Hot Posts

6/recent/ticker-posts

কাশীরাম দাস

 


((কাশীরাম দাস
কাশীরাম দাসের জীবন কাহিনী
মহাভারতের অনুবাদক
কাশীরাম দাস প্রশ্ন উওর
মহাভারত ও কাশীরাম দাস)) 

**বিঃদ্র-বাংলা বিভাগের সকল পড়াশোনা পেতে ব্লগটিতে যুক্তথাকুন https://monoweredu13.blogspot.com/?m=1 

কাশীরাম দাস--- 

 অনুবাদ সাহিত্যে যাদের নাম জড়িত আছে কাশীরাম দাস তাদের মধ্যে অন্যতম। মহাভারত অনুবাদক এর সাথে যে সকল সাহিত্যিকদের নাম জড়িত তাদের মধ্যে কাশীরাম দাস সবার আগে আসবে। কৃত্তিবাসের সঙ্গে যাঁর নাম জড়িয়ে গিয়ে বাঙালীর নিত্যস্মরণীয় হয়েছে, তিনি মহাভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ অনুবাদক কায়স্থ বংশীয় কাশীরাম দাস। তাঁর পৈতৃক উপাধি ছিল 'দেব'। হিন্দী ভক্তকবি তুলসীদাস গোস্বামী রামায়ণ অবলম্বনে সাবিখ্যাত 'রামচরিতমানস' রচনা করে ভক্তের হৃদয়ে অমরত্ব লাভ করেছেন কিন্তু মহাভারত নিয়ে ওদেশে সেরকম কেন প্রাদেশিকভাষী কবির আবির্ভাব হয়নি। সেদিক থেকে বাংলা সাহিত্য ভাগ্যবান। মহাভারত মহাসাগর সন্তরণ করা অতি দরূহ, বিশেষতঃ বাংলার মতো প্রাদেশিক ভাষায়। সেই বিশালকায় মহাগ্রন্থকে কবি কাশীরাম বাঙালির উপযোগী করে নতুন রূপ দিয়েছিলেন। তাই এই কায়দ্ধ কবিকে বাংলার ব্রাহ্মণাদি উচ্চবর্ণেরাও মহাসম্মানে শিরোধার্য করেছেন।

কাশীরামের কুলপরিচয় ও রচনাদি নিয়ে এক সময়ে বহ, সমালোচনা হয়েছিল। সেই আলোচনার কিছু কিছু, নিদর্শন সাহিত্যপরিষদ পত্রিকার পুরাতন ফাইলে পাওয়া যাবে। যদিও কবি কাশীরাম দাস কৃত্তিবাসের অনেক পরবর্তী কালের কবি, তব, তাঁর কুলপরিচয়াদি নিয়ে কৃত্তিবাসের মতোই। জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। কবি মহাভারতের দ-এক স্থানে নিজের সম্বন্ধে অতি সংক্ষিপ্ত উত্তি করেছেন। তাঁর অগ্রজ-অনজেরাও কবিত্বের অধিকারী ছিলেন। তাঁদের কাব্য থেকেও কাশীরাম সম্বন্ধে কিছু কিছু তথ্য পাওয়া যায়। এই সমস্ত বর্ণনা থেকে তাঁর বংশধারা ও কাব্য রচনাদি সম্বন্ধে এই ধরনের দচারটি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তারা তিন ভাই কৃষ্ণরাম, কাশীরাম ও সভাঘর। কাটোয়া মহকুমার অন্তর্গত সিঙ্গি গ্রামে তাঁর জন্ম হয়, মতান্তরে এ গ্রামের নাম সখি কিন্তু আমরা অনূসধান করে দেখেছি, সিপি গ্রামই কবির পিতৃভূমি, এ গ্রাম এখনও আছে। সেই গ্রামে আজও কাশীরামের স্মৃতি পুত স্থানগুলি আছে। কবির কনিষ্ঠ ভাই গদাধরের 'জগৎমঙ্গলে' এই বর্ণনার অননূপ উল্লেখ আছে। তাঁর পিতার নাম কমলাকান্ত। তাঁর অনজে গদাধরের পূরের নাম নন্দরাম দাস। কাশীরামের কোন কোন পাখিতে নন্দরামের ভণিতা আছে। কবির গূর্, অভিরাম থোটির উপদেশে কবি মহাভারত পাঁচালী রচনায় প্রবৃত্ত হন। কাশীরামের দ-একখানি পূথিতে সন-তারিখ জ্ঞাপক পয়ারের নির্দেশ আছে। তা থেকে যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি ১৬০৪ ও ১৬০২-৩ খ্রীস্টাব্দের ইঙ্গিত পেয়েছেন। ১৬৭৮ খ্রীঃ অব্দে নকলকরা কাশী "রামের মহাভারতের একখানি পূথি পাওয়া গেছে। এ তারিখে কোন ভুল না থাকলে আমরা অনুমান করতে পারি, ষোড়শ শতাব্দীর একেবারে শেষে অথবা সপ্তদশ শতাব্দীর একেবারে গোড়ার দিকে পাশীরাম মহাভারত অনুসরণে "ভারতপাঁচালী রচনায় হস্তক্ষেপ করেছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাশী রামের একখানি পূথিতে ১০০২ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ১৫৯৫ খ্রীঃ অব্দ পাওয়া যাচ্ছে, আর একখানি পূথিতে ১০২০ বঙ্গাব্দ (১৬১৩ খ্রী: অব্দ) আছে। তাই আমাদের মনে হয়, কবির কাবা ষোড়শ শতাব্দীর শেষের দিকেই রচিত হতে আরম্ভ হয়।


কাশীরাম সমগ্র মহাভারত অনুবাদ করেছিলেন কিনা তাই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ ঘটেছে। কারণ কাশীরামের কোন কোন পথিতে আছে যে, মহাভারতের আদি পর্ব, সভা পর্ব, বন পর্ব ও বিরাট পর্বের খানিকটা রচনা করার পর তিনি স্বর্গারোহণ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুথি শালায় রক্ষিত কাশীরামের কোন কোন পূথিতে আমরা এই ধরনের উক্তি দেখেছি। সেখানে আরও আছে যে, মৃত্যুকাল নিকটবর্তী দেখে কাশীরাম তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র নন্দরামের ওপর অসমাপ্ত কাবা সম্পূর্ণ করার ভার দিয়ে যান। অবশ্য কবির কনিষ্ঠ ভ্রাতা গদাধর (নন্দরামের পিতা) বলেছেন যে, তাঁর অগ্রজ কাশীরাম গোটা মহাভারত রচনা করেন–দ, এক পর্ব নয়। এ বিষয়ে মহামহোপাধ্যায় (হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, পণ্ডিত অমূলাচরণ বিদ্যাভূষণ প্রভৃতি কাশীরাম-বিশেষজ্ঞগণ স্বীকার করেছেন যে, কাশীরাম মাত্র চারটি পর্ব রচনা করে লোকান্তরিত হন। তাঁর বংশের সকলেই অল্পাধিক কবিপ্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তাই তার দ্রাতুপরে, জামাতা বা আর কেউ মহাভারতের আর চৌদ্দটি পর্ব রচনা করে কাশীরামের কব্যের পূর্ণতা সাধন করেন। সেই সমস্ত পর্বের অধিকাংশ স্থলেই।কাশীরামের ভণিতা নেই। প্রথম চার পর্ব তাঁর একহাতের রচনা বলে তাঁর বাঁধনি প্রশংসনীয়, রচনাও মোটামুটি এক ধরনের। কিন্তু তার পরের পর্ব গুলি বিভিন্ন লোকের রচনা বলে তাতে নানা ত্রুটি, অসঙ্গতি ও বিশৃঙ্খলা ঘটেছে। কৃত্তিবাসী রামায়ণে অনেক অংশ পরবর্তী কালে প্রক্ষিপ্ত হলেও মোটামটি কাব্যটি একই হাতের রচনা। কিন্তু কাশীরাম দাসের মহাভারত সম্বন্ধে সে কথা বলা যায় না। সে যাই হোক, কাশীরামের মহাভারত কৃত্তি বাসের রামায়ণের মতোই খ্যাতি লাভ করেছে।

কেউ কেউ বলেন কাশীরাম নাকি সংস্কৃত জানতেন না, মূল মহাভারত নাকি তাঁর আয়ত্তের বাইরে ছিল। কাশীদাসী মহাভারতের প্রথম চার পর্বে দেখা যাচ্ছে, কবি সংক্ষেপে মূল কাহিনী অনুসরণ করেছেন, দ-এক স্থলে দ-একটি আখ্যান তিনি নিজে বানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু রচনার গর্ণে বানানো গল্পও মূলের অনুবাদ বলে মনে হয়। মধ্যযযুগের সব অননুবাদকের মতো কাশীরাম মহাভারতের মূলের আক্ষরিক অনুবাদ নয়, ভাবান বাদ করেছেন বলা চলতে পারে। কবি প্রসন্ন ভঙ্গীতে পরিচ্ছন্নভাবে কাহিনীটি বিবৃত করেছেন, কোথাও কোথাও তত্ত্ব ও নীতিকথা গলিকে প্রায় হবেহ, অনুবাদ করেছেন। তাঁর বর্ণনা বেশ সরস ও গতিষ হলেও উত্তর-চৈতন্যযাগের প্রভাবে ভাষার মধ্যে বড়ো বেশী তৎসম শব্দ (অর্থাৎ বিশষ সংস্কৃত শব্দ), সমাস-সন্ধির কিছু বাড়াবাড়ি এবং আলঙ্কারিক অতিরেক দেখা যায় যার ফলে তাঁর ভাষা ও রীতি মাঝে মাঝে কিঞ্চিৎ স্খলদগতি হয়ে পড়েছে কৃত্তিবাসের মতো গ্রামীণ সরলতা তাঁর ভাষার বহ, থলেই লক্ষ্য করা যায় না। উপরুন্তু কৃত্তিবাসী রামায়ণে বাঙালী জীবন ও সমাজের এত বেশী ছাপ পড়েছে যে, রামকাহিনী বাঙালীর ঘরের সামগ্রী হয়ে গেছে। কাশীদাসী মহাভারতে ঠিক ততটা ঙালীয়ানা দেখা যায় না। কাশীরামের বিনয়াবনত বৈষ্ণব মনটি রচনার মধ্যে অকৃত্রিমভাবেই ধরা পড়েছে ভক্তবংশে যে তাঁর জন্ম হয়েছিল, তা তাঁর রচনা থেকেই বুঝতে পারা যায়। এদিক থেকে উত্তর-চৈতন্য যুগের ভক্তির ধারা তাঁর হৃদয়কে গভীরভাবে প্লাবিত করেছিল। তাঁর নামে আরও কয়েকখানি পথি ও পালা পাওয়া গেছে, তবে এগুলি যথার্থ তাঁর রচিত কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। সেযগে অনেক স্বল্পপ্রতিভাধর কবি কোন বড়ো কবির ভণিতায় কাব্য রচনা করে নিজেদের অক্ষম রচনাকে কালের দরবারে পাংক্তেয় করতে চেষ্টা করতেন। কাশীরামের ভগিতা দিয়ে অনেক কবি যে অনেক অযোগ্য রচনা কলমবন্দী করেছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। 


***-তথ্যসংগ্রহ **

(বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত -অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়) 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ