Hot Posts

6/recent/ticker-posts

প্রিয়যোদ্ধা প্রিয়তম উপন্যাসের আলোচনা বিষয়বস্তু

 

**প্রিয়যোদ্ধা প্রিয়তম উপন্যাসের আলোচনা  

**প্রিয়যোদ্ধা প্রিয়তম উপন্যাসের চরিত্র 

**হারুন হাবীবের প্রিয়যোদ্ধা প্রিয়তম উপন্যাসের বিষয়বস্তু

**মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস 

**বাংলা সাহিত্যের সকল পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন 

প্রিয়যোদ্ধা প্রিয়তম উপন্যাসটির লেখক  হারুন হাবীব(১৯৪৮ -বর্তমান)।এটি একটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মুক্তিযোদ্ধে নিয়ে লেখা উপন্যাস গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।উপন্যাসটিতে একজন মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচারণ দেখানো হয়েছে। সেই সাথে পৃথিবীর ইতিহাস বিবর্তন, যুদ্ধ সংগ্রাম ইত্যাদি যুক্ত করা হয়েছে।দুটি দেশের স্বাধীনতা সেই সাথে দুটি বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা এখানে মুখ্য বিষয়।বাংলাদেশ এবং  যুগোস্লাভিয়া র যুদ্ধের সাথে সাথে ব্যাক্তি মানুষের মাঝে চলা যুদ্ধের এক অপুর্ব উদাহরণ উপন্যাস টি।


 প্রিয়যোদ্ধা প্রিয়তম  উপন্যাসের চরিত্র গুলো হলোঃ-

১.আবুল হাসান-


কেন্দ্রীয় চরিত্র,একজন  মুক্তিযোদ্ধা যিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।এবং গুলিবিদ্ধ হয়েও বেচে যান।উপন্যাসে মুলত তাকে কেন্দ্র করেই কাহিনী সাজানো হয়েছে। তার স্মৃতিচারণ এ মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা,সংগ্রাম প্রতিরোধ দেখানো হয়েছে। 


২.ইয়াসমিনকাঃ

যুগোস্লাভিয়ার তরুণী। আবুল হাসান যুগোস্লাভিয়ায় চিকিৎসা করাতে যান।এবং তার সঙ্গী হিসেবে থাকে ইয়াসমিনকা।তার সহস্র প্রশ্ন আর কৌতুহলে আবুল হাসানের স্মৃতিচারণ  দেখানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তিনি আবুল হাসান কে তার প্রিয়তম প্রিয়যোদ্ধা হিসেবে স্থান দেন।

**বাংলা  উপন্যাসের আরো আলোচনা জানতে এখানে ক্লিক করুন 


৩.বিবাঃ-

ইয়াসমিনকার বান্ধবী। আবুল হাসানের প্রতি তার দুর্বলতার সৃষ্ঠি হয় কিন্তু তিনি তা কখনোই প্রকাশ করেন নি।তার কাছে তার বান্ধবী ইয়াসমিনকার গ্রহণযোগ্যতা বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। 

৪.আলোঃ-

আবুল হাসানের প্রেমিকা। কলেজে থাকা অবস্থায় তাদের পরিচয় হয় এবং পারিবারিক ভাবে দিন তারিখ ঠিক করা হয়।কিন্তু যুদ্ধের কাছে হেরে যায় তাদের স্বপ্নে গড়ে তোলা সুন্দর সংসার।পাকবাহিনীর কাছে ধর্ষণের শিকার হোন আলো আর তাই সেই লজ্জাকে আজীবন এর জন্য বিদায় দিতে নিজের পেটে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন।তার কাছে তিনি লক্ষ শহীদের মধ্যে একজন।

৫.ড. রাইনম্যান

আবুল হাসানের চিকিৎসক। খুব অল্প সময়ের জন্য প্রিয়যোদ্ধা প্রিয়তম উপন্যাসে তাকে দেখানো হয়েছে। 

তাছাড়া আরো ছোট বড় কিছু চরিত্র  রয়েছে।


প্রিয়যোদ্ধা প্রিয়তম উপন্যাসের বিষয়বস্তুঃ-


মুক্তিযুদ্ধের অনন্য উপন্যাস প্রিয়যোদ্ধা প্রিয়তম।ব্যাক্তি মানুষের সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধ এখানে প্রধান চরিত্র হিসেবে প্রতিয়মান।বাংলাদেশর মুক্তিযুদ্ধের নানা গল্প ভয়াবহতা প্রতিরোধ আর আত্মত্যাগ এর এক মহান দৃষ্টান্ত এখানে দেখানো হয়েছে। সেই যুদ্ধ যে শুধু ধংস৷ এনে দেয় তার ই জলজ্যান্ত উদাহরণ উপন্যাসটি।হোক সেটা বাংলাদেশ এর যুদ্ধ কিংবা যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধ। যুদ্ধ শুধু কেড়ে নিতে জানে,প্রাপ্তি বলতে শুধু বিভীষিকা আর আর্তনাদ। 

উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র  আবুল হাসান।তিনি একজন মুক্তিযুদ্ধা যিনি যুদ্ধে বুকে গুলি দ্বারা আগত হয়েছিলেন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি চিকিৎসার জন্য যুগোস্লাভিয়া যান। আর সেখানে তার সঙ্গী হোন ইয়াসমিনকা নামে এক যুগোস্লাভিয়ান তরুনী।

উপন্যাসের শুরু যুগোস্লাভিয়ার আড্রিয়াটিক সৈকতে।সেখানে দাড়িয়ে আবুল হাসান গভীর চিন্তাই মগ্ন থাকেন। তার চিন্তায় ফিরে আসে মুক্তিযুদ্ধের সেই সব ঘটনা।তার বেচে উঠা এবং যুদ্ধ জয় ইত্যাদি ।আর সেই সব সৃতিচারণ এর সঙ্গী হয়ে উঠে ইয়াসমিনকা।তার সহস্র প্রশ্নে লেখক তুলে নিয়ে আসেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। 

সেই সাথে যুগোস্লাভিয়া এবং বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস ও এখানে লেখক তুলে আনেন।

আবুল হাসান শুধু মুক্তিযুদ্ধের যোদ্ধা নন সেই সাথে জীবন যুদ্ধে হারিয়ে যেতে উঠে দাড়ানো এক অদম্য সৈনিক। তার নিস্টা সহজভাষয়তা সেই সাথে নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য অকুতোভয়ী সংগ্রাম বিদেশি মেয়ে ইয়াসমিনকা কে শুধু। বিমোহিত করেছে। 

আবুল হাসানের মনে শুধু মুক্তিযোদ্ধই নয় আরেকটি যুদ্ধ চলমান।সেটি হলো হারানোর যুদ্ধ। সেই বিষয়ে ইয়াসমিনকার  সহস্রাধিক কৌতুহলে পরাজিত আবুল হাসান।আর তাই অকপটে কলেজ জীবনে ঘটে যাওয়া প্রেম এর কথা স্বীকার করেন।আর সেই  মেয়েটি ছিলো আলো।দুইজনের পরিচয় এর পর বিয়ের  তারিখ ও ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু সেই সময় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। যুদ্ধের সময় আলো বাহাদুরাবাদ ঘাট হয়ে রংপুর আসার সময় পাকবাহিনীর কাছে ধরা পড়েন এবং তাকে ধর্ষণ করা হয়।সেটি শুধু আলোর ধর্ষিত হওয়াকে নির্দেশ করেনা বরং যুদ্ধের সময় লক্ষ মা বোনের ধর্ষণ এর চিত্রকেই নির্দেশ করে।আর সেই লজ্জা থেকে বাচতে নিজের বুকে নিজেই গুলি চালিয়ে দেন।তিনি যেন ৩০ লক্ষ শহীদের মধ্যে একজন হয়ে উঠেন।

**চোখের বালি উপন্যাসের আলোচনা বিষয়বস্তু ও চরিত্র জানতে এখানে ক্লিক করুন 

প্রিয়যোদ্ধা প্রিয়তম উপন্যাসের আবুল হাসান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগ্রাম করা লক্ষ্ মুক্তিযোদ্ধার প্রতিনিধ। তার সংগ্রাম আত্মত্যাগ ইয়াসমিনকা কে বিমোহিত করেছে। আর তাই ইয়াসমিনকা, আবুলহাসান কে তার মনের মুক্তিযোদ্ধা হবার প্রস্তাব প্রদান করেন।আবুল হাসান হয়ে উঠেন ইয়াসমিনকার প্রিয়যোদ্ধা প্রিয়তম।

প্রিয়যোদ্ধা প্রিয়তম উপন্যাসের শুরু আড্রিয়াটিক সৈকতের তীরে আর পরিসমাপ্তি সাভা নদীর পাশে ইয়াসমিনকার বাড়িতে। লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগ এবং সংগ্রাম আবুল হাসানের মতো সাহসী যোদ্ধাদের, পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে প্রিয়তম, প্রিয়যোদ্ধা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।তারা ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে থাকবেন যুগের পর যুগ। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ