া' খেত বলে ব্রাহ্মণরা যে বস্তুবিবাহ করে
সমাজদেহকে কলুষিত এবং নারীদের অধিকার বঞ্চিত করেছে সেকথাই শঠতার সঙ্গে লেখক
ঘোষণা করেছেন। ঘোবরা হলো নারিকেলের বাহ্যিক অংশ: 8e লোকের বাহ্যিক অংশ
দুটোকেই লেখক অসাঢ় বলেছেন। বরং গুণাবতী বিদূষী নারীর প্রতি লেখকের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
"' প্রবন্ধে লেখক যে লিখেছেন, 'আমরা জাতি' পূর্বাপর আলোতে পুড়িয়া মরিয়া।
আসিতেছি এই ভাষামধাদিয়ে ইতিহাস পরম্পরায় আমরা যে নির্যাতনের শিকার ছিলাম, সেকথালেখক বুঝিয়েছেন। তবে ১২০০ থেকে ১৮০০ সময়-পর্বে মুসলিম শাসনের সময় বাংলাদেশ তো
সাম্রাজ্য ও অর্থনীতিতে স্বর্ণোজ্জ্বল সময় নির্মাণ করেছিল।
"আমার মন' প্রবন্ধে লেখক যে লিখেছেন, “আমি চিরকাল আপনার রহিলাম, পরের
হইলাম না, এইজন্যেই পৃথিবীতে আমার সুখ নাই,”― এর মধ্য দিয়ে আসলে মানুষের উদ্দেশ্যেতিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, মানুষরা যাতে পরোপকারে তাদের জীবনকে উৎসর্গ করে। ধন, যশএবং ইন্দ্রিয়াদির মাধ্যমে সুখ পাওয়া গেলেও সে সুখকে তিনি ক্ষণস্থায়ী বলেছেন। এই প্রবন্ধেরএকটি ভাষা উদ্ধৃতিযোগ্য; “টাকা ভক্তি, টাকা মুক্তি, টাকা নতি, টাকা গতি, টাকা ধৰ্ম, টাকা অর্থ,টাকা কাম, টাকা মোক্ষ ও পথে যাইও না, দেশের টাকা কমিবে, ও পথে যাও, দেশের টাকাবাড়িবে। মানুষ যে শুধু অর্থের পেছনে ছুটেছে, মনুষ্যত্ব, নৈতিকতা, সততাকে বিসর্জন দিয়েজীবনের সে বিপর্যস্ততার কথা লেখক এখানে বলেছেন। ইন্দ্রিয়কে বশীভূত করে নৈতিকভাবে
মনুষ্য জীবন যাপন করার কথা প্রাবন্ধিক বলেছেন। বিবাহের মাধ্যমে শুধু কাম চরিতার্থতা নয়;বরং নর-নারীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক সৃষ্টির উপর লেখক গুরুত্ব প্রদান করেছেন।
‘চন্দ্রালোকে' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক ইংরেজদের নিন্দার মধ্যেই রাজনীতিকে আবর্তিত না করে বরং
রাজনীতিকে ইতিবাচক দেশপ্রেমিক স্বাদেশিকতায় রূপান্তরিত করার কথা বলেছেন। 'বসন্তেরকোকিল' প্রবন্ধে লেখক মানুষকে গলাবাজি না করে বরং কর্মপ্রবণতায় প্রণোদিত হবার কথাবলেছেন। এই প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বিশ্ব-আত্মারূপ প্রভুর প্রতি তাঁর চরম নিবেদনকে নিখোক্ত ভাষ্যেব্যক্ত করেছেন : “এই অসম্ভব সুন্দর জন্য শরীরের যিনি আত্মা, তাঁহাকে ডাকি। আমিও ডাকি,‘স্ত্রীলোকের রূপ' প্রবন্ধে লেখক স্ত্রীলোকের বাহ্যিক রূপের চেয়ে তাদের গুণের প্রতিগুরুত্বারোপ করেছেন। আমি শুনিতে চাই যে, তাহারা মুর্তিমতি সহিষ্ণুতা, ভক্তি ও প্রীতি",এরমাধ্যমে নারীর ধের্য্য, বিনয় ও প্রীতির কমনীয়তার কথা লেখক ব্যক্ত করেছেন।'বড় বাজার' প্রবন্ধে মানুষের স্বার্থপর ও ঠকবাজি চরিত্রের কথা বলা হয়েছে। দোকানদার ওখরিদ্দারের মধ্যে যুদ্ধ চলতে থাকে কে কাকে কত বেশি ফাঁকি দিতে পারে। 'সস্তা খরিদের অবিরত
চেষ্টাকে মানুষাজীবন বলে- ভাষ্যমধ্যদিয়ে জীবন যাতে নিঃস্বার্থপরতার মহিমায় উতি .....
সেই উৎকাল তিনি ব্যক্ত করেছেন।
'আমার দুর্গোৎসব' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক দেবী দুর্গাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে,
সর্বমানবের জন্যে। নিজের স্বার্থ ভুলে পরের উপকার করা, ইন্দ্রিয়ের দোষকে পরিত্যাগ করে
আহত হয়ে স্রষ্টামুখী হবার আশাব্বাও তিনি এই প্রবন্ধে ব্যক্ত করেছেন।
‘একটি গীত' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক যে লিখেছেন, সুখের কথায় বাঙালির অধিকার নেই, পুরে
কথায় আছে–এর মাধ্যমে বাঙালি যাতে কষ্টস্নানতাকে অতিক্রম করে জৈবনিক স্বাচ্ছন্দ্য অর্জন
করে সেই স্বপ্ন তার মধ্যে কাজে করেছে।
বিড়াল' প্রবন্ধে নিঃস্ব-অভাবী মানুষদের স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবন যাপনের নিশ্চয়তার কথা
প্রাবন্ধিক বিড়ালের রূপকে বাক্ত করেছেন। 'এ সংসারে ক্ষীর, সর, দুগ্ধ, দধি, ম্য, মাংস ই
তোমরা যাইবে; আমার কিছু পাইবনা কেন?'— বলে মূলত ধনিক পুঁজিবাদী (Capitalist) শ্রেণীকে
আক্রান্ত করে গরিবদের অধিকার পূর্ণ সুন্দর জীবনের আশাবাদের কথা ব্যক্ত করেছেন।
‘ঢেঁকি’ প্রবন্ধে লেখক অত্যাচারী ব্যক্তিদের রূপক হিসেবে 'ঢেঁকি'কে উপস্থাপন করেছেন।জমিদাররূপী ঢেঁকিরা 'প্রজাদিগের হৃৎপিণ্ড' পিষে তাদের আর্থিক-মানসিক জীবনকে বিপর্যস্ত করেদেয়। লেখক ঢেঁকি-কে প্রাবন্ধিক খুব ভয়ানক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, কারন প্রকৃত বিদ্যা,জ্ঞানচর্চা, প্রজ্ঞা ও নৈতিকতার বদলে তারা মা সরস্বতীর মুণ্ড ছাপার গড়ে পিবিয়া বাহির করে।বঙ্কিমচন্দ্র খুবই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন একজন লেখক ও চিন্তাবিদ। 'একা' প্রবন্ধে তিনিমনুষ্যত্বের জয়পতাকা উড্ডীন করেছেন, এভাবে “মানুষ জাতির প্রতি যদি আমার প্রীতি থাকে,তবে আমি অন্য সুখ চাই না।" মানুষকে ভালবেসে মানবজাতির উপকার করে তিনি তার জীবনকে
অতিবাহিত করার আকাঙ্ক্ষা এই প্রবন্ধের মধ্যে অভিব্যক্ত করেছেন।বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ঔপন্যাসিক হিসেবেই শুধু বিবেচ্য নন; তিনি বাঙালির একজনউচ্চমাপের চিন্তাবিদ-দার্শনিক। ধর্মতাত্ত্বিকও বটে। চিত্তের শুদ্ধি ও প্রবৃত্তির পাপ থেকে মুক্তথাকাকে তিনি সকল ধর্মের প্রান বলেছেন। উনিশ শতকের শেষার্ধে বাঙালি সমাজ-রাজনীতিসংস্কৃতি-শিক্ষা ও সাহিত্যে যে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছিল, তার অপনোদনার্থে তিনি প্রাজ্ঞদার্শনিকের দৃষ্টিতে নৈতিক-মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির উন্মোচনের মধ্যদিয়ে জীবনের ইতিবাচকআশাবাদের আকাঙ্ক্ষা অনুসন্ধান করেছেন, তাঁর ‘কমলাকান্তের দপ্তর' শীর্ষক বিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থে।
ড. রহমান হাবিব
সহযোগী অধ্যাপক; বাংলা বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
0 মন্তব্যসমূহ