প্রদোষে প্রাকৃতজন উপন্যাসের চরিত্রঃ-
১.শ্যামাঙ্গ
২.বসুদেব
৩.লীলাবতী
৪.মায়াবতী
৫.বসন্তদাস
৬.অভিমন্যু
৭.ইখতিয়ার উদদীন বিন বখতিয়ার খলজি
৮.লক্ষ্মণ সেন
ইত্যাদি
প্রদোষে প্রাকৃতজন ও এর বিষয়বস্তুঃ-
বাংলা সাহিত্যের একজন খ্যাতিমান কথা সাহিত্যিক শওকত আলী।তিনি মুলত রুট লেভেলে থাকা মানুষদের নিয়ে কথা বলতেন।তার লেখনিতে তিনি সমাজ, রাষ্ট্র, ব্যাক্তি এবং শাসনব্যাবস্থার কথা তুলে ধরতেন।ইতিহাসের সাথে সমসাময়িক নানান অনুষঙ্গের এক অপুর্ব মিল বন্ধন তিনি সৃষ্টি করেছেন।
তার লেখা বহুল আলোচিত একটি উপন্যাস হলো প্রদোষে প্রাকৃতজন।উপন্যাস টি ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়।অনেকের মতে এটি একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস। ইতিহাস কে কেন্দ্র করে তিনি বর্তমান বিশ্বের নানা অসামঞ্জস্য তার চিত্র তুলে ধরেছেন।উপন্যাস টিতে লক্ষ্মণ সেন এর আমলের কথা বলা হয়েছে। বৃ্দ্ধ লক্ষন সেন তার রাজত্ব কালের শেষের দিকে রাজ্য পরিচালনায় পরাস্ত হোন।যার কারণে সেখানে থাকা নতুন ধনীরা গরিব এবং নিম্নবর্গের মানুষদের কে অমানবিক নির্যাতন করতে শুরু করে।বিশেষ করে নারীদের কে ধর্ষণ এবং হত্যা সহ বিলাসিতার পন্য হিসেবে ব্যবহার করতে থাকেন।
এখানে দুটি প্রেক্ষাপটঃ-
১.লক্ষ্মণ সেন এর আমল
২.ধর্মীয় বিষয়ে মতভেদ।
এখানে থাকা শ্যামাঙ্গ মুর্তি তৈরির কাজ করে।কিন্তু হঠাৎ করে তার কাছে মনে হয়,এইসব অসাড় বস্তুর উপাসনার মাধ্যমে মুক্তি সম্ভব নয়।কিন্তু তার গুরু বসুদেব এতে রুষ্ট হন।এইদিকে গুরুদেব, নতুন ব্রাহ্মণ্য সমাজের কাছে নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছেন। যার কারনে রোশানলে পড়ে শ্যামাঙ্গ কে গ্রাম ছাড়া করা হয়।
আর এর পর শ্যামাঙ্গের সাথে পরিচয় হয়, মায়াবতী ও লীলাবতী নামে দুই নরীর সঙ্গে। তারা দুইজন ই বিবাহিত। তাদের স্বামী যাথাক্রমেঃ অভিমন্যু এবং বসন্তদাস।
দুইজন ই দুই রকমের ব্যাক্তিতের অধিকাররী।বসন্তদেব বানিজ্য করার জন্য বেরিয়ে পড়েন। এবং অনেক যায়গায় গিয়ে তিনি উপলব্ধি করতে পারেন সংসার জীবন এর চেয়ে ধর্মের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে পারাতেই বড় প্রাপ্তি।তাই তিনি সাধুদের সঙ্গে যোগ দেন।
আর অন্যদিকে অভিমন্যু ইখতিয়ারউদ্দিন বিন বখতিয়ার খলজির র বাহিনীতে যোগ দেন। আর এইদিকে লীলাবতী অভিমন্যুর অবহেলায়, শ্যামাঙ্গ কে ভালোবেসে ফেলে,।এবং সন্তান সম্ভাব্য হয়ে পড়েন।এইসময় ইখতিয়ার উদ্দিন বিন বখতিয়ার খলজির বাংলা আক্রমণ করেন এবং লক্ষ্মণ সেন, বাংলা ছেড়ে পালিয়ে যায়। আর এইসময় বখতিয়ার বাহিনীদের যবান বলা হতো।তারা গ্রামের ঘর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে সবাই েপালাতে থাকে।কিন্তু শ্যামাঙ্গ এবং লীলাবতীরা থেকে যায়।যবান দের প্রশ্নের উওরে বলেন,,
"সকলেই নগরী ত্যাগ করলে অতিথিদের অভ্যর্থনা কে করবে?”
কিন্তু এতেও তাদের মুক্তি হয়না।শ্যামাঙ্গের বুকে তীর বিদ্ধ করে তাকে হত্যা করা হয়। তু্র্কীরা মুলত এখানে এসেছিলেন শাসন করতে।ধর্ম কে ব্যাবহার করে সাধারণ মানুষের কাছে থেকে সহায়তা পাওয়া তাদের একধরনের চাতুরতা ছিলো।আর এতে পরাজিত হলে তাদেরকে নির্মম নির্যাতন ও হত্যা করতে দ্বিধা করতেন না।
শাসক এর বদল হোক এটা বসন্তদাস ও চেয়েছিল। কিন্তু এরপর কী হবে? পরিবর্তে আসবেন কে? সে কি প্রজাবান্ধব হবেন? নাকি শতবর্ষের পুরানো শাসক ধারার পরিবর্তন-ই হবে শুধু, শোষণ আগের মতই চলবে? এইসব প্রশ্নের উত্তর ই খুঁজে গেছেন বসন্তদাস, যে প্রশ্নের উত্তর আমরা প্রায় ৮০০ বছর পরে এসেও খুঁজে চলেছি। তাই বলা যায়, ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ উপন্যাসের চেতনা কালকে অতিক্রম করেছে। কালের নিরবচ্ছিন্ন ধারার এক খণ্ডে জন্মানো মানবজমিনে এখনো সেই একই প্রশ্ন হাজার বছর ধরে বিদ্যমান।
**বাংলা সাহিত্যের সকল পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন
0 মন্তব্যসমূহ